স্ত্রীর প্রতি স্বামীর সুন্নত সমূহ, স্ত্রীর সঙ্গে স্বামীর করনীয়

স্ত্রীর প্রতি স্বামীর সুন্নত অনেক রয়েছে । যেমন  হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা কে জিজ্ঞাসা করা হল, নবীজী সাঃ কি ঘরে কাজ করতেন? উত্তরে হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন. রাসুল সাঃ ঘরের মানুষদের সেবায় নামাজে অংশ নিতেন। নামাযের সময় হলে এড়িয়ে যেতেন।

স্ত্রীর সঙ্গে স্বামীর আযাবের উত্তম। স্ত্রীর সঙ্গে উত্তম আচরণ করা স্বয়ং নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত। তিনি তার স্ত্রীর সঙ্গে উত্তম আচরণ করতেন এবং সবসময় উত্তম ব্যবহার করতেন। নবীজির আচরণ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা উন্নতির জন্য একান্ত আবশ্যক। কারণ স্ত্রীদের প্রতি উত্তম আচরণ ও করণীয় সম্পর্কে সার্বিক সহযোগিতায় নবীজী সাঃ ছিলেন অনুকরণীয় আদর্শ। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় তা প্রমাণিত। তাই আমরা বলতে পারি স্ত্রীর প্রতি স্বামীর সুন্নত সমূহ অনেক।

নবীজি নিজের কাজ নিজে করতেন। ঘরের কাজে সহযোগিতা করতেন। হাদীসে এসেছে-

আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী বললেন, উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেছেন, রাসুল সাঃ নিজ হাতে তার কাপড় সেলাই করতেন, নিজের জুতা মেরামত করতেন এবং সংসারের যাবতীয় কাজে অংশগ্রহণ করতেন।

আল্লাহতালা কুরানুল করিম এর স্বামী স্ত্রীকে পরস্পর বলে সম্মোধন করেছেন

আল্লাহ তা’আলা বলেন-

এরপর তাদের প্রভু তাদের দুআ কবুল করে নিলেন যে, আমি তোমাদের কোনো পরিশ্রম কারীর পরিশ্রমী নষ্ট করি না, তা সে পুরুষ হোক কিংবা নারী। তোমরা পরস্পরে এক সুতোয় গাঁথা। দুই প্রান কিন্তু এক আত্মা।

কোরআনের ঘোষণা নারীর প্রতি পুরুষের আচরণ এবং পুরুষের প্রতি নারীর আচরণ হবে সুন্দর ও সহযোগিতাপূর্ণ। কেউ কারো প্রতি বিরূপ আচরণ করবে না। তবে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে তৈরি হবে সুসম্পর্কও মধুর বন্ধন। এ লক্ষ্যে স্বামী-স্ত্রী একে অপর যথাযথ মর্যাদা দেবে।  স্ত্রীর প্রতি স্বামীর সুন্নত সমূহ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করবে। অনেক ক্ষেত্রে স্বামীর কাছ থেকে যেমন স্ত্রীরা যথাযথ মর্যাদা পায় না। যার ফলে পারিবারিক জীবনের শুরু হয় অশান্তি আমন্টি কাম্য নয়।

স্ত্রীর সঙ্গে স্বামীর করনীয়

স্বামী সবচেয়ে বড় গুণ হল স্ত্রীর প্রতি সদাচরণ করা। স্ত্রীকে তার কাজে সহযোগিতা ও সম্মান করা। বিশেষ করে স্ত্রীর সঙ্গে স্বামীর আচরণগুলো হওয়া উচিত এমন-

১. সব সময় স্ত্রীর সঙ্গে ভালো আচরণ করা।

২. স্ত্রীর কোনো কথা বা কাজে কষ্ট পেলে ধৈর্য ধারণ করা।

৩. ঊশৃংখল অন্যায় চলাফেরায় তাকে বারবার কোমল ও নম্র ভাষায় বোঝানো্

৪. সামান্য অজুহাতে স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া বিবাদ না করা। সুযোগ পেলে কথায় কথায় ধমক না দেওয়া এবং রাগ না করা।

৫. আত্মমর্যাদা আঘাত আসে এমন বিষয়  মিস্ত্রি সঙ্গে কথা না বলা। এ ধরনের কোনো পরিস্থিতিতেই সৃষ্টি হলে সংযোগ থাকা।

৬. অকারনে সন্দেহবশত স্ত্রীর প্রতি ধারণা করা।

৭. স্ত্রীর প্রতি দায়িত্ব পালন ও খোঁজ খবর রাখা সহজ যথাযথ আদর-যত্নে উদাসীন না থাকা।

৮. সামর্থ্য অনুযায়ী যথাযথ  ভরণপোষণ দেওয়া। আবাসনের নামে অযথায় যেন না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখা।

৯. নামাজ এবং দ্বীনের আহকাম মেনে চলার ব্যাপারে উৎসাহিত করা এবং বোঝানো।

১০. পবিত্র ও দাম্পত্য জীবনের বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাশাল্লাহ নিয়মকানুনগুলো স্ত্রীকে ভালভাবে শেখানোর ব্যবস্থা করা। ইসলাম পরিপন্থী আপ্রাণ চেষ্টা।

১১. একাধিক স্ত্রী থাকলে সব সময় সবার মাঝে সমতার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।

১২. চাহিদা অনুযায়ী তাদের সঙ্গে সময় দেওয়া। মেলামেশা ও ওঠাবসা তাদের চাহিদার প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া। এমনকি তাদের মতামতের ব্যাপারেও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া অবশ্যক।

১৩. স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া আজল্যা করা। অর্থাৎ মেলামেশার সময় শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত স্বাভাবিক স্থান ত্যাগ না করা।

১৪. একান্ত নিরুপায় না হলে স্ত্রীকে তালাক না দেয়া। ইসলামের সবচেয়ে নিকৃষ্ট বৈধ কাজ তালাক। তালাক দিতে দিতেই হয় ইসলামী শরীয়তের আলোকে তালাক প্রদান করতে হবে।

১৫. স্ত্রী সাহিদা অনুযায়ী থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা স্বামীর দায়িত্ব। সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা। স্ত্রীর প্রতি স্বামীর সুন্নত সমূহ বিষয় স্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করা।

১৬. স্ত্রীকে নিয়ে মাঝে মাঝেই স্ত্রীর নিকট আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া্। স্বামী যদি একান্তই সময় না পায় তবে অন্তত স্ত্রীকে তার আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে দেখা সাক্ষাতের সুযোগ করে দেওয়া স্বামীর দায়িত্ব।

১৭. কোনভাবেই স্ত্রীর দাম্পত্য জীবনে স্ত্রীর সঙ্গে মেলামেশা চিত্র অন্য কারো কাছে প্রকাশ না করা স্বামীর একান্ত কর্তব্য।

১৮.স্ত্রীর অধিকার দেওয়া হয় তবে প্রয়োজনে স্ত্রীকে প্রথমে বারবার সতর্ক করা। এরপর ইসলামের নির্দেশনা অনুসারে হালকা শাসন করা। তবে ইসলামী শরীয়ত যতটুকু অনুমতি দিয়েছে তার চেয়ে বেশি শাসন না করা। সর্বোপরি প্রয়োজনে পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে আলাদা হয়ে যাওয়া।

সুখ ও শান্তিময় পরিবারিক দাম্পত্য জীবনের জন্য সব স্বামীর উচিত

তাদের মৌখিক স্বীকৃতি প্রশংসা প্রশংসার পাশাপাশি সংসারের কাজে সামান্য সময়ের জন্য হলেও স্ত্রীকে সহযোগিতা করা। তবে স্ত্রীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় থাকবে। পারিবারিক জীবনে আনন্দিত সুন্দর শান্তিপূর্ণ সংসারে ফুটে উঠবে। যদি আমরা স্ত্রীর প্রতি স্বামীর সুন্নত সমূহ মেনে চলি।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর স্বামীকে তাদের স্ত্রীর প্রতি সদাচরণ, সহযোগিতা অসম্মান করার তাওফিক দান করুন। শান্তিপূর্ণ পরিবার গঠনে স্ত্রীর প্রতি সমর্থন ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার তৌফিক দান করুন আমিন ।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর আদর্শ স্ত্রীর প্রতি স্বামীর সুন্নত সমূহ

স্বামী-স্ত্রীর পারিবারিক জীবনের গুরুত্ব অনেক। জীবনের অংশটি যদি শান্তিময় ও প্রাণবন্ত হয় তাহলে এটা শুধু একটি ঘরের জন্যই উপকার জনক ও স্থিতি কারক নয় বরং স্বামী-স্ত্রী থেকে আগত অতিথিদের শিক্ষাদীক্ষা ও  সুচরিত্রের  জন্য উপকারী।

পারিবারিক শৃঙ্খলা এবং স্থিরতা এর উপর নির্ভরশীল। মহান আল্লাহ তাআলা না করুক, জিন্দেগীর এ অংশটি যদি ভুল বোঝাবুঝি ও অসহযোগিতার শিকার হয় তাহলে জীবনের এই অংশটি অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে যাবে।   একদিকে যা পারিবারিক শৃঙ্খলা বিনষ্ট করবে এবং অন্যদিকে তাদের থেকে আগত ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এমন নারকীয় পরিবেশে সঠিক শিক্ষা ও তার বৃহৎ থেকে বঞ্চিত হবে। যার ফলে  সে চরী সে চরিত্র কর্মদক্ষ একেবারে একেবারেই লাগা এবং পারিবারিক সম্পর্ক বন্ধ স্থবির হয়ে । তাই আমাদের স্ত্রীর প্রতি স্বামীর সুন্নত সমূহ মেনে চলতে হবে।

বিয়ে এক ধারাবাহিক সম্পর্কের নাম:

নবী রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম এর পবিত্র জীবনাদর্শ হলো সমগ্র মানবজাতির জন্য পথচলার আলোকবর্তিকা ও পাথেয়। জীবনের প্রতিটি বাঁকে বাঁকে পবিত্র জীবনাদর্শন মানুষকে রাস্তা দেখায় এবং জীবনের অন্ধকার ছন্ন দিকগুলোকে  নিজ আলোয় আলোময় করে দেয়।

এজিনিশ তখনই আসবে যখন স্বামী স্ত্রী একে অপরের পরিপূর্ণভাবে আদায় করবে এবং আনন্দঘন ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠবে। হ্যাঁ এটা যে ,এ সম্পর্কের স্থায়িত্বঅস্থিরতার জন্য স্বামীর অসাধারণ কর্ম দক্ষতা থাকা চাই। আর পবিত্র শরীয়তে বিয়ের লাগাম দিয়েছেন। এজন্য সম্পর্ক করবে সাল্লে সাল্লাম-এর পবিত্র ও তাদের জীবনে বাস্তবায়ন খুবই প্রয়োজন। স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্ব পূর্ণ কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো-

নবী রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর কাঁধে নবুয়তের গুরু দায়িত্বের কারণের নবী রাসূল সাল্লাহু সাল্লাম এর ঘরোয়া ও বাহিরে জীবন খুবই ব্যস্ত ছিল। কিন্তু তা সত্বেও নবী রাসূল সাল্লাহু সালাম এর সুন্নত ছিল যে, যখন তিনি ঘরে আসতেন তখন আর তার স্বামী খামির বানাতে, অথবা ঘরের অন্যান্য প্রয়োজন পূরণ করতে।

হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু কে নবী এর ঘরোয়া কাজকর্মে কথা জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, তিনি মাথা থেকে উকুন বের করতেন,  ছাগলের দুধ দোহন করতেন, নিজের কাপড় সেলাই করতেন, নিজের কাজ নিজে করতেন, নিজের জুতা সেলাই নিজেই করতেন এবং সেসব কাজ করতেন যা অন্যান্য পুরুষদের নিজ ঘরে করে থাকে। নবী রাসূল সাল্লাহু সালাম ঘরোয়া কাজকর্মের লেগে থাকতেন নামাজের সময় হলে তা ছেড়ে নামাজ পড়তে যেতেন। আমরা নবী রাসুল সাল্লালাহ সালামের জীবনের থেকে জানতে পারি যে তিনি স্ত্রীর প্রতি স্বামীর সুন্নত সমূহ প্রত্যেকটি পালন করে থাকতেন এবং আমাদের উচিত স্ত্রীর প্রতি স্বামীর সুন্নত সমূহ পালন করা তবে আমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠ বান্দা হয়ে উঠব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *