পবিত্র শাবান মাসের ফজিলত ও আমল দলিল প্রমান সহ জেনে নিন
আসছালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক সবাই কেমন আছেন। আসা করি সবাই ভালো আছে। বন্ধুরা আজকে আমরা এই পোস্টে দলিল প্রমান সহ হিজরি শাবান মাসের ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করবো। যারা শাবান মাসের ফজিলত সম্পর্কে জানতে চান সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়তে পারেন।
শাবান মাসের ফজিলত
হিজরি অষ্টম মাস হলো শাবান মাস৷ এ মাসের গুরুত্ব অনেক। এই মাস মুসলিম উম্মার জন্য রমজান মাসের প্রস্তুতির মাস বলা হয়ে থাকে। শাবান মাস পরেই পবিত্র মাহে রমজান।
হাদীসের আলোকে শাবান মাসের ফজিলত
সফর থেকে রজব পর্যন্ত ৬ মাসের কোনো বিশেষ ফযীলত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। শা’বান মাস তদ্রূপ নয়। সহীহ হাদীসে শাবান মাসের নিম্নলিখিত ফযীলতগুলো প্রমাণিত:
শাবান মাসের ফজিলত ও আমল
১. এ মাসে রাসূলুল্লাহ , বেশি, বেশি সিয়াম পালন করতে ভালবাসতেন। তিনি সাধারণত এ মাসের অধিকাংশ দিন একটানা সিয়াম পালন করতেন বলে বুখারী ও মুসলিম সংকলিত সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। এমনকি বুখারী ও মুসলিমের কোনো কোনো হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তিনি শা’বান মাস পুরোটাই নফল সিয়ামে কাটাতেন। তিনি এ মাসে কিছু সিয়াম পালন করতে সাহাবীগণকে উৎসাহ প্রদান করতেন।
২. আহমাদ, নাসাঈ প্রমুখ মুহাদ্দিস সংকলিত মোটামুটি গ্রহণযোগ্য বা হাসান পর্যায়ের হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, শা’বান মাসে বান্দার আমল আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়; এজন্য এই মাসে বেশি বেশি নফল সিয়াম পালন করা উচিত।
৩. শা’বান মাসের মধ্যম রজনী বা ১৫ই শা’বানের রাতে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে ক্ষমা করেন বলে সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।
এ সকল সহীহ ও হাসান হাদীসের পাশাপাশি এ মাসের ফযীলত ও ইবাদতের বিষয়ে অনেক জাল হাদীস প্রচলিত। এ জাল হাদীসগুলোকে আমরা দু ভাগে ভাগ করতে পারি: ১ সাধারণভাবে শাবান মাস বিষয়ক ও ২. শাবান মাসের মধ্যম রজনী বা ‘শবে বরাত’ বিষয়ক। আমাদের দেশে দ্বিতীয় বিষয়টিই প্রসিদ্ধি লাভ করেছে।
ফুটনোটঃ. বুখারী, আস-সহীহ ২/৬৯৫, ৭০০; মুসলিম, আস-সহীহ ২/৮১০-৮১১, ৮২০।
নাসাঈ, আস-সুনান ৪/২০১; আহমাদ, আল-মুসনাদ ৫/২০১।
শাবান মাসে রোজা রাখার দলিল
হযরত মা আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, ‘‘হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) পবিত্র শাবান মাসের দিন-তারিখের এত হিসাব রাখতেন যতটা হিসাব অন্য মাসের রাখতেন না, (আবু দাউদ ১/৩১৮)।’’
সুতরাং পবিত্র শাবান মাসের দিন-তারিখের হিসাব রাখাও রাসুলের সুন্নাত।
পবিত্র শাবান মাসে অধিক হারে নফল রোজা রাখা উত্তম। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এই মাসে অধিক হারে রোজা রাখতেন, এমন কি সমগ্র শাবান মাস জুড়েও রোজা রাখতেন।
হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, ‘‘আমি হযরত নবী করিম (সাঃ)-কে শাবান ও রমজান ব্যতীত দুই মাস একাধারে রোজা রাখতে দেখিনি।’
হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘‘আমি হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শাবান মাসের মতো এত অধিক নফল রোজা রাখতে অন্য কোনো মাসে আর দেখিনি। এ মাসের অল্প কিছু দিন ব্যতীত বরং বলতে গেলে সারা মাসই তিনি নফল রোজা রাখতেন। (তিরমিজি-১/১৫৫)।’’
তাছাড়া এই পবিত্র শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত অর্থাৎ ১৫ শাবান রাত হচ্ছে শবে বরাত। এ রাতের অশেষ ফজিলতও হাদিসে বর্ননা করা হয়েছে। বছরের পাঁচটি শ্রেষ্ঠ রজনীর অন্যতম এ শবে বরাত।
এই রজনী সম্পর্কে হযরত আয়শা সিদ্দীকা (রাঃ) বলেছেন, ‘‘এক রাতে আমি রাসূল (সাঃ) কে পেলাম না। তখন খুঁজে দেখলাম, তিনি জান্নাতুল বাকী কবরস্থানে গিয়ে মৃত ব্যক্তিদের রূহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করছেন। তখন রাসূল (সাঃ) আমাকে দেখে বললেন, হে আয়শা! তুমি কি মনে করেছ যে, আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল তোমার প্রতি অবিচার করেছেন? তখন আয়শা (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সাঃ) আমি ধারণা করেছিলাম আপনি অপর কোন স্ত্রীর ঘরে গেছেন। তখর রাসূল (সাঃ) বললেন, অর্ধ শাবানের রাতে (শবে বরাতে) আল্লাহপাক নিকটতর আসমানে অবতীর্ণ হন এবং বনি কলব গোত্রের ছাগলের পালের পশমের চেয়ে অধিক সংখ্যক ব্যক্তিকে ক্ষমা করেন (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ্)।’’
তাই মুসলিম উম্মাহর কর্তব্য এই মাসে বেশি বেশি রোজা রাখা এবং নফল ইবাদত করা।
এই মাসে রাসুল (সঃ) নফল ইবাদতের পাশাপাশি একটি দোয়া খুব বেশি বেশি পড়তেন বলে হাদিসে পাওয়া যায়। তা হল, “আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রাজাবা ওয়া শা’বান ওয়া বাল্লিগনা রামাযান।”
অর্থাৎ, হে আল্লাহ আমাদেরকে রজব ও শা`বান মাসের বরকত দান করুন এবং আমাদেরকে রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন।