চোখের নিচে কালো দাগ দূর করার পদ্ধতি
চোখের নিচে কালো দাগ
চোখ সৌন্দর্যের একটি বিশেষ অংশ । সামনা সামনি কথা বলার সময়ে চোখের দিকেই নজর সবার আগে আসে। কিন্তু চোখের নিচে যদি কালো দাগ হয়, তা শুধুমাত্র চোখের জন্যই খারাপ নয় , ত্বকে কালো ছোপ দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিকর। কাজের চাপে ক্লান্তি বাড়ছে এবং নিজের প্রতি যত্ন নেওয়াও প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। শরীরের প্রয়োজনমতো ঘুমও হচ্ছে না। যদি এই কালো দাগ ঠেকাতে দরকারি পদক্ষেপ না গ্রহণ করা হয়, তা হলে এই দাগ ক্রমশ বাড়তে শুরু করে।ঘরোয়া কিছু বিশেষ পদ্ধতির মাধ্যমে চোখের নিচে কালো দাগ থেকে সহজে মুক্তি পেতে পারেন। এই অনুচ্ছেদে চোখের নিচেকালো দাগ কেন হয় এবং দূর করার কিছু বিশেষ পদ্ধতির কথা আলোচনা করব।
চোখের নিচের ত্বক হচ্ছে অত্যন্ত সংবেদনশীল
চোখের নিচের ত্বক অত্যন্ত পাতলা এবং সংবেদনশীল। তাই আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে অল্পতেই। এমনকি আপনার মেক আপের কোনো উপকরণের ছোয়াতেও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে চোখের নিচের ত্বক। চোখের নিচে কালো দাগ শুধু নিদ্রাহীনতার চিহ্নই নয়, মুখায়বয়বের উপর ‘ব্ল্যাক স্পট’ও বটে।
চোখের নিচে কালো দাগ কেন হয়
ঘুম কম হলে তো বটেই এছাড়াও নানা কারণে কালো দাগ পড়তে পারে চোখের নিচে। জিনগতভাবে অনেকের চোখে জন্ম থেকেই কালো দাগ থাকে। এর বাইরে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাঢ় হতে পারে চোখের নিচের ত্বকের রং। পাতলা ত্বকের নিচে রক্তের কৈশিক জালিকার কারণে একটা কালোভাব চলে আসে আবার পুষ্টিহীনতা বা বার্ধক্যের কারণে চোখ গর্তের ভেতর ঢুকে গেলেও মনে হয় কালো দাগ পড়েছে চোখের নিচে।
চোখের নিচের কালো দাগের ধরন
এখন খেয়াল করুন আপনার চোখের নিচে নীলচে নাকি বাদামি দাগ পড়েছে। বাদামী দাগ সাধারণত তৈরি হয় জিনগত কারণেই। তবে চোখ বেশি কচলালে বা রোদে পুড়েও হতে পারে এমন অবস্থা। এ অস্বস্তি এড়াতে এমন ক্রিম ব্যবহার করুন যাতে সয়া বা সাইট্রাস আছে। এগুলো ত্বক উজ্জ্বল হতে সাহায্য করে। সানস্ক্রিন তো ব্যবহার করতে হবে। এবং চোখ কচলানো চিরতরে বন্ধ করতে হবে। চোখের নিচের দাগ যদি নীলচে হয় তবে দুশ্চিন্তা করবেন না। কৈশিক জালিকায় রক্ত প্রবাহের কারণেই এমন দেখায়।
পর্যাপ্ত ঘুম আর ব্যালেন্সড ডায়েটই পারে চোখের ত্বক সুস্থ রাখতে। এর বাইরেও জেনে নিন কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি-
শসার ব্যবহার
শসার ব্যবহারে চোখের আরামবোধ হয়। এটি কালো দাগ দূর করে ত্বককে দীপ্তিময় করে তোলে। শসা স্লাইস করে কেটে ফ্রিজে রেখে ঠাণ্ডা করুন। চোখের ওপর শসার স্লাইজ ১৫-২০ মিনিট রেখে পানির ঝাপটা দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে দিনে দুবার ব্যবহার করুন।
লেবু
লেবু ভিটামিন সির উৎস। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে ও চোখের কালো দাগ দূর করে।
শসার রস+লেবুর রস:
শশা এবং লেবুর সংমিশ্রণ আপনার ত্বকের নানান অসুস্থতার চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সমান ভাগে শসা এবং লেবুর রস মেশানোর চেষ্টা করুন। তারপর আপনার চোখের নীচের সার্কেলগুলিতে এই মিশ্রণটি তুলোর ছোট বল দিয়ে আস্তে আস্তে লাগিয়ে নিন। আপনার চোখে লেবুর রস যাতে না ঢুকে যায় সে ব্যাপারে খেয়াল রাখবেন।
১০ থেকে ১৫ মিনিট পর গরম জল দিয়ে মুখ ভাল করে ধুয়ে ফেলুন।
কাঁচা আলু
কাঁচা আলু ঠাণ্ডা করে ব্লেন্ডারে পিষে পেস্ট তৈরি করুন। পেস্ট দাগের উপর মেখে ১০-১৫ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। আলু পেস্ট করতে ঝামেলা মনে হলে শসার মতো স্লাইস করেও ব্যবহার করতে পারেন। সপ্তাহব্যাপী দিনে ১-২ বার ব্যবহার করলেই চলবে।
গোলাপ জল
প্রাকৃতিক ভাবেই গোলাপ জল স্কিন টোনার হিসেবে কাজ করে। ছোট্ট পরিস্কার কাপড়ের টুকরা বা আই প্যাড গোলাপ জলে ভিজিয়ে রাখুন কয়েক মিনিট। পুরো ভিজলে চোখ বন্ধ করে চোখের পাতার উপর রেখে দিন ১০-১৫ মিনিট। দিনে একবার করে ৭-১০ দিন ব্যবহার করলে চোখের স্বাভাবিক রং ফেরত আসবে।
টমেটো:
টমেটোর মধ্যে লাইকোপিনের পরিমাণ বেশি থাকে। লাইকোপিন নরম ত্বক তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে। সেই সঙ্গে চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল কমাতেও সাহায্য করে। আপনার চোখের নীচের কালো দাগ থেকে মুক্তি পেতে লেবুর রসের সঙ্গে সমান অনুপাতের টমেটোর রস মিশিয়ে নিন। তারপরে চোখের নীচের অংশে এটি প্রয়োগ করতে একটি তুলোর বল বা মেকআপ রিমুভার প্যাড ব্যবহার করুন। সমাধান পেতে প্রায় ১০ মিনিটের জন্য রেখে দিন।
আমন্ড ওয়েল
স্পর্শকাতর ত্বকের জন্য আমন্ড ওয়েলের খ্যাতি আছে। প্রতি রাতে ঘুমুতে যাওয়ার আগে চোখের নিচে হালকা আমন্ড ওয়েল মেখে শুয়ে পড়ুন। সকালে ঘুম থেকে উঠে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। কালো দাগ বিদায় হওয়ার আগ পর্যন্ত এ পদ্ধতি চালু রাখুন।
আন্ডার এই ক্রিম ব্যবহার
চোখের নিচে কালো দাগ দূর করার ক্ষেত্রে আপনাকে সাহায্য করতে পারে এই অভ্যাস। প্রতিদিন চোখের নিচে আন্ডার আই ক্রিম ব্যবহার করুন। এটি আপনার চোখের নিচের চামড়াকে পাতলা রাখতে সাহায্য করে। ফলে এই চোখের নিচে সহজে কালো দাগ পড়ে না। আন্ডার আই ক্রিম কেনার আগে একজন বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নিন। কোন ক্রিম আপনার জন্য সহায়ক, সেটি তিনিই বলে দেবেন।
মনে রাখবেন চোখ ও এর আশেপাশের ত্বক অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং স্পর্শকাতর। চোখের নিচের দাগ দূর করতে গিয়ে যেন চোখ দুটো খোয়া না যায় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। চোখের নিচে মাখতে গিয়ে যেন কোনো উপাদান চোখে ঢুকে না যায় সেটা লক্ষ্য রাখতে হবে।
সিরাম ব্যবহার
চোখের নিচের কালো দাগ দূর করার জন্য ব্যবহার করতে পারেন সিরাম। বিশেষজ্ঞদের মতে, সামান্য পরিমাণ ক্যাফেইন যুক্ত আই সিরাম ব্যবহার করলে তা চোখের নিচের কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে। নিয়মিত এই সিরাম ব্যবহারে কমে আসে চোখের নিচের কালো দাগ। সেইসঙ্গে কমবে চোখের নিচের চামড়ার শুষ্ক ভাবও।
ম্যাসাজ
ম্যাসাজ হতে পারে অনেক সমস্যার সমাধান। শরীরের কোথাও ব্যথা হলে জাদুর মতো কাজ করে ম্যাসাজ। শুধু ব্যথাই নয়, আপনার চোখের নিচে কালো দাগ পড়লে তা দূর করতেও সাহায্য করবে এই ম্যাসাজ। নিয়মিত চোখের নিচের অংশে হালকা হাতে ম্যাসাজ করুন। আঙ্গুলের উপরের অংশ দিয়ে চোখের চারপাশে ক্রিম লাগানোর মতো করে ম্যাসাজ করতে থাকুন। এতে করে চামড়ায় অনেকটাই টানটান ভাব আসবে।
অনেক সময় ঘুমের অভাবে চোখের নিচে কালো দাগ পড়তে পারে। এটি আবার দ্রুত চলেও যায়। কিন্তু ঠিকভাবে ঘুম হওয়ার পরেও যদি চোখের নিচে কালি পড়ে তবে তা চিন্তার বিষয়। কারণ কিছু অসুখের কারণেও এমনটি হতে পারে। হাই ব্লাড প্রেশার, ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের কারণে এমনটা হতে পারে। সারাক্ষণ চশমা পড়ার অভ্যাস যাদের, তাদেরও চোখের নিচে কালো দাগ পড়তে পারে। আবার রাতের পর রাত জেগে থাকার অভ্যাস থাকলে চোখের নিচে কালি স্থায়ী হতে পারে।
পেপটাইডযুক্ত আই ক্রিম
চোখের নিচে কালো দাগ পড়লে তা দূর করার জন্য ব্যবহার করুন পেপটাইডযুক্ত আই ক্রিম। এটি শুধু চোখের নিচের কালো দাগই নয়, সেইসঙ্গে কমায় চোখের নিচের ফোলাভাবও। এ কারণেই এই পেপটাইডযুক্ত আই ক্রিম ব্যবহার করা জরুরি।
ঠান্ডা চামচে সমাধান
একটি পরিষ্কার চা চামচ ফ্রিজে রেখে ভালোভাবে ঠান্ডা করে নিন। এরপর সেটি বের করে চোখের নিচের অংশে হালকা করে চেপে ধরে রাখুন কিছু সময়ের জন্য। এই উপায় মেনে চলুন সপ্তাহে দুই-তিনদিন। এতে চোখের নিচের কালো দাগ অনেকটাই কমে আসবে।
কাজু বাদাম
কাজু বাদাম বেটে দুধের সঙ্গে গুলিয়ে, পেস্টের মতো তৈরি করে চোখের চারপাশে লাগাতে পারেন। এতেও উপকার মিলবে।এছাড়া চোখের চারপাশে বাদাম তেল দিয়ে মালিশ করলেও দ্রুত উপকার পাবেন।
দুধ
ঠাণ্ডা দুধে একটি কটন বল ভিজিয়ে চোখে লাগান। দশ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে চোখের ফোলাভাব কমে যাবে এবং কালো দাগ দূর হবে।
কমলা
কমলার রসের সঙ্গে দুই ফোঁটা গ্লিসারিন মিশিয়ে চোখের নিচে লাগান। এটা কালো দাগ দূর করার পাশাপাশি আরও উজ্জ্বল করে তোলে।
বাদাম তেল
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে চোখের চারপাশে বাদাম তেল দিয়ে ম্যাসাজ করতে পারেন। এতে চোখের কালো দাগ দূর হওয়ার পাশাপাশি চোখের চামড়া টানটান হবে।
কোল্ড কম্প্রেস
কোল্ড কম্প্রেস আপনার ত্বকের জন্য বিস্ময়কর কাজ করে। আপনি এটি সকালে বা সন্ধ্যায় চেষ্টা করতে পারেন। আপনাকে যা করতে হবে তা হল আক্রান্ত স্থানে প্রায় ১০ মিনিটের জন্য একটি কোল্ড কম্প্রেস প্রয়োগ করুন। আরও ভাল, যদি আপনার মাস্ক থাকে তবে আপনি এটি কিছু সময়ের জন্য ফ্রিজে রাখতে পারেন। দিনে দুবার সেটা বের করে মুখে রাখতে পারেন। এটি আপনার চোখের নীচের ডার্ক সার্কেল কমানোর সবচেয়ে সহজ উপায়।
ঠান্ডা চায়ের ব্যাগ:
ডার্ক সার্কেলের চিকিৎসার জন্য টি ব্যাগও ব্যবহার করা যেতে পারে। সবুজ চায়ের মতো অনেক চায়ের মধ্যেই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের অতিরিক্ত সুবিধা রয়েছে। এতে প্রদাহবিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা আপনার চোখের নীচে থাকা দাগগুলি কমাতে সাহায্য করে।
একটি চা ব্যাগ পরিষ্কার জলে ভিজিয়ে রাখুন এবং তারপর ৩০ মিনিটের জন্য তাকে ফ্রিজে রাখুন। এবারে আপনার চোখের নীচে টি ব্যাগ রাখুন। তারপর দেখুন এর ফলাপল।
কলার খোসা কি আসলেই চোখের নিচের কালো দাগ দূর করে?
রূপচর্চা নিয়ে চালু আছে নানান মিথ্যা । যুক্তরাজ্যের গার্ডিয়ান পত্রিকার হয়ে নিয়মিত সেগুলোর সত্যাসত্য যাচাই করেন সৌন্দর্য ও লাইফস্টাইলবিষয়ক সাংবাদিক অনিতা ভগবানদাস। ডার্ক সার্কেল বা চোখের নিচের কালো দাগ নানা কারণে হতে পারে। কারও এটা হয় জেনেটিক কারণে, কারও ক্ষেত্রে আবার বয়স, জীবনযাপন পদ্ধতি ও ত্বকের ধরন দায়ী। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা বলছেন, চোখের নিচের এই কালো দাগ দূর করতে কলার খোসার বিস্ময়কর ক্ষমতা আছে। হাতে–কলমে তাঁদের এই দাবির সত্যতা সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায় না । তাই এই ব্যাপারে সচেতনতা অবলম্বন করলেই ভালো।
চোখের নিচে কালো দাগ পড়লে তা কমানোর জন্য নানাভাবে চেষ্টা করেন অনেকে। কিন্তু এটি সহজে কমানো সম্ভব হয় না অনেক সময়। স্থায়ী সমাধানের জন্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাবেন। তবে সেইসঙ্গে আপনাকে করতে হবে কিছু কাজ। নিয়মিত এভাবে যত্ন নিলে চোখের নিচের কালো দাগ অনেকটাই হালকা হয়ে আসবে।