কম্পিউটারের ভাইরাস থেকে মুক্তির উপায়
কম্পিউটারে ভাইরাস এমন একটা শব্দ যা শুনলে মাথা ব্যথা করে । কম্পিউটারের ভাইরাস আমাদের মধ্যে অনেকেই এই শব্দটি অনেকবার শুনেছেন এবং জানেন যে ভাইরাস আমাদের কম্পিউটার বা ল্যাপটপের জন্য অনেক ক্ষতিকারক । কেননা কম্পিউটারে ভাইরাস হলে আমাদের অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয় । কম্পিউটার ঠিক মত চলে না সফটওয়্যার গুলো ঠিক মতো কাজ করে না কম্পিউটারের প্রোগ্রামগুলো ঠিকমত কাজ করে না ফাইলগুলো ব্যবহার করা যায় না আরও বিভিন্ন ধরনের সমস্যা । কিন্তু তা সত্বেও আমরা এই ব্যাপারে জায়গাটা এর জন্য প্রতিরোধের জন্য কিছু করাটা জরুরী মনে করিনা।
তাই আমাদের আজকের আর্টিকেলের বিষয়টি হলো কম্পিউটার ভাইরাস কি , লক্ষণ , পরিত্রাণের উপায়।
কম্পিউটার ভাইরাস কি?
কম্পিউটারের ভাইরাস হলো এমন এক ধরনের ক্ষতিকারক সফটওয়্যার বা ম্যালওয়্যার যা নিজে নিজে কপি হতে পারে এবং এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে সংক্রমিত হতে পারে ।কম্পিউটারের ভাইরাস এর পূর্ণরূপ হল Virus – Vital Information resource under Siege ।কম্পিউটার ভাইরাস এমন একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম যা ফাইল যা কম্পিউটার ব্যবহারকারীর অনুমতি ব্যতীত বা কম্পিউটারের সিস্টেমে ঢুকে কম্পিউটারের সিস্টেম ফাইল কে ধ্বংস করে ক্ষতিকর কিছু প্রবেশ করাই । যার ফলে কম্পিউটার কাজ করতে পারে না । কম্পিউটারে ভাইরাস কিভাবে প্রবেশ করবে তা বোঝা বড় দায় । তাই আমাদের সবসময় কম্পিউটারের ভাইরাস থেকে সচেতন থাকা উচিত । কেননা কম্পিউটারে ভাইরাস প্রবেশ করলে কম্পিউটারের থাকা প্রোগ্রাম কিংবা ছবি এই জিনিসগুলো ধ্বংস হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে ।1983 সালের 10 নভেম্বর এ কম্পিউটার ভাইরাস জন্মগ্রহণ করেন ।
কম্পিউটারে ভাইরাস কিভাবে ছড়ায় ?
কম্পিউটারের ভাইরাস সাধারণত পেনড্রাইভের মাধ্যমে ছড়ায় । অফলাইন পদ্ধতিতে কম্পিউটার ভাইরাস সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত হয় পেনড্রাইভের ব্যবহারের মাধ্যমে । ভাইরাস আক্রান্ত কম্পিউটারের পেনড্রাইভ যদি আপনার কম্পিউটারে প্রবেশ করানো হয় তাহলে আপনার কম্পিউটারে ভাইরাস ঢুকে যাবে তখন সংক্রিয়ভাবে ওই ভাইরাসটি কম্পিউটারের রান হয়ে যায় । যার ফলে ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে পড়ে কম্পিউটারটি । এর জন্য পেনড্রাইভ ওপেন করার পূর্বে এন্টিভাইরাস দিয়ে স্ক্যান করে নিতে হবে । ভাইরাস পেনড্রাইভ এর মাধ্যমে অটোরান ফাইল তৈরি করে যার ফলে পেনড্রাইভ কম্পিউটারের প্রবেশ এর সাথেসাথে ফাইলটি চালু হয়ে যায় ।
ইন্টারনেটের মাধ্যমে কম্পিউটারে ভাইরাস প্রবেশ করে । কম্পিউটারে যতগুলো মাধ্যমে ভাইরাস স্থানান্তর হয় তার মধ্যে অন্যতম মাধ্যম হলো ইন্টারনেট । নতুন নতুন ভাইরাস তৈরি করার পর বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয় । যখন কেউ ভাইরাসযুক্ত ওয়েবসাইটগুলো দেখে বা ওয়েবসাইটগুলোতে প্রবেশ করে তখন ভাইরাসটি সংক্রিয়ভাবে ব্যবহারকারীর কম্পিউটারে প্রবেশ করে যায় । যার ফলে কম্পিউটারে ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেয় ।
অনেক সময় সফটওয়ারের মাধ্যমে কম্পিউটারে ভাইরাস ছড়ায় । আমরা যে সফটওয়্যারগুলো ব্যবহার করি সেই সফটওয়্যারগুলোতে ভাইরাস থাকতে পারে আমরা যখন সেই ভাইরাসযুক্ত সফটওয়্যার গুলো ব্যবহার করি তখন আমাদের কম্পিউটারে ভাইরাস প্রবেশ করে ।
কম্পিউটার ভাইরাসের বৈশিষ্ট্য
কম্পিউটারের ভাইরাস এর কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে । এই বৈশিষ্ট্যগুলো দেখে আমরা আসলে বুঝতে পারি যে কম্পিউটারে ভাইরাস আক্রমণ করেছে । নিচে এই বৈশিষ্ট্যগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো ।
- কম্পিউটার ভাইরাস এক ধরনের ক্ষতিকর প্রোগ্রাম বা প্রোগ্রাম গুচ্ছ ।
- কম্পিউটার ভাইরাস পুনঃউৎপাদন ক্ষমতা এবং এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে সংক্রমিত হওয়ার ক্ষমতা রাখে ।
- ভাইরাস দুই ধরনের হতে পারে স্থায়ী কিংবা অস্থায়ী ।
- ব্যবহারকারীদের হস্তক্ষেপ ছাড়া ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে না ।
- ভাইরাস বহনের জন্য মাধ্যমের প্রয়োজন হয় ।
- সব ধরনের ভাইরাস ম্যালওয়্যার কিন্তু সব ম্যালওয়্যার ভাইরাস না ।
সব ধরনের ভাইরাসের ক্ষতির ক্ষমতা একরকম নয় বিভিন্ন রকম ভাইরাসের ক্ষতির ক্ষমতা বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে ।
কম্পিউটারের ভাইরাসের লক্ষণ
যখন আমাদের ব্যবহৃত কম্পিউটার বা ল্যাপটপের ভাইরাস আক্রমণ করে তখন বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয় ।এই সমস্যাগুলো অনুধাবন করে আমরা বুঝতে পারি যে আমাদের কম্পিউটারে ভাইরাস আক্রমণ করেছে ।নিচে কম্পিউটারের ভাইরাসের লক্ষণ গুলো তুলে ধরা হলো ।
কম্পিউটার ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ গুলো হলো-
- কম্পিউটারের গতি কমে যাওয়া
- কম্পিউটার হ্যাং হয়ে যাওয়া
- কম্পিউটার ঘনঘন রিবুট হওয়া
- অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রাম সঠিকভাবে কাজ না করা
- কম্পিউটারের মনিটরের অযৌতিক বার্তা প্রদর্শন করা
- কম্পিউটারে ভাইরাস আক্রান্ত হলে মেমোরি রাস পায় ফলে কম্পিউটারের গতি কমে যায়
- কম্পিউটার অন করতে অনেক বেশি সময় লাগে
- হার্ডডিক্স এর ফ্রি স্পেস কমে যায়
- কোন নতুন প্রোগ্রাম কিংবা ফাইল ইনস্টল করার সময় অনেক বেশি সময় লেগে যায়
- কম্পিউটারে সেভ করা ফাইলগুলো এমন নাম ধারণ করবে যা পড়া যায় না কিংবা বোঝা যায় না
- আপনার বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ফাইলগুলো হিডেন হয়ে যেতে পারে
কম্পিউটার যদি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয় তবে কম্পিউটারের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ার পাশাপাশি কম্পিউটার বারবার হ্যাং হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা যায় । যার কারণে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট হয় এবং আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজের ব্যাঘাত ঘটে । আর এই ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমাদের কম্পিউটারের ভাইরাস প্রতিরোধ বা পরিত্রাণের উপায় সম্পর্কে জানতে হবে ।
কম্পিউটার ভাইরাস পরিত্রানের উপায়
- শুরুতেই আপনারা আপনাদের কম্পিউটার সিস্টেমে একটি ভালো এন্টিভাইরাস ইন্সটল করুন এবং নিয়মিত আপডেট করতে থাকেন । আপনি যদি বেশি ইন্টারনেট ব্যবহার করেন তাহলে আপনি প্রিমিয়াম এন্টিভাইরাস ব্যবহার করতে পারেন ।অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহার করার কারণে ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি রয়েছে । অতএব বেশি ইন্টারনেট ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন বিশেষ করে যেসব ওয়েবসাইট নিরাপদ নয় সেগুলো ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন । কেননা যেসব ওয়েবসাইটগুলোতে সমস্যা থাকে আপনি যদি সে ওয়েবসাইটগুলো ব্যবহার করেন তাহলে আপনার কম্পিউটারে ভাইরাস প্রবেশ করার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে ।তাই ওয়েবসাইটগুলোতে প্রবেশ থেকে বিরত থাকুন ।
- যে সকল সাইট গুলোর জনপ্রিয় কিন্তু নিবন্ধিত নয় সেই সকল ওয়েবসাইট গুলো ভিজিট না করাই সবচেয়ে ভালো হবে ।
- পেনড্রাইভ বা যেকোন এক্সটার্নাল ডিভাইস পিসিতে ব্যবহার করার আগে তা অবশ্যই স্ক্যান করে রাখুন ।
- আপনার কম্পিউটারকে নির্দিষ্ট সময় পরপর এন্টিভাইরাস দিয়ে স্ক্যান করতে থাকুন ।
- যদি আপনাকে কেউ ই মেইল পাঠায় এবং ইমেইলে তার সম্পর্কে কোনো তথ্য না থাকে তাহলে সেই ইমেইল খুলবেন না বিশেষ করে ইমেইল থেকে কোন লিংক ক্লিক করবেন না এক কথায় বলতে গেলে কোন অপরিচিত লিঙ্ক ক্লিক করবেন না ।
- অননুমোদিত ওয়েবসাইট থেকে কোন কিছু ডাউনলোড করবেন না । যেমন কোন ধরনের মুভি mp3 সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার ইত্যাদি কোন কিছু ডাউনলোড করবেন না ।
- আপনি যদি কোন কিছু ডাউনলোড করে থাকেন তাহলে সেই ডাউনলোড করা জিনিসটা সঠিকভাবে স্ক্যান করে নিন কারণ এগুলোর মধ্যে ভাইরাস থাকার সম্ভাবনা অনেক বেশি যা আপনার কম্পিউটারকে সংক্রমিত করতে পারে ।
- খারাপ ওয়েবসাইট গুলো থেকে বিরত থাকুন । আপনি যদি চান যে ভাইরাস আপনার কম্পিউটারে প্রবেশ না করুক তাহলে আপনার কম্পিউটারকে কখনোই পর্ন ওয়েবসাইটে ওপেন করবেন না ।কারণ পর্ন ওয়েবসাইটগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ভাইরাস থাকে ।
- যেকোনো অ্যাপ কে কোন পারমিশন দেওয়ার আগে তার মেনুয়াল ভালো করে পড়ে নিবেন । যদি নিরাপদ মনে হয় শুধুমাত্র সেই খেতেই পারমিশন দেবেন । যদি আপনার কাছে নিরাপদ না মনে হয় তাহলে আপনি পারমিশন দেবেন না । যেমন আপনি যদি কোন ফটো এডিটিং অ্যাপ ডাউনলোড করে থাকেন সাধারণভাবে এটি আপনার ফটো গ্যালারীর এক্সেস ব্যতীত অন্য কিছুর এক্সেস পারমিশন চাওয়ার কথা নয় ।তাই এমন অ্যাপ যদি আপনার ডিভাইসকে ক্ষতি করতে পারে তাই সন্দেহজনক এমন কোন অ্যাপ ডাউনলোড করবেন না ।
- পাবলিক নেটওয়ার্ক এর ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো ভালোমানের ভিপিএন ব্যবহার করুন ।এই ধরনের ভিপিএন ম্যালওয়্যার ও নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে প্রবেশ করতে চাওয়া ভাইরাস থেকে আপনার ডিভাইসকে নিরাপদ রাখতে সাহায্য করে থাকে ।
- বিশ্বস্ত ওয়েব ব্রাউজার ব্যবহার করুন । যদি সাধারন ব্রাউজার ব্যবহার করেন যার সিকিউরিটি নিয়ে আপনি সন্দেহে আছেন তবে ওই ধরনের ওয়েব ব্রাউজার গুলো ব্যবহার করবেন না ।
- ডিভাইসের সকল অ্যাপ বা সফটওয়্যার এর আপডেট ভার্সন ব্যবহার করুন এতে পুরাতন সাধারণ ভাইরাসগুলো আর কোন ক্ষতি করে উঠতে পারবে না ।
- সব সময় আপনার কম্পিউটারে ব্যাকআপ স্টোরেজ রেডি রাখুন ভাইরাস আক্রমণের যদি আপনার গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলী ডকুমেন্ট মুছে যায় যাতে সেই ব্রেকআপ থেকে তা আবার খুঁজে পাওয়া যায় ।
আমাদের আজকের আর্টিকেলের বিষয়টি ছিল কম্পিউটারের ভাইরাস কি লক্ষণ ও পরিত্রানের উপায় ।
আশাকরি আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন যে কম্পিউটারে ভাইরাস কি লক্ষণ ও পরিত্রানের উপায় । সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ ।