বাচ্য কি বা কাকে বলে? বাচ্যের প্রকারভেদ ও বাচ্য পরিবর্তন

বাচ্য হলো প্রকাশভঙ্গি বা বাচনভঙ্গির রূপভেদ বা রূপের পরিবর্তন। এক কথায়, বাক্যের বিভিন্ন ধরণের প্রকাশভঙ্গিকে বাচ্য বলে। যেমন – পুলিশ সন্ত্রাসীকে ধরছে। পুলিশের দ্বারা সন্ত্রাসী ধরা হয়েছে। এখানে বক্তব্য একই কিন্তু প্রকাশভঙ্গি আলাদা।

সুতরাং, ব্যক্তিভেদে বাচনভঙ্গি অনুযায়ী কর্তা, কর্ম বা ক্রিয়াপদের রূপের যে পরিবর্তন হয়, তাকেই বাচ্য বলে।

বাচ্যের প্রকারভেদ / শ্রেণীবিভাগ

বাচ্য প্রধানত ৩ প্রকার। যথা-

  • কর্তৃবাচ্য
  • কর্মবাচ্য
  • ভাববাচ্য

কারো কারো মতে কর্মকর্তৃবাচ্য নামে আরেকটি প্রকার রয়েছে। নিম্নে এগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

কর্তৃবাচ্য

যে বাক্যে কর্তার অর্থ প্রাধান্য রক্ষিত হয় এবং ক্রিয়াপদ কর্তার অনুসারী হয়, তাকে কর্তৃবাচ্য বলে। যেমন – ইফাদ বই পড়ে।, নোমান গান গায়। ইত্যাদি।

বৈশিষ্ট্য

  • কর্তৃবাচ্যে ক্রিয়াপদ সর্বদাই কর্তার অনুসারী হয়।
  • কর্তৃবাচ্যে কর্তায় প্রথমা বা শূন্য এবং কর্মে দ্বিতীয়া, ষষ্ঠী বা শূন্য বিভক্তি হয়।
  • ক্রিয়া কখনো সকর্মক আবার কখনো কখনো অকর্মক ক্রিয়া হয়।

কর্মবাচ্য

যে বাক্যে কর্মের সাথে ক্রিয়ার সম্বন্ধ প্রধানভাবে প্রকাশিত হয়, তাকে কর্মবাচ্য বলে। যেমন – আসামিকে জরিমানা করা হয়েছে।

বৈশিষ্ট্য

  • কর্মবাচ্যে কর্মে প্রথমা, কর্তায় তৃতীয়া বিভক্তি ও দ্বারা, দিয়ে, দিয়া, কর্তৃক অনুসর্গের ব্যবহার এবং ক্রিয়াপদ কর্মের অনুসারী হয়।
  • কখনো কখনো কর্মে দ্বিতীয়া বিভক্তি হয়।

ভাববাচ্য

যে বাচ্যে কর্ম থাকে না এবং বাক্যে ক্রিয়ার অর্থই বিশেষভাবে ব্যক্ত হয়, তাকে ভাববাচ্য বলে। যেমন – খাওয়া হলো না।

বৈশিষ্ট্য

  • ভাববাচ্যের ক্রিয়া সর্বদাই নাম পুরুষের হয়।
  • কখনো কখনো ভাববাচ্যে কর্তা উহ্য থাকে।
  • মূল ক্রিয়ার সাথে সহযোগী ক্রিয়ার সংযোগ ও বিভিন্ন অর্থে ভাববাচ্যের ক্রিয়া গঠিত হয়।

কর্মকর্তৃবাচ্য

যে বাক্যে কর্মপদই কর্তৃস্থানীয় হয়ে বাক্য গঠন করে, তাকে কর্মকর্তৃবাচ্য বলে। যেমন – কাজটা ভালো দেখায় না। বাঁশি বাজে এ মধুর লগনে। ইত্যাদি।

বাচ্য পরিবর্তন

কর্তৃবাচ্য থেকে কর্মবাচ্যে পরিবর্তন

কর্তৃবাচ্য থেকে কর্মবাচ্যে পরিবর্তন করার সময় কতগুলো নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। যেমন –

  • কর্তায় তৃতীয়া বিভক্তি যুক্ত করা হয়।
  • কর্মে প্রথমা বা শূন্য বিভক্তি হয় এবং
  • ক্রিয়া কর্মের অনুসারী হয়।

জ্ঞাতব্যঃ কর্তৃবাচ্যের ক্রিয়া অকর্মক হলে সেই বাক্যের কর্মবাচ্য হয় না।

কর্তৃবাচ্য কর্মবাচ্য
বিদ্বানকে সকলেই আদর করে। বিদ্বান সকলের দ্বারা আদৃত হন।
আমি বই পড়ি। আমার বই পড়া হয়েছে।
খোদাতায়ালা বিশ্বজগৎ সৃষ্টি করেছেন। বিশ্বজগৎ খোদাতায়ালা কর্তৃক সৃষ্ট হয়েছে।
মুবারক পুস্তক পাঠ করেছে। মুবারক কর্তৃক পুস্তক পঠিত হচ্ছে।
ইফাদ ছবি আঁকে। ইফাদের ছবি আঁকা হয়েছে।

কর্মবাচ্য থেকে কর্তৃবাচ্যে পরিবর্তন

কর্মবাচ্য থেকে কর্তৃবাচ্যে পরিবর্তন করার সময় কতগুলো নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। যেমন –

  • কর্তায় প্রথমা, কর্মে দ্বিতীয়া বা শূন্য বিভক্তি হয়।
  • ক্রিয়া কর্তা অনুসারী হয়।
কর্মবাচ্য কর্তৃবাচ্য
দস্যুদল কর্তৃক গৃহটি লুণ্ঠিত হয়েছে। দস্যুদল গৃহটি লুণ্ঠন করেছে।
তোমার দ্বারা এ কাজ হবে না। তুমি এ কাজ করতে পারবে না।
আমার ভাত খাওয়া হয়ে গিয়েছে। আমি ভাত খেয়েছি।
মধুসূদন দ্বারা মেঘনাথ বধ কাব্য রচিত হয়েছে। মধুসূদন মেঘনাদ বধ কাব্য রচনা করেছেন।
হালাকু খাঁ কর্তৃক বাগদাদ বিধ্বস্ত হয়। হালাকু খাঁ বাগদাদ ধ্বংস করেন।

কর্তৃবাচ্য থেকে ভাববাচ্যে পরিবর্তন

কর্তৃবাচ্য থেকে ভাববাচ্যে পরিবর্তন করার নিয়ম –

  • কর্তায় ষষ্ঠী বা দ্বিতীয়া বিভক্তি হয়
  • ক্রিয়া নাম পুরুষের হয়।
কর্তৃবাচ্য ভাববাচ্য
আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছি। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা হয়েছে।
আমি যাব না। আমার যাওয়া হবে না।
তুমিই শেরপুর যাবে। তোমাকেই শেরপুর যেতে হবে।
ভিতরে এসে বস। ভিতরে এসে বসা হোক।
পুলিশ সন্দেহ করেছিল। পুলিশের সন্দেহ হয়েছিল।

ভাববাচ্য থেকে কর্তৃবাচ্যে পরিবর্তন

ভাববাচ্য থেকে কর্তৃবাচ্যে পরিবর্তন করার নিয়ম –

  • কর্তায় প্রথমা বিভক্তি হয়।
  • ক্রিয়া কর্তার অনুসারী হয়।
ভাববাচ্য কর্তৃবাচ্য
তোমাকে হাঁটতে হবে। তুমি হাঁটবে।
এবার একটি গান করা হোক। এবার একটি গান কর।
তার যেন আসা হয়। সে যেন আসে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *