৭ম শ্রেণি হিন্দুধর্ম শিক্ষা: ৫ম অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর (PDF)

৭ম শ্রেণি হিন্দুধর্ম শিক্ষা ৫ম অধ্যায় : ঈশ্বর নিরাকার হলেও জগতের প্রয়োজনে বিভিন্ন রূপে তিনি পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়ে থাকেন ঈশ্বরের কোনো গুণ বা শত্তি যখন আকার পায় তখন তাকে দেবতা বা দেব-দেবী বলে। যেমন: শিব, দুর্গা, লক্ষী, সরস্বতী, কালী, মনসা প্রতৃতি। এ সকণ দেব-দেবী ঈশ্বরের বিশেষ গুণ ও ক্ষমতার অধিকারী। আমরা এসকল দেব-দেবীর পুজা করে থাকি।

পৃজা শব্দের অর্থ প্রশংসা করা ৰা শ্রদ্ধা করা। কিন্তু হিন্দুধর্মে পূজা শব্দটি বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত হয়। পৃজা বলতে বোঝায় ঈশ্বরের প্রতীক বিভিন্ন দেব-দেবীকে ফুল ও নানা উপকরণ দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন বা প্রশংসা করা। এজন্য মন্ত্র পাঠ করে পুষ্পাঞ্জলি, আরতি এবং ধ্যান করাসহ বিভিন্ন মাঙ্গলিক কাজ করা হয়।

৭ম শ্রেণি হিন্দুধর্ম শিক্ষা ৫ম অধ্যায়

১. অবনীবাবু দা, বটি, কাঁচি তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তিনি এ পেশায় দক্ষতা অর্জন ও কৃপালাভের আশায় প্রতিবছর পরম ভক্তিতে পঞ্চোপচারে এক বিশেষ দেব-দেবীর পূজা করেন। এ পূজায় তার পেশায় ব্যবহৃত উপকরণসমূহ প্রতিমার কাছে রাখেন। তাঁর আকাঙ্খা পেশাগত পারদর্শিতা লাভ।

ক. পূজা শব্দের অর্থ কী?
খ. পূজার একটি বিধি ব্যাখ্যা কর।
গ. অবনীবাবু প্রতিবছর পরম ভক্তিতে কোন দেবতার পূজা এবং কীভাবে করেন তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. অবনীবাবুর ব্যক্তিজীবনে উক্ত পূজার শিক্ষা ও প্রভাব মূল্যায়ন কর।

২. পণ্ডিত সুধীর শর্মা সমবেত ভক্তদের উদ্দেশে বলেন, হিন্দুধর্মানুসারে ব্রাহ্মণরাই সকল পূজা করে থাকেন। যে কোনো একটি বস্তুকে আধার করে নিয়মনীতি ও উপচার ব্যবহার করে পূজা করতে হয়। সর্বশেষ তিনি বলেন, দেব-দেবীর পূজাভেদে উপচার ভিন্ন হয়। [ পাঠ-১, ২ ও ৩ ]

ক. ‘পার্বণ’ শব্দের অর্থ কী?
খ. সংকল্প গ্রহণ বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে পণ্ডিত সুধীর শর্মা ভক্তদের পূজার কোন দিকটির বিষয়ে বলেছেন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. পণ্ডিত সুধীর শর্মার সর্বশেষ বক্তব্যের সপক্ষে মতামত উপস্থাপন কর।

৩. সুমন রায় একজন দেবতার পূজা করেন। এই দেবতা মানুষকে শৈল্পিক জ্ঞান ও মেধা দান করেন। এই দেবতার পূজা করলে কাজে-কর্মে শিল্পনৈপুণ্য লাভ হয়। তাই শিল্পস্থপতি, কারুশিল্পী এবং শিল্প শ্রমিকরা ভাদ্র মাসের সংক্রান্তি তিথিতে এ দেবতার পূজার্চনা করে থাকেন। এ দেবতার পূজা পঞ্চোপচারে, দশোপচারে বা ষোড়শোপচারে করা যেতে পারে। [ পাঠ-৮, ৯ ও ১০ ]

ক. স্বস্তিবাচন শব্দের অর্থ কি?
খ. পূজার আধার বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে কোন পূজার কথা বলা হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর সুমন রায় উক্ত দেবতাকে প্রসন্ন করে নিজ কর্মে পারদর্শিতা অর্জন করতে পারবে? মতামত দাও।

অতিরিক্ত অনুশীলনীমূলক প্রশ্নের উত্তর

প্রশ্ন ॥ ১ ॥ পূজার সময় কীভাবে আসন শুদ্ধি ও আচমন করা হয়?
উত্তর : শুদ্ধি করা বলতে বিশুদ্ধ করা বা দোষমুক্ত করাকে বোঝায়। পূজার সময় পূজার যত উপকরণ রয়েছে তা সবই শুদ্ধ করে তারপর পূজা শুরু করতে হয়। যে আসনে পূজা করা হবে সে আসন শুদ্ধি করে নেওয়াকে বলা হয় আসন শুদ্ধি।
আচমন বলতে যে পূজা করবে তার শুদ্ধিকে বোঝায়। নিজের হাত, পা, চোখ পরিষ্কার জল দিয়ে ধুয়ে তিনবার বিশুদ্ধ জল পান করে আচমন করা হয়। এরপর পূজা করতে হয়।

প্রশ্ন ॥ ২ ॥ ‘শ্রীশ্রীলক্ষ্মী সম্পদ, সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্যের দেবী’ – ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : লক্ষ্মীদেবী তার ভক্তদের আশীর্বাদ দিয়ে ধনসম্পদ সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্য প্রদান করেন। দেবী লক্ষ্মী অত্যন্ত মাধুর্যময়ী ও সুন্দরী। তাই তিনি শ্রী এবং সম্পদ সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্যের দেবী। সকলে তার পূজা করে তার আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য।

প্রশ্ন ॥ ৩ ॥ শ্রীশ্রীলক্ষ্মী দেবীর পূজার আর্থ-সামাজিক ও ধর্মীয় প্রভাব চিহ্নিত কর।
উত্তর : শ্রীশ্রীলক্ষ্মী দেবী ধন-সম্পদ ও সমৃদ্ধির দেবী। তার পূজার আর্থ-সামাজিক ও ধর্মীয় প্রভাব নিচে চিহ্নিত করা হলো :
আর্থ-সামাজিক প্রভাব :
১. সকলে ধন-সম্পদ প্রাপ্ত হয়।
২. ব্যক্তিগত ও সামাজিক দরিদ্রতা দূর হয়।
৩. সমাজে শান্তি স্থাপিত হয়।
৪. সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্য সকলের মাঝে ধরা দেয়।

ধর্মীয়-প্রভাব :
১. এ পূজার মাধ্যমে সকলে শান্ত প্রকৃতির হয়।
২. মনে শান্তি বিরাজ করে।
৩. সকলে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলে।
৪. লক্ষ্মীদেবীর প্রতি বিশ্বাস স্থাপিত হয়।
৫. লক্ষ্মীদেবী সন্তুষ্ট হয়ে রক্ষা করেন ইত্যাদি।

প্রশ্ন ॥ ৪ ॥ বিশ্বকর্মা দেবের পূজা কীভাবে করা হয়?
উত্তর : কাজে নৈপুণ্য ও শিল্পকর্মে ও কারুকাজে দক্ষতা লাভ করতে মানুষ বিশ্বকর্মা দেবের পূজা করে। বিশেষ করে কারুশিল্প ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিকেরা তাদের কর্মনৈপুণ্য বৃদ্ধির জন্য এ পূজা করে থাকে। এ পূজা সাধারণত ভাদ্র মাসের সংক্রান্তিতে করা হয়। পঞ্চোপচারে, দশোপচারে ও ষোড়শোপচারে এ পূজা করা যেতে পারে। অন্যান্য দেব-দেবীর পূজার নিয়মেই এ পূজা করা হয়। তবে এ পূজায় পূজারি তার কর্মসংক্রান্ত উপকরণ এনে বিশ্বকর্মা প্রতিমার নিকট রাখে। পূজায় পুষ্পাঞ্জলি ও প্রণামমন্ত্র পাঠ করা হয়।

প্রশ্ন ॥ ১ ॥ ‘পূজা-পার্বণে পূজাবিধিগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম’ – বিশ্লেষণ কর।
উত্তর : হিন্দুধর্মে যে কোনো পূজা-পার্বণের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম পালন করতে হয়। এ নিয়মগুলো ছাড়া পূজা পালন করা যায় না। প্রায় সকল পূজাতে বিশেষ কিছু নিয়ম মানতে হয়। এছাড়া পূজার ধরনভেদে নিয়মাবলির কিছু পার্থক্যও থাকে। নিয়মাবলিকে বলা হয় পূজাবিধি। পূজাবিধি ঠিকমতো পালন না করলে পূজা পালন সম্পূর্ণ হয় না। পূজার উপকরণ, নিয়মাবলি, বন্দনা ইত্যাদির মাধ্যমে পূজা সম্পূর্ণরূপে পালিত হয়। তাই পূজা-পার্বণে পূজাবিধিগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম। পূজারিরা পণ্ডিতের কাছ থেকে পূজা পার্বণের নিয়ামাবলি শিখে তারপর পূজা পালন করে থাকে। আমরাও পূজাবিধিগুলো শিখব ও যথাযথভাবে পালন করার চেষ্টা করব।

প্রশ্ন ॥ ২ ॥ পারিবারিক ও সমাজজীবনে লক্ষ্মীপূজার শিক্ষা ও প্রভাব বিশ্লেষণ কর।
উত্তর : নিচে পারিবারিক ও সমাজজীবনে লক্ষ্মীপূজার শিক্ষা ও প্রভাব বিশ্লেষণ করা হলো :
পারিবারিক জীবনে লক্ষ্মীপূজার শিক্ষা ও প্রভাব : পরিবারের সকলে মিলে লক্ষ্মীপূজা করলে পরিবারের ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পায়। সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্য সংসারকে আরও উন্নত ও শান্তিময় করে তোলে। পরিবার সুখের হয়। একত্রে লক্ষ্মীপূজা করলে পরিবারের সকলের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি হয়। সকলে সম্প্রীতি ও মৈত্রীর শিক্ষা পায়।
সমাজজীবনে লক্ষ্মীপূজার শিক্ষা ও প্রভাব : সমাজজীবনে লক্ষ্মী পূজার প্রভাব অনেক। এ পূজা সমাজের সকলের মধ্যে সম্প্রীতি, মৈত্রী গড়ে তোলে। লক্ষ্মীপূজা করলে সমাজ থেকে দারিদ্র্য দূর হয়। সর্বত্র শান্তি বিরাজ করে।

প্রশ্ন ॥ ৩ ॥ ‘শিল্পনৈপুণ্য সৃষ্টিতে অনন্য গুণশালী দেবতা বিশ্বকর্মা’- বিশ্লেষণ কর।
উত্তর : শিল্পনৈপুণ্য সৃষ্টিতে ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির দেবতা বিশ্বকর্মা দেব। তিনি সকলকে কর্মনৈপুণ্য ও সৃজনী শক্তি প্রদান করেন। তিনি সকলকে তাদের পেশায় উন্নত করতে সক্ষম করেন। এজন্য তার পূজা করতে হয়। যে ব্যক্তি তাকে পূজা করেন তাকে তিনি আশীর্বাদ করেন এবং কৃপা করেন। তার কর্মে সাফল্য ও সৌভাগ্য দেন।

প্রশ্ন ॥ ৪ ॥ পারিবারিক ও সমাজজীবনে বিশ্বকর্মা দেবের পূজার শিক্ষা ও প্রভাব বিশ্লেষণ কর।
উত্তর : পারিবারিক ও সমাজজীবনে বিশ্বকর্মা দেবের পূজা আমাদের অনেক শিক্ষা দেয়। আমাদেরকে কর্মঠ ও কর্মোৎসাহী করে তোলে। আমরা তাঁর কাছ থেকে কাজ করার নৈপুণ্য অর্জনের সঙ্গে সঠিক উপায়ে জীবিকা নির্বাহের শিক্ষা পাই। এতে করে ঈশ্বর আমাদের ওপর সন্তুষ্ট হন। কারণ, তিনি অলস ব্যক্তিকে পছন্দ করেন না। সৎ ও কর্মঠ ব্যক্তিকে পছন্দ করেন।

জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তর

প্রশ্ন ॥ ১ ॥ ঈশ্বরের কোনো গুণ বা শক্তি আকার পেলে তাকে কী বলে?
উত্তর : দেবতা বা দেব-দেবী বলে।

প্রশ্ন ॥ ২ ॥ কি বারে লক্ষ্মীপূজা করা হয়?
উত্তর : বৃহস্পতিবারে লক্ষ্মীপূজা করা হয়।

প্রশ্ন ॥ ৩ ॥ কে বিষ্ণুর স্ত্রী?
উত্তর : দেবী লক্ষ্মী শ্রীবিষ্ণুর স্ত্রী।

প্রশ্ন ॥ ৪ ॥ ‘উৎসব’ মানে কী?
উত্তর : উৎসব মানে আনন্দপূর্ণ অনুষ্ঠান।

প্রশ্ন ॥ ৫ ॥ কয়টি বস্তুকে পূজার আধার বলে?
উত্তর : ৮টি বস্তুকে পূজার আধার বলে।

প্রশ্ন ॥ ৬ ॥ আচমন কী?
উত্তর : আচমন বলতে হাত, পা, চোখ পরিষ্কার জল দিয়ে ধুয়ে বিশুদ্ধ জল তিনবার পান করতে হয়।

প্রশ্ন ॥ ৭ ॥ বিশ্বকর্মার বাহন কি?
উত্তর : হস্তী বিশ্বকর্মা দেবের বাহন।

অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তর

প্রশ্ন ॥ ১ ॥ পূজাবিধি বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : হিন্দুধর্মে পূজা করার জন্য কতকগুলো নিয়ম অনুসরণ করা হয়। এ সকল নিয়মনীতিগুলোকে পূজাবিধি বলে।
পূজা করার জন্য বেশ কিছু সাধারণ বিধি বা নিয়ম-নীতি রয়েছে। যা পূজা করার সময় পালন করতে হয়। যেমন দেব-দেবীর আবাহন, ধ্যান, প্রাণপ্রতিষ্ঠা, পূজামন্ত্র পাঠ, পুষ্পাঞ্জলি প্রদান, প্রণামমন্ত্র পাঠ ও বিসর্জন।

প্রশ্ন ॥ ২ ॥ পুষ্পপূজা সম্পর্কে কী জান বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর : দেব-দেবীকে সন্তুষ্ট করার জন্য এবং তাদের প্রতি ভক্তি ও ভালোবাসার নিদর্শন স্বরূপ বিভিন্ন রঙ্গের পুষ্প দিয়ে পূজা করা হয়। একেক দেবতা একেক রকমের পুষ্প বিশেষভাবে পছন্দ করেন। তাই দেবতাদের পছন্দ অনুযায়ী পুষ্পপূজা করা হয়ে থাকে।

প্রশ্ন ॥ ৩ ॥ কীভাবে লক্ষ্মীপূজার শিক্ষা আমাদের জীবনে প্রভাব ফেলে? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : প্রতিটি হিন্দু পরিবারে প্রতিদিন লক্ষ্মীপূজা করা হয়। এছাড়াও প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবারে এবং কোজাগরী পূর্ণিমা তিথিতে বিশেষ আয়োজনের মাধ্যমে লক্ষ্মীপূজা করা হয়, যা হিন্দু সমাজের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে একাত্মতাবোধের সৃষ্টি করে। লক্ষ্মীদেবী ধন-সম্পদ দান করেন। পূজার মধ্য দিয়ে লক্ষ্মীদেবীর ওপর বিশ্বাস স্থাপিত হয়। লক্ষ্মীদেবীর শান্ত স্বভাব পূজারিকেও শান্ত করে তোলে। তাই বলা যায়, লক্ষ্মীপূজার শিক্ষা আমাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সহায়তা করে।

ANSWER SHEET

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *