ই-পাসপোর্ট করার নিয়ম
প্রথমে গুগলে চলে যান।গুগলে ই-পাসপোর্ট লিখে সার্চ দিন সরকারি ওয়েবসাইট চলে আসবে।
সেখানে গিয়ে আপনি পাসপোর্টের আবেদন, রিইস্যু সহ পাসপোর্টের যাবতীয় কাজ করতে পারবেন। অথবা সরাসরি এই ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।
ই-পাসপোর্ট আবেদন করতে যা করতে হবেঃ
১ঃ আপনার এলাকায় ই-পাসপোর্ট হয় কি না সেটা চেক করতে হবে।
২ঃ অনলাইনে ই-পাসপোর্ট আবেদন ফর্ম পূরণ করতে হবে।
৩ঃ ব্যাংকে পাসপোর্টের ফি প্রদান করতে হবে।
৪ঃ তারপর পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে কাগজপত্র জমা দিতে হবে এবং বায়োমেট্রিক কাজগুলো শেষ করতে হবে।
৫ঃ তারপর নির্দিষ্ট সময় পর পাসপোর্ট অফিস থেকে পাসপোর্ট টি সংগ্রহ করতে হবে।
এখন কিভাবে ধাপ গুলো পূরণ করবেন তা বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ
ধাপ ১ঃCheck Availability
ওয়েবসাইটের (Apply online) এ যাবেন।
সেখানে গিয়ে নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা, পুলিশ স্টেশন সিলেক্ট করে চেক করে নিন।
আপনার এলাকায় ই-পাসপোর্ট প্রযোজ্য হলে জানিয়ে দিবে, না হলেও জানিয়ে দিবে।
ধাপ ২ঃ আপনার ই-মেইল দিন। তারপর পাসওয়ার্ড দিন এবং আপনার নাম দিন।
নাম অবশ্যই ন্যাশনাল আইডি কার্ড অনুযায়ী দিবেন।
আরেকটি বিষয় লক্ষ্য রাখবেন আপনার নামের আগে যদি MD থাকে, তাহলে কখনোই MD এরপর (.) ডট ব্যবহার করবেন না,শুধু MD দিয়ে (.) ডট না দিয়ে বাকি নামটা লিখবেন।
যদি ডট ব্যবহার করেন তাহলে ভবিষ্যতে ভিসার জন্য আবেদন করলে,তারপর দেশের বাইরে থেকে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করতে চাইলে সেক্ষেত্রে সমস্যা হবে।
শুধু এখানে. (ডট) না দিয়ে ক্ষান্ত হবেন না,যখন টাকা জমা দিবেন তখন যার কাছে জমা দিবেন তার কাছ থেকে চেক করে নিবেন ভুলে . (ডট) দেওয়া হয়েছে কি না।
ধাপ ৩ঃ তথ্য গুলো দিয়ে সাবমিট করলে আপনার ই-মেইলে একটা মেইল চলে যাবে।
মেইল যাওয়ার পর সেখানে ক্লিক করে অ্যাকাউন্টটি এক্টিভেট হয়ে যাবে।
তারপর আপনার দেওয়া পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে অ্যাকাউন্টটি সাইন ইন করে নিবেন।
ধাপ ৪ঃ এখন আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র, অনলাইন জন্ম নিবন্ধন অনুযায়ী নির্ভুল ভাবে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য গুলো পূরণ করবেন।
লক্ষ্য রাখবেন কোন তথ্য যেন ভুল না হয়,ভুল হলে কিন্তু পরে আপনাকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।
ধাপ ৫ঃ এখন আপনার নিজের এলাকার ঠিকানা দিবেন।
আপনি যদি ভেবে থাকেন আপনি কিছুদিন অন্য এলাকায় থেকে সেখানকার ঠিকানা দিয়ে আপনার ই-পাসপোর্ট করে নিবেন তাহলে এটা কিন্তু ভুল ভাবনা।
কারণ,এভাবে আপনার ই-পাসপোর্ট হবে না।এসবি পুলিশ আপনার পাসপোর্ট আবেদন বাতিল করে দিবে এবং টাকাও হারাবেন।
আপনার এলাকার ঠিকানাই দিতে হবে। এতদিনে হয়তো সব জায়গায় ই-পাসপোর্ট পৌঁছে গেছে।তবুও যদি আপনার এলাকায় ই-পাসপোর্ট না যেয়ে থাকে তবে সেক্ষেত্রে আপনাকে এমআরপি পাসপোর্টের আবেদন করতে হবে।
ধাপ ৬ঃ তারপর আপনার পিতা,মাতার নাম দিতে হবে।
যদি ১৮ বছরের নিচে হয় সেক্ষেত্রে পিতা-মাতার সকল ধরণের তথ্য দিতে হবে।
আর যদি ১৮ বছরের উপরে হয় তাহলে শুধুমাত্র পিতা-মাতার নাম দিলেই হবে এছাড়া তেমন তথ্য দিতে হবে না
লোকাল অভিভাবক হিসেবে যাকে দিবেন তার তথ্য ঠিকভাবে দিলেই হবে।অর্থাৎ,আপনার অনুপস্থিতিতে যার সাথে যোগাযোগ করা যাবে তার তথ্য সঠিকভাবে দিবেন তাহলেই হবে।
ধাপ ৭ঃ তারপর কত পাতার পাসপোর্ট নিবেন সেটা পূরণ করে দিবেন।
নির্দেশনা অনুযায়ী সবকিছু সঠিক ভাবে পূরণ করা হয়েছে কি না সেটা ভালোভাবে চেক করে সাবমিট করে ফর্ম টি পিডিএফ হিসেবে ডাউনলোড করে নিবেন।
(আপনি যদি আবেদন ফরম পূরণের কাজ করতে অনভিজ্ঞ হোন তাহলে যে কোন কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে কিছু টাকা দিয়ে তাদের কাছ থেকে আবেদন করে নিতে পারবেন)
ধাপ ৮ঃ এখন ব্যাংকে টাকা জমা দিতে হবে।
যে ব্যাংকেের মাধ্যমে পাসপোর্টের টাকা জমা দিতে পারবেনঃ
১)সোনালী ব্যাংক
২)ঢাকা ব্যাংক
৩) এশিয়া ব্যাংক
৪)ওয়ান ব্যাংক
৫)প্রিমিয়ার ব্যাংক
৬)ট্রাষ্ট ব্যাংক
এই ব্যাংকগুলোর যে কোন একটি তে টাকা জমা দিতে পারবেন।
যা আপনার অবশ্যই জানা উচিতঃ
১)আবেদনপত্র অনলাইনে অথবা PDF ফরম্যাট ডাউনলোড করেও করা যাবে।
২)কোন কাগজপত্র সত্যায়ন করতে হবে না।
৩)ই-পাসপোর্ট ফর্মে সত্যায়িত ছবি সংযোজন করতে হবে না।
৪)ন্যাশনাল আইডি কার্ড (NID) অথবা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন অনুযায়ী (BRC) আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে।
৫)১৮ বছর বয়সের নিচে আবেদন কারী হলে তার পিতা অথবা মাতার ন্যাশনাল আইডি কার্ড নাম্বার অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে।
৬)১৮ বছরের নিচে হলে অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ
আঠারো থেকে বিশ বছরের হলে ন্যাশনাল আইডি কার্ড থাকতে হবে অথবা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ থাকতে হবে।
২০ বছরের বেশি বয়স হলে অবশ্যই জাতীয় পরিচয় পত্র থাকতে হবে তবে বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনে আবেদনের ক্ষেত্রে অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ গ্রহণযোগ্য হবে।
৭)তারকা চিহ্নিত ক্রমিক নম্বর গুলো অবশ্যই পূরণ করতে হবে।
৮)১৮ বছর বয়সের নিম্নের এবং ৬৫ বছর বয়েসের ঊর্ধ্বের সবার আবেদনের মেয়াদ ৫ বছর হবে।
৯)ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ড্রাইভার ইত্যাদি প্রাসঙ্গিক টেকনিক্যাল সনদ সমূহ আপলোড করতে হবে।
১০)কূটনৈতিক পাসপোর্ট পেতে হলে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় বরাবর আবেদন করতে হবে।
১১)বৈদেশিক মিশন হতে আবেদন করা হলে স্থায়ী ঠিকানার জায়গায় বাংলাদেশের ঠিকানা উল্লেখ করতে হবে।
১২)অতীব জরুরী পাসপোর্টের ক্ষেত্রে নিজেকে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ সংগ্রহ করে অবশ্যই দাখিল করতে হবে।
১৩)আবেদনের প্রযোজ্য ক্ষেত্রে টেকনিক্যাল সনদ,সরকারি আদেশ,অনাপত্তি(NOC),ন্যাশনাল আইডি কার্ড, জন্ম নিবন্ধন প্রদর্শন/দাখিল করতে হবে।
যে সকল কাগজপত্র জমা দিতে হবেঃ
🤙জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি
🤙পূর্ববতী পাসপোর্ট থাকলে তার ফটোকপি।
🤙জন্মনিবন্ধন সনদের ফটোকপি
🤙নিকাহনামার ফটোকপি
🤙ছাড়পত্রের মূলকপি
🤙সরকারি আদেশের কপি
🤙অবসর গ্রহণের প্রমাণপত্র
🤙প্রাক-পুলিশ প্রতিবেদনের মূলকপি
🤙জিডির মূল কপি
এছাড়া আপনার প্রয়োজনের ক্ষেত্রে অন্যান্য কাগজ জমা দেওয়ার প্রয়োজন হবে।
উপরে উল্লেখিত প্রত্যেকটি কাগজ যে আপনার প্রয়োজন হবে বিষয়টি সেরকম নয়।
বিষয়টি হচ্ছে যদি আপনি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর পাসপোর্ট করেন তাহলে অবসর গ্রহণের প্রমাণ পত্র, যদি আপনি খুব দ্রুত(সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি) পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন, সেক্ষেত্রে প্রাক-পুলিশ প্রতিবেদনের মূলকপি।
আপনার যদি কোন কাগজ হারিয়ে যায় সেটা প্রমাণের ক্ষেত্রে জিডির মূল কপির প্রয়োজন হবে।
আপনার যদি এসব ঝামেলা না থাকে তাহলে কিন্তু এসব কাগজ জমা দিতে হবে না।প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিলেই হয়ে যাবে।
মূলত,প্রয়োজন অনুযায়ী প্রমাণের ক্ষেত্রে কাগজপত্র জমা দিতে হবে।
পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগবে?
এক্ষেত্রে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী টাকার পার্থক্য হবে।
আপনি যদি ৪৮ পেজের পাসপোর্ট ৫ বছর মেয়াদের জন্য নিতে চান সেক্ষেত্রে খরচ হবেঃ
সাধারণ ডেলিভারি অর্থাৎ ১৫ থেকে ২১ দিনের মধ্যে নিতে চান সেক্ষেত্রে প্রযোজন হবে ৪০২৫ টাকা।
এক্সপ্রেস ডেলিভারি অর্থাৎ ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে নিতে চান তাহলে প্রয়োজন হবে ৬৩২৫ টাকা।
আর যদি সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি অর্থাৎ ২ দিনের মধ্যে যদি নিতে চান তাহলে প্রয়োজন হবে ৮৬২৫ টাকা।
আর যদি ৪৮ পেজের পাসপোর্ট ১০ বছর মেয়াদের জন্য নিতে চান তাহলে খরচ একটু বেশি হবে।
সাধারণ ডেলিভারি অর্থাৎ ১৫ থেকে ২১ দিনের মধ্যে নিতে চান সেক্ষেত্রে প্রযোজন হবে ৫৭৫০ টাকা।
এক্সপ্রেস ডেলিভারি অর্থাৎ ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে নিতে চান তাহলে প্রয়োজন হবে ৮০৫০ টাকা।
আর যদি সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি অর্থাৎ ২ দিনের মধ্যে যদি নিতে চান তাহলে প্রয়োজন হবে ১০৩৫০ টাকা।
কিন্তু !
আপনি যদি ৬৪ পেজের পাসপোর্ট ৫ বছর মেয়াদের জন্য নিতে চান তাহলে খরচ বেশি হবে।
সাধারণ ডেলিভারি অর্থাৎ ১৫ থেকে ২১ দিনের মধ্যে নিতে চান সেক্ষেত্রে প্রযোজন হবে ৬৩২৫ টাকা।
এক্সপ্রেস ডেলিভারি অর্থাৎ ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে নিতে চান তাহলে প্রয়োজন হবে ৮৬২৫ টাকা।
আর যদি সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি অর্থাৎ ২ দিনের মধ্যে যদি নিতে চান তাহলে প্রয়োজন হবে ১২০৭৫ টাকা।
৬৪ পেজের পাসপোর্ট ১০ বছর মেয়াদের জন্য নিলে খরচ হবে।
সাধারণ ডেলিভারি অর্থাৎ ১৫ থেকে ২১ দিনের মধ্যে নিতে চান সেক্ষেত্রে প্রযোজন হবে ৮০৫০ টাকা।
এক্সপ্রেস ডেলিভারি অর্থাৎ ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে নিতে চান তাহলে প্রয়োজন হবে ১০৩৫০ টাকা।
আর যদি সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি অর্থাৎ ২ দিনের মধ্যে যদি নিতে চান তাহলে প্রয়োজন হবে ১৩৮০০ টাকা।
সাধারণত সবাই ৪৮ পেজের পাসপোর্ট নিয়ে থাকে।তবে যারা বেশি ভ্রমণ করে বা বেশি প্রয়োজন তারা ৬৪ পেজের পাসপোর্ট নিয়ে থাকে।
আপনি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী নিবেন।
ধাপ ৯ঃ সকল কাগজপত্র পাসপোর্ট অফিসে জমা দিয়ে পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য অপেক্ষা করবেন।
ধাপ ১০ঃ পুলিশ ভেরিভিকেশনের কাজ শেষ হলে নির্দিষ্ট সময় পর পাসপোর্ট অফিস থেকে পাসপোর্ট সংগ্রহ করবেন।
মনে রাখবেন পাসপোর্টের আবেদন সময় কোন ধরণের তথ্য ভুল দিয়ে থাকলে সেটা নিয়ে আপনাকে অনেক বিড়ম্বনায় পড়তে হবে।
তাই,ইনফরমেশন গুলো ভালো ভাবে চেক করে আবেদন সাবমিট করবেন এবং প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র সাথে নিয়ে যাবেন।তাহলে,খুব দ্রুতই পাসপোর্ট পেয়ে যাবেন।
উপরোক্ত নির্দেশনা অনুসরণ করে কোন প্রকার দালাল ছাড়া নিজের পাসপোর্ট নিজেই সংগ্রহ করুন।