৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুসন্ধানি কাজ ৪ pdf
৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুসন্ধানি কাজ ৪ : প্রাচীন কালের চীনের শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রচলিত গল্প থেকে জানা যায় যে চীনের কোন একটি এলাকায় একসময় শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের দিকে পিছন ফিরে বসে ক্লাস করতো। এখন আর করে না। আগের রীতিনীতি পরিবর্তিত হযেছে। কারণ, আগে তারা বিশ্বাস করতো শিক্ষকের মুখোমুখি হয়ে বসা বেয়াদবি। এখন সময়ে সাথে সাথে তাদের এ বিশ্বাসে পরিবর্তন হয়েছে, রীতিনীতিতেও পরিবর্তন এসেছে।
এসো খুশি আপার শিক্ষার্থীদের মতো আমরাও দলে ভাগ হয়ে নিজ বা অন্য সমাজের কোনো নির্দিষ্ট রীতি-নীতির বা অন্য কোনো সামাজিক কাঠামো যেমন- কৃত। আগের মতোই ধাপে ধাপে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আগাও।
৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুসন্ধানি কাজ ৪
বিষয়বস্তু: বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের রীতি-নীতির পরিবর্তন
কিছু অনুসন্ধানের প্রশ্ন (উদাহরণ):
● আমাদের সমাজে নবান্ন রীতি-নীতি কীভাবে সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়েছে?
উত্তর: নবান্ন উৎসব হল নতুন আমন ধান কাটার পর সেই ধান থেকে প্রস্তুত চালের প্রথম রান্না উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব। গ্রামীণ বাংলার প্রতিটি ঘরে অগ্রহায়ণ মাসে আমন ধান পাকার পর এই উৎসব অনুষ্ঠিত হত। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য এ নবান্ন উৎসব উদযাপন এখন আর চোখে পড়ে না।
● আরব সমাজের নারীদের অর্থনৈতিক কর্মাণ্ডের রীতি-নীতি সময়ের সাথে কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে?
উত্তর: অতীতে আরব সমাজে নারীদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল না। কিন্তু বর্তমানে সে দেশের সরকার কর্তৃক গৃহীত কিছু পদক্ষেপের কারণে নারীরা এখন বাইরে কাজ করতে পারছে। তারা গাড়ি চালাতে পারছে, ট্রেন চালাতে পারছে। এমনকি দোকানে দোকানদারীও করতে পারছে। যা পূর্বের রীতিকে পরিবর্তন করে দিয়েছে।
● আমাদের এলাকার পেশার পরিবর্তন হয়েছে কীভাবে?
উত্তর: প্রায় ২০/২৫ বছর পূর্বেও আমাদের এলকায় বেশিরভাগ মানুষ কৃষির সাথে জড়িত ছিলেন। কৃষিই ছিল তাদের মূল পেশা। কিন্তু বর্তমানে এসব মানুষ কৃষি বাদ দিয়ে অন্যান্য পেশায় যুক্ত হয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে- কৃষি উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি এবং উৎপাদনের পরে আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় তারা পেশা হিসেবে কৃষিকে ছেড়ে দিয়েছেন।
● বিভিন্ন সময়ে আমাদের রাষ্ট্রের পরিবর্তন হয়েছে কীভাবে?
উত্তর: আজ থেকে একশ বছর পূর্বেও আমরা বৃটিশ সরকার শাষিত এক রাষ্ট্রব্যবস্থার অধীনে ছিলাম। অনেক সংগ্রামের পর ভার-পাকিস্তান নামক আলাদা দুটি রাষ্ট্র হল। কিন্তু পাকিস্তান দুটি আলাদা প্রদেশে পৃথক ছিল এবং পূর্ব পাকিস্তানের ওপর বৈষম্যমূলক আচরণ করত। এর ফলে বিভিন্ন আন্দোলন, সংগ্রাম ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের শেষে আমরা বাংলাদেশ নামে নতুন একটি রাষ্ট্র পেয়েছি।
● বিভিন্ন সময়ে আমাদের সমাজে পরিবারের কাঠামোতে কী ধরনের পরির্তন এসেছে?
উত্তর: অতীতে বাংলায় যৌথ পরিবার কাঠামো বিদ্যমান ছিল। মা-বাবা, ভাই-বোন, চাচা-চাচী, দাদা-দাদী সবাই একত্রিত হয়ে একটি পরিবারের বসবাস করত। কিন্তু এমন যৌথ পরিবার এখন আর তেমন একটা দেখা যায় না। অধিকাংশরাই এখন একক পরিবার গঠনে বেশি আগ্রহী।
প্রশ্নে যে মূল বিষয়বস্তুগুলো রয়েছে:-
● তথ্য উৎস: বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, ম্যাগাজিন, ইন্টারনেট, কোর্সটিকা ওয়েবসাইট এবং শ্রেণিশিক্ষক।
● তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি: ইন্টারনেটে কোর্সটিকা ওয়েবসাইট ভিজিট করব এবং শ্রেণিশিক্ষকের সহায়তা নেব।
– তথ্য সংগ্রহের ছক –
১. বাংলাদেশ
পালকি: অতীতে গ্রাম-বাংলার বিয়ের অনুষ্ঠানে পালকি চোখে পড়ত। এই পালকিতে চড়িয়েই নতুন বউকে শ্বশুড়বাড়ি নিয়ে আসা হত। পালকি ছাড়া বিয়ে কল্পনাও করা যেত না। তবে আধুনিকতার ছোঁয়ায় এ প্রথা পরিবর্তিত হয়েছে। বর্তমানে কোন বিয়েতে পালকি দেখা যায় না।
২. ভারত
সতীদাহ প্রথা: দু’তিনশ বছর পূর্বেও ভারতে সতীদাহ প্রথা প্রচলিত ছিল। এ প্রথা অনুযায়ী কোন নারীর স্বামী মারা গেলে ওই নারীকে জীবন্ত অবস্থায় স্বামীর সাথে একই চিতায় দাহ করা হত। একটা সময়ে বিভিন্ন আন্দোলন এবং সমাজ সংস্কারের ফলে এই অমানবিক এবং নির্মম প্রথা বন্ধ করে দেয়া হয়।
৩. সৌদি আরব
কন্যাশিশুকে জীবন্ত কবর দেওয়ার প্রথা: প্রাক-ইসলামিক আরবে কন্যাশিশুকে অশুভ এবং বোঝা মনে করা হত। তাই কোন কন্যা সন্তান জন্ম নিলে তাকে জীবন্ত কবর দেওয়ার নিয়ম প্রচলিত ছিল। মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর আগমনের পর তাঁর হস্তক্ষেপে এই নির্মম প্রথা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
৪. যুক্তরাষ্ট্র
শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গ বৈষম্য: দুইশ বছর পূর্বেও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কৃষ্ণাঙ্গদেরকে নীচু চোখে দেখা হত। কৃষ্ণাঙ্গদের অশুভ মনে করা হত। ফলে তাদের প্রতি অবর্ণনীয় বৈষম্য দেখান হত। বর্তমানে শ্বেতাঙ্গদের পাশাপাশি কৃষ্ণাঙ্গরাও সমান সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে।
● তথ্য বিশ্লেষণ: ওপরে ছকে উল্লেখিত তথ্যগুলো আমি পত্র-পত্রিকা, ইন্টারনেট, কোর্সটিকা ওয়েবসাইট এবং শ্রেণিশিক্ষকের সহায়তায় সংগ্রহ করেছি। তথ্যগুলো বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করে আমি তা একত্রিত করেছি। এ তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে জানতে পেরেছি, বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অতীতে বিভিন্ন রীতি-নীতি প্রচলিত ছিল— যা বর্তমানে নেই। এসব রীতি-নীতির অধিকাংশই মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে পরিবর্তিত হয়েছে। যা সমাজ সংস্কারের ধারাবাহিকতাকে নির্দেশ করে।
● ফলাফল বা সিদ্ধান্ত: উক্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে আমি বেশ কিছু সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি। তা হল—
১. সমাজের প্রচলিত রীতি-নীতি সময়ের প্রয়োজনে পরিবর্তিত হতে পারে।
২. সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন নেতিবাচক রীতি-নীতি পরিবর্তনে সমাজ সংস্কারকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
৩. কিছু কিছু রীতি-নীতি মানুষের মঙ্গলের জন্যই পরিবর্তন করা হয়।
৪. কিছু কিছু রীতি-নীতি পরিবর্তনের ফলে অতীত ঐতিহ্য হুমকির মুখে পড়ে।
● উপস্থাপন: শিক্ষার্থীরা নিজেদের মত করে স্বতস্ফূর্তভাবে উপস্থাপন করবে।