সালাতুত তাসবিহ নামাজের নিয়ম

সালাতুত তাসবিহ নামাজের নিয়ম

সালাতুত তাসবিহ নামাজের নিয়ম

সালাতুত তাসবিহ নামাজের নিয়ম যারা জানতে চান তাদের জন্য আমরা এই আর্টিকেলটি নিয়ে এসেছি।

সালাতুত তাসবীহ (আরবি: صلاة تسبيح ‎‎), তাসবীহের নামাজ নামেও পরিচিত। সালাত শব্দের অর্থ নামাজ। আর তাসবিহ বলতে ‘সুবাহানাল্লাহ, ওয়াল হামদুলিল্লাহ, ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার’ এ শব্দগুলো বোঝানো হয়েছে। যে নামাজে এসব তাসবীহ পড়ানো হয় তা সালাতুত তাসবীহ বা তাসবীহের নামাজ হিসেবে পরিচিত। ইসলামে অনুসারীদের জন্যে এটি একটি ঐচ্ছিক ইবাদত। এটা বাধ্যতামূলক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মতো নয়। আমরা সকলেই জানি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সকল মুসলমানদের উপর ফরজ। 

কিন্তু এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি কিছু বিশেষ নামাজ রয়েছে যে নামাজ গুলো পড়লে অধিক সওয়াব পাওয়া যায় এবং এই নামাজ গুলোর মাধ্যমে মহান আল্লাহতালার কাছে ক্ষমা ও প্রার্থনা করা যায়। আর সেই বিশেষ নামাজ গুলোর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি নামাজ হচ্ছে সালাতুত তাসবিহ। আর নফল নামাজগুলোর মধ্যে সালাতুতু তাসবিহ অন্যতম।এই নামাজের ফজিলত অনেক বেশি। কারণ এই নামাজ মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে বলেছেন- “প্রতিদিন একবার অথবা সপ্তাহে একবার অথবা মাসে একবার অথবা জীবনে একবার হলেও সালাতুত তাসবিহ নামাজ আদায় করতে হবে”। সুতরাং বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর বাণী থেকে বোঝা যায় যে সালাতুত তাসবিহ নামাজের ফজিলত কতটা বেশি হতে পারে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক সালাতুত তাসবিহ নামাজের নিয়ম এবং অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে।

আমরা ইতিমধ্যে সালাতুত তাজবিহ নামাজ সম্পর্কে সামান্য কিছু অংশ জেনেছি। কিন্তু যখন এই নামাজের কথা আমরা জানতে পারি তখন এই নামাজ পড়ার আগ্রহ আমাদের মধ্যে অনেকাংশে বেড়ে যায় এবং সালাতুত তাসবিহ নামাজের নিয়ম সম্পর্কে জানার ইচ্ছা হয়। তাই আপনাদের জন্য আমরা নিম্নে সালাতুত তাজবিহ নামাজের নিয়ম উল্লেখ করছি-

সালাতুত তাসবিহ নামাজের নিয়ম

সালাতুত তাজবিহ নামাজ পড়ার পূর্বে অবশ্যই এই নামাজের নিয়ত করতে হয়। আর সেই নিয়ত হচ্ছে-

“নাওয়াইতু আন উসালিলয়া লিল্লাহি তা’আলা আরবা’আ রাকা’আতাই সালাতিল তাসবি সুন্নাতু রাসূলিল্লাহহি তা’আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলাজিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।”

আপনি যদি এই  নিয়তটি আরবীতে না পারেন তাহলে আপনি মনে মনে এই নিয়তটি  করতে পারেন বা বাংলায় করতে পারে.

সালাতুত তাসবিহ নামাজের দোয়া

সালাতুত তাজবিহ নামাজে যে বিশেষ দোয়া পড়া হয় সেই বিশেষ দোয়াটি-

سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلهِ وَلَا اِلهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ

“বাংলায় উচ্চারণ  সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।”

সালাতুত তাজবিহ নামাজের ৩০০ বার একটি দোয়া পড়তে হয় আর এই দোয়াটি আমরা উপরে দিয়ে দিয়েছি। যাতে এই দোয়া আপনারা খুব সহজেই আমাদের এখান থেকে সংগ্রহ করে মুখস্থ করে নিতে পারেন এবং সালাতুত তাজবিহ নামাজে পাঠ করতে পারেন।

সালাতুত তাজবিহ নামাজের নিয়ম-

সালাতুত তাসবীহ চার রাকাত। প্রতি রাকাতে ‘সুবাহানাল্লাহ, ওয়াল হামদুলিল্লাহ, ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার’ তাসবীহগুলো ৭৫ বার পড়তে হয়। চার রাকাতে মোট ৩০০ বার পড়তে হয়।

  1. প্রথমে অজু করে কেবলামুখী হয়ে দাঁড়াতে হবে।
  2. এরপর সালাতুত তাজবিহ নামাজের নিয়ত করতে হবে।
  3. সানা পাঠ করতে হবে ১৫ বার সালাতুত তাজবিহ দোয়া পাঠ করতে হবে।
  4. তারপর সুরা ফাতিহা করতে হবে এবং সূরা ফাতিহার সাথে কোরআনের যেকোনো একটি সূরা মিলিয়ে পড়তে হবে। রুকুতে যাওয়ার পূর্বে ১০ বার সালাতুত তাজবিহ দোয়া পাঠ করতে হবে।
  5. এরপর রুকুতে গিয়ে রুকুর দোয়া পড়তে হবে এবং সেই রুকু থাকা অবস্থায় ১০ বার সালাতুত তাজবিহ দোয়া পাঠ করতে হবে।
  6. যখন রুকু থেকে ওঠা হবে ঠিক তখন দাড়ানো অবস্থায় একটি ছোট দোয়া পড়তে হয় সে দোয়া পড়ার পর ১০ বার সালাতুত তাজবিহ দোয়া পাঠ করতে হবে।
  7. এখন সিজদা দিতে হবে এবং সেজদারত অবস্থায় ১০ বার সালাতুত তাজবিহ দোয়া পাঠ করতে হবে।
  8. সিজদা থেকে উঠে বসার পর ১০ বার সালাতুত তাজবিহ দোয়া পাঠ করতে হবে।
  9. এভাবে পুনরায় আবার সিজদায় গিয়ে সিজদার দোয়া পাঠ করার পর ১০ বার সালাতুত তাজবিহ পাঠ করতে হবে।

ঠিক এভাবে দ্বিতীয় রাকাত, তৃতীয় রাকাত এবং চতুর্থ রাকাত সালাত আদায় করতে হবে। প্রত্যেক রাকাতে ৭৫ বার সালাতুত তাজবিহ দোয়া পাঠ করতে হবে। তাহলে মোট চার রাকাতে ৩০০ বার সালাতুত তাজবিহ দোয়া পাঠ করা হবে।

‘সালাতুত তাসবীহ’ নামাজের নিয়মে ভুল হলে করণীয়

‘সালাতুত তাসবীহ’ নামায পড়াবস্থায় দানাদার তসবিহ হাতে গণনা করা মাকরূহ বা অনুচিত। আঙ্গুলের করগুলোতে গণনা করা যাবেনা। কিন্তু তাহরিমা বাধা অবস্থাতেই হাতের আঙ্গুল গুলা টিপেটিপে তাসবীহ গণনা করতে হবে। কোনো স্থানে তাসবীহ পড়তে ভুলে গেলে পরবর্তী তাসবীহ পাঠের সময় তা আদায় করে নিতে হবে। তবে ক্বওমা তথা রুকু থেকে দাঁড়ানোকালে ও দুই সিজদার মাঝখানে তাসবীহ ভুলে যাওয়া তাসবীহগুলো আদায় করা যাবে না। সূর-কেরাত পড়ার পূর্বে তাসবীহ ভুলে গেলে সূরা-কেরাত পাঠের সেটি আদায় করতে হবে।

 

একইভাবে ক্বিরায়াতের পর তাসবীহ ভুলে গেলে রুকুতে গিয়ে আদায় করতে হবে। রুকুতে তাসবীহ ভুলে গেলে উক্ত তাসবীহ প্রথম সিজদায় আদায় করতে হবে। সিজদায় যাওয়ার পূর্বে তাসবীহ পড়তে ভুলে গেলে তা প্রথম সিজদাতে গিয়ে আদায় করতে হবে। প্রথম সিজদাতে তাসবীহ ভুলে গেলে তা দুই সিজদার মাঝখানে আদায় না করে দ্বিতীয় সিজদাতে গিয়ে আদায় করতে হবে। ঠিক দুই সিজদার মাঝখানের তাসবীহ পড়তে ভুলে গেলে তাও দ্বিতীয় সিজদায় গিয়ে পড়তে হবে। একইভাবে আর দ্বিতীয় সিজদাতে তাসবীহ ভুলে পরের রাকায়াতে সূরা-ক্বিরায়াত পাঠ করার পূর্বে পড়ে নিতে হবে। শেষ সিজদার তাসবীহ পড়তে ভুলে গেলে সালাম ফিরানোর পূর্বে তাসবীহ পড়ে নিতে হবে।

সালাতুত তাজবিহ নামাজের ফজিলত অত্যাধিক। কারণ এ নামাজ সম্পর্কে হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর চাচা হযরত আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু তালাকে বলেন, “ চাচা আপনি সালাতুত তাজবিহ নামাজ সপ্তাহে একবার বা  মাসে একবার  পড়তে পারেন, তবে আপনি যদি তা না পারেন তাহলে অন্তত বছরে একবার বা সারাজীবনে একবারে নামাজ পড়বেন”।

সুতরাং এ থেকে বুঝা যায় এই নামাজের ফজিলত অত্যাধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং এই নামাজের মাধ্যমে জীবনের সকল ছোট-বড় ইচ্ছাকৃত অনিচ্ছাকৃত গুনাহ আল্লাহ তায়ালা মাফ করে দেন। সুতরাং আমাদের সকলের উচিত এ নামাজটি প্রতিদিন একবার অথবা সপ্তাহে একবার অথবা মাসে একবার অথবা বছরে একবার পড়া উচিত। যদি আমরা তা করতে না পারে তাহলে সারা জীবনে একবার হলেও এই নামাজ পড়া উচিত।

আশা করছি আপনারা আমাদের এই আর্টিকেল হতে সালাতুত তাসবিহ নামাজের নিয়ম জানতে পেরেছেন এবং এ নামাজটি মুমিনদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বুঝতে পেরেছেন। তাই আপনারা আর দেরি না করে এ নামাজের ফজিলত জেনে অবশ্যই সকলে নিয়মিত এই নামাজ আদায় করবেন আল্লাহ পাক এই নামাজ আমাদের বেশি বেশি আদায় করার তাওফিক দান করুন। এর মাধ্যমে আমাদের পাপরাশি ক্ষমা করুন। আমিন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *