তারাবির নামাজ যেভাবে পড়বেন

বাংলাদেশের আকাশে পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখা গেছে। ফলে আগামীকাল রোববার থেকে মাসব্যাপী সিয়াম সাধনা শুরু হচ্ছে।

ইসলামী বিধান অনুযায়ী, রমজানের চাঁদ দেখা যাওয়ায় শনিবার রাতে সেহরি খেয়ে আগামীকাল রোজা রাখবেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। রোববার হবে প্রথম রোজা।

এদিকে শনিবার রাতের এশার নামাজের পর তারাবির নামাজ শুরু হবে। এ উপলক্ষে মসজিদে মসজিদে তারাবি নামাজ আদায়ে বিভিন্ন প্রস্তুতিমূলক কাজ এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।

রমজানের সিয়ামের বিশেষ অনুষঙ্গ তারাবির সালাত। মুমিন বান্দারা যথাযথ গুরুত্ব ও ভাবগাম্ভীর্যতার সঙ্গে তারাবির সালাত আদায় করে থাকেন। দিনে রোজা রেখে রাতে দীর্ঘক্ষণ তারাবির নামাজের কষ্ট আনন্দের সঙ্গে উপভোগ করেন।

পবিত্র রমজানের গুরুত্বপূর্ণ সুন্নতগুলোর অন্যতম এ সালাত। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সাওয়াবের উদ্দেশ্যে রমজানে তারাবির নামাজ আদায় করেন, তার অতীতের গুনাহগুলো আল্লাহপাক ক্ষমা করে দেবেন। (বুখারি শরিফ)।

মূলত মাহে রমজানে এশার ফরজ ও সুন্নত নামাজের পর বিতরের আগে তারাবির নামাজ আদায় করতে হয়। সাধারণ নফল ও সুন্নতের চেয়ে অধিকতর মর্যাদাবান, গুরুত্বের দিক থেকে তারাবির নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ, যা ওয়াজিবের কাছাকাছি।

তারাবি আরবি শব্দ, যা তারবিহাতুন শব্দের বহুবচন; যার অর্থ হলো আরাম, প্রশান্তি অর্জন, বিরতি দেওয়া, বিশ্রাম নেওয়া ইত্যাদি। যেহেতু ২০ রাকাত তারাবির নামাজ প্রতি চার রাকাত অন্তর চার রাকাত নামাজের সমপরিমাণ সময় বিরতি দিয়ে আরামের সঙ্গে আদায় করা হয়, সেজন্য এ নামাজকে তারাবির নামাজ বলা হয়।

এ নামাজ আদায় না করলে অবশ্যই গুনাহগার হতে হবে। তারাবির নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম। কারণ, মাহে রমজান যেসব বৈশিষ্ট্যের জন্য মহিমান্বিত, তার মধ্যে অন্যতম হলো তারাবির নামাজ। রাসূলে কারিম (সা.) তারাবির সালাত অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে আদায় করতেন বলে সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।

আমাদের দেশে দুই ধরণের তারাবি প্রচলিত। একটি হলো সুরা তারাবি এবং অন্যটি হলো খতম তারাবি। সুরা তারাবি হলো পবিত্র কোরআনের যে কোন সুরা দিয়ে ২০ রাকাত নামাজ আদায় করা।

খতম তারাবি হলো রমজান মাসে সম্পূর্ণ কোরআন সহকারে তারাবি আদায় করা। উভয় পদ্বতিই ইসলাম অনুমোদন করে। তবে খতমে তারাবিতে সওয়াব বেশি। সুরা তারাবির মাধ্যমে নামাজ আদায় করলেও নামাজ আদায় হবে।

তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম: এশার নামাজের চার রাকাত ফরজ ও দুই রাকাত সুন্নতের পর এবং বিতর নামাজের আগে দুই রাকাত করে ১০ সালামে যে ২০ রাকাত নামাজ আদায় করা হয়। আর এ নামজকেই ‘তারাবির নামাজ’ বলা হয়।

তারাবি নামাজের নিয়ত: আরবি এবং বাংলা উভয়ভাবে নিয়ত করা যাবে। আরবি নিয়ত হচ্ছে, নাওয়াাইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা, রকাআতাই সালাতিত তারাবিহ, সুন্নাতু রাসুলিল্লাহি তাআলা, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি, আল্লাহু আকবার।

বাংলায় নিয়ত হচ্ছে, আমি কেবলামুখি হয়ে দুই রাকাআত তারাবির সুন্নতে মুয়াাক্কাদাহ নামাজের নিয়ত করছি। আল্লাহু আকবার। (জামাআত হলে যোগ করতে হবে এ ইমামের পেছনে পড়ছি)।

তারাবির নামাজ কিভাবে পড়বেন: দুই রাকাত নামাজ আদায় করে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করা। আবার দুই রাকাত নামাজ পড়া। এভাবে ৪ রাকাত আদায় করার পর একটু বিশ্রাম নেয়া।

বিশ্রামের সময় তাসবিহ তাহলিল পড়া, দোয়া-দরূদ ও জিকির আজকার করা। তারপর আবার দুই দুই রাকাত করে আলাদা আলাদা নিয়তে তারাবি আদায় করা।

জামাতে তারাবি: ফরজ নামাজ ব্যতিত অন্য সকল নামাজ একাকী আদায় করা উত্তম। কিন্তু তারাবি নামাজ ব্যতিক্রম। তারাবির নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা শরীয়ত সম্মত। বরং তারাবি একাকী আদায় করার চেয়ে জামাতবদ্ধভাবে আদায় করা উত্তম।

কারণ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে তারাবির নামাজ জামাতে আদায় করেছেন এবং জামাতে আদায়ের ব্যাপারে তাকিদ দিয়েছেন।

পবিত্র রমজান মাসে তারাবির নামাজ পড়া নারী পুরুষের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নত।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *