হাজীদের হত্যা
ইতিহাসে বেশ কয়েকবার হজ্জ বন্ধ ছিলো। পৃথিবীর নানান প্রান্তের মানুষ হজ্জে যেতে পারতো না।
গতোবার বেশ কয়েকটি নিউজ চ্যানেল ও ওয়েবসাইটে হজ্জ বন্ধের ইতিহাস নিয়ে লেখালেখি হয়।
সাল ও কারণ উল্লেখ করে বেশ কয়েকটি সাইটে দেখানো হয় যে-
ইতিহাসে প্রায় ৪০ বার হজ্জ বন্ধ হয়েছিলো।
কারামিতা নামে এক শিয়া সম্প্রদায় ছিলো। তারা মনে করতো হজ্জ করা হলো পৌত্তলিক, মূর্তিপূজারীদের সংস্কৃতি। তারা নিজেরা তো হজ্জ করতোই না, অন্যদেরও হজ্জ করতে দিতো না। তাদের আবাস ছিলো বর্তমান বাহরাইনে।
আগেকার সময় মানুষ পায়ে হেঁটে, উট-ঘোড়ায় চড়ে হজ্জে যেতো। হজ্জে যেতে দীর্ঘদিন লাগতো। এমনও হতো, একবছর মানুষ হজ্জের জন্য বের হতো, হজ্জ করতো আরেক বছর। মানুষ দলবেঁধে হজ্জে যেতো। হজ্জযাত্রীর এসব দলগুলো ‘কাফেলা’ নামে সর্বাধিক পরিচিত ছিলো।
৯০৬ সাল
কারামাইতরা ওৎপেতে আছে। যেসব রুট দিয়ে হজ্জযাত্রী যায়,
সেসব রুটে তারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। হজ্জযাত্রীরা হজ্জে গেছে।
যাবার সময় তারা এই রাস্তা দিয়ে ফিরবে। কারামিতারা হজ্জ ফেরত হাজীদেরকে হজ্জে যাবার ‘অপরাধে’ শাস্তি দেয়া শুরু করলো।
ঐ রাস্তা দিয়ে যারা হজ্জ করে ফিরছিলো, তাদের সবাইকে তারা হত্যা করলো!
ধারণা করা হয়, কারামিতারা ঐ বছর ২০,০০০ হাজীকে হত্যা করেছিলো।
৯৩০ সাল
ইসলামের ইতিহাসে অন্যতম বিভীষিকাময় সাল। এ বছর কারামিতারা রাস্তায় উৎপেতে থাকেনি।
তারা সরাসরি মক্কায় আক্রমণ করে। একে একে হজ্জ করতে আসা হাজীদেরকে তারা হত্যা করতে থাকে।
গণহত্যা চালায়। মক্কা লাশের বন্যায় ভেসে যায়। হাজীদেরকে হত্যা করে তারা যমযম কূপে ফেলে।
চিন্তা করুন, আপনি পরিবার নিয়ে হাজার-হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে মক্কায় গেলেন হজ্জ করতে।
দীর্ঘদিন পথ চলতে চলতে যখন হজ্জ করার সুবর্ণ সুযোগ এলো, তখন কোথা থেকে একদল এসে সবাইকে হত্যা করা শুরু করলো।
কাবা ঘরে ঢুকে হাজীদেরকে হত্যা করা শুরু করলো!
কারামাইতদের দলের নেতা ছিলো আবু তাহের আল-জানবী। তার নেতৃত্ব মক্কায় এই গণহত্যা পরিচালিত হয়।
৯৩০ সালে কারামিতারা প্রায় ৩০,০০০ হাজীকে হত্যা করে! হাজরে আসওয়াদ (কালো পাথর) অপহরণ করে।
চারিদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হজ্জে যেতে মানুষের ভয় পাওয়া শুরু হয়।
আবার না জানি কারামিতারা মক্কায় আক্রমণ করে! এভাবে কয়েক বছর হজ্জ বন্ধ থাকে।
বাইরে থেকে মানুষ মক্কায় হজ্জ করতে যেতে পারতো না কারামিতাদের ভয়ে।
প্রায় ১০-১২ বছর হজ্জ বন্ধ থাকে।
কাবা ঘর থাকে হাজরে আসওয়াদহীন! ৯৫১-৫২ সালে, প্রায় ২২ বছর পর মক্কায় ফিরে আসে হাজরে আসওয়াদ।
বস্তাবন্ধী করে একজন আরোহী মসজিদে হাজরে আসওয়াদ রেখে যায়। একটি চিরকুট পাওয়া যায়, যাতে লিখা ছিলো-
“যার নির্দেশে এটা নিয়ে গিয়েছিলাম, তার নির্দেশে এটা দিয়ে গেলাম।”
আরিফুল ইসলাম
১২ জুলাই ২০২১