রোজার প্রকার ও বিধান সম্পর্কে জেনে নিন
আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন মানুষ হিসেবে। মানুষের সৃষ্টি দু’টি জিনিসের মাধ্যমে। একটি দেহ, আরেকটি মন। এজন্য ইসলামের বিধান মন দেহ শরীর সবকিছু দিয়ে পালন করতে হয়।
ঈমানের সম্পর্ক হচ্ছে মনের সঙ্গে, রোজার সম্পর্ক হচ্ছে শরীরের সঙ্গে। নামাজের সম্পর্ক হচ্ছে শরীরের সঙ্গে। রোজা শারীরিক ইবাদত। আল্লাহর নির্দেশিত পন্থায় ইবাদত করলেই সেই ইবাদত ইবাদত; ইবাদত বলে গণ্য হবে।
রোজা ইসলামের তৃতীয় ফরজ বিধান। প্রতিটি বালেগ ও প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিম নর-নারীর ওপর রমজানের রোজা রাখা ফরজ। ফরজ রোজা ছাড়াও অনেক প্রকার রোজা রয়েছে। কারো কারো ওপর রোজা রাখা ফরজ, কারো ওপর রোজা রাখা ওয়াজিব, কারো ওপর রোজা রাখা সুন্নত, কারো ওপর রোজা রাখা মোস্তাহাব। এসব ভিত্তিতেই রোজার প্রকার নির্ণয় করা হয়েছে।
রোজার প্রকারভেদ : রোজা রাখা বা না রাখার দিক দিয়ে মোট সাত প্রকার। যথা-
এক. ফরজ রোজা :
ফরজ রোজা আবার চার প্রকার- ক. রমজান মাসের রোজা। খ. কোনো কারণ বশত রমজানের রোজা ভঙ্গ হয়ে গেলে তার কাযা আদায়ে রোজা। গ. শরীয়তে স্বীকৃত কারণ ব্যতিত রমজানের রোজা ছেড়ে দিলে কাফফারা হিসেবে ৬০টি রোজা রাখা। ঘ. রোজার মান্নত করলে তা আদায় করা। মান্নতের রোজা আবার দু’প্রকার। এক. নজরে মুআইয়ান অর্থাৎ কেউ কোনো কিছুর প্রত্যাশা করে যদি সুনির্দিষ্ট দিন তারিখ উল্লেখ করে রোজার নিয়ত করে। দুই. নজরে গাইরে মুয়াইয়ান অর্থাৎ অনির্দিষ্ট দিন তারিখ উল্লেখ করে রোজার নিয়ত করে। দু’টিই পরবর্তীতে রাখা ফরজ। কেউ কেউ এগুলোকে রাখা ওয়াজিবও বলেছেন।
দুই. ওয়াজিব রোজা:
ওয়াজিব রোজা বলা হয়, নফল রোজা রেখে ভঙ্গ করলে পরবর্তীতে তা আদায় করা ওয়াজিব।
তিন. সুন্নত রোজা :
মহররম মাসের নয় এবং দশ তারিখে রোজা রাখা। কেউ কেউ বলেছেন, সওমে দাউদ অর্থাৎ দাউদ (আ.) যে পদ্ধতিতে রোজা রাখতেন এ সব পদ্ধতিতে রোজা রাখা সুন্নত। তিনি একদিন রোজা রাখতেন এবং একদিন রোজা রাখতেন না। গ্যাপ গ্যাপ দিয়ে রোজা রাখতেন। এভাবে রোজা রাখা সুন্নত।
চার. মোস্তাহাব রোজা :
প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪, এবং ১৫ তারিখে, প্রতি সাপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবারে, কোনো কোনো ইমামের মতে শাওয়াল মাসে পৃথক পৃথক প্রতি সপ্তাহে দু’টি করে ছয়টি রোজা রাখা মোস্তাহাব। তবে ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এর মতে এক সঙ্গে হোক কিংবা পৃথক পৃথক হোক শাওয়ালের ছয়টি রোজা মাকরূহ।
পাঁচ নফল রোজা:
মোস্তাহাব আর নফল খুব কাছাকাছির ইবাদত। সহজ অর্থে নফল হলো যা ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত নয় এমন ইবাদত পূণ্যের নিয়তে করা। রোজার ক্ষেত্রেও তাই। (রোজা-রমজানের ফজিলত, শরিফ আব্দুল্লাহ)।
ছয়. মাকরূহ রোজা :
মাকরূহ হচ্ছে বছরের ৩৬৫ দিনের ৩৬৫ দিন রোজা রাখা।
সাত. হারাম রোজা :
বছরের ছয়দিন রোজা রাখা হারাম। যেমন : আইয়াম তাশরিকের পাঁচ দিন অর্থাৎ জিলহজ মাসের ৯. ১০, ১১, ১২, ১৩ তারিখ রোজা রাখা হারাম। আর ঈদুল ফিতরের দিন রোজা রাখা। বছরের এ ছয়দিন রোজা রাখা হারাম। এসব দিনগুলোতে রোজা রাখা যায় না।
এসব রোজার নিয়তের বিধান :
রোজার নিয়ত করা ফরজ। ফরজ হোক, ওয়াজিব হোক, সুন্নত হোক সকল রোজার ক্ষেত্রেই নিয়ত ফরজ। রোজার নিয়ত করতে হবে রাতেই। তবে কেউ রাতে নিয়ত করতে না পারলে দিনের এগারোটার পূর্বেই রোজার নিয়ত করার সুযোগ আছে। তবে এটা সব রোজার জন্য নয়। রমজানের রোজা বা ফরজ রোজার নিয়ত যদি কোনো ব্যক্তি রাতে করতে না পারে তাহলে দিনের এগারোটার মধ্যে নিয়ত করলেও চলবে। নফল রোজার ক্ষেত্রেও একই সুযোগ রয়েছে। তবে যদি কোনো ব্যক্তি নজরে গাইরে মুয়াইআন অর্থাৎ সুনির্দিষ্ট দিনের মান্নত করেনি তাদের ক্ষেত্রে রাতের বেলা রোজার নিয়ত করতে হবে এবং যারা রমজানের রোজা রাখেননি, রমজান ছাড়া অন্য কোনো মাসে যদি এ রোজা রাখতে চায় তাহলেও রাতের বেলা নিয়ত করতে হবে। সকালে নিয়ত করলে হবে না।
রোজা ফরজ হওয়ার শর্ত :
আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা এই (রমজান) মাস পাবে, তারা যেন এ মাসে রোজা পালন করে। (সূরা : বাকারা : আয়াত ১৮৫)। বান্দার প্রতি রোজা ফরজ হওয়ার শর্তগুলো এখানে তুলে ধরা হলো-
রোজা ফরজ হওয়ার শর্ত :
১. মুসলিম হওয়া। অমুসলিমের ওপর রোজার বিধান নেই।
২. প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া। অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে-মেয়ের ওপর রোজা ফরজ নয়।
৩. জ্ঞান সম্পর্ণ হওয়া। অর্থাৎ মস্তিষ্ক বিকৃত (পাগল) লোকের ওপর রোজা ফরজ নয়।
৪. হায়েয তথা ঋতুকাল এবং নিফাস তথা সন্তান জন্মদান পরবর্তী সময়ে পবিত্র থাকা। নারীদের হায়েজ ও নিফাসের সময়ে রোজা রাখা যাবে না। হায়েজ-নিফাসের কারণে যে কয়টা রোজা ভঙ্গ হবে, তা পরবর্তীতে কাজা করে নিতে হবে।
৫. রোজা পালনে সামর্থবান হওয়া।
৬. শরয়ী মুসাফির না হওয়া। কারণ মুসাফিরের জন্য রোজা ফরজ নয়।
আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহর এ ৬ শ্রেণীর লোকদের পবিত্র রমজান মাসের রোজা আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : খতিব, পীর ইয়ামেনি জামে মসজিদ, ঢাকা।
ডেইলি-বাংলাদেশ/আরএজে