হাসপাতালের বেডে ক্যান্সার আক্রান্ত প্রেমিকাকে বিয়ে করলেন প্রেমিক

কক্সবাজারের চকরিয়ায় সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলে মাহামুদুল হাসান ক্যান্সার আক্রান্ত প্রেমিকা ফাহমিদাকে হাসপাতালের বেডে বিয়ে করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার পরও সবকিছু জেনে বুঝে এবং স্ত্রীর সকল চিকিৎসার দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিয়ে বিয়ে করছেন তিনি। এ বিয়ের খবরে এলাকাবাসী ও নেটিজনদের মাঝে প্রশংসায় ভাসছেন।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল হকের ছেলে মাহমুদুল হাসান তার ভালোবাসার মানুষ চট্টগ্রাম বাকলিয়ার ক্যান্সার আক্রান্ত ফাহমিদাকে ভারতের টাটা মেমোরিয়াল হসপিটাল থেকে দেশে ফিরিয়ে এনে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল সেন্টারে ভর্তি করান।

দীর্ঘদিন ধরে ভালোবাসার মানুষ মরণঘাতী ক্যান্সার ধরা পরার পর সাথে সাথে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা এভারকেয়ার, পরবর্তীতে ভারতের টাটা মেমোরিয়াল হসপিটালে নেয়া হয়। সেখানে দীর্ঘ একবছর চিকিৎসার পর ডাক্তাররা সাফ জানিয়ে দেয়, ফাহমিদার চিকিৎসা আর সম্ভব নয়, ইঙ্গিত দেন, বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই। এরপরও ভালোবাসার প্রতিদান দিতে বিয়ে করলেন।

বরের পারিবারিক সূত্র জানায়, চকরিয়ার ছেলে মাহমুদুল হাসান নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ আর চট্টগ্রাম নগরীর দক্ষিণ বাকলিয়াতে জন্ম নেয়া ফাহমিদা কামাল ইইউবি থেকে বিবিএ ও এমবিএ শেষ করেছে। শিক্ষাজীবনে তাদের দু’জনের পরিচয়। স্মার্ট সুন্দরী ফাহমিদার সাথে প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। স্বপ্ন দেখে একসাথে ঘরবাঁধার। সুখ-আনন্দ সবই যেন একসাথে কাটার। কিন্তু কনে দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ।

এক পর্যায়ে চিকিৎসকরা জানান – ফাহমিদার ক্যান্সার হয়েছে। এরপরও বর মাহমুদুল হাসান সম্পর্ক রাখেন। অভয় দেন, খুব দ্রুত ভালো হয়ে যাওয়ার জন্য আল্লাহ উপর ভরসা রাখতে। প্রেমের সম্পর্কও বজায় রাখেন।

এক পর্যায়ে ক্যান্সার আক্রান্ত প্রেমিকাকে বিয়ের জন্য পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করেন। সিদ্ধান্ত নেন অসুস্থ প্রেমিকাকে তিনি বিয়ে করবেন। সেই মোতাবেক গত বুধবার হাসপাতালের বেডে তাদের মৃত্যুপথযাত্রী ফাহমিদাকে বিয়ে করেন।

হাসানের সিদ্ধান্ত ফাহমিদাকে যদি মরতে হয়, তাহলে তার বুকে মাথা রেখেই মরতে হবে। বিয়ের দিন কনে ফাহমিদাকে পরানো হয় লাল বেনারসি শাড়ি, গলায় সোনার হার। বর হাসান পায়জামা-পাঞ্জাবি পরেন। আক্দ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। দু’জন মিলে কেক কাটে, মালাবদল হয়। খেজুর মিষ্টি খাওয়ানো হয়। ক্ষণিকের জন্য মরণঘাতী ক্যান্সারকে জয় করে ফাহমিদা হয়ে উঠে অন্য এক পৃথিবীর বাসিন্দা। সমস্ত স্বর্গীয় সুখ তাকে ঘিরে রাখে। হারিয়ে যাওয়া সোনালি দিনগুলো আবার যেন ফিরে পায়। আনন্দে আত্মহারা ফাহমিদার আরো বাঁচতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে হাসানের বুকে মাথা রেখে হাজার বছর
বাঁচতে।

এদিকে তাদের বিয়ের বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই এই বিয়েকে মানবতার দৃষ্টান্ত বলে আখ্যায়িত করেছেন। পাশপাাশি ভালোসার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন মাহমুদুল হাসান। তাদের দাম্পত্য জীবন সুখী হোক- এই কামনা সকলের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *