শিক্ষা সংবাদ

স্কুলড্রেস না থাকায় শিক্ষার্থীদের বের করে দিলেন প্রধান শিক্ষক

0 min read

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া সিনহা স্বর্ণাসহ কয়েকজন শিক্ষার্থীর স্কুলড্রেস না থাকায় তাদের বিদ্যালয় থেকে বের করে দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। মঙ্গলবার পৌর শহরের ফুলবাড়ী পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে এই ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থী সুমাইয়া সিনহা স্বর্ণা পৌর শহরের রামচন্দ্রপুর গ্রামের শাহিনুর ইসলামের মেয়ে। সে একজন থ্যালাসেমিয়া রোগী। তার বাবা সুপারি ব্যবসায়ী।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সকালে ওই উচ্চবিদ্যালয়ে স্কুলড্রেস না থাকার কারণে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া সিনহা স্বর্ণাসহ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ক্লাস রুম থেকে ডেকে এনে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেন প্রধান শিক্ষক মো. হাসেম আলী। এ সময় শিক্ষার্থীরা শিক্ষককে অনুরোধ করার পরেও তাদের বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে দেননি তিনি।

শিক্ষার্থী সুমাইয়া সিনহা স্বর্ণাসহ অন্য শিক্ষার্থীরা জানান, কিছুদিন থেকে তাদের স্কুল ড্রেস পরিধান করে বিদ্যালয়ে আসার নির্দেশ দেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এরপর শিক্ষার্থীরা তাদের অভিভাবকদের জানালে ড্রেস বানিয়ে দেবেন এমন আশ্বাস দেন আভিভাবকরা।এরপর মঙ্গলবার তারা বিদ্যালয়ে এলে স্কুল ড্রেস না থাকার কারণে ক্লাস রুম থেকে ডেকে এনে তাদের বের করে দেওয়া হয়।

ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া সিনহা স্বর্ণা’র বাবা মো. শাহিনুর ইসলাম দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, তিনি নিজে তার অসুস্থ মেয়েকে বিদ্যালয়ে রেখে সহকারী শিক্ষকদের বলেন, যে তার স্কুল ড্রেস তৈরি করা হয়েছে। দর্জির কাছে রয়েছে, কাল থেকে স্কুল ড্রেস পরে বিদ্যালয়ে আসবে তার মেয়ে। এর কিছুক্ষণ পরে জানতে পারেন যে তার মেয়েকে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, তার মেয়ে একজন থ্যালাসেমিয়া রোগী। প্রতিমাসে তাকে তিন থেকে চার ব্যাগ রক্ত দিতে হয়, চিকিৎসা খরচসহ প্রায় ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা খরচ হয়। এ পর্যন্ত তার চিকিৎসা করতে গিয়ে শেষ সম্বল বাড়িটিও বিক্রি করতে হয়েছে। তাকে স্কুল থেকে বের করে না দিয়ে আমাকে জানাতে পারত। তাকে আমি নিজে বাড়িতে নিয়ে যেতাম। এভাবে একটা অসুস্থ বাচ্চাকে বের করে দেওয়া কতটুকু যুক্তিসঙ্গত। ব্যস্ততম সড়কে একা একা চলাচলের কারণে আমার মেয়ের দুর্ঘটনা ঘটতে পারত।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হাসেম আলী বলেন, নির্দেশনা অনুযায়ী সব শিক্ষার্থীকে স্কুল ড্রেস পরিধান করে বিদ্যালয়ে আসতে বলা হয়েছে। বারবার বলার পরেও অনেকে স্কুলড্রেস পরে আসছেন না, তাই তাদের স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। স্কুলড্রেস ছাড়া একজন শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে পড়তে পারবেন কি না, এমন প্রশ্ন করলে তিনি তার কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শমসের আলী মন্ডল জানান, শিক্ষার্থীদের স্কুলড্রেস পরিধানের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে বলা হয়েছে শিক্ষার্থীদের তাগিদ দেওয়ার জন্য। তবে এ রকম কোনো কথা বলা হয়নি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, কিছু আইনশৃঙ্খলার বিষয় থাকে, আবার কিছু বিষয়ও আমাদের মাথায় রাখতে হবে। তবে বিষটি নিয়ে তিনি প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ফুলবাড়ী পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আতাউর রহমান বলেন, যারা স্কুলড্রেস কিনতে পারে না, আমাকে জানালে আমি তাদের স্কুলড্রেস কিনে দেই। আমাকে জানালে আমি কিনে দিতাম। বিষয়টি দুঃখজনক ব্যাপার। বিষয়টি দেখবেন বলে জানান তিনি।

Rate this post
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

Leave a Comment

x