আসসালামু আলাইকুম আজকে আমরা কোরবানির যাবতীয় মাসআলা নিয়ে আলোচনা করব এতে করে কোরবানি সংক্রান্ত যত ধরনের প্রশ্ন রয়েছে তার সবগুলোরই উত্তর পাওয়া যাবে আশা করা যায়।তাই যারা কোরবানি সংক্রান্ত যেকোনো মাসালা জানতে চাচ্ছেন তারা আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন তাহলে সব ধরনের প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজে পাবেন ইনশাআল্লাহ।
যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।
- কত টাকা থাকলে কোরবানি ওয়াজিব
- কোরবানির ফজিলত
- কোরবানি করার সময়
- কাদের উপর কোরবানি ওয়াজিব
- কোন কোন পশু দ্বারা কোরবানি করা যায়
- কোরবানির পশুর বয়স সম্পর্কে
- কোরবানির পশুর স্বাস্থ্যগত অবস্থা সম্পর্কে
- কোরবানিতে শরিক হওয়ার মাসায়েল
- কয়জন শরিক হতে পারবে
- মৃতের নামে কোরবানি করা যায় কিনা
- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামে কোরবানি করা যায় কিনা।
- কোরবানির পশু জবাই করা প্রসঙ্গে
- গোস্ত বন্টনের তরিকা
পরিবারের খরচ মেটানোর পর যদি জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ নির্ধারিত পরিমাণ স্বর্ণ বা রুপা থাকে কিংবা নির্ধারিত পরিমাণ স্বর্ণ বা রুপার বাজার দর অনুযায়ী ৫০ হাজার থেকে ৪ লাখ টাকা থাকে ওই ব্যক্তির জন্য কুরবানি করা আবশ্যক।’
কত টাকা থাকলে কোরবানি ওয়াজিব জানার পর এখন আমরা জানবো
কুরবানীর ফযীলতঃ
কুরবানীর জন্তুর শরীরে যত পশম থাকে, প্রত্যেকটা পশমের পরিবর্তেএক একটি নেকী পাওয়া যায়।
কুরবানীর দিনে কুরবানী করাই সবচেয়ে বড় ইবাদত।
কত টাকা থাকলে কোরবানি ওয়াজিব জানার পর এখন আমরা জানবো
কুরবানী করার সময়
১০ই যিলহজ্জের ফজর থেকে ১২ই যিলহজ্জের সন্ধা পর্যন্ত।
কাদের উপর কুরবানী দেয়া ওয়াজিব
কুরবানীর দিনগুলোতে যার নিকট সদকায়ে ফিতর/ফিতরা ওয়াজিব হওয়া পরিমাণ অর্থ/সম্পদ থাকে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব।
মুসাফিরের উপর (সফরের হালতে থাকলে) কুরবানী করা ওয়াজিব হয়না।
কুরবানী ওয়াজিব না হলেও নফল কুরবানী করলে কুরবানীর ছওয়াব পাওয়া যাবে।
কুরবানী শুধু নিজের পক্ষ থেকে ওয়াজিব হয় সন্তানাদি, মাতা-পিতা ও স্ত্রীর পক্ষ থেকে ওয়াজিব হয় না, তবে তাদের পক্ষ থেকে করলে তা নফল কুরবানী হবে।
যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয় সে কুরবানীর নিয়তে পশু ক্রয় করলে সেই পশু কুরবানী করা তার উপর ওয়াজিব হয়ে যায় ।
কোন মকসুদের /ইচ্ছার জন্য কুরবানীর মান্নত করলে সেই মকসূদ পূর্ণ হলে তার উপর (গরীব হোক বা ধনী) কুরবানী করা ওয়াজিব হয়ে যায় ।
যার উপর কুরবানী ওয়াজিব সে কুরবানী না করলে কুরবানীর দিনগুলো চলে যাওয়ার পর একটা বকরীর মূল্য সদকা করা ওয়াজিব।
কত টাকা থাকলে কোরবানি ওয়াজিব জানার পর এখন আমরা জানবো
কোন্ কোন্ জন্তু যারা কুরবানী করা জায়েয।
বকরী, পাঠা, খাসী, ভেড়া, ভেড়ী, দুম্বা গাভী, ষাড়, বলদ, মহিষ, উট এই কয় প্রকার গৃহপালিত জন্তু দ্বারা কুরবানী করা জায়েয।
কুরবানী-র জন্তুর বয়স প্রসঙ্গ।
বকরী, খাসী, ভেড়া, ভেড়ী, দুম্বা কম পক্ষে পূর্ণ এক বৎসর বয়সের হতে হবে। তবে ভেড়া, ভেড়ী ও দুম্বার বয়স যদি কিছু কমও হয় কিন্তু এরূপ মোটা তাজা হয় যে, এক বৎসর বয়সীদের মধ্যে ছেড়ে দিলেও তাদের চেয়ে ছোট মনে হয় না, তাহলে তার দ্বারা কুরবানী দুরস্ত আছে; তবে অন্ততঃ হয় মাস বয়স হতে হবে। বকরীর ক্ষেত্রে এরূপ ব্যতিক্রম নেই। বকরী কোন অবস্থায় এক বৎসরের কম বয়সের হতে পারবে না।
গরু ও মহিষের বয়স কম পক্ষে দুই বৎসর হতে হবে।
উট-এর বয়স কম পক্ষে পাঁচ বৎসর হতে হবে।
কুরবানীর জন্তুর স্বাস্থ্যগত অবস্থা প্রসঙ্গ :
কুরবানীর পশু ভাল এবং হৃষ্ট-পুষ্ট হওয়া উত্তম। * যে প্রাণী লেংড়া অর্থাৎ, যা তিন পায়ে চলতে পারে -এক পা মাটিতে রাখতে পারে না বা রাখতে পারলেও তার উপর ভর করতে পারে না- এরূপ পশু দ্বারা কুরবানী জায়েয নয় । যে পশুর একটিও দাঁত নেই তা দ্বারা কুরবানী দুরস্ত নয়। তবে দাঁত না থাকা সত্ত্বেও ঘাস খেতে সক্ষম হলে তা দ্বারা কুরবানী দুরস্ত আছে।
যে পশুর কান জন্ম থেকেই নেই তা দ্বারা কুরবানী দুরস্ত নয়। তবে কান ছোট হলে অসুবিধা নেই।
যে পশুর শিং মূল থেকে ভেঙ্গে যায় তা দ্বারা কুরবানী দুরস্ত নয়। তবে শিং ওঠেইনি বা কিছু পরিমাণ ভেঙ্গে গিয়েছে এরূপ পশুর কুরবানী দুরস্ত আছে।
যে পশুর উভয় চোখ অন্ধ বা একটি চোখ পূর্ণ অন্ধ বা একটি চোখের দৃষ্টি শক্তি এক তৃতীয়াংশের বেশী নষ্ট তা দ্বারা কুরবানী দুরস্ত নয়।
যে পশুর একটি কান বা লেজের এক তৃতীয়াংশের চেয়ে বেশী কেটে গিয়েছে তা দ্বারা কুরবানী দুরস্ত নয়।
অতিশয় কৃশকায় ও দুর্বল পশু যার এতটুকু শক্তি নেই যে, জবেহের স্থান পর্যন্ত হেটে যেতে পারে তা দ্বারা কুরবানী দুরস্ত নয়।
ভাল পশু ক্রয় করার পর এমন দোষ ত্রুটি দেখা দিয়েছে যার কারণে কুরবানী দুরস্ত হয় না- এরূপ হলে ঐ জন্তুটি রেখে আর একটি ক্রয় করে কুরবানী করতে হবে। তবে ক্রেতা গরীব হলে সেটিই কুরবানী দিতে পারবে।
গর্ভবতী পশু কুরবানী করা জায়েয। যদি পেটের বাচ্চা জীবিত পাওয়া যায় তবে সে বাচ্চাও জবেহ করে দিবে। তবে প্রসবের নিকটবর্তী হলে সেরূপ গর্ববর্তী পশু কুরবানী দেয়া মাকরূহ। বন্ধা পশু কুরবানী করা জায়েয়।
কত টাকা থাকলে কোরবানি ওয়াজিব জানলাম এখন জানবো
শরীকের মাসায়েল এবং একটা পশুতে কয়জন শরীক হতে পারে?
বকরী, খাসী, পাঠা, ভেড়া, ভেড়ী ও দুম্বায় এক জনের বেশী শরীক হয়ে কুরবানী করা যায় না। এগুলো একটা একজনের নামেই কুরবানী হতে পারে।
একটা গরু, মহিষ ও উটে সর্বোচ্চ সাতজন শরীক হতে পারে। সাতজন হওয়া জরূরী নয়-দুইজন বা তিনজন বা চারজন বা পাঁচজন বা ছয়জন কুরবানী দিতে পারে, তবে কারও অংশ সাত ভাগের এক ভাগের চেয়ে কম হতে পারবে না।
মৃতের নামেও কুরবানী হতে পারে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর বিবিগণ ও বুযুর্গদের নামেও কুরবানী হতে পারে।
যে ব্যক্তি খাঁটি অন্তরে আল্লাহর উদ্দেশ্যে কুরবানী করে না বরং গোশত খাওয়া বা লোক দেখানো ইত্যাদি নিয়তে কুরবানী করে, তাকে অংশীদার বানিয়ে কোন পশু কুরবানী করলে সকল অংশীদারের কুরবানী-ই নষ্ট হয়ে যায়। তাই শরীক নির্বাচনের সময় খুবই সতর্ক থাকা দরকার।
কুরবানীর পশু ক্রয় করার সময় শরীক রাখার এরাদা ছিল না, পরে শরীক গ্রহণ করতে চাইলে ক্রেতা গরীব হলে তা পারবে না, অন্যথায় পারবে।
যার সমস্ত উপার্জন বা অধিকাংশ উপার্জন হারাম, তাকে শরীক করে
কুরবানী করলে অন্যান্য সকল শরীকের কুরবানী অশুদ্ধ হয়ে যাবে।
(احسن الفتاوی جه ۵)
কুরবানীর পশু জবেহ করা প্রসঙ্গ :
নিজের কুরবানীর পশু নিজেই জবেহ করা উত্তম। নিজে জবেহ না করলে বা করতে না পারলে জবেহের সময় সামনে থাকা ভাল। মেয়েলোকের পর্দার ব্যাঘাত হওয়ার কারণে সামনে না থাকতে পারলে ক্ষতি নেই।
কুরবানীর পশুকে মাটিতে শুইয়ে তার মুখ কেবলামুখী করে নিম্নের দোয়া পাঠ করা উত্তম
اتى وجهت وجهي للذي فطر السموت والارض حنيفا وما أنا من المشركين ـ ان صلوتي ونسكي ومحياي ومماتي لله رب العلمين لا
شريك له وبذلك أمرت وأنا من المسلمين اللهم منك ولكـ
অতঃপর بسم الله الله اكبر বলে জবেহ করবে। কেউ দুআ পড়তে না পারলে শুধু ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে জবেহ করলেও চলবে।
অতঃপর এই দুআ পড়া উত্তম اللهم تقبله منى كما تقبلت من حبيبك محمد وخليلك إبراهيم عليهما الصلاة والسّلام ـ
জবেহকারী যদি উক্ত পশুর কুরবানী দাতা না হয় তাহলে منى এর স্থলে منه পড়বে।
আর কুরবানী দাতা একাধিক হলে منى এর স্থলে مناবা منه স্থলে منهم পরবে।
কুরবানী দাতা বা কুরবানী দাতাগণের নাম মুখে উচ্চারণ করা বা কাগজে লিখে পড়া জরূরী নয়। আল্লাহ পাক জানেন এটা কার কুরবানী। সে অনুযায়ীই সে কুরবানী গৃহীত হবে।
কুরবানীর পশু রাতের বেলায়ও জবেহ করা জায়েয তবে ভাল নয় ।
ঈদের নামাযের পূর্বে কুরবানী করা জায়েয নয়। তবে যেখানে জুমুআ ও ঈদের নামায দুরস্ত নয় সেখানে সুবহে সাদেকের পর থেকেই কুরবানী করা দুরস্ত আছে।
কত টাকা থাকলে কোরবানি ওয়াজিব পোষ্টের এ পর্যায়ে
গোশত বন্টনের তরীকা :
অংশীদারগণ সকলে একান্নভুক্ত/ একসাথে আহারকারী হলে গোশত বন্টনের প্রয়োজন নেই।
অন্যথায় বন্টন করতে হবে।
অংশীদারগণ গোশত অনুমান করে বন্টন করবে না বরং বাটখারা দিয়ে ওজন করে বন্টন করতে হবে। অন্যথায় ভাগের মধ্যে কমবেশ হয়ে গেলে গোনাহগার হতে হবে। অবশ্য কোন অংশীদার মাথা, পায়া ইত্যাদি বিশেষ কোন অংশ গ্রহণ করলে তার ভাগে গোশত কিছু কম হলেও তা দুরস্ত হবে।
কিন্তু যে ভাগে গোশত বেশী সেভাগে মাথা পায়া ইত্যাদি বিশেষ অংশ দেয়া যাবে না।
অংশীদারগণ সকলে যদি সম্পূর্ণ গোশত দান করে দিতে চার বা সম্পূর্ণটা রান্না করে বিলাতে বা খাওয়াতে চায় তাহলে বন্টনের প্রয়োজন নেই।
কুরবানীর গোশ্ত খাওয়া ও দান করার মাসায়েল :
কুরবানীর গোশত নিজে খাওয়া, পরিবারবর্গকে খাওয়ানো, আত্মীয় স্বজনকে দেয়া এবং গরীব মিসকীনকে দেয়া সবই জায়েয। মোস্তাহাব ও উত্তম তরীকা হল তিনভাগ করে একভাগ নিজেদের জন্য রাখা, একভাগ আত্মীয় স্বজনকে দেয়া এবং একভাগ গরীব মিসকীনকে দান করা।
মান্নতের কুরবানীর গোশত হলে নিজে খেতে পারবে না এবং মালদারকেও দিতে পারবে না বরং পুরোটাই গরীব মিসকীনদেরকে দান করে দেয়া ওয়াজিব।
যদি কোন মৃত ব্যক্তি মৃত্যুর পূর্বে কুরবানীর জন্য ওছিয়াত করে গিয়ে থাকে তবে সেই কুরবানীর গোশতও মান্নতের কুরবানীর গোশতের ন্যায় পুরোটাই খয়রাত করা ওয়াজিব।
কুরবানীর গোশ্ত বা বিশেষ কোন অংশ (যেমন মাথা) পারিশ্রমিক রূপে দেয়া জায়েয নয়।
কুরবানীর গোশ্ত শুকিয়ে (বা ফ্রীজে রেখে) দীর্ঘ দিন খাওয়াতে কোন অসুবিধা নেই।
কত টাকা থাকলে কোরবানি ওয়াজিব পোষ্টের এ পর্যায়ে
কুরবানীর পশুর চামড়া সম্পর্কিত মাসায়েল :
কুরবানীর পশুর চামড়া শুকিয়ে বা প্রক্রিয়াজাত করে নিজেও ব্যবহার করা জায়েয।
কুরবানীর চামড়া খয়রাতও করা যায় তবে বিক্রি করলে সে পয়সা নিজে ব্যবহার করা যায় না- খয়রাতই করা জরুরী এবং ঠিক ঐ পয়সাটাই খয়রাত করতে হবে। ঐ পয়সাটা নিজে খরচ করে অন্য পয়সা দান করলে আদায় হবে বটে, তবে অন্যায় হবে।
কুরবানীর চামড়ার দাম মসজিদ মাদ্রসার নির্মাণ কাজে বা বেতন বাবত বা পারিশ্রমিক বাবত বা অন্য কোন নেক কাজে খরচ করা দুরস্ত নয়। খয়রাতই করতে হবে।
কত টাকা থাকলে কোরবানি ওয়াজিব শেষ কথা
পরিবারের খরচ মেটানোর পর যদি জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ নির্ধারিত পরিমাণ স্বর্ণ বা রুপা থাকে কিংবা নির্ধারিত পরিমাণ স্বর্ণ বা রুপার বাজার দর অনুযায়ী ৫০ হাজার থেকে ৪ লাখ টাকা থাকে ওই ব্যক্তির জন্য কুরবানি করা আবশ্যক।’