ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী রিয়াদ। ফেসবুকের মাধ্যমেই পরিচয় হয় ২২ বছরের তরুণী আদিসার (ছদ্মনাম) সঙ্গে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে তাদের সম্পর্কের গভীরতা হয়। অডিও ও ভিডিও কলে নিয়মিত কথা বলতে থাকেন তারা। অনেক সময় খোলামেলাভাবে ভিডিও কলে কথা হতো তাদের মধ্যে।
আদিসা ঢাকার একটি নামকরা কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। ব্যক্তিগত ছবিও শেয়ার করেন সুমাইয়া। এভাবে আরও কিছুদিন যাওয়ার পর সুমাইয়া তার প্রেমিকের মধ্যে অস্বাভাবিক আচরণ দেখতে পান। সুমাইয়ার কিছু ব্যক্তিগত ছবি তাকে দিয়ে টাকা দাবি করে রিয়াদ। টাকা না দিলে ছবিগুলো ভাইরাল করার হুমকি দেন। মান সম্মানের ভয়ে সুমাইয়া বিভিন্ন সময় রিয়াদকে ৮০ হাজার টাকা দেন।
প্রেমিকের ছদ্মবেশী প্রতারক রিয়াদ আসলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী না। সে প্রেমের ফাঁদে ফেলার জন্য মিথ্যা পরিচয় দিতো। মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে মেয়েদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করতো। পরে এসব দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায় করে নিতো।
রিয়াদের গল্পটা শুধু আদিসার সঙ্গেই নয়; গত ২ বছরে কমপক্ষে ৬০ তরুণীর সর্বনাশ করে তাদের কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানিয়েছে ডিবি পুলিশ। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে এই সাইবার প্রতারককে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। এ সময় তার কাছ থেকে ব্ল্যাকমেইলে ব্যবহৃত ২টি মোবাইল ও ভুয়া ফেসবুক আইডি জব্দ করা হয়েছে।
ডিবি পুলিশ জানিয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া পরিচয় দিয়ে তরুণীদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলাই ছিল তার পেশা। সম্পর্ক গড়ার পর মোবাইলে কথোপকথনের অডিও/ভিডিও রেকর্ড করে সেগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে ব্ল্যাকমেইলের ফাঁদ পাততো।
গত বুধবার শান্তা (ছদ্মনাম) ধানমণ্ডি থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, রিয়াদের সঙ্গে আমার ৬-৭ মাস আগে মোবাইলফোনের মাধ্যমে পরিচয় হয়। পরিচয়ের সময় রিয়াদ নিজেকে ঢাবির সিএসই বিভাগের ছাত্র বলে পরিচয় দেয়। পরিচয়ের একপর্যায়ে রিয়াদের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ সময় মোবাইলফোনে তার সঙ্গে কথা হতো।
এ ছাড়া অডিও ও ভিডিও কলে কথা বলতাম। কথা বলার সময় আমার অজান্তেই রিয়াদ সব অডিও ও ভিডিও কথোপকথন রেকর্ড করে রাখে। পরবর্তীতে আমি জানতে পারি, রিয়াদ প্রকৃতপক্ষে ঢাবির ছাত্র নয়, মোবাইল ফোনে ভুয়া পরিচয় দিয়েছে। এই কারণে তার সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেই। এ সময় রিয়াদ আমার ওয়াটসঅ্যাপে বিভিন্ন হুমকিমূলক মেসেজ পাঠাতো এবং আমার ক্ষতি করার জন্য রেকর্ড করে রাখা সব অডিও/ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিতে থাকে। আমার ক্ষতি না করার জন্য রিয়াদকে অনুরোধ করলে, সে আবার হুমকি দিয়ে ৫ লাখ টাকা টাকা দাবি করে। ওই টাকা দিতে রাজি না হওয়ায়, সে হুমকি অব্যাহত রাখে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. নাজমুল হক বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রিয়াদ ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে অর্ধশতাধিক মেয়েদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে ব্ল্যাকমেইলের ফাঁদে ফেলতেন বলে স্বীকার করেছেন। তার মোবাইল ফোনেও এ ধরনের প্রতারণা করার উদ্দেশ্যে অনেক মেয়েকে ব্ল্যাকমেইলে ফেলার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
ভার্চ্যুয়াল জগতে কাউকে না জেনে শুনে সম্পর্ক তৈরি করা যাবে না। আপত্তিকর অবস্থায় ভিডিও কল ও অডিও কলে আপত্তিকর কথাবার্তা বলা থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন এ ডিবি কর্মকর্তা।