ইন্ডাকশন মোটর কি, প্রকারভেদ,সুবিধা ও অসুবিধা এবং ইন্ডাকশন মোটর টেস্ট
মোটরের আবিষ্কার পরিবর্তন করে দিয়েছে আমাদের জীবন-জীবিকা। আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় হচ্ছে ইন্ডাকশন মোটর।
দৈনন্দিন অনেক কাজেই আমরা মোটর ব্যবহার করি। আবিষ্কারের পর থেকে হয়েছে এর কয়েক স্তরের পরিবর্তন। বর্তমানে অনেক প্রকারের মোটর পাওয়া যায়। বিভিন্ন পরিমিতির উপর ভিত্তি করে মোটরের এই সব শ্রেণীবিভাগ করা হয়।
উপরের সকল প্রকার মোটরের মধ্যে ইন্ডাকশন মোটর অন্যতম। দিন দিন এর ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে এর চাহিদা বেড়েই চলেছে। এই ব্লগে ইন্ডাকশন মোটর কি, এর প্রকারভেদ, ইন্ডাকশন মোটর টেস্ট এবং এর সুবিধা ও অসুবিধা সমূহ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
ইন্ডাকশন মোটর কি?
ইন্ডাকশন মোটর (অ্যাসিঙ্ক্রোনাস মোটর নামেও পরিচিত) একটি সাধারণ এসি (AC) বৈদ্যুতিক মোটর। ইন্ডাকশন মোটরে, রুটরের বৈদ্যুতিক প্রবাহ তড়িৎচৌম্বকীয় ইন্ডাকশনের মাধ্যমে স্টেটরের ঘুর্ণায়মান চৌম্বকীয় ক্ষেত্র হতে টর্ক তৈরি করে। ইন্ডাকশন মোটরগুলো ‘অ্যাসিঙ্ক্রোনাস মোটর’ হিসাবে পরিচিত কারণ এগুলোর গতি ‘সিঙ্ক্রোনাস মোটর’ এর গতির চেয়ে কম।
ইন্ডাকশন মোটরের প্রকারভেদঃ
সিঙ্গেল ফেজ এবং 3 ফেজের উপর ভিত্তি করে ইন্ডাকশন মোটর কয়েক প্রকারের হয়ে থাকে।
Single Phase Induction motor:
সিঙ্গেল ফেজ ইন্ডাকশন মোটর মূলত 4 প্রকার।
যথা-
1. Split Phase Induction Motor
2. Capacitor Start Induction Motor
3. Capacitor Star & Capacitor Run Induction Motor
4. Shaded Pole Induction Motor
Three Phase Induction Motor:
3 ফেজ ইন্ডাকশন মোটর মূলত ২ প্রকার।
যথা-
1. Squirrel Cage Induction Motor
2. Slip Ring Induction Motor
ইন্ডাকশন মোটর টেস্টঃ
দিন দিন শক্তির ব্যয় বাড়ছে, ফলে শক্তির চাহিদাও ক্রমশ বাড়ছে। তাই এখন প্রয়োজনীয় বড় বড় মোটরগুলোর সর্বাধিক যত্ন নেওয়া উচিত। ইন্ডাকশন মোটরের অবস্থা পরীক্ষা করতে এবং মোটরের ত্রুটির প্রাথমিক ধারণা পাওয়ার জন্য মোটরগুলোর টেস্ট করা প্রয়োজন হয়। বর্তমানে অনেক পদ্ধতি রয়েছে মোটর টেস্ট করার, যেগুলো মোটরের কর্মক্ষমতা যাচাই করে। ভোল্টেজ, কারেন্ট, তাপমাত্রা এবং কম্পনের মতো কিছু পরামিতিগুলো পর্যবেক্ষণ করে মোটরের ত্রুটি সনাক্ত করা যায় এবং এই ত্রুটিগুলোর সংশোধন করে মোটরের সামগ্রিক দক্ষতা উন্নত করা যায়। এর ফলে শক্তির ব্যবহার এবং পরিচালনা ব্যয় কমে আসবে।
মৌলিক পরিমিতিগুলো টেস্টঃ
Current:
যেহেতু সকল ফেজে লাইন কারেন্ট সমান নয় তাই ফেজ কারেন্টের গাণিতিক গড় মোটরের কার্যকারিতা মূল্যায়নের জন্য ব্যবহার করা উচিত।
Voltage:
পরীক্ষা করার সময় মোটর টার্মিনালগুলোতে ভোল্টেজ পরিমাপ করা হয় এবং এটি প্রায় ভারসাম্যযুক্ত হওয়া উচিত। তাছাড়া ফেজ ভোল্টেজের গড় ব্যবহার করে মোটরের পারফরম্যান্স হিসাব করা যেতে পারে।
Power:
3 ফেজ মোটরের ইনপুট পাওয়ার একটি একক ওয়াট মিটার দ্বারা গণনা করা যেতে পারে। কারণ যেহেতু তারা ‘টু ওয়াট মিটার’ পদ্ধতিতে সংযুক্ত থাকে।
Resistance:
মোটরের বডি এবং মেশিনের টার্মিনালের মধ্যের গ্রাউন্ড রেজিস্ট্যান্স পরীক্ষা করা হয়।
ইন্ডাকশন মোটরের বিভিন্ন পার্টস গুলো টেস্ট করতে বিভিন্ন পরিমিতির পরীক্ষা করা হয়। সকল পরীক্ষাকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
প্রারম্বিক টেস্ট (Preliminary Test):
এই টেস্টটি করা হয় মূলত ইন্ডাকশন মোটরের বৈদ্যুতিক এবং যান্ত্রিক ত্রুটিগুলো বের করতে। টেস্টগুলো হলোঃ
1. Broken rotor bars check
2. High resistance joints check
3. Cracked end rings check
4. No-load running current test
5. High potential test
6. Air-gap measurement
7. Balancing of current
8. Temperature rise in bearing
9. Voltages in shaft
10. Direction of rotation
11. Level of noise
12. Strength of vibration
13. Air gap eccentricity
পারফরমেন্স টেস্ট (Performance Test):
ইন্ডাকশন মোটরের পারফরমেন্স চেক করার জন্য এই টেস্টগুলো করা হয়। একটি ইন্ডাকশন মোটরের কর্মদক্ষতা, কাজের গতি ইত্যাদি টেস্টগুলো পারফরমেন্স টেস্টের অন্তর্ভুক্ত। মোটরের পারফরমেন্স যাচাই করতে যে সকল টেস্ট করা হয়, সেগুলো হলোঃ
1. No load test
2. Locked rotor test
3. Breakdown torque load performance test
4. Temperature test
5. Stray load loss test
6. Determination of efficiency test
ইন্ডাকশন মোটরের সুবিধাঃ
1. ইন্ডাকশন মোটরের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ সুবিধাটি হল এটি খুব সহজেই নির্মাণ করা যায়। ইন্ডাকশন মোটরের স্টেটরটির (Stator) নির্মাণ সিঙ্ক্রোনাস মোটরের (Synchronous motor) মতোই প্রায়। তবে সিঙ্ক্রোনাস জেনারেটরের ক্ষেত্রে রুটোরে (rotor) ডিসি সাপ্লাই দেওয়ার জন্য একটি স্লিপ রিং প্রয়োজন হয়। Squirrel cage Induction motor এর জন্য স্লিপ রিং আবশ্যক নয় কারণ উইন্ডিংগুলি স্থায়ীভাবে সর্ট সার্কিট করা থাকে। ডিসি মোটরের সাথে তুলনা করা হলে, ইন্ডাকশন মোটরে কোন ব্রাশ নেই এবং এর রক্ষণাবেক্ষণের খরচ ও কম। এটি একটি সাধারণ নির্মাণ প্রক্রিয়ায় নির্মাণ করা যায়।
2. ইন্ডাকশন মোটরের কাজ গতি পরিবেশের উপর নির্ভরশীল নয়। এটি কারণ ইন্ডাকশন মোটর অধিক ক্ষমতা সম্পন্ন এবং যান্ত্রিকভাবে শক্তিশালী।
3. Squirrel cage induction motor এর কোনো ব্রাশ, স্লিপ রিং এবং কম্যুটেটর থাকে না। এই কারণে ইন্ডাকশন মোটরের দাম বেশ কম। তবে রুটরকে ঘুরিয়ে বাহ্যিক রেজিস্ট্যান্স দিতে কিছু সাধারণ ইন্ডাকশন মোটরে স্লিপ রিংগুলো ব্যবহৃত হয়।
4. ব্রাশের অনুপস্থিতির কারণে মোটরে কোনও স্পার্কস তৈরি হয় না। ফলে এটি বিপজ্জনক পরিস্থিতিতেও ব্যবহার করা যায়।
5. একটি 3 ফেজ ইন্ডাকশন মোটরের উচ্চ প্রারম্ভিক টর্ক, উচ্চ গতি নিয়ন্ত্রণ এবং মানসম্মত ওভারলোড ক্ষমতা রয়েছে।
6. ইন্ডাকশন মোটর একটি অত্যন্ত দক্ষ মেশিন যার কর্মদক্ষতা 85 থেকে 97 শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে।
ইন্ডাকশন মোটরের অসুবিধাঃ
1. একটি সিঙ্গেল ফেজ ইন্ডাকশন মোটরের 3 ফেজ ইন্ডাকশন মোটরের মতো কোন নিজস্ব টর্ক নেই। তাই একটি সিঙ্গেল ফেজ ইন্ডাকশন মোটর চালু করতে বাইরের সহায়তা প্রয়োজন হয়।
2. অল্প লোডের সময়, মোটরের পাওয়ার ফ্যাক্টর খুব নিচে নেমে যায়। এটি হওয়ার কারণ হলো মোটরটি চালু করার সময়, মোটরের স্টেটর এবং রুটরের মধ্যে বায়ু ফাঁকের জন্য যে বাধা সৃষ্টি হয় সেটি অতিক্রম করতে একটি বড় চৌম্বকীয় বিদ্যুৎ প্রবাহের দরকার হয়। এছাড়াও, ইন্ডাকশন মোটর সরবরাহকৃত বিদ্যুৎ প্রবাহের খুব কম অংশ নিয়ে কাজ করে। লোড কারেন্ট এবং ম্যাগনেটাইজিং কারেন্টের ভেক্টর সমষ্টি ভোল্টেজকে প্রায় 75-80 ডিগ্রিতে লেগ করে, ফলে পাওয়ার ফ্যাক্টর কমে যায়। উচ্চ চৌম্বকীয় বিদ্যুৎপ্রবাহের কারণে মোটরের তামার ক্ষয়-ক্ষতি বেড়ে যায়। এর ফলে মোটরের কার্যকারিতাও হ্রাস পায়।
3. ইন্ডাকশন মোটরের গতি নিয়ন্ত্রণ করা খুব কঠিন। 3 ফেজ ইন্ডাকশন মোটর একটি ধ্রুবক গতির মোটর এবং সমগ্র লোডিং সময়ে ইন্ডাকশন মোটরের গতির পরিবর্তন খুব কম হয়।
4. ইন্ডাকশন মোটরগুলোতে উচ্চ গতির বিদ্যুৎ প্রবাহ ইনপুট করত হয়, যা চৌম্বকীয় ইনরাস বিদ্যুৎ (Magnetising inrush currents) প্রবাহ হিসাবে পরিচিত। এর ফলে মোটর চালু করার সময় ভোল্টেজ হ্রাস হয়।
5. নিম্ন প্রারম্বিক টর্কের কারণে, যে সকল ক্ষেত্রে উচ্চ প্রারম্বিক টর্কের প্রয়োজন হয় সেই সব ক্ষেত্রে এই মোটরগুলো ব্যবহার করা যায় না।