সেতু/ব্রিজ বাকা কেন হয়?

বড় ধরনের সেতু / ব্রিজ সবসময় বাঁকা হয় কেন? বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা জেনে নিন

সেতু বা ব্রিজ আমাদের জন্য খুবই উপকারী। একবার চিন্তা করুন তো যদি সেতু না থাকতো তাহলে কি হতো? প্রতিদিনের যাতায়াতে হয়তো আপনার পথে প্রায়শই বড় কোনো ব্রিজ পড়ে যায়। কখনো খেয়াল করেছেন এসব কোনো বড় ব্রীজ ই সোজা না, সব ব্রিজই কেমন যেনো আকা বাঁকা। কোনো সেতু এস আকৃতির, কোনোটা বা এফ বা অন্যকিছু। দূর থেকে যদি খেয়াল করেন, তাহলে দেখবেন বড় ব্রিজ শুধু বাঁকানোই নয়, আস্তে আস্তে উঁচু হয়ে আবার নিচু হয়েও যাচ্ছে। কিংবা এর উল্টোটাও হতে পারে।

ব্রিজ সবসময় বাঁকা হয় কেন?

 

লক্ষ্য করলে দেখবেন যে – ব্রীজের দৈর্ঘ্য ছোট হলে ব্রিজ সোজা হয়, কিন্তু যখন কোন ব্রীজের দৈর্ঘ্য বেশি হয় তখন তখন সেটি বাঁকা করে তৈরি করা হয়। কিন্তু বড় ধরনের ব্রীজের ক্ষেত্রে ব্রিজ কখনোই সোজা করে তৈরি করা হয় না। বড় ব্রীজের ক্ষেত্রে ব্রিজ কেন বাঁকা করে তৈরি করা হয় এ বিষয়টি নিয়ে আজ আমরা আলোচনা করব।

একটি ব্রীজের কাঠামোতে ৩ ধরনের লোড কাজ করে। যেমন:

১. কাঠামোর নিজস্বলোড; একে ডেড লোড বলা হয়
২. যানবাহনের ওজন এবং
৩. পারিপার্শ্বিক লোড; পারিপার্শ্বিক লোড বলতে পানির চাপ, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় সেতুর কাঠামোতে যে চাপ পড়ে তাই বোঝানো হচ্ছে।
একটি ব্রীজের উপর দিয়ে যখন গাড়ি যায় তখন গাড়িটি ব্রীজের উপর তার নিজের ওজনের জন্য একটি বল প্রয়োগ করে। ব্রিজও নিউটনের তৃতীয় সূত্র অনুসারে ঠিক সেই পরিমাণ বল প্রয়োগ করবে। ব্রিজ সোজা না বাঁকা তার ওপর নির্ভর করে গাড়ি কি পরিমান বল ব্রিজে প্রয়োগ করবে।
ব্রিজ সোজা হলে;
Mg = F
এখানে,
M = গাড়ির ভর
g = অভিকর্ষজ ত্বরণ
F = সেতু কর্তৃক প্রয়োগকৃত বল

ব্রিজ বাঁকা হলে;
ব্রিজ যদি যদি বাঁকা হয় তাহলে কোন গাড়িকে সেতুর উপর যাওয়ার সময় একটি বৃত্তাকার পথ অতিক্রম করতে হবে। আর বৃত্তাকার পথ অতিক্রম করার সময় গাড়িটি বৃত্তাকার পথ টি যে বৃত্তের অংশ সেই বৃত্তের কেন্দ্র বরাবর একটি বল লাভ করবে। তখন গাড়ি কর্তৃক প্রয়োগকৃত বলের মান কমে যাবে। এর ফলে সেতুটি গাড়িকে আগের থেকে কম বলে প্রয়োগ করবে এবং সূত্রমতে গাড়িও কম বল প্রয়োগ করবে। সূত্রটি দাঁড়াবে;

Mg – MV²/R = F

এখানে,
V = গাড়ির বেগ
R = বৃত্তাকার পথটি যে বৃত্তের অংশ সেই বৃত্তের ব্যাসার্ধ

সুতরাং ব্রিজ বাঁকা হলে ভিতের উপর গাড়ির লোড কম পড়ে। তাই ব্রিজ কে কে দীর্ঘস্থায়ী করতে হলে ব্রিজ বাঁকিয়ে তৈরি করতে হবে।

এছাড়া ব্রিজ সোজা না করে বাঁকা করে তৈরি করার আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কারণ রয়েছে যার জন্য ব্রিজ বাঁকিয়ে তৈরি করা হয়:

১. যানবাহন পার হওয়ার সময় ব্রিজে কম্পনের সৃষ্টি হয়। এর ফলে ব্রিজের উপর কম্পনজনিত চাপ পড়ে। যদি ব্রিজ সোজা হয় তাহলে চাপ এক জায়গায় পড়ে। এতে ব্রিজ ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর ব্রিজ টি যদি বাঁকা হয় তাহলে ওই চাপ চাপ ব্রীজের সর্বত্র সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ে। তখন আর ব্রিজ ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা আর থাকেনা।

২. ব্রীজের মোমেন্ট ঠিক রাখার জন্য ও অধিক পরিমাণে শিয়ার প্রতিরোধ করার জন্য মাধখানে ধনুকের ন্যায় বাকানো হয়। এর ফলে ব্রিজের প্রতিটি পিলারে সমানভাবে চাপ ছড়িয়ে যায়।

৩. পানির নিচে মাটির চাপ সব জায়গাতে সমান থাকেনা সেই দিকটা বিবেচনা করা হয়।

৪. যদি কখনো সেতুর কোন অংশ ভেঙ্গে যায় আর সেটি যদি সোজা হয় তাহলে সেটা দুর থেকে দেখা যাবে না। এর ফলে অনেক বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আর ব্রিজ যদি বাঁকিয়ে তৈরি করা হয় তাহলে কোথাও ভেঙে গেলে অনেক দূর থেকে দেখা যাবে। এতে অনেক বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

৫. ভূমিকম্প হতে ব্রিব্রিজ কে বাঁচাতে ব্রিজ বাঁকিয়ে তৈরি করা হয়। ব্রিজ বাঁকা হলে ভূমিকম্পের সময় ব্রিজের সর্বত্র চাপ সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এতে ব্রিজ ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।

৬. অনেক সময় ব্রিজ কে রাস্তার সাথে সংযুক্ত করার জন্য বাঁকা তৈরি করা হয়।

ব্রীজের নিচ দিয়ে যানবাহন যাওয়ার জন্য ব্রীজের মাঝের অংশকে আরো একটু উঁচু করে দেওয়া হয়, যাতে বড় কোনো নৌযান যেতে বাঁধার সম্মুখীন না হয়।
পরিশেষে এটা বলা যায় যে ব্রিজের সৌন্দর্য রক্ষার জন্য ব্রিজ বাঁকা করে তৈরি করা হয় না। ব্রিজ এর স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করার জন্যই ব্রিজ কে সোজা না করে বাঁকা করে তৈরি করতে হয়।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *