আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ আশা করি সকলে ভালো আছেন। জুমু’আর দিন সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন। আর কোন দিন, কোন রাত, কোন মাস, কোন জায়গা, কোন ব্যক্তি, কোন বস্তুকে শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া, মর্যাদা দান করা আল্লাহ তাআলার মর্জি, ও ইচ্ছাধীন বিষয়। তিনি সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা। তিনি শ্রেষ্ঠত্ব,বড়ত্ব ও মর্যাদা দানকারী ।
ইরশাদ হচ্ছে:
وربك يخلق ما يشاء ويختار
“আপনার পালনকর্তা যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং তিনি মনোনীত করেন।” (সূরা কাসাস: ৬৮)
তাঁর এ শেষ্ঠত্ব দান ও মর্যাদানের ব্যাপারে কারও দ্বিমত পোষণ করার অধিকার নেই ।
যেমনিভাবে তিনি সমস্ত ফেরেশতাদের মাঝে হযরত জিবরাঈল আ.-কে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। সমস্ত নবীদের মধ্যে মুহাম্মাদ সা.-কে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। সমস্ত মাসের মধ্যে রমাযান মাসকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। সমস্ত রাতের মধ্যে লাইলাতুল কদরকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। ঠিক তেমনিভাবে সমস্ত দিনের মধ্যে জুমু’আর দিনকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। এ শ্রেষ্ঠ দিনেই আল্লাহ তাআলা তার শ্রেষ্ঠ মাখলুক মানব জাতির আদি পিতা হযরত আদম আ.-কে সৃষ্টি করেছেন। এ দিনে জান্নাতে দাখিল করেছেন। আর এ দিনেই তাকে জান্নাত থেকে পৃথিবীতে নামিয়ে দিয়েছেন। আর এ দিনে কিয়ামত কায়েম হবে।
আজকে আমরা আলোচনা করব জুমার দিনের আমল ও ফজিলত সম্পর্কে
জুমার দিনের আমল
জুমার দিন অত্যন্ত মুবারাক দিন। এই দিনের বিশেষ আমল হলো।
জুমার দিনের আমল ১
দু’রাকাত জুমু’আর নামায
জুমার দিনের আমল ২
জুমার নামাজের পূর্ব খুৎবা।
এছাড়া এদিনের আরও কিছু আমল রয়েছে।
জুমার দিনের আমল ৩
সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করা। (হাদীছে আছে, যে ব্যক্তি জুমু’আর দিনে সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করবে তাকে তার পায়ের তলা থেকে আসমান পর্যন্ত নূর দান করা হবে এবং এ জুমু’আ থেকে পরবর্তী জুমু’আ পর্যন্ত তার সকল গুনাহ মাফ করা হবে।)
জুমার দিনের আমল ৪
চুল কাটা
জুমার দিনের আমল ৫
নখ কাটা
জুমার দিনের আমল ৬
শরীরের আন্যান্য স্থানের আবাঞ্ছিত কেশরাশি সাফ করা।
জুমার দিনের আমল ৭
জুমু’আর নামাযের আগে গোসল করা।
জুমার দিনের আমল ৮
জুমু’আর দিন আছর নামাযের পর একটি বিশেষ দরূদ শরীফ পাঠ করা। উক্ত দরূদ এই
اللهم صل على محمد النبي الأمي وعلى اله وسلم تسليما
যে ব্যক্তি উক্ত দরূদ আশিবার পাঠ করবে, তার আশি বছরের গুণাহ মাফ করা হবে এবং আশি বছরের নেক আমালের সওয়াব তার আমল নামায় লিখে দেয়া হবে।
জুমার দিনের আমল জানার পর এ পর্যায়ে আমরা জানবো
জুমু’আর দিনের ফযীলত
জুমু’আর দিন ও জুমু’আর নামাযের বহু ফযীলতের কথা হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। রাসূল কারীম সা. ইরশাদ করেন:
من اغتسل يوم الجمعة وليس من أحسن ثيابه ومش من طيب إن كان عنده ثم أتى الجمعة فلم يتخط أعناق النّاس ثم صلى ما كتب الله له ثم أنصت إذا خرج
إمامه حتى يفرغ من صلوته كانت كفارة لما بينها وبين جمعة التي قبلها.
অনুবাদ
যে ব্যক্তি জুমু’আর দিন গোসল করবে, সাধ্য মোতাবেক ভাল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কাপড় পরিধান করবে, সুগন্ধি থাকলে তা ব্যবহার করবে। এরপর জুমু’আর নামাযের জন্য মসজিদে হাজির হয়ে যারা আগে থেকে বসে আছে তাদের ডিঙিয়ে আগে না গিয়ে বরং যেখানে জায়গা পায় সেখানে গিয়ে আল্লাহ তাআলা যতটুকু তাওফীকু দেন সে মোতাবেক সুন্নত ও নফল পড়বে। আর ইমাম যখন খুৎবা দেয়ার জন্য বের হবে তখন আদবের সাথে চুপ থেকে ইমামের দিকে মুতাওয়াজ্জিহ হয়ে মনোযোগ সহকারে খুৎবা শুনবে এবং নামায শেষ করবে- তার এ জুমু’আর নামায গত জুমু’আর নামায পর্যন্ত কৃত সমস্ত গুনাহ’র জন্য কাফফারা স্বরূপ হবে।”
অর্থাৎ, পুরো এক সপ্তাহের গুনাহ আল্লাহ তাআলা মাফ করে দেবেন। এমন সুসংবাদ এমন ফযীলতের কথা শুনেও সপ্তাহে একটা দিন দু’রাকাত নামাযের যে গুরুত্বের কথা ছিল আমরা তা দিই না। আমাদের স্বভাব হলো, দুনিয়ার কোন লাভের কথা, লোভের কথা, প্রাপ্তির কথা শুনলে সে দিকে আমরা হুমড়ি খেয়ে পড়ি। আর আখিরাতে পাওয়ার কথা শুনেও না শুনার ভান করি।
জুমার দিনের আমল জানার পর এখন আমরা জানবো
জুমু’আর নামাযে দুই আযান কেন?
জুমু’আর আযান প্রসঙ্গে বলতে পারেন যে, আযান তো জুমু’আর দিন দুই বার দেওয়া হয়। সুতরাং খুৎবার আগে যে আযান দেয়া হয় তার আগে আসলেই তো চলে। এর আগে যে আযান দেয়া হয় এটা তো রাসূলুল্লাহ সা.-এর আমলে ছিল না। আর আয়াতও তো তখনই নাযিল হয়েছে। এর জবাব এই যে, রাসূলুল্লাহ সা.-এর যামানায় এক আযান ছিল এ কথা সত্য এবং তা ঐ সময়দেয়া হত, যখন রাসূলুল্লাহ সা. খুত্বা দেওয়ার জন্য মিম্বারে বসতেন। রাসূলুল্লাহ সা.-এর ইন্তিকালের পর হযরত আবূ বকর ও উমর রাযি.-এর যামানায়ও এ নিয়মই বহাল ছিল। খুৎবার আযানের পূর্বে আরও একবার আযান দেয়ার এ নিয়ম চালু করেন হযরত উসমান গণী রাযি। তিনি তাঁর খিলাফাত কালে মুসলমানদের সংখ্যা যখন বেড়ে গেল এবং দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এসে জামা’আতে শরীক হতে লাগলো, অপর দিকে ব্যবসা-বাণিজ্য, কায়-কারবারে মানুষের ব্যস্ততা যখন বেড়ে গেল, তখন তিনি দেখলেন যে, দিন দিন মানুষের অলসতা কর্মব্যস্ততা যেভাবে বেড়ে চলছে তাতে আরও একবার আযানের ব্যবস্থা না হলে মানুষ খুৎবাই শুনতে পারবে না এবং অনেকে জামা’আতে নামায পড়া থেকেও বঞ্চিত হবে। অথচ প্রাথমিক যুগে জুমু’আর দিনে আযানের আগেই মানুষ (সাহাবায়ে কেরাম) মসজিদে হাজির হয়ে যেতেন এবং খুৎবার আযান তাদের সামনেই হতো। সময়ের এ পরিবর্তনের তাগিদেই হযরত উসমান রাযি. তার খিলাফাত আমলে ‘যাওরা’ নামক স্থানে এই প্রথম আযানের বিধান প্রবর্তন করেন।
তিনি কুরআনে কারীমের আয়াত:
فاسعوا إلى ذكر الله
থেকে ইজতেহাদ করেই এ আযানের ফরমান জারী করেছেন। এ ছাড়া তিনি খুলাফায়ে রাশেদীনেরই একজন। আর রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন :
عليكم بسنتي وسنة الخلفاء الراشدين المهديين
(ابوداود، السنة/لزوم السنة ٦٣٥/٢، رقم: 4607)
অনুবাদ
তোমরা আমার ও খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নতকে আকড়ে ধরবে।” এর দ্বারা বুঝা যায় যে, হযরত উসমান রাযি. কর্তৃক প্রবর্তিত এ জুমু’আর প্রথম আযান বিদ’আত নয় বরং এটা শরীয়তের বিধান। এ ছাড়া সাহাবায়ে কেরাম রাখি, হযরত উসমান রাযি.-এর এ বিধানকে কায়মনোবাক্যে মেনে নিয়েছে। এর দ্বারা সাহাবাদের ইজমা’ও সংঘটিত হয়েছে। আর সাহাবাদের ইজমা’ শরীয়তের বিধান। সুতরাং আয়াতে ও বলে যে, আযান বুঝনো হয়েছে তা দ্বারা এই প্রথম আযানই উদ্দেশ্য হবে। এর উপর সমস্ত ফুকাহা কেরাম একমত। এ আযান শুনেই আমাদেরকে নামাযের প্রতি তৎপর হতে হবে। এ আযানের পরই বেচাকেনা হারাম হিসেবে গণ্য হবে।
জুমার দিনের আমল শেষ কথা
আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে উক্ত আমলগুলো নিয়মিতভাবে প্রতি জুমার দিন আমল করার মত তৌফিক দান করুন আমিন।