কোন প্রাণী বেশি ঘুমায়: সাউন্ড স্লিপ নিয়ে আমাদের দুশ্চিন্তার অন্ত নাই। রাতে ঘুমানোর জন্য স্লিপিং পিল নেয়া লোকজনের সংখ্যাও কিন্তু কম নয়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে রাতে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর নির্দেশনা দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। কিন্তু পশুদের এসব সমস্যার বালাই নেই। এদের অনেকে তো দিনের বেশির ভাগ সময়ই ঘুমিয়েই পার করে দেয়। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক প্রাণিদের ঘুমের রকম সকম।
প্রাণিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘুমায় নিশাচর প্রাণী বাদুড়। সূর্যের আলোয় চোখে দেখে না বলে সারা দিনই ঘুমিয়েই কাটায় তারা। এমনকি পুরোটা রাতও তারা জেগে থাকে না। দিনে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গড়ে সাড়ে ১৯ ঘণ্টা ঘুমায় বাদুড়। তারা গাছের ডালে পা রেখে মাথা নিচের দিকে ঝুলিয়ে ঘুমায়।
ঘুমাতে ওস্তাদ অজগর-ও। বিরাট শরীর নিয়ে এর নড়তে চড়তে তার কষ্ট হয়। তাই বুঝি দিনের মধ্যে গড়ে ১৮ ঘণ্টাই কুণ্ডলী পাকিয়ে ঘুমিয়ে থাকে এই প্রাণীটি।
দিনে কমপক্ষে ১৬ ঘণ্টা ঘুমায় বাঘ। কম যায় না চঞ্চল কাঠবিড়ালিও। তারা দিনে কম করে হলেও দৈনিক ১৪ দশমিক নয় ঘণ্টা ঘুমিয়ে কাটায়। ‘বনের রাজা’সিংহ ঘুমায় দিনে সাড়ে ১৩ ঘণ্টা। আকৃতিতে অনেক ছোট হলেও ঘুমের দিক দিয়ে কারো চেয়ে কম যায় না ইঁদুর-ও। দিনে প্রায় ১২ দশমিক ৬ ঘণ্টা ঘুমায়। আর বাঘের মাসি বিড়াল ঘুমায় দিনে মাত্র সাড়ে ১২ ঘণ্টা!
ইঁদুর-বিড়ালের চেয়ে তুলনামূলক কম ঘুমায় খরগোশ, দিনে অন্তত ১১ দশমিক ৪ ঘণ্টা। আর চিতাবাঘ ঘুমায় দিনে ১০ দশমিক আট ঘণ্টা।
বাড়ি পাহাড়া দেয়ার জন্য রাতের বেশির ভাগ সময়ই জেগে কাটায় প্রভুভক্ত কুকুর। তারপরও প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ১০ ঘণ্টা ঘুমায় এই প্রাণিটি। আর দিনে অন্তত নয় দশমিক সাত ঘণ্টা ঘুমায় শিম্পাঞ্জি।
কোন প্রাণীরা ঘুমকাতুরে বা সবচেয়ে বেশি ঘুমায়?
আমরা সবাই কম বেশি ঘুমাতে পছন্দ করি। যদিও ঘুম জীবনের অপরিহার্য একটি প্রক্রিয়া। তবুও কেউ কেউ প্রয়োজনের তুলনায় বেশিই ঘুমাই। অনেক মানুষই আছে, কাজ না থাকলে সারাদিন ঘুমিয়েই কাটিয়ে দিতো। আচ্ছা, আসল কথায় আসা যাক। পৃথিবীতে এমন কিছু প্রাণী আছে যাদের শখই হলো ঘুমানো। এমন কিছু প্রাণীর বিবরণ দেয়ার চেষ্টা করছি:
কোয়ালা: কোয়ালা দিনের ২৪ ঘন্টার মধ্যে ২২ ঘন্টাই ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেই। আর বাকি দুই ঘন্টাতে কোনোরকমে নাওয়া-খাওয়া সেরে নেয়। খাবার ও খুব সাদাসিদে। শুধু ইউক্যালিপ্টাস গাছের পাতা খাই। হয়তো ওই অলসতার জন্যই খাবার এত সংক্ষিপ্ত করে নিয়েছে। এদের দেখা মিলে অস্ট্রেলিয়ায়। প্রানীটা দেখতে অনেক সুন্দর।
স্লথ: নামটা শুনে মনে হতে পারে এটা আবার কোনো প্রাণীর নাম হয় নাকি। আসলে নামটা এমনই। তার স্বভাব দেখেই উপযুক্ত নাম দেয়া হয়েছে। স্লথ মানেই তো অলস। এরা দিনের ২০ ঘন্টাই ঘুমিয়ে কাটায়। পৃথিবীর সবচেয়ে অলস প্রাণী বলা হয় স্লথদের। এরা নড়াচড়া করে খুব আসে আস্তে। এদের বাসস্থান মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকায়।
আর্মাডিলো: এরা স্তন্যপায়ী প্রানী। দিনের ১৯ ঘন্টাই এদের ঘুমে চলে যায়। এদের দেহের উপর একটা শক্ত আবরণ থাকে, যেটা আত্মরক্ষাতে সাহায্য করে। এরা আবার বেশি ঘুমালেও, খুব দ্রুত দৌড়াতে পারে।
অপসাম: এরাও দিনের ১৯ ঘন্টা ঘুমিয়ে কাটায়। এদের কানাডাতে দেখা মিলে।
লেমুড়: লেমুড় দিনে ১৬ ঘন্টা ঘুমায়। এমন ঘুম যে সারাদিন এর চোখ লালই থাকে। মাদাগাস্কার দ্বীপে এদের পাওয়া যায়।
কাঠবিড়ালি : এ তো আমাদের সকলেরই পরিচিত। সারাদিন দৌড় ঝাপ, লাফালাফি, কাটাকুটি করে বেড়াই। কিন্তু এই যে সারাদিন বললাম, এরা তো দিনের চৌদ্দ ঘন্টাই ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেয়।
এরপরে যাদের নাম আসে তারা হলো, বিড়াল (১৩ ঘন্টা), হ্যামস্টার (১৪ ঘন্টা)
সবচেয়ে কম ঘুমায় যারাঃ
উপরোল্লিখিত প্রাণিদের তুলনায় বেশ কম ঘুমায় ছাগল। দিনে মাত্র পাঁচ দশমিক তিন ঘণ্টা ঘুমালেই হয়ে যায় তাদের। গরুর ঘুম আরো কম, মাত্র তিন দশমিক নয় ঘণ্টা। তিন দশমিক আট ঘণ্টা করে ঘুমায় ভেড়া। এই কম ঘুমওয়ালা প্রাণীদের দলে রয়েছে বোকা গর্দভও। তারা ঘুমায় দিনে মাত্র তিন দশমিক এক ঘণ্টা।
দ্রুতগামী ঘোড়াও রয়েছে এই দলে। দিনে মাত্র দুই দশমিক নয় ঘণ্টা করে ঘুমায় তারা। তবে প্রাণীদের মধ্যে সবচেয়ে কম ঘুমায় লম্বা গলার জিরাফ। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রায় তেইশ ঘণ্টাই জেগে থাকে তারা। একসঙ্গে বড়জোর পাঁচ মিনিট ঘুমায়। এভাবে সারাদিনে মাত্র আধ ঘণ্টার কিছু বেশি সময় ঘুমায় প্রাণিটি।
প্রশ্নের উত্তরে কারও মনে পড়বে দক্ষিণ আফ্রিকার গেছো প্রাণী স্লথের নাম। আবার কেউ হয়তো বলবেন নিজের পোষা বিড়ালের কথাই। কিন্তু পৃথিবীর সত্যিকারের সবচেয়ে ঘুমকাতুরে ও আলসে প্রাণীর নামটা আপনার কাছে খুব অপ্রত্যাশিত মনে হতে পারে।
সবদিকের বিবেচনায় প্রাণিকুলের মধ্যে ‘অলসশিরোমণি’ নির্বাচন করা আসলে সহজ নয়। কারণ একেক প্রাণীর ঘুমানোর ধরন একেক রকম। সাধারণ ধারণা হচ্ছে, ঘুমের সময় অধিকাংশ প্রাণী কার্যত নিশ্চল থাকে। আর তাদের মাংসপেশি থাকে শিথিল। কিন্তু এটা কোনো বাঁধাধরা বিষয় নয়। কিছু পাখি ঘুমের মধ্যে উড়তে পর্যন্ত পারে। তবে তখন তাদের মস্তিষ্কের অর্ধেক সজাগ থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে অবস্থিত ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউসিএলএ) নিদ্রা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক জেরোম সিগেল বলেন, ঘুমের মধ্য দিয়ে প্রাণীরা বাড়তি প্রাণশক্তি ও কর্মক্ষমতা অর্জন করে। কোনো প্রাণী কম ঘুমায়, আবার কোনো প্রাণী বেশি ঘুমাতে পছন্দ করে। যেসব প্রাণী কম ক্যালরির খাবার খায়, তাদের ঘুমের পরিমাণও তুলনামূলক কম হয়ে থাকে।
বিজ্ঞানীরা বলেন, কোনো কোনো প্রাণী কম ঘুমিয়ে শিকারি প্রাণীদের আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষার চেষ্টা করে। সাধারণত তৃণভোজী প্রাণীরা মাংসাশীদের চেয়ে কম ঘুমায়। কারণ জাবর কাটতে অনেক সময় লাগে তাদের। ১৯৭০-এর দশকের এক গবেষণায় দেখা যায়, জিরাফ দিনে মাত্র পাঁচ থেকে ৩০ মিনিট ঘুমায়।
বড় শিকারি প্রাণীদের মধ্যে সিংহের ঘুমের খ্যাতি রয়েছে। এরা দিনের বেশির ভাগ সময় শুয়ে-বসে কাটাতে পছন্দ করে। বন্দী অবস্থায় সিংহ দিনে ১০ থেকে ১৫ ঘণ্টা পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকে। তবে তারা প্রয়োজনে কম ঘুমিয়েও দিব্যি সুস্থ থাকে।
বন্য প্রাণীদের নিদ্রাভ্যাস নিয়ে বিজ্ঞানীরা নানা ধরনের গবেষণা করেছেন। এতে বিচিত্র রকমের তথ্যও পাওয়া যায়। যেমন বড় আকারের আর্মাডিলো দিনে গড়ে ১৮ ঘণ্টাই তাদের মাটির নিচের গর্তে কাটায়। তবে তার মানে এই না যে পুরোটা সময়ই তারা ঘুমিয়ে থাকে।
অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া রাজ্যে কোয়ালার ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, লোমশ ছোট এই আদুরে চেহারার প্রাণী দিনে প্রায় সাড়ে ১৪ ঘণ্টা ঘুমায় এবং আরও পাঁচ ঘণ্টা ‘বিশ্রাম নেয়’। মেলবোর্নের লা ট্রোব বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জন লেস্কু বলেন, লোমশ আর্মাডিলো দিনে ২০ ঘণ্টা ১০ মিনিট পর্যন্ত ঘুমাতে পারে। আর এক প্রজাতির ছোট্ট ইঁদুর প্রতিদিন ঘুমায় ২০ ঘণ্টা ১০ মিনিট পর্যন্ত।
১৯৬৯ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, এক জাতের ছোট বাদামি বাদুড় দিনে প্রায় ২০ ঘণ্টা ঘুমাতে পারে। তবে এমনও হতে পারে, এসব প্রাণী এই দীর্ঘ সময় চোখ বন্ধ থাকলেও কিছুটা সময় জেগেও থাকে। ঘুমকাতুরে বলে খ্যাত স্লথ দিনে ১৫ ঘণ্টার বেশি ঘুমায়। তবে ২০০৮ সালের এক গবেষণায় এদের দিনে ১০ ঘণ্টারও কম ঘুমানোর নজিরও মিলেছে।