অনলাইনে পাসপোর্ট করার নিয়ম ও খরচ

অনলাইনে পাসপোর্ট করার নিয়ম ও খরচ | ই পাসপোর্ট ফি কত

পাসপোর্ট করার নিয়ম ও খরচ

বিদেশ গমনে ভ্রমণকারীর প্রথম প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট হচ্ছে পাসপোর্ট। আর এখন যেহেতু পাসপোর্টেও ডিজিটালাইজেশন এসেছে তাই আপনার ই-পাসপোর্ট করার নিয়ম ও খরচ সম্পর্কে জানা দরকার। কেননা আপনি যদি সকল নিয়মগুলো নিজেই জানেন, তবে দালালের খপ্পরে পরে অধিক খরচ করতে হবে না।

বর্তমানে অনলাইনে ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা খুবই সহজ। আপনি আপনার ফোন বা কম্পিউটার থেকে নিজেই নিজের বাসায় বসে প্রাথমিক আবেদন করতে পারবেন। পূর্বে আবেদনের পর পাসপোর্ট হাতে পেতে অনেকটা সময় লেগে যেত। কিন্তু এখন আর সেই সমস্যা নেই।

এখন আপনি প্রাথমিক আবেদন পূরণ করে কোনরূপ পূর্ব শিডিউল ছাড়াই স্থানীয় পাসপোর্ট অফিসে আবেদন সাবমিট করতে পারবেন। আর ধারণা করা যায়, সবকিছু ঠিক থাকলে মাত্র ১ মাস সময়ের মধ্যেই আপনি আপনার বহুকাঙ্খিত পাসপোর্টটি হাতে পেয়ে যাবেন।

আজকের এই আর্টেকেলে আমরা পাসপোর্ট করার নিয়ম ও খরচ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরবো। পাশাপাশি একটি সফল আবেদন করার জন্য আপনাকে কি কি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে এবং কি কি কাগজপত্র লাগবে, তাও উল্লেখ করবো। আশা করি সম্পূর্ণ আলোচনা আপনার জন্য বিশেষ ফলপ্রসূ হবে।

ই-পাসপোর্ট করার নিয়ম

সরকারি বিভিন্ন কাজ ডিজিটালাইজড করার ফলে এখন ই-পাসপোর্ট করার নিয়মও অনেক সহজ হয়ে গেছে। আপনি এখন ঘরে বসে নিজে নিজেই পার্সপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন। প্রথমত E-Passport Online Registration Portal এ প্রবেশ করুন। ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলেই Apply online নামে একটি বাটন দেখতে পাবেন। এটিতে ক্লিক করলেই আপনার আবেদনের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে।

ই পাসপোর্ট এর জন্য নীচের ঠিকানায় যান

ই পাসপোর্ট ফি কত ২০২২। পাসপোর্ট করতে খরচ

এখন আমরা দেখব ই পাসপোর্ট ফি কত ২০২২।  সাধারণ পাসপোর্ট এবং ই-পাসপোর্ট উভয়েরই তিন ধরনের ডেলিভারি আছে। আবেদনপত্র জমা দেয়ার পর থেকে নির্ধারিত কর্মদিবস পর ই-পাসপোর্ট হাতে পাওয়া যায়। এগুলো হচ্ছে:

১. নিয়মিত: ১৫ কর্মদিবস

২. জরুরি: ৮ কর্মদিবসে

৩. অতিব জরুরি: দুই কর্মদিবস

উল্লেখ্য, দেশের অভ্যন্তরে অতি জরুরী পাসপোর্ট প্রাপ্তির লক্ষ্যে আবেদনের সাথে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দাখিল করা হলে অন্যান্য সকল তথ্য সঠিক থাকা সাপেক্ষে ২ কর্মদিবসের মধ্যে সুপার এক্সপ্রেস পাসপোর্ট প্রদান করা হয়।

সকল পাসপোর্টের খরচ এক নয়। ডেলিভারির সময়, পাসপোর্টের পৃষ্ঠা এবং মেয়াদের সময়সীমার ওপর পাসপোর্টের খরচ নির্ভর করে। যেমন:

৪৮ পৃষ্ঠার ৫ বছর মেয়াদী ই-পাসপোর্ট ডেলিভারি ফি

  • নিয়মিত: ৪ হাজার ২৫ টাকা
  • জরুরি: ৬ হাজার ৩২৫ টাকা
  • অতিব জরুরি: ৮,৬২৫ টাকা

৪৮ পৃষ্ঠার ১০ বছর মেয়াদী ই-পাসপোর্ট ডেলিভারি ফি

  • নিয়মিত: ৫ হাজার ৭৫০ টাকা
  • জরুরি: ৮ হাজার ৫০ টাকা
  • অতিব জরুরি: ১০ হাজার ৩৫০ টাকা

৬৪ পৃষ্ঠার ৫ বছর মেয়াদী ই-পাসপোর্ট ডেলিভারি ফি

  • নিয়মিত: ৬ হাজার ৩২৫ টাকা
  • জরুরি: ৮ হাজার ৬২৫ টাকা
  • অতিব জরুরি: ১২ হাজার ৭৫ টাকা

৬৪ পৃষ্ঠার ১০ বছর মেয়াদী ই-পাসপোর্ট ডেলিভারি ফি

  • নিয়মিত: ৮ হাজার ৫০ টাকা
  • জরুরি: ১০ হাজার ৩৫০ টাকা
  • অতিব জরুরি: ১৩ হাজার ৮০০ টাকা

পাসপোর্ট করার ধাপসমুহ

সংক্ষেপে নতুন পাসপোর্ট করার নিয়ম বা ধাপ এগুলো। এই লিস্ট দেখলেই হয়ত বুঝে যাবেন কি করতে হবে। আর না বুঝলেও সমস্যা নাই নিচে আমি প্রতিটি ধাপের বিস্তারিত লিখছি।

  1. ই-পাসপোর্ট করার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করা
  2. পাসপোর্ট এপ্লিকেশন ফরম পূরণ করা
  3. পাসপোর্ট ফি জমা দেয়া
  4. আবেদন ফরম পাসপোর্ট অফিসে জমা দেয়া ও বায়োমেট্রিক এনরোলমেন্ট সম্পন্ন করা
  5. পুলিশ ভেরিফিকেশন
  6. পাসপোর্ট স্ট্যাটাস চেক করা
  7. পাসপোর্ট সংগ্রহ করা

পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে । ই-পাসপোর্ট করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

আপনি কি জানেন পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে। যদি পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে জানতে চান তাহলে তা নিচে দেয়া হল। অনলাইনে ই-পাসপোর্টের প্রাথমিক আবেদনের জন্য কোন কাগজপত্র লাগবে না। তবে প্রাথমিক আবেদন সম্পন্ন হলে নিচে উল্লেখিত ডকুমেন্টগুলো নিয়ে স্থানীয় পাসপোর্ট অফিসে স্ব-শরীরে উপস্থিত হতে হবে।

  1. অনলাইন আবেদনের প্রিন্ট কপি
  2. ১ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
  3. জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি
  4. ঠিকানার প্রমাণপত্র
  5.  পূর্ববর্তী পাসপোর্ট এর ফটোকপি ও অরিজিনাল পাসপোর্ট
  6.  পেশাগত সনদের ফটোকপি বা চাকরির আইডি কার্ড
  7.  নাগরিক সনদ  অথবা চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট
  8. ব্যাংকের ফি জমা দেওয়ার রশিদ

অবশ্যই জাতীয় পরিচয় পত্র অথবা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ অনুযায়ী সমস্ত তথ্য আবেদন পত্র লিখতে হবে এবং জিজ্ঞাসিত সকল তথ্য সঠিক দিতে হবে। কেননা পুলিশ ভেরিফিকেশনে আপনার দেওয়া তথ্যের ব্যতিক্রম পাওয়া গেলে পাসপোর্ট পেতে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। তাই এ বিষয়টি সাবধানতার সাথে হ্যান্ডেল করতে হবে। আশা করি বুঝতে পেরেছেন যে, পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে।

পাসপোর্ট ফরম পুরনের কিছু সতর্কতা ও তথ্য । পাসপোর্ট আবেদন ফরম

ই-পাসপোর্ট এর ফর্ম আবেদন খুব সতর্কতার সাথে পুরন করতে হবে। কারণ একটু ভুল হলেই বলবে আবেদন ক্যানসেল করতে। আর আপনি নিজে নিজে সাইট থেকে আবেদন ক্যানসেল করতে পারবেন না। এর জন্য অফিসে আবেদন করলে কিছুদিন পর আবেদন ডিলিট হবে। তা হয়রানি এড়াতে সতর্কতার সাথে ফরম পুরন করুন।

 

একটা NID বা BRC দিয়ে একবার আবেদন সাবমিট করে ফেললে সেটা ডিলিট না হওয়া পর্যন্ত ওই NID বা BRC দিয়ে আর আবেদন করতে পারবেন না।

কোন তথ্য সংশোধন করতে হলে এফিডেবিট ও সংশোধন আবেদন করতে হবে। তারপরেও কয়েকমার Blackened verification এ আটকে থাকবে। আপনাকে বার বার পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে তাগাদা দিতে হবে।

যেখানে টাকা জমা দিতে হবে । ই পাসপোর্ট ফি কত ২০২২

ই-পাসপোর্টের আবেদনের অনলাইন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে শ্রেণিবিভাগ অনুযায়ি ফি প্রদান করতে হয়। সরকারি ওয়েবসাইটে অনলাইন এবং ব্যাংক উভয় পেমেন্টের কথা উল্লেখ থাকলেও বর্তমানে অনলাইন পেমেন্ট বন্ধ রয়েছে।স্বশরীরে গিয়েই-পাসপোর্ট এর টাকা জমা দিয়ে রশিদ সংগ্রহ করতে হবে।

  • সোনালী ব্যাংক,
  • ট্রাস্ট ব্যাংক,
  • ওয়ান ব্যাংক,
  • ঢাকা ব্যাংক,
  • প্রিমিয়ার ব্যাংক
  • ব্যাংক এশিয়াতে

ব্যাংক ডিপোজিট ফর্মে আবেদনকারীর নাম এবং ই-পাসপোর্টে দেয়া আবেদনকারীর নাম অভিন্ন হতে হবে।

এ সময় আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপির প্রয়োজন হতে পারে। পাশাপাশি অনলাইনে আবেদনের প্রিন্ট কপিটিও সাথে নিয়ে যাবেন।.

পাসপোর্ট অফিসে ফর্ম জমা দেওয়া । পাসপোর্ট আবেদন ফরম

এই ক্ষেত্রে ই-পাসপোর্ট এর ফর্ম হাতে পূরণ করলে নিজের বর্তমান ঠিকানা সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে হলে রিজিওনাল অফিস আর সিটি কর্পোরেশনের বাইরে হলে আঞ্ছলিক অফিসে জমা দিতে হবে। আর অনলাইনে জমা দিলে ফর্মেই লেখা থাকবে কোন অফিসে জমা দিতে হবে।

 

সরাসরি ই-পাসপোর্ট এর ফর্ম জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে, ফর্ম প্রথমে জমা নিয়ে কম্পিউটার সফট ওয়্যারে ফর্মের তথ্য গুলো নিবে তারপর ফর্মে সিল মেরে আবার ফর্ম আপনাকে ফেরত দেওয়া হবে। তারপর ছবি তোলা ও বায়োমেট্রিকের জন্য আঙ্গুলের ছাপ নেওয়ার জন্য ফর্ম নিয়ে অন্য একটি রুমে যেতে হবে। এখানে বেশ কয়েকটি ধাপ আছে। সব প্রক্রিয়া শেষ হতে মোটামুটি বেশ সময় লাগে। এছাড়া ই-পাসপোর্ট এর ফর্ম জমা দেওয়ার সিরিয়াল যদি দীর্ঘ হয় তাহলে সময় আরও বেশি লাগবে। তাই ই-পাসপোর্ট এর ফর্ম জমা দিতে গেলে সকাল সকাল চলে যাওয়া ভালো।

ই-পাসপোর্ট এর ফর্ম জমা দেওয়া শেষ হলে কম্পিউটারে প্রিন্ট করা একটি টোকেন দেওয়া হবে যেখানে আপনার তথ্য, পাসপোর্ট ডেলিভারির সময়সহ অন্যান্য কিছু তথ্য থাকবে। এই টোকেনের তথ্য গুলো খুব ভালো ভাবে চেক করবেন কারন এই তথ্য অনুসারেই ই-পাসপোর্ট  প্রিন্ট করা হবে।

পুলিশ ভেরিফিকেশন

ই-পাসপোর্ট এর ফর্ম জমা হওয়ার কিছু দিন পর পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য পুলিশ বাসায় ও আসতে পারে আবার ফোন করে তাদের অফিসেও আপনাকে যেতে বলতে পারে। এই ক্ষেত্রে পুলিশ বিভিন্ন কাগজ রেডি করে রাখতে বলে যেমন- প্রোপার্টি পেপার, ইউটিলিটি বিল ইত্যাদি।

পাসপোর্ট সংগ্রহ

আপনার ই-পাসপোর্টের ধরণ অনুযায়ী ১ সপ্তাহ বা ২০-৩০ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট পেয়ে যাবেন। পাসপোর্ট রেডি হলে মোবাইলে মেসেজ দিয়ে আপানকে জানানো হবে। অথবা অনলাইনে স্ট্যাটাস চেক করেও ই-পাসপোর্ট সম্পর্কে জেনে নিতে পারবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *