জনাব মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বাংলাদেশের ২২ তম রাষ্ট্রপতি হিসাবে ২৪ এপ্রিল সকাল ১১টায় বঙ্গভবনে শপথ গ্রহণ করেন।
বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ গ্রহণ করলেন মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন।
বঙ্গভবনের ঐতিহাসিক দরবার হলে তাঁকে শপথবাক্য পাঠ করান জাতীয় সংসদের স্পিকার।
শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মন্ত্রিপরিষদ সদস্যসহ অন্য অতিথিরা।
- জন্ম: ১৯৪৯ পাবনা।
- পেশা: আইনজীবী
- ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) বিভাগে যোগদান করেন।
- ১৯৯৫ সালে জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত হন।
- জেলা ও দায়রা জজ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
- ১৯৭১ সালে পাবনা জেলা স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক ছিলেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ১৯৪৯ সালে পাবনা শহরের জুবিলি ট্যাঙ্কপাড়ায় (শিবরামপুর) জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা শরফুদ্দিন আনছারী ও মা খায়রুন্নেসা। তিনি পাবনা শহরের পূর্বতন গান্ধী বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করে রাধানগর মজুমদার একাডেমিতে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হন।
১৯৬৬ সালে এসএসসি পাস করার পর পাবনার এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে এইচএসসি ও ১৯৭১ সালে (১৯৭২ সালে অনুষ্ঠিত) বিএসসি পাস করেন। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর এবং পাবনা শহীদ অ্যাডভোকেট আমিনুদ্দিন আইন কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।
ছাত্রজীবনে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সাহাবুদ্দিন মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। পরে পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন তিনি।
দেশ স্বাধীন হলে পাবনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য হিসেবে সাহাবুদ্দিন আইন পেশায় যোগ দেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হলে সাহাবুদ্দিন চ্পুপুকে সামরিক আইনে গ্রেপ্তার করে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। কারাভোগের পর মুক্ত হলে তিনি পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) ক্যাডার হিসেবে যোগ দেন সাহাবুদ্দিন। তিনি ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ সালে পরপর দুইবার বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব নির্বাচিত হন।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা দায়েরের পর এ মামলায় আইন মন্ত্রণালয় থেকে কো-অর্ডিনেটর হিসেবে নিয়োজিত থেকে দায়িত্ব পালন করেন সাহাবুদ্দিন।
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পরপরই আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা হয়। যাতে হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনের ঘটনা ঘটে। পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে ওসব ঘটনার তদন্তে কমিশন গঠন করা হয়, যার প্রধান ছিলেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু।
বিচারকের বিভিন্ন পদে চাকরি শেষে ২০০৬ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসর নেয়া সাহাবুদ্দিন ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এখানে দায়িত্বে থাকাকালে বিশ্বব্যাংকের কথিত পদ্মাসেতু সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে অন্যতম মুখ্য ভূমিকা পালন করেন সাহাবুদ্দিন চ্পুপু, তিনি অভিযোগটি মিথ্যা ও অন্তঃসারশূন্য প্রমাণে সমর্থ হন। তার পাঠানো তদন্ত প্রতিবেদন কানাডার আদালতে সমর্থিত হয়।
সাহাবুদ্দিন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জাতীয় সম্মেলনের নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদেরও সদস্য তিনি।
আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের অন্যতম কাণ্ডারি হিসেবে পরিচিত সাহাবুদ্দিন পাবনা ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের সভাপতিও। পেশাগত জীবনের প্রথম দিকে সাংবাদিকতাও করেছেন। তিনি পাবনা প্রেস ক্লাব ও অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরির জীবন-সদস্য।
১৯৭২ সালের ১৬ নভেম্বর পাবনা শহরের দিলালপুরের আলী আকতারের জ্যেষ্ঠ কন্যা ড. রেবেকা সুলতানার সঙ্গে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। ড. রেবেকা সুলতানা বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দিয়ে যুগ্ম-সচিব হিসেবে ২০০৯ সালে অবসরে যান। তিনি বর্তমানে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্চ প্রোগ্রাম বিভাগের অধ্যাপক এবং ফ্রেন্ডস ফর চিলড্রেন অর্গানাইজেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান।
সাহাবুদ্দিন-রেবেকা দম্পতির একমাত্র সন্তান মো. আরশাদ আদনান (রনি) দেশে ও বিদেশে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে বর্তমানে একটি বেসরকারি ব্যাংকে উচ্চপদে কর্মরত।