মোহাম্মদ বিন কাসিমের সিন্ধু বিজয়
সিন্ধু বিজয়ের মূল অভিযান উমাইয়া খলিফা প্রথম ওয়ালিদের রাজত্বকালে ৭১২ খ্রিঃ মুহাম্মদ বিন কাসিমের দ্বারা প্রেরিত হয়।কিন্তু,এর অনেক পূর্বেই দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রা.) এর সময় ৬৩৩-৩৪ খ্রিঃ সিন্ধু অভিযানের প্রাথমিক কার্য শুরু হয়।
অতঃপর ৬৪৩-৪৪ খ্রিঃ খলিফা হযরত ওসমান (রাঃ) এর সময় সিন্ধুর মাকরানের দিকে আরও একটি অভিযান প্রেরিত হয়।
প্রথম এই অভিযানগুলোর মূল উদ্দেশ্য ছিল সিন্ধুর পরিবেশ এবং পথঘাট যাচাই করা
সিন্ধু অভিযানের কারণ
আরবদের সিন্ধু অভিযানের পেছনে একাধিক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যুক্তিপূর্ণ কারণ ছিল।
রাজনৈতিক কারণ
দাহির ছিল সিন্ধু ও মূলতানের রাজা।তখন,আরব সাম্রাজ্যের খলিফা ছিলেন প্রথম ওয়ালিদ। আরব সাম্রাজ্যের পূর্বাঞ্চল অর্থ্যাৎ ইরাক প্রদেশের গভর্ণর ছিলেন হাজ্জাজ বিন ইউসুফ।
সিন্ধু, মুলতান ও আরব সাম্রাজ্যের মধ্যে সাধারণ সীমান্ত ছিল।বিভিন্ন কারণে হাজ্জাজ এবং রাজা দাহিরেে মধ্যে মনোমালিন্য হয়।রাজা দাহিল হুদাই বেশি ফাল পারতো ঠিক এখন যেমন মায়ানমার ফাল পারে।
জলদস্যু কর্তৃক জাহাজ লুন্ঠন
- বেশ কয়েকজন আরব বণিক শ্রীলংকায় প্রাণ ত্যাগ করেন। শ্রীলংকার রাজা বণিকদের মৃতদেহ, পরিবার,পরিজন ও অর্থসামগ্রী ৮ টি জাহাজে বোঝাই করে মুসলিম সাম্রাজ্যের রাজধানী দামেস্কের দিকে পাঠান। সাথে খলিফা এবং হাজ্জাজ বিন ইউসুফের জন্য উপহারও পাঠিয়েছিলেন।
কিন্তু, জাহাজ সিন্ধুর বন্দর দাইবুল বর্তমানে করাচির নিকট পৌঁছালে জলদস্যুদের দ্বারা লুণ্ঠিত হয়। হাজ্জাজ বিন ইউসুফ রাজা দাহিরের নিকট ক্ষতিপূরণ এবং অপরাধীদের শাস্তির দাবি করেন। কিন্তু, রাজা দাহির হাজ্জাজ বিন ইউসুফের দাবি তো মেনে নেননি তকর সাথে অপরাধীদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতেও রাজী হননি।
হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এ কারণে রেগে যান এবং সিন্ধুতে অভিযান প্রেরণ করেন।
আরব বিদ্রোহীদের আশ্রয় দান
ইরাকের শাসকর্তা হাজ্জাজ বিন ইউসুফ কঠোর প্রকৃতির শাসক ছিলেন।তার শাসন সহ্য করতে না পেরে কিছু লোক বিদ্রোহ করে।বিদ্রোহীদের কে সিন্ধুর রাজা দাহির আশ্রয় দেন। হাজ্জাজ বিদ্রোহীদের ফেরত চাইলে রাজা দাহির সেটা প্রত্যাখ্যান করে।
তার সাথে রাজা দাহির ইরাকি বিদ্রোহীদের মদদ দান এবং মুসলিম সীমান্তে হানা দিতে সাহায্য করে।যার কারণে,সীমান্ত সুরক্ষিত করার জন্য আরবরা সিন্ধু আক্রমণ করেন।
সিন্ধু বিজয়
হাজ্জাজ বিন ইউসুফ তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসিম কে সিন্ধুতে অভিযান প্রেরণের দ্বায়িত্ব দেন।
মাত্র ১৭ বছর বয়সে মোহাম্মদ বিন কাসিম এই অভিযান প্রেরণের দ্বায়িত্ব পান এবং সপল হন।
আর আমরা ১৭ বছর বয়সে পাবজি,ফ্রি-ফায়ার, টিকটক ইত্যাদি নিয়ে পরে থাকি!
মুহাম্মদের সৈন্য বাহিনীতে পদাতিক ছিল ৬ হাজার,উষ্ট্রারোহী ৬০০০ এবং তিন হাজার করে তীরন্দাজ এবং ভারবাহী পশু ছিল।
তরুণ সেনানায়ক মোহাম্মদ বিন কাসিমের অসীম মনোবল ছিল এবং তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিমান ছিলেন।
তিনি আগে থেকেই মাকরানের শাসকের সাথে বন্ধুত্ব বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছিলেন। মোহাম্মদ বিন কাসিম মাকরানের ভিতর দিয়ে অগ্রসর হন।মাকরানের শাসক মোহাম্মদ কে আরও একটি সৈন্যবাহিনী দিয়ে সাহায্য করেন। সিন্ধু বিজয়
রাজা দাহির ছিলেন অত্যাচারী শাসক।তাই,তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ জনগণও মুসলমানদের পক্ষ নেয়।মুসলমানদের শক্তি বৃদ্ধির জন্য হাজ্জাজ জলপথেও একদল সৈন্য পাঠান।
মোহাম্মদ বিন কাসিম প্রথমেই দাইবুল বন্দর অবরোধ করেন।ব্রাহ্মণ ও রাজপুত্ররা দাইবুল রক্ষার জন্য নিজেদের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে চেষ্টা করে।কিন্তু, মোহাম্মদ ছিলেই খুবই চতুর সেনানায়ক।
দাইবুল দখল
মোহাম্মদের কাছে ছিল বলিস্ত নামক যন্ত্র যেটা দিয়ে অনেক দূরে ভারী পাথর নিক্ষেপ করে আঘাত করা যেত।দাইবুলের প্রধান মন্দিরের চূড়ায় একটি লাল নিশান উড়ানো ছিল।
মোহাম্মদ বলিস্ত দিয়ে পাথর ছুড়ে নিশানাটি নামিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন।।হিন্দুদের মনে ধারণা ছিল যতক্ষণ ঐ নিশান থাকবে ততক্ষণ কোন শত্রু দাইবুল দখল করতে পারবে না। নিশানটি নামিয়ে ফেলা হলে হিন্দুদের মনোবল ভেঙ্গে যায়।
হিন্দুগণ অসীম সাহসের সাথে যুদ্ধ করলেও মুসলমানদের উন্নত কলাকৌশলের কাছে তারা পরাজিত হয়।মোহাম্মদ দাইবুল দখল করেন তারপর একের পর এক শহর, দূর্গ রাজা দাহির কে পরাজিত করে দখল করে নেন।
সিন্ধু বিজয়ের পর মোহাম্মদ বিন কাসিম সেখানকার শাসনকর্তার দ্বায়িত্ব লাভ করেন।সিন্ধু ও মুলতান অঞ্চলে তিনি দক্ষতার সাথে সুন্দর শাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলেন।আরব সৈন্যদের মধ্যে অনেকেই সিন্ধুতে স্থায়ীভাবে বসবাস করা শুরু করে দেয়। তারা সেখানকার রমণীদের বিয়ে করে সিন্ধুতে রাস্তাঘাট,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,মাদরাসা,মসজিদ গড়ে তোলেন।এভাবেই ভারতে একটা স্থায়ী মুসলমান বসতি গড়ে উঠে।
মোহাম্মদ বিন কাসিমের এই বিজয় সুলতান মাহমুদ কে বারংবার ভারত অভিযানে অনুপ্রাণিত করে।সুলতান মাহমুদ গযনবীর পর মোহাম্মদ ঘুরী ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জয় করেন।মূলত, মোহাম্মদ বিন কাসিমের বিজয় কে ভিত্তি করেই পরবর্তীকালে ভারতে দীর্ঘস্থায়ী মুসলমান শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সিন্ধু বিজয়