পোস্ট অফিসে টাকা রাখার নিয়ম
আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যাদের টাকা রাখা নিরাপদ জায়গা নেই। এই নিরাপত্তাহীনতা থেকেই আমরা এমন বিশ্বস্ত জায়গা খুঁজে যেখানে আমাদের জমানো টাকাগুলো রাখা যায় এবং প্রয়োজনমতো সেখান থেকে উত্তোলন করতে পারি। আমাদের মধ্যে অনেকেই জানিনা পোস্ট অফিসে টাকা রাখার একটা ব্যবস্থা আছে। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করতে গেলে কিছু নিয়ম-নীতি মেনে নিতে হয়। তাই পোস্ট অফিসে টাকা রাখার নিয়ম সম্পর্কে আমরা জানবো।
আজকের ব্লগপোস্টে “পোস্ট অফিসে টাকা রাখার নিয়ম” সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব। যা আপনাদের অনেক উপকারে আসবে । আশাকরি পুরো ব্লগ আর্টিকেলটি পড়বেন । তাহলে চলুন শুরু করা যাক —-
বাংলাদেশ সরকারের ডাক বিভাগের আওতাধীন ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকের টাকা বিনিয়োগ করা সবচেয়ে নিরাপদ বলে মনে করা হয়। অন্যান্য বেসরকারি ব্যাংকের মতো এতে সরাসরি টাকা জমা রাখা হয় না কারণ পোস্ট অফিস কোন আর্থিক লেনদেনের প্রতিষ্ঠান নয়। তবে সঞ্চয় পত্র ক্রয় করে আপনি পোস্ট অফিসে টাকা জমা রাখতে পারবেন এবং সরকারি বিধান অনুসারে অন্যান্য প্রাইভেট ব্যাংকের মতো এতে বিনিয়োগ কোনরকম ঝুঁকি নেই আবার আপনি যেকোন সময় আপনার সঞ্চয় পত্র ভাঙ্গে টাকা উত্তোলন করতে পারবেন
ডাক বিভাগ 1872 সাল থেকে এই সুবিধা দিয়ে আসছে যার কারণে আপনাকে এখানে টাকা জমা দিতে কোন ঝুঁকি নিতে হবে না। তাছাড়া ও সবচেয়ে ঝামেলাহীন ও নিরাপদ ভাবে নিজের টাকা জমা রাখার সর্বোত্তম মাধ্যম।
পোস্ট অফিসে একাউন্ট খোলার নিয়ম
পোস্ট অফিসে একাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই সশরীরে পোস্ট অফিসে হাজির হতে হবে একাউন্ট খোলার সময় যে স্বাক্ষর করতে হয় তার নিয়ম অনুযায়ী অবশ্যই পোস্ট মাস্টারের সম্মুখে থেকে করতে হবে তাই আপনার নিজের পোস্ট অফিসে যাওয়া বাধ্যতামূলক ।আপনি সঞ্চয় ব্যাংকের দুই ধরনের অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন হচ্ছে মেয়াদী হিসাব এর একাউন্ট আর অন্যটি সাধারণ হিসাবের একাউন্ট। আমরা এখানে দুইটি একাউন্ট খোলার নিয়ম বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি।
মেয়াদী হিসাব একাউন্ট খোলার নিয়ম
এটি ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকের ফিক্স ডিপোজিট সিস্টেম এই হিসাবের অ্যাকাউন্ট খুললে আপনি আপনার অর্থ তিন বছর মেয়াদে পোস্ট অফিসে জমা রাখতে পারবেন অন্যান্য ব্যাংকের নিয়ম এর মত এধরনের মেয়াদী হিসেবে একাউন্টে আপনার হিসেবে তুলনায় বেশি মুনাফা প্রদান করা হবে।
বর্তমান হিসেব অনুযায়ী ডাকঘর কর্তৃপক্ষ সঞ্চয় ব্যাংকের 11 দশমিক 28 শতাংশ হারে মুনাফা প্রদান করে। তবে মুনাফার হার 10% করে কর্তন করা হয়ে থাকে। এ তিন বছর মেয়াদী হিসেবে আপনি প্রতি 1 লাখ টাকা পোস্ট অফিসে জমা রাখলে তিন বছর শেষে 34056 টাকা লাভ পাবেন মেয়াদী হিসেবে এককভাবে 10 লক্ষ এবং যৌথভাবে 20 লক্ষ টাকা সমমূল্যের সঞ্চয়পত্র ক্রয় করা যায়।এভাবে আপনি তিন বছর যদি টাকা উত্তোলন না করেন তবে আপনার মুনাফা আপনার মূলধন এর সাথে যুক্ত হতে থাকবে। এভাবে আপনার উর্ধ্বসীমা এক একাউন্ট থেকে 10 লক্ষ এবং যৌথ একাউন্টে জমা হতে থাকবে এবং আপনার মুনাফার হিসাব গণনা করা হবে।
উপরের বিশ্লেষণে আপনি হয়তো বুঝতে পেরেছেন যে মেয়াদী হিসাব এর ক্ষেত্রে আপনি চক্রবৃদ্ধি হারে মুনাফা পাবেন চক্রবৃদ্ধি মুনাফার ব্যাপারটি হলো মনে করুন আপনি ব্যাংকে 1 লক্ষ টাকার সঞ্চয়পত্র ক্রয় করেছেন এবং এতে 30000 টাকা মুনাফা এসেছে কিন্তু আপনি ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক থেকে অর্থ উত্তোলন করেন নি। এবার আপনার মূল্যবান হিসেবে নয় মূলধন হিসেবে 30000 টাকা আপনার একাউন্টে জমা হবে এবং এ 30000 tk আপনি আলাদা ভাবে লাভ পাবেন।
সাধারণ হিসাব
সাধারণ হিসেবে সঞ্চয় পত্র ক্রয় করলে আপনি মাসিক মুনাফা লাভ করতে পারবেন এবং ইচ্ছানুযায়ী থাকা যেকোনো সময় উত্তোলন করতে পারবেন এতে আপনি আপনার অর্থের 7.5 শতাংশ হারে মুনাফা পাবেন এবং আপনার উচ্ছেদ মুনাফার 10% হারে কর্তন করা হবে অর্থ হিসেবে আপনি টাকা জমা রাখলে প্রতি 1 লক্ষ টাকায় বছরে 6750 টাকা করে মুনাফা লাভ করবেন আপনি মুনাফা প্রতিমাসে উত্তোলন করতে পারবেন। সাধারণ হিসেবের ক্ষেত্রেও একক একাউন্টের সঞ্চয়পত্রের ক এর সীমাবদ্ধতা রয়েছে আপনি এবার আপনি আপনার পছন্দক্রম অনুসারে একাউন্ট খুলবেন এবং একাউন্ট খোলার সময় যে ধরনের অ্যাকাউন্ট খুলতে আগ্রহী সে ফরম সংগ্রহ করবেন এবং ফরমের শেষ এ একাউন্ট খোলার কাজ সম্পন্ন হলে আপনাকে একটি পাস বই দেওয়া হবে যা আপনাকে সংরক্ষণ করা লাগবে।একাউন্ট এর ক্ষেত্রে 10 লক্ষ টাকা এবং যৌথ একাউন্ট এর ক্ষেত্রে 20 লক্ষ টাকা জমাদান করতে পারবেন।
পোস্ট অফিসে একাউন্ট খুলতে কি কি লাগবে
আপনি যদি পোস্ট অফিসে টাকা জমা রাখতে চান তাহলে আপনার জন্য বিশেষ বিজ্ঞপ্তি এই যে একাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে আপনাকে বেশ কিছু কাগজপত্র সংগ্রহ করতে হবে।
- আমানতকারীর জাতীয় পরিচয় পত্র এবং দুই কপি ছবি।
- আপনি নমিনি হিসেবে যাকে রাখবেন তার দুই কপি ছবি।
- 2 লক্ষ টাকার অধিক জমা করতে হলে নগদে করা যাবে না সেক্ষেত্রে আপনাকে ব্যাংক থেকে চেক এনে তা পরিশোধ করতে হবে।
- চেকে পরিশোধ করলে চেক এবং TIN এর সার্টিফিকেটের ফটোকপি।
- চেকের অপর পাতায় Good for Payment লিখে ব্যাংক কর্মকর্তার স্বাক্ষর কিংবা ব্যাঙ্ক থেকে অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম জমা দিতে হবে।
- অ্যাকাউন্ট খোলার সময় আমানতকারীদের সশরীরে উপস্থিত থাকতে হবে।
পোস্ট অফিসে টাকা রাখার নিয়ম
এখন লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রায় প্রতিটি অফিসেই ডিজিটাল পদ্ধতি অনুসরণ করা হলেও পোস্ট অফিস কর্তৃপক্ষের সঞ্চয় ব্যাংকের কার্যক্রম এখন পর্যন্ত অনলাইনে আনয়ন করা সম্ভব হয়নি ।তবে অতি শীঘ্রই তার ডিজিটাল করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। যেহেতু ইহা একটি সাধারণ বা কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান নয় যার ফলে আপনি ব্যাংকের মতো শুধু টাকা জমা দিতে পারবেন না আপনাকে সঞ্চয়পত্র কেনার মাধ্যমে টাকা জমা দিতে হবে সেজন্য সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের জন্য আপনাকে সরাসরি পোস্ট অফিস হতে হবে।অ্যাকাউন্ট খোলার সময় আপনাকে একটি লাশ বই দেওয়া হবে যেটির মাধ্যমে আপনাকে সঞ্চয় পত্র ক্রয় বিক্রয়ের সকল হিসেব থাকবে তবে আপনি যদি নগদ অর্থ নিয়ে যান তবে 2 লক্ষ টাকার বেশি মূল্যের সঞ্চয় পত্র আপনি নগদ টাকায় ক্রয় করতে পারবেন না।বাংলাদেশ পোস্ট অফিস 1872 সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে প্রায় দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের সেবা দিয়ে চলেছে এই প্রতিষ্ঠানটি তাই আপনি যদি এই প্রতিষ্ঠানের টাকা জমা রাখেন তাহলে আমরা বলবো যে নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য ।
পোস্ট অফিসে টাকা রাখার নিয়ম এই আর্টিকেল পড়ে আপনি অবশ্যই পোস্ট অফিসে টাকা রাখা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন।এছাড়াও পোস্ট অফিসে টাকা রাখার সম্পর্কে আরও কিছু জানতে চাইলে আমাদের কমেন্ট করে জানান এবং আমরা আপনার কমেন্টের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব।