গর্ভবতী মায়ের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু খাবার তালিকা

 

গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা  

গর্ভবতী মায়েরা নিজের স্বাস্থ্য ও তাঁর গর্ভস্থ ভ্রমণের সঠিক সিদ্ধান্ত নিশ্চিত করতে হয় । তাই গর্ভবতী মায়েদের একটি আদর্শ খাবার রুটিন অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণ করা উত্তম ।  গর্ভবতী মায়েরা সবকিছু সঠিক ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার ।

গর্ভকালীন সময়ে মায়ের অধিকহারে ওজন বৃদ্ধি পায় ।  গর্ভকালীন সময়ে মায়েদের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে শক্তি থাকে হিমোগ্লোবিনের  মাথা ঠিক রাখতে হয় । এজন্য গর্ভকালীন প্রথম মাস থেকে একটি আদর্শ খাবার রুটিন মেনে চলা দরকার । গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা কেমন প্রয়োজন তা নিয়ে আপনাদের মাঝে আলোচনা করব ।

গর্ভবতী মায়েদের কি কি খাওয়া যাবে  এবং কি কি খাওয়া যাবেনা ।  সেসব নিয়ে দরকারী কিছু  বলে দেব ।

প্রথম ধাপে

ক্যালসিয়ামের উপকার

গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা, প্রয়োজনমতো ক্যালসিয়াম । ক্যালসিয়াম অতি প্রয়োজনীয় উপাদান হিসেবে কাজ করে শিশুর হাড়ের গঠনের জন্য ।  ক্যালসিয়ামের অভাবে গর্ভবতী মায়েদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয় যেমন ; কোমর ব্যথা , পায়ে ব্যথা ,  পায়ের গোড়ালি ব্যথা ,  ইত্যাদি ।  গর্ভবতী মায়েদের ক্যালসিয়ামের জন্য অনেক ধরনের সমস্যা হতে পারে । দুধ ,দই ,পনির , ইত্যাদি এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে । গর্ভবতী মায়েদের বিশেষ ভাবে খেয়াল রাখতে হবে হাই পেশার রয়েছে কিনা । তবে সে ক্ষেত্রে আপনি চাইলে দুধের পরিবর্তে দই খেতে পারে ।

তবে আপনি যদি প্রতিদিনের ভাতের সঙ্গে একটি কাঁচা মরিচ খেতে পারেন এতে ক্যালসিয়ামের উপকার করবে । শাকসবজি , ছোট মাছ, মাছের কাটা ,বিভিন্ন ধরনের বাদাম ,  ফলমূল , ছোলা  ইত্যাদি ।  এসবে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম । তবে গর্ভকালীন অবস্থায় মায়েদের বেশি পরিমাণে কাঁচা কলা খেলে বেশি উপকারে আসবে ।  রক্তশূন্যতা দূর করবে ক্যালসিয়াম এর উপকার করবে ।

এই নিয়মগুলো মানার পরও যদি আপনার শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব দেখা দেয় তাহলে আপনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ  নিতে পারেন । ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে গর্ভবতী মায়েদের ক্যালসিয়ামের ট্যাবলেট খেতে হবে ।

দ্বিতীয় ধাপে

 আয়রন  এর উপকার

গর্ভকালীন অবস্থায় মায়েদের যদি আয়রনের সমস্যা দেখা দেয় তবে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হয় ।  আয়রনের কারণে অনেক শিশুর জন্মের পর থেকে হিমোগ্লোবিনের অভাব ও  রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে ।

তাই গর্ভবতী মায়েদের প্রচুর  পরিমাণে আয়রন  সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে ।  তাহলে আয়রনের ঘাটতি পূরণ হতে সাহায্য করবে । আয়রনের ঘাটতি পূরণ করতে যেসব খাবার উপকারে আসবে,  আপনি সব সময় চেষ্টা করবেন সবুজ সবজি খাওয়ার জন্য ।  যেমন ;  কচু শাক ,  লাল শাক , পালং শাক , কাঁচা কলা , ডালিম , বাদাম , ছোলা  খেজুর , কমলা , মালটা   শিং মাছ ,  মাগুর মাছ , পাংকাস মাছ , ইত্যাদি,  রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ।

গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা | গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা

তৃতীয় ধাপে

ফলিক  এসিড

ফোলেট ও ফলিক  এসিড এক ধরনের ভিটামিন বি কমপ্লেক্স জাতীয় অপাদান । গর্ভের সন্তানের জন্য   হৃদপিণ্ড , মস্তিষ্ক,সুস্থ রাখার জন্য অঙ্গহানি ফলিক এসিড এক ধরনের প্রয়োজনীয় উপাদান । এতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফলমূল যেমন ;  আম,  জাম ,  লিচু  , কলা , আঙ্গুর , এসটোবেরি ,  ইত্যাদি ।  এসবের রয়েছে ফলিক এসিড ।

এছাড়া রয়েছে সবুজ পাতার সমৃদ্ধ খাবার  যেমন /  পুঁইশাক ,  পাটশাক , মুলা শাক , সরিষা শাক,  পেঁপে, লেবু, মটরশুটি ,বরবটি ,  বাঁধাকপি ,  গাজর,  ইত্যাদি ।   এতে আরো রয়ে ডাল যেমন / মসুর ডাল, মুগ ডাল মাসকলাই ডাল, বুটের ডাল, লাল আটা , তিল, সরিষা, ইত্যাদি।

সবকিছুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফলিক এসিড এসবের মাঝে আপনি চাইলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ট্যাবলেট খেতে পারেন । এই সব উপকরণ ফলিক এসিড গর্ভবতী মায়েদের জন্য খুব প্রয়োজনীয় কিছু খাবার তালিকা ।

চতুর্থ ধাপে

 জিংক এর উপকারিতা

গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা । গর্ভবতী মায়েদের শরীরে যদি জিংক এর পরিমান কম  থাকে ।  সে ক্ষেত্রে আপনার শিশু কম ওজনের  জন্ম দেওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে ।  এছাড়া দেহে   রোধ বা বামনত্ব হতে পারে ।এছাড়া জিংকের অভাবে পরবর্তীতে শিশুর ডায়রিয়া নিউমোনিয়া আক্রান্ত হতে পারে । কনজাংকটিভার প্রদাহ, পায়ে বা জিহ্বায় ক্ষত, মুখের চারপাশে ক্ষত, আচরণগত অস্বাভাবিকতা, অমনোযোগিতা, বিষন্নতা, সিজোফ্রেনিয়া, ক্ষুধা মন্দা দেখা দেয়।ভেড়া ও গরুর মাংস,ফুলকপি,সবুজ শিম, টমেটো ইত্যাদিতে জিংক রয়েছে। সামুদ্রিক মাছ, গরু-খাসির কলিজা, আটা-ময়দার রুটি, দুগ্ধজাত খাদ্য, শিমজাতীয় উদ্ভিদ, মসুর ডাল, চীনাবাদাম, মাশরুম, সয়াবিন ও ঝিনুকে জিংক পাওয়া যায়।

পঞ্চম ধাপে

আয়োডিন

আয়োডিন সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান হলো শিশুরমস্তিষ্কের বিকাশ ও শারীরবৃত্তীয় কাজ করে । এসবের অভাবে শিশু প্রতিবন্ধী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে ।  তাই গর্ব অবস্থায় মায়েদের আয়োডিনযুক্ত লবণ খাওয়া প্রয়োজন ।  এছাড়া রয়েছে সামুদ্রিক মাছ ,  দুধ ,  দই ,   পনির,  ডিম , কলা ,  কলার মোচা  ইত্যাদি ।  সবকিছুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়োডিন । গর্ভবতী মায়ের জন্য খুব প্রয়োজনীয় ।

ষষ্ঠ ধাপে

ভিটামিন এ

গর্ভবতী মায়েদের খুব  সচেতন থাকতে হবে । তার মধ্যে একটি হচ্ছে ভিটামিন এ এর অভাবে শিশুর দৃষ্টিশক্তি হীনতা হতে পারে ।  ভিটামিন এ শিশুর চোখের জন্য  প্রয়োজনীয় । ভিটামিন-এ খুব উপকারী দেহের বৃদ্ধি অস্থির গঠন নানা রকম  সংক্রামক রোগ হতেশরীরকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় । ভিটামিন এ সকল প্রকার রঙিন ফলমূল  শাকসবজিতে রয়েছে  ভিটামিন এ ।  ভিটামিন এ রয়েছে ম মাছ ,  ঢেলা মাছ , ডিমের কুসুম ,  খুব  বিদ্যামান ।

সপ্তম ধাপে

ভিটামিন ডি

ভিটামিন ডি এর অস্ত্র থেকে ক্যালসিয়াম শোষণ করে । গর্ভবতী মায়েদের খেয়াল রাখতে হবে ভিটামিন ডি এর অভাবে শিশুদের হাড় ঠিকমত পায়না । শিশুদের হাড় বাঁকা হয়ে যায় যাকে আমরা বলি প্রতিবন্ধী ।  তাই আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে ভিটামিন ডি এর অভাব যেন না পড়ে ।  সেজন্য আপনাকে খাবার তালিকায় রাখতে হবে  । যেমন /  দুধ দই ,  পনির ,  ডিম,  সমুদ্রের মাছ,  গরুর মাংস,  গরুর কলিজা , মাছের তেল, মাশরুম ইত্যাদিতে রয়েছে ভিটামিন ডি ।

গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা। গর্ভবতী মায়েদের জন্য দৈনিক খাবার তালিকা একটি  প্রয়োজনীয়  রুটিন

গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা তে আদর্শ খাবার রয়েছে

উপরে উল্লেখিত উপাদানগুলো গর্ভবতী মায়েদের জন্য প্রতিদিনের খাবার তালিকায় থাকা দরকার ।  গর্ভকালীন অবস্থায় আমরা অনেকেই বিভিন্ন ধরনের খাবার খেতে পারিনা ।  এজন্য এসব খাবারের মধ্যে নানান ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে ।  তারপরও জোর করে খেতে হবে সবার ভালোর জন্য ।   যেসব গর্ভকালীন অবস্থায় সাধারণ সমস্যা গুলো হল ,  সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর বমি বমি ভাব । যাকে বলা হয় মর্নিং সিকনেস ,  ক্ষুধামন্দা ,  অরুচি ,  কোষ্ঠকাঠিন্য , এসব ভেবে গর্ভবতী মায়েদের একটি আদর্শ খাবার এর রুটিন করা  হয়েছে ।

 গর্ভবতী মায়ের  জন্য সকালের খাবার তালিকা

গর্ভকালীন অবস্থায় সকালের খাবার ভারী খাওয়া একদম নিষেধ ।  সকালে ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস পানি খেয়ে , বা বিস্কুট  ও মুড়ি হালকা কিছু খাবার খেয়ে সকাল সকাল আধাঘন্টা হাঁটাচলা করে নিতে পারেন। কিছুক্ষণ হাঁটার পর এক থেকে দুই পিস রুটি ওর সঙ্গে একবার টি সবজি ডাল তরকারি 1 থেকে 2 টি ডিম খেতে পারেন ।

গর্ভবতী মায়েদের জন্য সকাল 11 টার দিকে এক গ্লাস দুধ , কিছু ফলমূল খেয়ে নিন ।  এর সঙ্গে আপনি রাখতে পারেন গম ভুট্টা ভেজে গুড়ো করে ছাতু তৈরি করে নিন ।  এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার । যেমন কার্বন-ডাই-অক্সাইড ,  ভিটামিন  , মিনারেলস রয়েছে ।  সকাল 11 টার দিকে আপনি চাইলে ছাতকে নাস্তা হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন বা খেতে পারেন ।

 গর্ভবতী মায়েদের জন্য দুপুরের খাবার তালিকা

দুপুরে  সময় একটা অথবা দুইটার মধ্যে 1 থেকে  2 কাপ ভাত অথবা তিন থেকে চার পিস রুটি খেতে পারেন । এর সঙ্গে ডাল  , সবজি,  তরকারি , মাছ ভাজি     , গরুর মাংস , সালাত  , কাঁচা মরিচ  , ইত্যাদি খেতে পারেন ।  খাবারের পর দই খেতে পারেন এতে করে আপনার হজমে সাহায্য করবে ।

 গর্ভকালীন মায়েদের জন্য বিকেলের খাবার তালিকা

বিকেলের খাবারে রয়েছে হালকা পরিমাণে কিছু নাস্তা ।  যেমন সুপ ,  কাস্টার্ড  এবং বাড়িতে তৈরি করা যেকোনো খাবার বিকেলের নাস্তা হিসেবে ইত্যাদি ।  তবে এখানে একটা জিনিস খেয়াল রাখতে হবে সেটা হচ্ছে কখনো আপনি ভুল চেষ্টা করবেন না বাহিরের কিছু ভাজা জিনিস খেতে ।  আপনাকে সবসময় ঘরে তৈরি খাবার খেতে হবে  । এতে করে আপনার শরীর সবসময় থাকবে সুস্থ ।  আপনি যখন কিছু খাবেন তখনই আপনি ঘরে তৈরি করে খেতে পারেন ।

  গর্ভবতী মায়েদের জন্য রাতের খাবার তালিকা

গর্ভবতী মায়েদের জন্য রাতের খাবার রাখতে হবে ,  যেমন ;  বিভিন্ন ধরনের সাক্ষ্য, কিছু ফল, দুইটি মাছ ভাজি, কয়েক  পিস গরুর মাংস,  বিভিন্ন ধরনের সালাত ,   ও এক গ্লাস দুধ  ইত্যাদি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *