অলিভ অয়েল মুখে লাগানোর উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে আজকে আমরা আপনাকে জানাবো অলিভ অয়েল মুখে লাগানোর উপকারিতা সম্পর্কে । এখনকার সময় আমরা সবাই আমাদের সৌন্দর্যের ব্যাপারে খুবই সচেতন। সৌন্দর্যের ব্যাপারটি আমাদের পরিচ্ছন্নতার সাথে পোশাক নির্ধারণ এর উপর নির্ভর করে। কিন্তু সব কিছুর পরেও যদি আপনার মুখের সৌন্দর্যে ঘাটতি থাকে তবে আপনাকে সুন্দর লাগবে না। আমরা মুখের সৌন্দর্যের জন্য অনেক প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে থাকি। তার মধ্যে অন্যতম উত্তম একটি উপাদান হচ্ছে অলিভ অয়েল। প্রাচীনকাল আজ অবধি মানুষ মুখের সৌন্দর্যের জন্য অলিভ অয়েল ব্যবহার করে থাকে। তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা অলিভ অয়েল মুখে লাগানোর উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব।
অলিভ অয়েল রয়েছে ভিটামিন, মিনারেল, ফ্যাটি এসিডে ভরপুর তাই এটি মানব দেহের জন্য উপকারী। এটি সব ধরনের ত্বকের জন্য নিরাপদ। অলিভ অয়েল চুলে পুষ্টি যোগায় আর অলিভ অয়েলে বিদ্যমান ভিটামিন ই এবং এ তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। অলিভ অয়েলের গুণাগুণ এখানেই সীমাবদ্ধ নয়। অলিভ অয়েল মুখে লাগানোর উপকারিতা রয়েছে অনেক। অলিভ অয়েলের রয়েছে সৌন্দর্য চর্চার হরেক গুণ। ঐতিহাসিকভাবে এটি শান্তি ও সৌহার্দ্যের প্রতীক। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য হিসাবেও এর কদর আছে।আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো অলিভ অয়েল মুখে লাগানোর উপকারিতা।
মাস্ক
অলিভ অয়েল মুখে লাগানোর উপকারিতাকে কাজের লাগানোর জন্য একটি ডিমের কুসুমের সঙ্গে ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল আর ৩ ফোটা লেবুর রস মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। তারপর মুখে লাগিয়ে ৫-১০ মিনিট অপেক্ষা করে প্রথমে হালকা গরম পানি তারপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নরমাল অথবা শুষ্ক ত্বকে এই মাস্ক আর্দ্রতা বজায় রাখবে সেই সঙ্গে নরম কোমল করে তুলবে।
ময়েশ্চারাইজার
অলিভ অয়েলে আছে linoleic acid, যা পানি বাষ্প হতে দেয় না। তাই ১/২ কাপ অলিভ অয়েল, ১/৪ কাপ ভিনেগার আর ১/৪ কাপ পানি মিশিয়ে একটি সলিউশন তৈরি করুন যা রাতে ঘুমানোর সময় নাইট ক্রিমের মত ব্যবহার করতে পারবেন। অলিভ অয়েল স্কিনকে নরম করে, ভিনেগার ত্বকে থাকা ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে।
সান প্রোটেকশন
অলিভ অয়েল মুখে লাগানোর উপকারিতাগুলোর মধ্যে সান প্রোটেকশন অন্যতম। অভিল অয়েলে ভিটামিন এ এবং ই আছে সেই সঙ্গে ৩ রকমের antioxidants আছে, যা আপনাকে সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করবে। তাই যদি বাইরে যাওয়ার আগে অলিভ অয়েলের প্রলেপ দিয়ে বের হন তবে সূর্যরশ্মি থেকে অনেকটাই মুক্তিলাভ করবেন।
ব্রণ প্রতিরোধক
শুনে হয়ত অবাক হবেন ব্রণের চিকিৎসায় তেলের ব্যবহার। কিন্তু অলিভ অয়েল ব্রণের বংশ ধ্বংস করার জন্য উপকারী। ৪ টেবিল চামচ লবণের সঙ্গে ৩ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। তারপর সেই পেস্ট ২ মিনিট ধরে মুখে ম্যাসাজ করুন। এভাবে এক সপ্তাহ করুন। আপনি অবশ্যই পরিবর্তন দেখতে পারবেন।
বডি স্ক্রাব
অলিভ অয়েল মুখে লাগানোর উপকারিতাগুলোর মধ্যে অন্যতম আরো একটি হলো বডি স্ক্রাব। ত্বকের উপরে জমে যাওয়া মৃত কোষ তুলতে চাইলে ভরসা রাখুন অলিভ অয়েলে। আধকাপ চিনির সঙ্গে তিন টেবিলচামচ অলিভ অয়েল আর দু’ টেবিলচামচ মধু মিশিয়ে নিন। এবার স্ক্রাবের মতো সারা শরীরে ঘষে ঘষে মৃত কোষগুলো তুলে ফেলুন। ত্বক পরিষ্কার উজ্জ্বল হয়ে উঠবে, নরমও থাকবে।
মেকআপ রিমুভার
দিনের শেষে মুখ পরিষ্কার করতে গিয়ে দেখলেন কিছুই নেই বিকল্প হিসেবে বেছে নিন অলিভ অয়েল। তুলোয় করে খানিকটা অলিভ অয়েল নিয়ে মুছে নিন মুখ, সমস্ত ধুলোময়লা উঠে যাবে।
ঠোঁটের মাস্ক
ঠোঁট ফাটার ধাত যাঁদের, তাঁরা সাধারণ লিপ বামের বদলে বেছে নিন অলিভ অয়েল মাস্ক। দু’ভাগ অলিভ অয়েলের সঙ্গে একভাগ নারকেল তেল আর একভাগ মধু মিশিয়ে ঠোঁটে লাগিয়ে সারা রাত রেখে দিন, ঠোঁট তুলতুলে নরম থাকবে।
অলিভ অয়েল বাথ
অনেক বিশ্বসুন্দরী তার নিজের সৌন্দর্যের গোপন রহস্যের পেছনে অলিভ অয়েল বাথের অবদানের কথা জানিয়েছেন। এক বালতি পানিতে ৫ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন আর গোসলের পর অনুভব করুন তুলতুলে নরম, সিল্কি ত্বকের স্পর্শ অথবা আপনি যদি গোসলের আগে অলিভ অয়েল দিয়ে শরীর ম্যাসাজ করে নেন তা হলেও সেই একই ফলাফল পাবেন।
আই ক্রিম
অলিভ অয়েল চোখের চারপাশের কুঁচকে থাকা ত্বককে হাইড্রেট করে আর নরম করে তোলে। রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে আপনার রিং ফিঙ্গার দিয়ে আলতো হাতে অলিভ অয়েল বুলিয়ে দিন। অতিরিক্ত তেল নরম টিস্যু পেপার দিয়ে মুছে নিতে পারেন।
চোখের যত্নে অলিভ অয়েল মুখে লাগানোর উপকারিতা
মাশকারার বদলে চোখের পাপড়ি ও ভ্রুতে অলিভ অয়েল লাগান, আর বাড়িয়ে তুলুন আপনার চোখের সৌন্দর্য।
অলিভ অয়েল মুখে লাগানোর উপকারিতা শুষ্ক ত্বকের জন্য
শুষ্ক ত্বকের অধিকারীদের ত্বকের রুক্ষতার কারণে ত্বকে নান সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। তাদের জন্য অলিভ অয়েল সবচেয়ে সহজ এবং কার্যকরী সমাধান। গোসলের পর আপনি কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল শরীরে ম্যাসাজ করুন। এরপর কয়েক মিনিট অপেক্ষা করুন শুকিয়ে যাওয়ার জন্য। এটি আপনার ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে থাকবে। অলিভ অয়েল ব্যবহার করলে কোন লোশন ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়বে না।
সানস্ক্রিন
সমপরিমাণ অলিভ অয়েল এবং চায়ের লিকার পানি মিশিয়ে নিন। এটি আপনি মুখ এবং সারা শরীরে ম্যাসাজ করুন। এবার এক ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন না। এটি সানস্ক্রিনের বিকল্প হিসেবে কাজ করবে।
ফেসওয়াশ শেষ
অফিস থেকে বাড়ি ফিরে মুখ পরিষ্কার করতে গিয়ে দেখলেন ফেসওয়াশ শেষ। তবে, চিন্তা করার কিছু নেই। বিকল্প হিসেবে বেছে নিতে পারেন অলিভ অয়েল।এর জন্য তুলোয় করে খানিকটা অলিভ অয়েল নিন।মুখটা ভালো করে মুছে নিন দেখবেন মুখের সমস্ত ধুলোময়লা উঠে যাবে।
অলিভ অয়েল মুখে লাগানোর উপকারিতা: ত্বকের যত্নে জন্য কোন অলিভ অয়েল ভালো
আমরা সবাই জানি ত্বকের যত্নে অলিভ অয়েল খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অয়েল। তবে অলিভ অয়েল মুখে লাগানোর উপকারিতা এবং অপকারিতা দুইটা লক্ষ্য করা যায়। মুখে অলিভ অয়েল লাগানোর ক্ষেত্রে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল ব্যবহার করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
সাধারণ যে অলিভ অয়েল গুলো পাওয়া যায় সেগুলোতে থাকে ভেজিটেবল অয়েল অথবা রাসায়নিকের মিশ্রণ থাকে। এই সাধারন অলিভ অয়েল মুখে ব্যবহার করলে উপকার এর থেকে অপকারই বেশি হবে। এর তুলনায় এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল অনেক বেশি উপকারী এন্টিঅক্সিডেন্ট এর মত উপকারী উপাদান সমৃদ্ধ।
এই অলিভ অয়েল এক্সফোলিয়েটর হিসেবেও দারুন কাজ করে। সমপরিমাণ এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল অনুন একসঙ্গে মিশিয়ে স্ক্রাব তৈরি করে ত্বকের উপর ধীরে ধীরে আলতোভাবে মেসেজ করলে ত্বকের অনেক উপকার পাওয়া যায়।এই জন্য আগে আসল অলিভ অয়েল চেনার উপায় জানতে হবে।
অলিভ অয়েল এর ক্ষেত্রেও আপনি কোকোনাট অয়েল এর মত ফ্রিজে টেস্ট করতে পারেন। এক্ষেত্রে অলিভ অয়েল একটি পাত্র নিয়ে দুই ঘণ্টার জন্য ডিপ ফ্রিজে রেখে দিন। দুই ঘন্টা পর যদি দেখেন অলিভ অয়েল জমে শক্ত হয়ে গেছে অথবা লিকুইড আছে তাহলে আপনার অলিভ oil খাঁটি নয়। যদি দেখেন যে এটি হালকা জমে গেছে অথবা ঘন হয়ে গেছে তবে বুঝবেন আপনার oil খাঁটি।
দ্বিতীয় আরেকটি টেস্ট করতে পারেন। অলিভ অয়েল কোন পাত্রে নিয়ে এর উপরে আগুন জ্বালিয়ে দেখবেন, যদি অলিভ অয়েল কোন ধারায় পড়তে শুরু করে তবে আপনার অলিভ অয়েল খাটি।
আশা করি আপনারা অলিভ অয়েল মুখে লাগানোর উপকারিতা সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন।এবং কোন অলিভ অয়েল মুখের জন্য ভালো সেই বিষয়ে জানতে পেরেছে।