পড়াশোনা

সুনাগরিক কাকে বলে?

1 min read

রাষ্ট্রের সব নাগরিক সুনাগরিক নয়। আমাদের মধ্যে যে বুদ্ধিমান, যে সকল সমস্যা অতি সহজে সমাধান করে, যার বিবেক আছে সে ন্যায়-অন্যায়, সৎ-অসৎ বুঝতে পারে এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকে, আর যে আত্মসংযমী সে বৃহত্তর স্বার্থে নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করতে পারে। এসব গুণসম্পন্ন নাগরিকদের বলা হয় সুনাগরিক।

 

সুনাগরিকের গুরুত্ব

একটি দেশ জাতির সুখ্যাতি ও অগ্রগতিতে সুনাগরিকের গুরুত্ব অপরিসীম। সুনাগরিক দেশ ও জাতির মূল্যবান সম্পদ। একটি রাষ্ট্রের মান-মর্যাদা ও শৌর্য-বীর্যের জলন্ত প্রতীক হলো সুনাগরিকবৃন্দ। এজন্যেই বিভিন্ন চিন্তাবিদ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ সমাজের সার্বিক কল্যাণে সুনাগরিকের কতকগুলো গুণাবলীর কথা বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করেছেন।

 

সুনাগরিকের গুণাবলী

সুনাগরিক ছাড়া সমাজ সুন্দর ও সার্থক হতে পারে না। অধ্যাপক ই, এম, হোয়াইটের মতে সুনাগরিকের গুণাবলী হলো- জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও নিষ্ঠা। সুনাগরিকের গুণাবলী সম্বন্ধে লর্ড ব্রাইসের অভিমত প্রণিধাণযোগ্য। তাঁর মতে সুনাগরিকের তিনটি গুণ থাকা আবশ্যক। গুণগুলো হলো- বুদ্ধি, আত্মসংযম ও বিবেক। লর্ডব্রাইস ও ইম, এম হোয়াইট সুনাগরিকের বৈশিষ্ট্যের চূড়ান্ত বিশ্লেষণে একই ধরনের উক্তি করেছেন। নিম্নে সুনাগরিকের গুণাবলী সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

বুদ্ধি

বুদ্ধিমত্তা সুনাগরিকের একটি বিশেষ গুণ। নাগরিকবৃন্দ বুদ্ধিমান হলে একটি জাতি দ্রুত গতিতে উন্নতি লাভ করতে পারে। আমরা জানি বর্তমান বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটেন জাপান ও জার্মানীর নাগরিকবৃন্দ বুদ্ধিমত্তা দিয়েই উন্নতির চরম শিখরে অবস্থান করছে। বুদ্ধির দ্বারা মানুষ অচেনাকে চিনতে পারে অজানাকে জানতে পারে এবং অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে। সরকারের কর্মকান্ডে, নীতি নির্ধারণে এবং নানাবিধ জটিল সমস্যার সমাধানকল্পে বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান নাগরিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। একমাত্র বুদ্ধিমান নাগরিকই জাতিকে সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে সক্ষম।

বিবেক

বিবেকবান মানুষ হচ্ছেন আদর্শ নাগরিক। বিবেক মানুষকে অন্তর্নিহিত সত্যের সন্ধান দেয়। বিবেকের মাধ্যমেই মানুষ সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায়, ভাল-মন্দের যাচাই-বাছাই করতে পারে। নিঃসন্দেহে একথা বলা যায় যে বিবেক সম্পন্ন নাগরিক হচ্ছে দেশ ও জাতির শক্তি। রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের ক্ষেত্রে বিবেক ও প্রজ্ঞা নাগরিকদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করে। অতএব নাগরিকদের কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা পালনের জন্য তাদেরকে অবশ্যই বিবেক ও বিচক্ষণতা সম্পন্ন হতে হবে। বিবেকের আহবানে নাগরিক কুপথ ছেড়ে সুপথে পরিচালিত হয়। স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বিবেক তার অতন্ত্র প্রহরী হিসেবে কাজ করে।

আত্মসংযম

আত্মসংযম মানুষের একটি মহৎ গুণ। আত্মসংযমী মানুষ লোভ-লালসা, নীচতা-হীনতা, স্বার্থপরতা জয় করে দেশ ও জাতির সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারে। সমাজের কান্তিও উন্নতির জন্যে নাগরিককে অবশ্যই আত্মসংযমী হতে হবে। পারিবারিক সামাজিক ও জাতীয় জীবনে একে অন্যের মতামত সহ্য করার সংযম ও সহনশীলতা প্রতিটি নাগরিকের অর্জন করতে হবে। গণতান্ত্রিক সমাজের স্বাধীনতার জন্য নাগরিকদের অবশ্যই সংযমী হতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে আত্মসংযমী ও সহনশীল জাতিই বিশ্বের শ্রেষ্ঠ জাতি। আত্মসংযম শুধু ব্যক্তি জীবনেই নয় সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনেও বয়ে নিয়ে আসে শান্তি, সম্প্রীতি আর কল্যাণ।

এ তিনটি মৌলিক গুণাবলী ছাড়াও সুনাগরিককে আরও কতকগুলো সাধারণ গুণাবলী অর্জন করতে হবে। যেমন-

১. সুশিক্ষিত হওয়া;

২. সমাজের ও রাষ্ট্রের নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলা;

৩. নাগরিকের অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হওয়া;

৪. সহনশীল ও ধৈর্যশীল হওয়া;

৫. রাষ্ট্রের প্রশাসনিক বিষয়ে জ্ঞান লাভ করা;

৬. স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ব রক্ষা করা;

৭. স্বৈরাচার ও জুলুমের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করা;

৮. দেশ ও জাতির কল্যাণে আত্মনিয়োগ করা;

৯. সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ করা।

 

শেষ কথা:
আশা করি আপনাদের এই আর্টিকেলটি পছন্দ হয়েছে। আমি সর্বদা চেষ্টা করি যেন আপনারা সঠিক তথ্যটি খুজে পান। যদি আপনাদের এই “সুনাগরিক কাকে বলে?” আর্টিকেল পছন্দ হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই ৫ স্টার রেটিং দিবেন।

4.8/5 - (50 votes)
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x