যেভাবে ব্যবসার জন্য ট্রেড লাইসেন্স এর আবেদন করবেন

বৈধভাবে ব্যবসা করতে চাইলে বাংলাদেশের আইন অনুসারে trade license করা বাধ্যতামূলক।   ট্রেড লাইসেন্স এর খুঁটিনাটি সম্পর্কে জানব। এর জন্য কি ধরনের কাগজপত্র প্রয়োজন হবে এবং কি কি আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে হবে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

আপনি যে এলাকায় বসবাস করেন সে এলাকাতেই trade license করার ব্যবস্থা রয়েছে।  সাধারণত সিটি কর্পোরেশনে ট্রেড লাইসেন্স করা যায় কিন্তু আপনি যদি মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে অর্থাৎ ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভ্‌ উপজেলা, জেলা পরিষদ ইত্যাদি এলাকায় বসবাস করেন তাহলে সেখান থেকেও ট্রেড লাইসেন্স করতে পারবেন। ট্রেড লাইসেন্স শুধুমাত্র ব্যবসায়ীক কাজে ব্যবহার করা যায়।  অন্য কোন উদ্দেশ্যে ট্রেড লাইসেন্স ব্যবহার করা যাবে না ।

যারা ঢাকা  নগরীতে বসবাস করেন, তারা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন সহ মোট 10 জায়গা থেকে trade license করতে পারবেন। আপনার প্রতিষ্ঠানটি যেএলাকার অন্তর্ভুক্ত সে এলাকাতেই ট্রেড লাইসেন্স করতে হবে।

ট্রেড লাইসেন্স এর প্রক্রিয়া

ট্রেড লাইসেন্সের জন্য সিটি করপোরেশনের দুই ধরনের ফ্রম রয়েছে।  আপনি যে ধরনের ব্যবসা করছেন বা করতে ইচ্ছুক তার উপর ভিত্তি করে ফ্রম নির্ধারণ করতে হবে।  প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং ছবি সহ পূরণকৃত ফরম জমা দিয়ে ট্রেড লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হবে।  আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে তদন্ত হতে পারে।  এজন্য আপনার প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করতে পারে সিটি কর্পোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স শাখার নির্ধারিত কর্মকর্তা।  তাদের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করেই আপনাকে ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হবে।

ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জমি নিজের হলে সিটি কর্পোরেশনের হালনাগাদ করের রশিদ অথবা ভারাই হলে ভাড়ার চুক্তিপত্র বা রশিদ আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে।  এছাড়া আবেদনপত্রের সঙ্গে তিন কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি ক্ষেত্রবিশেষে নির্ধারিত নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে অঙ্গীকারনামা দাখিল করতে হবে।

 

লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে নিয়ম টা একটু ভিন্ন।  সে ক্ষেত্রে মেমোরেন্ডাম অব আর্টিকেল এবং সার্টিফিকেট অফ  ইনকর্পোরেশন জমা দিতে হবে। প্রস্তাবিত প্রতিষ্ঠান,  কারখানা বা কোম্পানির পার্শ্ববর্তী অবস্থান অথবা স্থাপনার নকশাসহ ওই স্থাপনার মালিকের অনাপত্তিনামা দাখিল করতে হবে। এগুলো ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের কাগজপত্র দাখিল করতে হয়।

যেমন ক্লিনিক ব্যক্তিগত হাসপাতালের ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এর অনুমোদন,  ছাপাখানা ও আবাসিক হোটেলের ক্ষেত্রে ডেপুটি কমিশনারের অনুমতি,  অস্ত্র ও গোলাবারুদের অস্ত্রের লাইসেন্স,  শিল্প প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সকল কাগজপত্র সঙ্গে পরিবেশ সংক্রান্ত অনাপত্তি পত্র,  প্রতিষ্ঠান অবস্থান চিহ্নিত চিত্র ও অগ্নিনির্বাপণ প্রস্তুতি সংক্রান্ত প্রত্যয়ন পত্র, সিএনজি স্টেশন বাজার যে পদার্থের ক্ষেত্রে বিস্ফোরক অধিদপ্তর বা ফায়ার সার্ভিস ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ,  ট্রাভেল এজেন্সির ক্ষেত্রে সিভিল এভিয়েশনের অনুমতি পত্র আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে।

লাইসেন্স নবায়নের প্রক্রিয়া

লাইসেন্স নবায়ন করা একটি নিয়মিত কাজ।  একটি লাইসেন্সের মেয়াদ এক বছর এবং এর মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যেই পুনরায় নবায়নের জন্য আবেদন করতে হয়।  ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে আগের ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত আঞ্চলিক কর্মকর্তা অথবা অফিসে যোগাযোগ করতে হবে।  লাইসেন্স নবায়ন ফি নতুন লাইসেন্স ফির সমান।  নতুন লাইসেন্স করার সময় যেভাবে ফি জমা দিয়েছে ঠিক সেভাবেই নবায়নের বেলায়ও জমা দিতে হবে ।

ট্রেড লাইসেন্স করতে কত টাকা লাগে

ট্রেড লাইসেন্স ফি নির্ধারণ করা হয় ব্যবসার ধরনের ওপর নির্ভর করে।  আপনার ব্যবসার ধরন অনুযায়ী ট্রেড লাইসেন্স এর ফি নির্ধারণ করা হবে।  এই ফ্রি সংশ্লিষ্ট অফিসের মাধ্যমে জমা দিতে হবে।  ট্রেড লাইসেন্স এর ফি 200 টাকা থেকে শুরু করে 26000 টাকা পর্যন্ত হতে পারে।  একটি ট্রেড লাইসেন্স পেতে দুই থেকে 7 দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

ট্রেড লাইসেন্স এর ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে যেমন মিথ্যা ও অসম্পূর্ণ তথ্য দিলে লাইসেন্স উল্লেখিত শর্তাবলী এবং সিটি কর্পোরেশনের আইন ও বিধি মেনে না চললে লাইসেন্স বাতিল হতে পারে।  এছাড়া লাইসেন্স বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারে।  তবে যে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার আগে লাইসেন্স গ্রহীতাকে কারণ দর্শানোর সুযোগ দেওয়া হয়।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *