আজ আমরা যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি তা হল ডিজিটাল মার্কেটিং কি এবং এর বিস্তারিত প্রকারভেদ সম্পর্কে। যাতে আপনারা সহজেই ডিজিটাল মার্কেটিং এর সেক্টর সমূহ সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা পেতে পারেন।
বর্তমান যুগ হলো ডিজিটাল যুগ। তাই ডিজিটাল যুগে ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে জেনে নেওয়া খুবই জরুরি। আপনি যদি কোন ব্যবসায়ী হন তাহলে ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে জেনে রাখলে আপনার অনেক কাজে আসবে। এ সম্পর্কে জেনে নিয়ে আপনার ব্যবসাকে আরও অনেক এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন । চলুন তাহলে ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
ডিজিটাল মার্কেটিং কি?
ডিজিটাল এবং মার্কেটিং শব্দের অর্থ ভিন্ন ভিন্ন। ডিজিটাল হলো এমন একটি টেকনোলজি যা কম্পিউটার এবং অন্য কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমেইলেকট্রনিক টেকনোলজিকে বোঝায়। যা ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক এর সাথে জড়িত।
অন্যদিকে মার্কেটিং হলো যেকোনো বিজনেস ,প্রোডাক্ট বা সার্ভিস ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যে গ্রাহকের কাছে বিভিন্ন উপায় বা মাধ্যম ব্যবহার করে প্রচার করা। আর ডিজিটাল যুগে প্রচারের অন্যতম একটা মাধ্যম হচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিং। এটি সম্পর্কে জানতে হলে আপনাকে আগে মার্কেটিং সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। চলুন তাহলে মার্কেটিং সম্পর্কে জেনে নেই-
সাধারণভাবে বলা যায় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে কোন উপন্যাসে বাবা কোন ব্যবসাকে প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে জনগণের নিকট পৌঁছে দেয়ায় হচ্ছে মার্কেটিং। এ কাজটি করার জন্য একসময় কোম্পানি মার্কেটিং এজেন্ট নিয়োগ দিত। এসব এজেন্টরা কোম্পানির প্রোডাক্ট মার্কেটিং করত।
বর্তমানে মার্কেটিং এজেন্ট এর পাশাপাশি পত্র-পত্রিকা, টেলিভিশন ইন্টারনেট সহ বিভিন্ন মাধ্যমে ব্যবসার প্রচারের স্বার্থে কোম্পানিগুলো চেষ্টা করে।
আগের দিনে এজেন্টরা কাস্টমারদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে সার্ভিস পৌঁছে দিত। কিন্তু বর্তমান ডিজিটাল যুগে অনলাইনের মাধ্যমে ঘরে বসে অর্ডার করার মাধ্যমে খুব সহজে ক্রেতারা পণ্য পেয়ে যাচ্ছে।
আর বিভিন্ন ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া,গণমাধ্যম ইত্যাদি ব্যবহার করে যখন কোন প্রোডাক্টের প্রচার প্রচারণার কাজ চলানো হয় তখন তাকে ডিজিটাল মার্কেটিং হিসেবে বিবেচনা করা যায়।
অর্থাৎ ডিজিটাল তথ্য প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কোন ব্যবসা, প্রোডাক্ট ও সার্ভিস বিশ্বের যেকোন প্রান্তে পৌঁছে দেওয়ার কৌশলকেই ডিজিটাল মার্কেটিং বলা হয়। এক কথায় বলা যায় ইন্টারনেট কে কাজে লাগিয়ে ব্যবসার যে মাধ্যম গড়ে উঠেছে তাকেই ডিজিটাল মার্কেটিং বলে।
ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রকারভেদ
ইতোমধ্যে আমরা ডিজিটাল মার্কেটিং কি তা জেনেছি। এবার ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রকারভেদ সম্পর্কে জানব। ডিজিটাল মার্কেটিং অনেক বিস্তৃত একটি বিষয়। একে সহজে বর্ণনা করা খুব কঠিন। এটি বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে। নিম্নে এর কয়েকটি দেওয়া হল-
- কনটেন্ট মার্কেটিং
- সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন
- এফিলিয়েট মার্কেটিং
- সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং
- ই-মেইল মার্কেটিং
- সিপিএ মার্কেটিং
- ওয়েব অ্যানালিটিকস
কনটেন্ট মার্কেটিং (Content Marketing)
মার্কেটিং এর অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কনটেন্ট মার্কেটিং । একটি ওয়েবসাইটের মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে কনটেন্ট। কন্টাক্ মধ্যে কোন লেখা ছবি অডিও ভিডিও ইত্যাদি বুজে থাকে। আবার কোন কোন এনিমেশন অফ কনটেন্ট হতে পারে যাকে এনিমেশন কনটেন্ট বলা হয়।
ইন্টারনেটের মাধ্যমে যেকোনো মাধ্যমকে ব্যবহার করে কোন ট্যাগ, ছবি, অডিও বা ভিডিও অর্থাৎ যে কোন ব্র্যান্ডের প্রচারকে কনটেন্ট মার্কেটিং বলা হয়।
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (Search Engine Optimization)
আপনার ওয়েবসাইটটি যাতে যে কোন সার্চ ইঞ্জিনের প্রথম পেইজে পাওয়া যায় সেজন্য যে কৌশল অবলম্বন করা হয় তাকেই সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বলা হয়। একে সংক্ষেপে এসইও বলা হয়। ডিজিটাল মার্কেটিং দুনিয়ায় এসইও দিন দিন তুমুল জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
আপনারা সকলেই জানেন যে ওয়েবসাইটে যত বেশি ভিজিটর আসবে ততবেশি সেল হবে। এ জন্য ক্রেতার নিকট প্রচুর পরিমাণে বিজ্ঞাপন পৌঁছাতে হবে।
বেশি ভিজিটর আনার অন্যতম কৌশল হচ্ছে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন করা। বর্তমানে প্রায় সব কোম্পানি তাদের ওয়েবসাইটের জন্য এসইও করে থাকে। এ কাজটি করে আপনারা প্রচুর পরিমাণে ইনকাম করতে পারবেন।
এফিলিয়েট মার্কেটিং (Affiliate Marketing)
আপনি যদি ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে ঘাটাঘাটি করে থাকেন, তবে এফিলিয়েট মার্কেটিং শব্দটা আপনার নজর এড়ানোর কথা না। একজন অ্যাফিলিয়েটর হিসেবে আপনার কাজ হচ্ছে কোন একটা নির্দিষ্ট প্রোডাক্ট বা ওয়েবসাইট লিংক প্রমোট করা। অর্থাৎ আপনি যখন কোন সংস্থার বা কোম্পানির প্রোডাক্ট প্রচার করেন তখন কেউ যদি আপনার অ্যাফিলিয়েট লিংক এ ক্লিক করে বা এর মাধ্যমে কোন প্রোডাক্ট ক্রয় করে, তখন প্রত্যেকটি ক্লিক বা ক্রয়ের জন্য অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হিসেবে আপনি নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন পাবেন। অর্থাৎ, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং থেকে আপনি আয় করতে পারবেন। এটিই হচ্ছে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। এফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে নিম্নের আর্টিকেলটি পড়ুন –
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং (Social Media Marketing)
সোশ্যাল মিডিয়া হলো সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। বিভিন্ন ধরণের সোশ্যাল মিডিয়া হলো – ফেসবুক, টুইটার, লিংকডইন, ইমু,ভাইবার,ট্রাম্বলার,ইন্সট্রাগ্রাম, ইউটিউব ইত্যাদি।
এসব সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে যখন কোন প্রোডাক্ট বা সার্ভিস করা হয় তখন তাকে তখন তাকে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং বলা হয়। বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে এটি বেশ জনপ্রিয় হইয়ে উঠেছে।
ই-মেইল মার্কেটিং (E-mail Marketing)
আপনারা একটু খেয়াল করলেই দেখবেন যে, কিছু কিছু ফাইল বা সফটওয়্যার ডাউনলোড করার সময় ই-মেইল এড্রেসের দরকার হয়। কখনো ভেবে দেখেছেন কি এসব ই-মেইল নিয়ে তারা কি করে?
অনেক কোম্পানি আছে যাদের অনেক সময় এক্টিভ ই-মেইলের প্রয়োজন হয়। এই মেইলগুলো তারা সংরক্ষণ করে ঐসব কোম্পানির নিকট সেল করে। এটিই ই-মেইল মার্কেটিং। ডিজিটাল মার্কেটিং এর বড় একটা অংশ ইমেইল মার্কেটিং এর দখলে রয়েছে। এর মাধ্যমে অনলাইন থেকে প্রচুর ইনকাম করা যায়। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে নিম্নের আর্টিকেলটি পড়ুন –
সিপিএ মার্কেটিং (CPA Marketing)
সিপিএ / CPA এর পূর্ণ রূপ হলো – Cost Per Action. এটি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এরই অংশ হলেও এটি অ্যাফিলিয়েটের চেয়ে অনেক সহজ।
এখানে ছোট ছোট কাজ যেমন – কোন সাইটে কাউকে জয়েন করানো,মেইল সাবমিট করা, ফর্ম পূরণ করে নেওয়া ইত্যাদি ছোট খাটো কাজের বিনিময়ে অর্থ প্রদান করা হয়। এখানে প্রোডাক্ট সেল না করেই আপনি পেমেন্ট পেয়ে যাবেন। বর্তমানে প্রায় সবাই CPA মার্কেটিং এর দিকে ঝুঁকছে।
ওয়েব এনালিটিক্স (Web Analytics)
ওয়েব এনালিটিক্স (Web Analytics) হচ্ছে কিছু সফটওয়্যারের মাধ্যমে ভিজিটরদের তথ্য বিশ্লেষণ করা। অর্থাৎ, মনে করুন আপনার একটি ওয়েবসাইট আছে। এই সাইটে কোন দেশ থেকে কত ভিজিটর ভিজিট করছে এসব জানার জন্য ওয়েব এনালিটিক্স সফটওয়্যারের প্রয়োজন। এ সফটওয়্যারের মাধ্যমে এসব জানা যায়।
এক কথায় ভিজিটরদের বিস্তারিত তথ্য বিশ্লেষণ করাকে ওয়েব এনালিটিক্স (Web Analytics) বলে।
এগুলো বাদেও আরও অনেক ডিজিটাল মার্কেটিং রয়েছে। আপনি যেকোনো ১/২/৩ টি বিষয় শিখে অনলাইন ক্যারিয়ার গড়ে প্রচুর ইনকাম করতে পারবেন।