আমরা সাধারণত জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে আমাদের পাঠ্য বইয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকি। এটা মোটেও উচিত নয়।
আমাদের কে পৃথিবীর,স্বদেশের ইতিহাস জানতে হবে।ইসলামের ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে হবে। পৃথিবীর এবং স্বদেশের বিখ্যাত বীরদের সম্পর্কে জানতে হবে।
ইসলামের ইতিহাসের বীরদের সম্পর্কে জানতে হবে।

দুইজন বিখ্যাত বীরঃ

১)মুসা বিন নুসায়ের-

পৃথিবীর অন্যতম বিখ্যাত মুসলিম বীর এবং ইসলামের ইতিহাসের বিখ্যাত সেনাপতি হচ্ছেন মুসা বিন নুসায়ের।
উমাইয়া খলিফা প্রথম ওয়ালিদ মুসা বিন নুসায়ের কে ৭০৮ সালে উত্তর আফ্রিকার গভর্নর নিযুক্ত করেন। বিখ্যাত বীর মুসা গভর্নর হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পর উত্তর আফ্রিকা কে মিশর থেকে বিচ্ছিন্ন করে স্বতন্ত্র প্রদেশে পরিণত করেন।
তাকে নতুন শাসক হিসেবে দুর্বল ভেবে বার্বার জনগোষ্ঠী বিদ্রোহ করে।মুসা অত্যন্ত দক্ষতা ও বীরত্বের সাথে বার্বারদের বিদ্রোহ দমন করেন এবং উত্তর আফ্রিকার এতটাই উন্নয়ন এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা করেন যে তা প্রতক্ষ্য করে বার্বার জনগোষ্ঠী রোমানদের হাজার উস্কানিতেও আর বিদ্রোহ না করে দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করেন।

একবার ভাবুন তো কেমন উন্নয়ন এবং শাসন প্রতক্ষ্য করলে বিদ্রোহী দল অকপটে বিদ্রোহ বাদ দিয়ে সেই দলে যোগদান করেন।
বার্বাররা যখন দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করলেন।
তখন মুসা বিন নুসায়ের বার্বারদের সহযোগিতায় তানজিনিয়া মরক্কো সহ সমগ্র উত্তর আফ্রিকায় ইসলামের শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।

ইসলামের ইতিহাসের বিখ্যাত বীর মুসা বিন নুসায়ের মাত্র ২ বছরের মধ্যে উত্তর আফ্রিকায় ব্যাপক উন্নয়ন এবং সুশাসন নিশ্চিত,সহনশীলতা ও সমৃদ্ধি করেন।
যাতে মুগ্ধ হয়ে স্পেনের অধিবাসীরা মুসা বিন নুসায়ের কে স্পেন জয় করার জন্য আমন্ত্রণ জানায়।
কারণ,স্পেনের জনগণ রাজা রাডারিকের অত্যাচারে বিরক্ত ছিল।

স্পেনের অধিবাসীদের সংবাদ পেয়ে মুসা বিন নুসায়ের খলিফা ওয়ালিদের অনুমতি নিয়ে গুপ্তচরের মাধ্যমে স্পেনের তথ্য সংগ্রহ করে।
৭১১ সালে বার্বার নবদীক্ষিত মুসলিম বীর তারিক বিন জিয়াদ কে স্পেন জয়ের জন্য প্রেরণ করেন।

২)তারিক বিন জিয়াদ-

তারিক বিন জিয়াদ ছিলেন একজন অভিজ্ঞ, বিচক্ষণ এবং তেজস্বী সেনাপতি।ইসলামের ইতিহাসে স্পেন বিজয়ের ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অপরিসীম।
তারিক বিন জিয়াদ মাত্র ১২ হাজার সৈন্য নিয়ে জাহাজযোগে সমুদ্র অতিক্রম করে।
স্পেনের উপকূলবর্তী জাবালুত তারিক (বর্তমান নাম জিব্রাল্টার) পর্বতে ঘাঁটি স্থাপন করেন। স্পেনের রাজা রাডারিক অভিযান প্রতিহত করতে ১ লক্ষাধিক সৈন্যের বিশাল বাহিনী সমবেত করেন।

এসময় তারিক বিন জিয়াদ, তারা যে সকল জাহাজে এসেছিল সমস্ত জাহাজ পুড়িয়ে দেন এবং সৈন্যদের উদ্দ্যেশ্যে এক ঐতিহাসিক জ্বালাময়ী ভাষণ দিয়ে বলেন,
“হে সৈন্যরা,তোমাদের পালানোর জন্য কোন জায়গা নেই। তোমাদের সামনে শত্রু রয়েছে আর পিছনে সাগর।
জীবন বাঁচানোর জন্য তোমাদের কাছে রয়েছে শুধুমাত্র তলোয়ার। এবং এই যুদ্ধে আমিই তোমাদের সামনে থাকবো।”

তারপর মাত্র ১২ হাজার সৈন্য নিয়ে ১ লক্ষাধিক সৈন্যের সাথে যুদ্ধ শুরু করে দেন এবং তিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন।
আধিপত্য বিস্তারে তারিক বিন জিয়াদ ছিলেন অত্যন্ত দক্ষ। রাজা রাডারিকের সৈন্যরা তারিক বিন জিয়াদের সৈন্যদের সাথে না পেরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পর পরাজয় স্বীকার করে নেয়।আর রাজা রাডারিক পলায়নের সময় নদীতে ডুবে মৃত্যুবরণ করেন।
তোমাকে মুসলিম বীরদের সম্পর্কে বলছি যুবক।তোমাকে ইসলামের ইতিহাসের বীরদের সম্পর্কে বলছি।

যুদ্ধের পর তারিক বিন জিয়াদ সৈন্যদের চারভাগে বিভক্ত করে তিন দলকে তিন দিকে পাঠিয়ে নিজে স্পেনের রাজধানী টলেডোর দিকে অগ্রসর হন।
তারপর তারিক বিন জিয়াদের অসাধারণ বীরত্বের কারণে পরবর্তীতে আর কেউ বাঁধা প্রদান করার সাহস করেনি।
বাকীসবগুলো নগরী বিনা যুদ্ধে মুসলমানদের অধীনে চলে আসে।
তারিক বিন জিয়াদ ছিলেন ইসলামের ইতিহাসের একজন তেজস্বী বীর সেনাপতি যার নাম আজও স্বর্ণাক্ষরে লিখিত রয়েছে।

মুসা বিন নুসায়ের এবং তারিক বিন জিয়াদ ইসলামের ইতিহাসের এই দুই বীর মিলে স্পেন জয় করে ইসলামের যে বিজয় পতাকা উড়িয়ে দিয়েছিল তার সুবাতাস আজও বইছে।
ইউরোপ মহাদেশে ইসলামের শাসন ইসলামের ইতিহাসের এই বীরেরাই পৌঁছে দিয়েছিল।

Rate this post

By Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.