রিজাইন লেটার কিভাবে লিখব / রিজাইন লেটার লেখার নিয়ম

আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণে আমরা যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে থাকি সেই চাকরি থেকে অব্যাহতি নেয়ার প্রয়োজন পড়ে।  যখন আমরা চাকরিটা ছেড়ে দেই তখন যদি এটার কোনো লিখিত প্রমাণ না থাকে তখন উক্ত প্রতিষ্ঠানে চাইলে আপনার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে পারে এই বলে যে আপনি চলে যাওয়াতে প্রতিষ্ঠান ক্ষতি হয়েছে।  কিন্তু সুনির্দিষ্ট এবং বৈধ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চাকরিটা ছেড়ে দেন তাহলে কেউ আপনার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে পারবে না এবং আপনার এই চাকরি ছাড়ার প্রক্রিয়াটি অনেকটা পেশাদারিত্বের পরিচয় বহন করবে।

রিজাইন লেটার

চাকরি ছাড়ার জন্য আমরা যে পদ্ধতিতে কথা বলব সেটি হচ্ছে রিজাইন লেটার এর মাধ্যমে।  রেজিগনেশন  অথবা চাকরি থেকে অব্যাহতির জন্য আপনি একটা রিজাইন লেটার লিখতে পারেন।  এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে রিজাইন লেটার কিভাবে লিখব।  আমাদের মধ্যে অনেকেই জানেনা আসলে রিজাইন লেটার কিভাবে লিখতে হয় আজকে আমরা এই আর্টিকেলে রিজাইন লেটার কিভাবে লিখতে হয় সেই ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনা করব।  ধৈর্য ধরে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ুন এবং জেনেনিন রিজাইন লেটার কিভাবে লিখতে হয়।

রিজাইন লেটার লেখার সুবিধা

রিজাইন লেটার কিভাবে লিখব জানার আগে চলুন জেনে নেই সুবিধাগুলো সম্পর্কে।  আপনি যদি কোন প্রতিষ্ঠান করতে চান তাহলে সেই প্রতিষ্ঠানে আপনার কাছে অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে চাইলে এবং হতে পারে যে আপনার কাছে অভিজ্ঞতা পত্র চাইতে পারে।  তখন আপনি পুরাতন চেয়ে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন সেখান থেকে অভিজ্ঞতা পত্র নিয়ে আসতে পারেন।  কিন্তু আপনি যদি একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রিজাইন লেটার লেখার মাধ্যমে চাকরী না পারেন তবে আপনি সেখানে গিয়ে অভিজ্ঞতা পত্র চাইতে পারবেন না অথবা চাইলেও তারা হয়তো দিতে চাইবে না।  তাই অভিজ্ঞতা পত্র পাওয়ার জন্য আসলে আপনার রিজাইন লেটার দিয়ে চাকরি  ছাড়ালে সেটা অনেক ভালো হবে।

রিজাইন লেটার কোন ভাষায়  লেখব

আপনি যে কোম্পানিতে চাকরি করেছেন সেটি যদি একটি বাংলাদেশী কোম্পানি হয় তবে আপনি বাংলায় রেজাল্ট লেটার লিখতে পারেন।  আবার আপনি চাইলে ইংরেজিতেও লিখতে পারেন।  আসলে রিজাইন লেটার লেখার ক্ষেত্রে বাংলা  রিজাইন লেটার অথবা ইংরেজি রিজাইন লেটার কোন সমস্যাই না।  এটি আসলে নির্ভর করে আপনার ইচ্ছার উপর।  তবে যদি আপনি কোন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান চাকরি করে থাকেন তাহলে তাদের কাছে ইংরেজির গুরুত্বটা অনেক বেশি।  সে ক্ষেত্রে আপনি যদি ইংরেজিতে  রিজাইন লেটার লেখেন আমার মনে হয় সেটা ভালো হবে।  তবে বাংলা ইংরেজি দুই ভাষাতেই আপনি লিখতে পারেন।

রিজাইন লেটার  লেখার শুরুতে যা থাকবে

  • যখন আপনি রিজাইন লেটার লিখব তখন এর শুরুটা এত সুন্দর এবং আকর্ষণীয় হওয়া উচিত যেন যার কাছে রিজাইন লেটার জমা দেয়া হয় তিনি যেন এর পুরোটা পড়তে আকর্ষণ বোধ করেন।
  • আপনি যে কারণে অব্যাহতি চাচ্ছেন সেই কারণটিই স্পষ্টভাবে উল্লেখ করার চেষ্টা করুন কারণ তাতে কর্তৃপক্ষ আপনার প্রতি সন্তুষ্ট থাকবে।  আর যদি কারণটি হয় আপনার ব্যক্তিগত এবং ব্যক্তিগত কারণ সম্পর্কে আপনি তাদেরকে বলতে চান না সেক্ষেত্রে কারণটি না বলে আপনি আপনার ব্যক্তিগত কারণে অব্যাহতি চাচ্ছেন বলে রিজাইন লেটার শুরু করতে পারেন।
  • আবেদনে আপনি একটি প্রাঞ্জল ভাষায় গঠনমূলক ব্যাখ্যা দাঁড় করান এবং কোনভাবেই বাগাড়ম্বর কথাবার্তা বলতে যাবেন না সেক্ষেত্রে আপনার রেজাল্ট এর মান কমে যাবে।
  •  সম্বোধনের ক্ষেত্রে বরাবর এরপর জনাব জনাব ম্যাডাম ইত্যাদি লেখা যাবে

রিজাইন লেটারলেখার কিছু নিয়ম

  • আপনি যে কাগজটিতে রিজাইন লেটার লিখব সেই কাগজটি যেন উন্নত মানের হয় অথবা কম্পিউটারে টাইপ করেও আপনি আপনার রিজাইন লেটার লিখতে পারেন।  তবে হাতে লিখলে রিজাইন লেটার যে ভালো হয়না  তেমনটা কিন্তু বলা যাবে না।
  • রিজাইন লেটার যেদিন জমা দিবেন সেই দিন রিজাইন লেটার এর উপর ঐদিনের তারিখ লিখে দিবেন।
  • তারিখের পর 4 বরাবরে আবেদন করা হবে তার নাম লিখে দেবেন এবং ঠিকানা লিখে দিবেন কার বরাবর এ আবেদন টি যাচ্ছে তার।
  • আবেদনের একেবারে শেষে আপনার বর্তমান ঠিকানা মোবাইল নাম্বার খুব স্পষ্ট ভাবে লিখে দেবেন।
  • আবেদনপত্র যখন লিখবেন খেয়াল রাখবেন আপনি কি ধরনের শব্দ পছন্দ করছেন এবং বানানের দিকে যথেষ্ট সচেতন থাকবেন।
  • আপনি যে সময় চাকরিতে জয়েন করেছিলেন সেই সময়ের তারিখ সাল ইত্যাদি লিখে দিবেন
  • কত তারিখে আপনি আসলে কোম্পানি থেকে অব্যাহতি চান সেই তারিখটা লিখে দিবেন।
  • রিজাইন লেটার দেওয়ার সময় অন্তত চাকরি ছেড়ে দেওয়ার এক মাস আগে  মালিক পক্ষের কাছে রিজাইন লেটার পৌঁছে দিবেন কারণ না হলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।  কিন্তু যদি এমন হয় যে আপনি এক সপ্তাহের মধ্যে অথবা খুবই তাড়াতাড়ি অন্য আরেকটি কোম্পানিতে জয়েন করতে যাচ্ছেন সে ক্ষেত্রে মালিকপক্ষের সাথে আপনি কথা বলে আপনার সময় নির্ধারণ করতে পারেন।
  • আপনার আবেদন এর বাচনভঙ্গি অনেক সুন্দর হবে সহজ হবে সুস্পষ্ট হবে এবং এমন ধরনের কথা ব্যবহার করা যাবে না যার কারণে মালিকপক্ষ আপনার প্রতি ক্রোধান্বিত হয়।
  • বাগাড়ম্বর বাক্য এবং অহেতুক কথাবার্তা লিখবেন না।
  • রিজাইন লেটার যদি হাতে লিখেন তবে খেয়াল রাখবেন যেন কোন ধরনের বানান ভুল কাটাকাটি অথবা ওভাররাইটিং না হয়।  কারণ এগুলো আপনার দক্ষতার প্রমাণ বহন করে না।

রিজাইন লেটার লেখার নমুনা

আপনাদের বুঝতে সুবিধার জন্য রিজাইন লেটার লেখার একটি নমুনা নিচে দেয়া হল।  আপনারা এই  নমুনা টি অনুসরণ করে নিজের মত করে  লিখতে পারেন।

 

তারিখ:01/11/2022

বরাবর,

পরিচালক

প্রতিষ্ঠানের নাম ( অর্থাৎ আপনি যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন সেই প্রতিষ্ঠানের নাম )

ঠিকানা ( প্রতিষ্ঠান যেখানে অবস্থিত সেই ঠিকানা দেবেন)

বিষয়: চাকরি হতে অব্যাহতির জন্য আবেদন। 

জনাব/ জনাবা,

যথাবিহিত সম্মান প্রদর্শন পূর্বক নিবেদন এইযে আমি নিম্নস্বাক্ষরকারী…। ( এই জায়গাটিতে লিখতে হবে আপনার , আপনি যে প্রতিষ্ঠান থেকে চাকরির অব্যাহতি চাচ্ছেন সেই প্রতিষ্ঠানের নাম এবং সেই প্রতিষ্ঠান যে ঠিকানায় অবস্থিত সেই ঠিকানা)।  আমি গত01/01/2019  তারিখে (তারিখের জায়গায় আপনি আপনার জয়নিং এর তারিখ লিখবেন)  আপনার প্রতিষ্ঠান যোগদান করি।  কিছু ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে আমি 01/01/2023  তারিখে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করার জন্য অব্যাহতি পত্র প্রদান করছি। 

অতএব, মহোদয়ের নিকট আমার বিনীত আবেদন অনুগ্রহপূর্বক01/1/ 2023 তারিখ হতে আমায় অব্যাহতি দিয়ে বাধিত  করুন। 

নিবেদক,

এখানে আপনার নাম লিখুন

এখানে আপনি যে পদে চাকরি করুন সেই পদের নাম লেখ

এখানে আপনার প্রতিষ্ঠানের নাম লেখ

এখানে আপনার প্রতিষ্ঠানের নাম লিখুন

 

যেসব কারণে আপনার রিজাইন লেটার বাতিল হতে পারে

বেশ কিছু নিয়ম না মানলে যেকোনো আবেদনপত্র বাতিল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।  সেই  নিয়মগুলো রিজাইন লেটার লেখার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কারণ রিজাইন লেটার একটা আবেদনপত্র।  রিজাইন লেটার লেখার সময় নিম্নোক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন থাকুন যাতে মালিকপক্ষ আপনার লেখাটি বাতিল করতে না পারে।  নিম্নে কি কি কারণে রিজাইন লেটার বাতিল হতে পারে সেই কারণগুলো তুলে ধরা হলো

  • যদি নির্দিষ্ট জায়গায় স্বাক্ষর না থাকে
  • যদি ঠিকমতো পেশাগত পথ উল্লেখ না করেন
  • আপনি যে তারিখে জয়েন করেছেন এবং যে তারিখে অব্যাহতি চান সেই তারিখ ঠিকমত না থাকলে
  • নির্দিষ্ট ফরম সঠিকভাবে পূরণ না করলে
  • যদি প্রমান পত্র সমূহ চায় তবে সেই প্রমাণপত্র গুলো সঠিক সময়ে ঠিকভাবে হাজির করতে না পারলে

আজকের আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করেছি রিজাইন লেটার লেখার নিয়ম সম্পর্কে।  তাহলে আপনাদের যাদের মনে প্রশ্ন ছিল রিজাইন লেটার কিভাবে লিখব তারা জানতে পেরেছেন রিজাইন লেটার লেখার নিয়ম।  এবার আপনি যদি আপনার চাকরির যে কোন পদ থেকে অব্যাহতি পান তাহলে আর আপনার মনে প্রশ্ন থাকবে না  রিজাইন লেটার কিভাবে লিখব।   যেহেতু আপনি একজন পেশাদারিত্বের পরিচয় দিতে রিজাইন লেটার কিভাবে লিখব আর্টিকেলটি পড়ে যথাযথ ব্যবহার করার চেষ্টা করেছেন তাই আপনাকে ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *