Lifestyle
1 min read

ব্রণ ও ব্রণের দাগ দূর করার উপায় [১৩ টি কার্যকরী উপায়]

ব্রণ আমাদের ত্বকের সৌন্দর্য এবং ঔজ্জ্বল্য নষ্ট করে।ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ত্বকের তৈলগ্রন্থি আক্রান্ত হয়ে এর আকৃতি বড় হয়ে ভিতরে পুঁজ জমা হতে থাকে এবং এর ফলে ব্রণের আকার পরিবর্তিত হয়ে বড় হতে থাকে।

ব্রণ ও ব্রণের দাগ মেয়েদের টিনেজ বয়সেই বেশি ভোগায়।এর থেকে রক্ষা পেতে কিছু উপায় কাজে লাগান।দামি কসমেটিকস ব্যাবহার না করে ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহার করুন যা সহজেই ব্রণ দূর করতে আপনাকে সাহায্য করবে।ঘরোয়া প্রাকৃতিক ও অর্গানিক উপায় অনেক নিরাপদ। এতে প্বার্শপ্রতিক্রিয়ার ভয় নেই।

ব্রণ ও ব্রণের দাগ দূর করার সহজ ও ঘরোয়া উপায়সমূহ

১) মুলতানি মাটি

ব্রণের সমস্যা সাধারণত ত্বকের তেলতেলে ভাব এর কারনেই দেখা দেয়।মুলতানি মাটি পানি দিয়ে পেস্ট করে লাগালে এর ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।ত্বকের অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ বন্ধ করতে মুলতানি মাটি সাহায্য করে।

২)  শশার রস

ত্বকের তৈলাক্ততা দূর করতে শশার রস খুবই কার্যকরী। প্রতিদিন বাহির থেকে এসে শশার রস দিয়ে মুখ পরিষ্কার করতে পারেন। অথবা শশা দিয়ে আইস কিউব তৈরি করে রেখে ব্যবহার করতে পারেন। ত্বকের ওপেন পোরস এর সমস্যা সমাধানে অনেকটা কাজ করে।

৩) শশার রস, চালের গুঁড়া ও মধু

ত্বকের ব্রণ দূর করতে শশার রস খুবই কার্যকরী। শশার রসের সাথে চালের গুঁড়া মিশিয়ে স্ক্রাব হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। আবার যাদের মধুতে এলার্জি নেই তারা এর সাথে সামান্য মধু মিশিয়ে নিতে পারেন। সপ্তাহের মাত্র দুই দিন এই প্যাক ব্যবহার করলে আপনার ত্বক পরিষ্কার হবে।ত্বকের ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডস দূর করতে সাহায্য করে এবং খেয়াল রাখতে হবে যদি ব্রণ থাকে তাহলে স্ক্রাব করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

৪) কাঁচা হলুদ এবং চন্দনকাঠের গুঁড়ো

ব্রণ দূর করার জন্য কাঁচা হলুদ এবং চন্দন কাঠের গুঁড়ো খুবই উপকারী। সম পরিমাণে বাটা কাঁচা হলুদ ও চন্দন কাঠের গুঁড়ো একসাথে নিয়ে এতে পরিমাণ মতো পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করতে হবে।যেখানে ব্রণ হয়েছে সেখানে এই মিশ্রণটি লাগিয়ে কিছুক্ষণ পর শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।এই মিশ্রণটি শুধুমাত্র ব্রণ দূর করতেই সাহায্য করে না সাথে সাথে ব্রণের দাগ দূর করতেও সাহায্য করে।

 ৫) আপেল এবং মধুর মিশ্রণ

ব্রণের দাগ দূর করার জন্য ঘরোয়া পদ্ধতির মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি হলো আপেল ও মধুর মিশ্রণ।প্রথমে আপেলের পেস্ট এর মধ্যে ৪-৬ ফোঁটা মধু মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।এই মিশ্রণটি ত্বকের টানটান অবস্থা বজায় রাখে এবং গায়ের রং হালকা করে।সপ্তাহে চার-পাঁচ দিন আপনি এই মিশ্রণটি ব্যবহার করতে পারেন।কয়েকদিনের মধ্যেই এর পরিবর্তন টা আপনি অনুভব করতে পারবেন।

৬) তুলসি পাতার রস

তুলসী পাতার রস ব্রণের জন্য খুবই উপকারী এবং এর অনেক আয়ুর্বেদিক গুণ রয়েছে।শুধুই তুলসী পাতার রস ব্রণের ওপর লাগিয়ে শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কুসুম গরম পানির সাহায্যে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে।

৭) চন্দন কাঠের গুড়োঁ, গোলাপ জল ও লেবুর রস

আগেই বলেছি চন্দন কাঠের গুঁড়ো ব্রণের জন্য খুবই উপকারী। এবার প্রথমে চন্দনকাঠের গুড়োর সাথে গোলাপজল মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করতে হবে। এই পেস্ট এর মধ্যে দুই থেকে তিন ফোঁটা লেবুর রস মিশাতে হবে।অনেকের ত্বকের সাথেই গোলাপজল এডজাস্ট হয়না।যাদের ত্বকে গোলাপজল এডজাস্ট হয় না তারা এর পরিবর্তে মধু ব্যবহার করতে পারেন।সপ্তাহে তিন চারদিন ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে এবং এই মিশ্রণটি আপনার ব্রণের দাগ দূর করতে সাহায্য করবে।

৮) দারুচিনি গুঁড়া ও গোলাপজল

ব্রণের দাগ কমাতে গোলাপজলের নিয়মিত ব্যবহার খুবই উপকারী।গোলাপ জলের সাথে দারুচিনির গুঁড়ো মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্টটি ব্রণের উপর 20 মিনিট লাগিয়ে রাখুন এরপর ধুয়ে ফেলুন।এই মিশ্রণটি ব্যবহারের ফলে ব্রণ এর সংক্রমণ চুলকানি এবং ব্যথা অনেকটাই কমে যাবে।

৯) ডিমের সাদা অংশ

রাতে শোয়ার আগে ব্রণ আক্রান্ত জায়গায় ডিমের সাদা অংশ মেসেজ করে সারা রাত দিয়ে রাখতে পারেন। ত্বকের খসখসে ভাব দূর করতে এটি সাহায্য করে।এর সাথে যদি লেবুর রস যোগ করা হয় তাহলে আরো ভালো হয়। এবং এটি আপনি আধঘন্টা পর ধুয়ে ফেলতে পারেন।

১০)পেঁপের রস এবং চালের গুুঁড়ো

অপরিষ্কার ত্বক ব্রণ হওয়ার জন্য দায়ী।তাই সবসময় ত্বককে পরিষ্কার রাখার ক্ষেত্রে নিয়মিত স্ক্রাবিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চটকে নেয়া এক কাপ পাকা পেঁপের সাথে ১ টেবিল চামচ পাতিলেবুর রস এবং পরিমাণমতো চালের গুঁড়ো মিশিয়ে মিশ্রণটি মুখসহ পুরো শরীরে লাগান। এরপর ২০-২৫মিনিট ম্যাসাজ করে গোসল করে ফেলুন। আপনি পেঁপের পরিবর্তে ঘৃতকুমারীর রস ব্যবহার করতে পারেন।নিয়মিত স্ক্রাবিং ত্বককে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।

১১) মুলতানি মাটি ও নিম পাতা

এক চামচ মুলতানি মাটির মধ্যে চার পাঁচটা পিষে নেয়া নিম পাতা এবং অল্প গোলাপজল মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করুন।প্যাকটি যদি বেশি ঘন হয়ে থাকে তাহলে এর মধ্যে একটু গোলাপজল মিশিয়ে নিন।এরপর মুখে লাগিয়ে শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করে হালকা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

১২) পুদিনা পাতা

অতিরিক্ত গরমের কারণে ত্বকের ফুসকুড়ি এবং ব্রণের সমস্যা দূর করতে পুদিনা পাতা উপকারী। টাটকা পুদিনা পাতার পেস্ট ব্রণের ওপর লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।

১৩) স্পেশাল প্যাক

আনারসের খোসার গুঁড়োর সাথে রক্ত চন্দন পাউডার ভালোভাবে মিশিয়ে নিন এরপর এর মধ্যে ২ চামচ দুধ বা টক দই মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রাখার পরে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটা নিয়মিত মুখে লাগালে ত্বকে ব্রণের দাগ দূর হবে এবং জেল্লা বেড়ে যাবে।

ব্রণ ও ব্রণের দাগ থেকে মুক্তি পেতে কিছু টিপস

১) ব্রণ ও ব্রণের দাগ থেকে মুক্তি পেতে প্রতিদিন ৯-১০ গ্লাস পানি পান করুন।

২) রাতের খাবারের পর নিয়মিত মৌসুমী ফল খান। এটি ত্বককে সতেজ রাখতে সাহায্য করে। যতটা সম্ভব তৈল যুক্ত এবং ফাস্টফুড জাতীয় খাবার পরিহার করুন।

৩) বাহির থেকে আসার সাথে সাথেই ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের জমে থাকা ধুলো বালি পরিষ্কার করার জন্য হালকা গরম পানির স্টীম নিতে পারেন।

৪) নখ দিয়ে ব্রণ খোটার বাজে অভ্যাস পরিহার করুন। এটি কোন সমাধান হতে পারে না।এতে আরও ব্রণের অবস্থা খারাপ হয় এবং লাল হয়ে যায় এমনকি ফেটে গিয়ে মুখে দাগের সৃষ্টি করে। ব্রণ না যাওয়া পর্যন্ত মেকআপ ব্যবহার না করাই উচিত। এবং দিনে অন্তত দুইবার তেলমুক্ত ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধুয়ে নেয়া উচিত।

বহুদিন যাবত যারা ব্রণ ও ব্রণের সমস্যায় ভুগছেন, অনেক কিছু ব্যবহার করার পরেও কোনো কাজ হচ্ছে না তারা কোনো অভিজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।তবে সমস্যা সমাধানের জন্য উপরে বর্ণিত ঘরোয়া পদ্ধতি গুলো ব্যবহার করে দেখতে পারেন যদি এতে কোন কাজ না হয় তাহলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।

Rate this post