সল্পপুজি এবং অল্প জায়গায় করতে পারেন লাভজনক ছাগলের খামার এর ব্যবসা। (পার্ট ০১)
ছাগল ফার্ম শুরু করার আগে কিছু প্রশ্ন মাথায় গুরতে থাকে। আসলে প্রথম অবস্থায় আরও অনেক প্রশ্ন মোণে ঘুরপাক করতে থাকে। সঠিক সময়ে সঠিক উত্তর গূলো পাওয়া গেলে কিছুটা আরাম সম্ভব। আমার উত্তর গুলোর সাতে হয়তো কারো দ্বিমত থাকতে পারে, অনুগ্রহ করে আপনার সঠিক মতামত/পরামর্শ প্রদান করলে সকলের উপকার হবে আশা করি
১) কয়টি ছাগল দিয়ে শুরু করলে ভালো হয় ?
উত্তর ঃ আপনার ছাগল পালন এর অভিজ্ঞতা ও আপনার সক্ষমতার উপর নির্ভর করবে- কয়টি দিয়ে আপনি শুরু করবেন। একবারে প্রথম অবস্থায় ১০-টি ছাগী ও একটি ভালো পাঁঠা দিয়ে শুরু করতে পারেন।
২) কোন জাত দিয়ে শুরু করবো ?
উত্তর ঃ খামার আর ছাগল সংগ্রহর সময় আপনাকে কয়েকটি গুনাগুন এর ব্যাপারে নজর দিতে হবে, যেমন ধরুন… যে ছাগল এর দৈনিক ওজন দ্রুত বাড়ে এমন ছাগল নির্বাচন করা,দুধ উৎপাদন ভালো, বাচ্চার সংখ্যা নিম্নে ২ টা প্রতিবার, বাচ্চার মৃত্যু হার কম, ১৪ মাস এ যেন দুবার বাচ্চা দেয়,রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বেশী এমন ছাগল নির্বাচন করতে হবে। আমাদের দেশ এ ক্রসবেঙ্গল জাত টা দিয়ে খামার করলে ভালো করা যায়।
৩) ভালো ছাগল/পাঠা কোথায় পাবো ?
উত্তর ঃ বাংলাদেশ এর সব এলাকায় মোটামুটি ছাগল পাবেন। আপনার নিজেকে দেখে শুনে বুঝে সংগ্রহ করতে হবে। তবে রাজশাহী, নাটোরে, কুষ্টিয়া, বগুড়া, মেহেরপুর এর কিছু এলাকায় ভালো কিছু ছাগল দেকতে পাবেন
৪) একটি ছাগল এর জন্য কতো টুকু জায়গার প্রয়োজন হয় ?
উত্তর ঃ পূর্ণ বয়স্ক একটি ছাগল এর জন্য ১২-১৫ বর্গফুট জায়গার প্রয়োজন, তবে যদি আবদ্ধ অবস্থায় পালতে চান তা হলে নিম্নে ১৮ বর্গফুট জায়গা দিতে হবে
৫) বাচ্চা নাকি বড় ছাগল দিয়ে শুরু করবো ?
উত্তর ঃ খামার শুরু করতে হলে আপনাকে ৬ মাস এর উপরের বয়স এর ছাগল সংগ্রহ করতে হবে। কারন বাচ্চা ছাগল এর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কম থাকে এবং তারা নতুন পরিবেশ এ খুব সহজ এ মানিয়ে নিতে পারে না
৬) একটি ছাগল এর জন্য দৈনিক কতো কেজি ঘাস ও দানাদার খাবার এর প্রয়োজন পরে ?
উত্তর ঃ ছাগল এর খাবার এর চাহিদা নির্ভর করে তার দেহের আকার/ওজন এর উপর। তবে গড় হিসাবে একটি ছাগল এর দৈনিক ২-৩ কেজি কাঁচা ঘাস ও ১৫০-২৫০ গ্রাম দানাদার খাবার এবং যথেষ্ট পরিমান বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজন হয়
৭) ফার্ম এর শেড টা কি রকম করে করবো ?
উত্তর ঃ শেড নির্মাণ এর জন্য নিরিবিলি, শুকনা, উঁচু, প্রচুর আলো বাতাস আছে এমন স্থান নির্বাচিত করতে হবে। শেড টি মাচা বিশিষ্ট হতে হবে, মাচার নিচটা যেন খুব সহজে পরিষ্কার করা যায় সে সিস্টেম গ্রহন করতে হবে এবং শেড টি দক্ষিণমুখী হলে ভালো হয় । এ ছাড়া U-Tube এর অনেক ভালো ভালো ভিডিও দেখলে কিছুটা ধারনা পাবেন
৮) কোন ঘাস চাষ করবো ?
উত্তর ঃ ছাগল এর জন্য পারা, জার্মান , নেয়পিয়ার( হাইব্রিড)ঘাস চাষ করতে পারেন। এ ছাড়া ডাল জাতিও কিছু (লিগুম) ছাগল এর জন্য অনেক জরুরী। তবে লিগুম পরিমান মতন না দিলে আবার পেট ফাঁপা হয়ে যেতে পারে। তাই লিগুম গুলো ভালো করে শুকিয়ে নিয়ে তারপর অল্প অল্প করে খাওয়াতে হবে
৯) কোন ঘাস এর পুষ্টিগুণ বেশি ?
উত্তর ঃ দুরবা,আলফালফা হে, ডাল/লিগুম জাতিও ঘাস এ পুষ্টিমান অনেক বেশি
১০) কি কি দানাদার খাবার দিব ?
উত্তর ঃ গম এর ভুষি, সয়াবিন,কলাই, মুগ,মসুর এর ভুষি, চাল এর কুঁড়া,ভুট্টা দানা ভাঙ্গা,ছোলার ছাল, চালের খুদ পরিমান মতো লবন ও ভিটামিন মিনারেল মিলিয়ে দিতে পারেন
১১) দানাদার খাবার এর সাতে কি কি ভিটামিন ও মিনারেল দিতে হয় ?
উত্তর ঃ বাজার এ এখন বেশ কিছু কোম্পানির ভিটামিন ও মিনারেল পাওয়া যায়। সব গুলোর নাম লিখার সময় এখন নাই,আপনার ক্ষমতা অনুযায়ী কিনে খাওয়াতে পারেন। তবে Agrimin ফোর্ট Virbac ও অ্যাডভান্স এনিম্যাল এর Aascomin ডিবি প্লাস ব্যাবহার করে ডেকতে পারেন
১২) শুধুমাত্র কাঁঠাল পাতা, আম পাতা দিয়ে কি ছাগল পালা সম্ভব?
উত্তর ঃ না কোন মতে সম্ভব না, কারন এ সকল খাবার থেকে ছাগল এর দেহের সব পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে না
১৩) ঘাস ছাড়া কি ছাগল পালা সম্ভব?
উত্তর ঃ না কোন ভাবেই তা সম্ভব না
১৪) ছাগল কি খড় খায়?
উত্তর ঃ জি ছাগল খড় খায়। তবে অনেক ছাগল প্রথম অবস্থায় খড় খেতে চায় না, খড় কে যদি একটু খানি মুখরোচক করে দেয়া যায়, তা হলে খাবে
১৫) ছাগল কে কি গোসল করানো লাগে?
উত্তর ঃ জি করানো যায়, তবে শীত ও বর্ষার ঠাণ্ডার সময় গোসল না করানোয় ভালো এবং গোসল সময় ছাগল এর কানে যেন পানি না যায় তা লক্ষ রাকতে হবে
১৬) ছাগল এর সাধারণত কি কি রোগ হয়?
উত্তর ঃ কৃমি ও ঠাণ্ডা ছাগল এর সব চাইতে বড় শত্রু। তা ছাড়া ও ছাগল এর বেশ কিছু কমন রোগ হয়। নিউমনিয়া, অ্যানথ্রাক্স, ক্ষুরা রোগ, গোট পক্স, পি পি আর, ধনুষ্টংকার, পেট ফোলা ছাগল এর কম রোগ
১৭) পি পি আর এর ভ্যাকসিন কত দিন বয়স এ দিতে হয়?
উত্তর ঃ পি পি আর এর ভ্যাকসিন বাচ্চা ছাগল ছানা কে ২ মাস বয়স এ দেয়া জায়,তবে ২ মাস বয়সে দেয়া হলে ৬-মাস বয়েসে পুনরায় বুস্তার টিকা দিতে হবে। ৩-মাস বয়সে সরাসরি দিলে, ৬-মাস এর সময় আর দিতে হবে না। বৎসর এ ২ বার পি পি আর এর ভ্যাকসিন দিলে চিন্তামুক্ত থাকা যায়।
১৮) পি পি আর এর ভ্যাকসিন কি পরিমানে দিব?
উত্তর ঃ ১ মিঃলিঃ মাত্র
১৯) পি পি আর এর ভ্যাকসিন চামড়ার নিচে দিব, নাকি মাংসের মধ্যে দিতে হবে?
উত্তর ঃ পি পি আর এর ভ্যাকসিন ১-মিঃলিঃ পরিমান কাঁধ এর চামড়ার নিচে প্রয়োগ করতে হবে
২০) কৃমির ওষুধ/মেডিসিন কোনটা ভালো?
উত্তর ঃ বাজার এ এখন অনেক গুলো ব্রান্ড এর কৃমির ওষুধ/মেডিসিন পাওয়া যায়, একেক টার কাজ একেক রকম। আমি যেহেতু কোন ডাক্তার নয়, তাই সরাসরি কোন ব্রান্ড এর নাম বলাটা ঠিক হবে না। ছাগল এর ওজন ও পরিস্থিতি বুজে খাওয়াতে হবে। খুব ভালো হয় একজন অভিজ্ঞ পশু ডাক্তার এর পরামর্শ নেয়া
২১) গর্ভবতী ছাগল কে কি কৃমির ওষুধ/মেডিসিন দেয়া যাবে?
উত্তর ঃ আমাদের দেশ এ এখন অনেক নিরাপদ ওষুধ/মেডিসিন পাওয়া যায়, তা ব্যাবহার করা যেতে পারে।তবে আমার মতে না ব্যাবহার করা ভালো
২২) কৃমির ওষুধ/মেডিসিন ,পি পি আর দেয়ার পর কি আর কোন ভ্যাকসিন বা টিকা দেবার দরকার আছে?
উত্তর ঃ ক্ষুরা রোগ, অ্যানথারস্ক,গোট পক্স এর ভ্যাকসিন দিতে হবে
২৩) ছাগল এর গর্ভধারণ সময় কতো দিন?
উত্তর ঃ ১৪০-১৫০ দিন
সল্পপুজি এবং অল্প জায়গায় করতে পারেন লাভজনক ছাগলের খামার এর ব্যবসা। (পার্ট ০২)
ব্লাক বেঙ্গল ছাগল পালন পদ্ধতি
বাংলাদেশে ছাগল অন্যতম গৃহপালিত পশু। ছাগী ৭-৮ মাসের মধ্যে বাচ্চা ধারণ ক্ষমতা অর্জন করে। এটি একসাথে ২-৩টি বাচ্চা দেয়ার কারণে কৃষকের নিকট খুব জনপ্রিয়। একটি ছাগল খাসি ১২-১৫ মাসের মধ্যে ১৫-২০ কেজি হয়ে থাকে।
ছাগলের মাংস খুব সুস্বাদু। তাই বাজারে এ ছাগলের অনেক চাহিদা রয়েছে। ছাগলকে গরিবের গাভী বলা হয়।কারণ গাভী পালনের জন্য প্রাথমিক মূলধন, বাসস্থান ও খাদ্য বেশি লাগে।প্রচলিত পদ্ধতিতে ছাগল পালন :
গ্রামে ছাগলকে মাঠে, বাগানে, রাস্তার পাশে বেঁধে বা ছেড়ে দিয়ে পালন করা হয়।
সাধারণত ছাগলকে বাড়ি থেকে কোনো বাড়তি খাদ্য সরবরাহ করা হয় না। কৃষক বর্ষাকালে বিভিন্ন গাছের পাতা কেটে ছাগলকে খেতে দেয়। রাতে ছাগলকে নিজেদের থাকার ঘর বা অন্য কোনো ঘরে আশ্রয় দেয়।বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ছাগল পালনের জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।
এতে ছাগলের বাসস্থান, খাদ্য ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। বৈজ্ঞানিক উপায়ে আবদ্ধ ও অর্ধ-আবদ্ধ পদ্ধতিতে ছাগল পালন করা হয়। যাদের চারণ ভূমি বা বাঁধার জন্য কোনো জমি নেই সেখানে আবদ্ধ পদ্ধতিতে ছাগল পালন করা হয়।
আবদ্ধ পদ্ধতিতে ছাগল পালনঃ-
এখানে সম্পূর্ণ আবদ্ধ অবস্থায় ছাগল পালন করা হয়। ছাগলের ঘরের জন্য উঁচু ও শুকনা জায়গা নির্বাচন করতে হয়। এ পদ্ধতিতে ঘর তৈরি করার জন্য কাঠ, বাঁশ, টিন, ছন, গোলপাতা ব্যবহার করে কম খরচে ঘর তৈরি করা যায়।
ঘর তৈরি করার সময় প্রতিটি বয়স্ক ছাগলের জন্য ১ বর্গমিটার (৬-১০ বর্গফুট) জায়গার প্রয়োজন হবে। মেঝে স্যাঁতসেঁতে হলে ছাগলের ঘরে মাচা তৈরি করে দিতে হবে। এখানে ছাগলকে সম্পূর্ণ আবদ্ধ অবস্থায় প্রয়োজনীয় সবুজ ঘাস, দানাদার খাদ্য ও পানি সরবরাহ করা হয়।
তবে প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টার জন্য ঘরের বাইরে ঘুরিয়ে নিয়ে এলে এদের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। নতুন ছাগল দিয়ে খামার শুরু করলে প্রথমেই সম্পূর্ণ আবদ্ধ অবস্থায় রাখা যাবে না। আস্তে আস্তে এদের চারণ সময় কমিয়ে আনতে হবে। নতুন পরিবেশের সাথে অভ্যস্ত হলে খাদ্য গ্রহণে আর সমস্যা দেখা দিবে না।
অর্ধ-আবদ্ধ পদ্ধতিতে ছাগল পালনঃ-
এ পদ্ধতিতে ছাগল পালনের সময় আবদ্ধ ও ছাড়া পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। খামারে আবদ্ধ অবস্থায় এদের দানাদার খাদ্য সরবরাহ করা হয়। মাঠে চারণের মাধ্যমে এরা সবুজ ঘাস খেয়ে থাকে। বর্ষার সময় মাঠে নেয়া সম্ভব না হলে সবুজ ঘাসও আবদ্ধ অবস্থায় সরবরাহ করতে হবে।
ছাগলের খাদ্য ব্যবস্থাপনাঃ-
ছাগলের খাদ্য ব্যবস্থাপনাই হচ্ছে অন্যতম প্রধান বিষয়। ছাগল সবুজ ঘাস ও দানাদার খাদ্য খেয়ে জীবন ধারণ করে।তাছাড়া চিকন ধানের খড় খুব ছোট করে কেটে চিটাগুড় মিশিয়েও ছাগলকে খাওয়ানো যায়। খাদ্য ব্যবস্থাপনার প্রথমেই ছাগল ছানার কথা ভাবতে হবে। ছাগল ছানা ২-৩ মাসের মধ্যে মায়ের দুধ ছাড়ে। বাচ্চার বয়স ১ মাস পার হলে উন্নত মানের কচি সবুজ ঘাস ও দানাদার খাদ্যের অভ্যাস করাতে হবে।
সবুজ ঘাসঃ-
ছাগলের জন্য ইপিল ইপিল, কাঁঠাল পাতা, খেসারি, মাসকালাই, দূর্বা, বাকসা ইত্যাদি ঘাস বেশ পুষ্টিকর। দেশি ঘাসের প্রাপ্যতা কম হলে ছাগলের জন্য উন্নত জাতের নেপিয়ার, পারা, জার্মান ঘাস চাষ করা যায়। চাষ করা ঘাস কেটে বা চরিয়ে ছাগলকে খাওয়ানো যায়।
! ভাল কইরা দারা একটা ছবি তুলি ! |
দানাদার খাদ্যঃ-
ছাগলের পুষ্টি চাহিদা মেটানোর জন্য সবুজ ঘাসের সাথে দৈনিক চাহিদামতো দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। গম, ভুট্টা, গমের ভুসি, চালের কুঁড়া, বিভিনড়ব ডালের খোসা, খৈল, শুঁটকি মাছের গুঁড়া ইত্যাদি দানাদার খাদ্যের মিশ্রণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। দানাদার খাদ্যের সাথে খাদ্য লবণ ও ভিটামিন-খনিজ মিশ্রণ যোগ করতে হয়। বয়সভেদে ছাগলকে দৈনিক ১-২ লিটার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হবে।
পানিঃ-
মানুষের মতো সকল পশুপাখির পানির প্রয়োজন রয়েছে। বয়সভেদে ছাগল দৈনিক ১-২ লিটার পানি পান করে। তাই পানি ছাগলের নাগালের মধ্যে রাখতে হবে।
ছাগলের রোগ দমনঃ-
ছাগল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে থাকতে পছন্দ করে। এদের বাসস্থানে আলো-বাতাসের ব্যবস্থা করতে হয়। ছাগল সবসময় শুকনো ও উঁচুস্থান খুব ভালোবাসে। ছাগলের যাতে ঠাণ্ডা না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ ঠাণ্ডায় এরা নিউমোনিয়াসহ অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত হয়। তাই শীতের সময় মেঝেতে ধানের খড় অথবা নাড়া বিছিয়ে দিতে হয়। শীতের সময় ছাগলকে ঠাণ্ডা থেকে রক্ষার জন্য এদেও ঘরের দেয়ালে প্রয়োজনে চটের বস্তা টেনে দিতে হবে। নিচে ছাগলের রোগের কারণসমূহ উলে−খ করা হলো-
১। ভাইরাসজনিত রোগ : পি.পি.আর, নিউমোনিয়া ইত্যাদি
২। ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ : গলাফুলা, ডায়রিয়া ইত্যাদি
৩। পরজীবীজনিত রোগ : ছাগলের দেহের ভিতরে ও বাইরে দুধরনের পরজীবী দেখা যায়। দেহের বাইরে চামড়ার মধ্যে উঁকুন, আটালি ও মাইট হয়ে থাকে। দেহের ভিতরে গোলকৃমি, ফিতাকৃমি ও পাতাকৃমি দ্বারা ছাগল বেশি আক্রান্ত হয়। এরা ছাগল কর্তৃক খাওয়া পুষ্টিকর খাদ্যে ভাগ বসায়। অনেক কৃমি ছাগলের শরীর থেকে রক্ত চুষে নেয়। তাছাড়া ছাগলের প্রায়ই রক্ত আমাশয় হতে দেখা যায়। এ রোগটি প্রোটোজোয়া দ্বারা হয়ে থাকে। ছাগল মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হলে নিমড়বলিখিত সাধারণ লক্ষণসমূহ দেখা যায়-
১। শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।
২। চামড়ার লোম খাড়া দেখায়।
৩। খাদ্য গ্রহণ ও জাবরকাটা বন্ধ হয়ে যায়।
৪। ঝিমাতে থাকে ও মাটিতে শুয়ে পড়ে।
৫। চোখের পানি ও মুখ দিয়ে লালা নির্গত হয়।
ছাগল ভাইরাস রোগে আক্রান্ত হলে এদের মৃত্যু হতে পারে। ভাইরাস রোগের আক্রান্ত পশুর চিকিৎসা করে সুফল পাওয়া যায় না। ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত রোগেও ছাগলের মৃত্যু হয়ে থাকে। তবে এ ক্ষেত্রে চিকিৎসা করে অনেক ক্ষেত্রেই সুস্থ করে তোলা যায়। ছাগলের রোগ প্রতিরোধের জন্য ছাগল
খামারে নিম্নলিখিত পদক্ষেপসমূহ অনুসরণ করতে হবে-
===========================
১। ছাগলের ঘর ও এর চারপাশ পরিচ্ছন্ন রাখা।
২। ছাগলকে সময়মতো টিকা দেয়াও কৃমিনাশক ঔষধ খাওয়ানো।
৩। ছাগলকে তাজা খাদ্য খেতে দেয়া।
৪। ছাগলকে সুষম খাদ্য ও পানি সরবরাহ করা।
৫। ছাগলের ঘরের মেঝে শুষ্ক রাখার ব্যবস্থা করা।
৬। ছাগলের বিষ্ঠা খামার থেকে দূরে সংরক্ষণ করা।
ছাগলের খামারে রোগ দেখা দিলে পশুচিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে-
১। অসুস্থ ছাগলকে আলাদা করে পর্যবেক্ষণ করা ও চিকিৎসা দেওয়া।
২। প্রয়োজনে ছাগলের মলমূত্র পরীক্ষার ব্যবস্থা করা।
৩। মৃত ছাগলকে মাটির নিচে চাপা দেওয়া।