পড়াশোনা

দ্বিরুক্ত শব্দ কি বা কাকে বলে? দ্বিরুক্ত শব্দের প্রকারভেদ

1 min read

দ্বিরুক্ত শব্দকে ভাঙলে পাওয়া যায় ‘দ্বি+উক্ত’। অর্থাৎ, যা দুইবার বলা হয়েছে বা দুবার উক্ত হয়েছে এমন। বাংলা ভাষায় কোন কোন শব্দ, পদ বা অনুকার শব্দ, একবার ব্যবহার করলে যে অর্থ প্রকাশ করে, সেগুলো দুবার ব্যবহার করলে অন্য সম্প্রসারিত অর্থ প্রকাশ করে। এ ধরণের শব্দের পরপর দুবার ব্যবহৃত হয়ে কোন বিশেষ অর্থ প্রকাশ করলে তাকে দ্বিরুক্ত শব্দ বলে। যেমন – আমার জ্বর জ্বর লাগছে।

দ্বিরুক্ত শব্দের প্রকারভেদ / শ্রেণীবিভাগ

দ্বিরুক্ত শব্দ ৩ প্রকার। যথাঃ

  • শব্দের দ্বিরুক্তি
  • পদের দ্বিরুক্তি ও
  • অনুকার দ্বিরুক্তি

শব্দের দ্বিরুক্তি

  • একই শব্দ অবিকৃতভাবে দুবার ব্যবহৃত হয়ে দ্বিরুক্ত শব্দ গঠন করতে পারে। যেমন – ফোঁটা ফোঁটা পানি, বড় বড় বাড়ি ইত্যাদি।
  • একই শব্দের সঙ্গে সমার্থক আর একটি শব্দ যোগ করে ব্যবহৃত হয়। যেমন – বলা- কওয়া, লালন-পালন ইত্যাদি।
  • দ্বিরুক্ত শব্দ – জোড়ার দ্বিতীয় শব্দটির আংশিক পরিবর্তন হয়। যেমন – মিট-মাট, ফিট- ফাট ইত্যাদি।
  • সমার্থক শব্দযোগে হতে পারে। যেমন – টাকা -পয়সা, বলা-কওয়া ইত্যাদি।
  • বিপরীতার্থক শব্দ যোগে। লেন-দেন, দেনা-পাওনা ইত্যাদি।

পদের দ্বিরুক্তি

  • দুটি পদে একই বিভক্তি ব্যবহার করা হয়, শব্দ দুটি ও বিভক্তি অপরিবর্তিত থাকে। যেমন – ঘরে ঘরে লেখাপড়া হচ্ছে।
  • দ্বিতীয় পদের আংশিক ধ্বনিগত পরিবর্তন ঘটে, কিন্তু পদ – অবিকৃত থাকে। যেমন – আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে।

পদের দ্বিরুক্তির প্রয়োগ

বিশেষ্য শব্দযুগলের বিশেষণরূপে ব্যবহার

আধিক্য বোঝাতেঃ রাশি রাশি ধন, ধামা ধামা ধান।

সামান্য বোঝাতেঃ কবি কবি ভাব।

ধারাবাহিকতা বোঝাতেঃ তুমি দিন দিন রোগা হয়ে যাচ্ছ।

ক্রিয়া বিশেষণঃ ধীরে ধীরে যায়।

আগ্রহ বোঝাতেঃ ও মা মা বলে কাঁদছে।

বিশেষণ শব্দযুগলের বিশেষণরূপে ব্যবহার

আধিক্য বোঝাতেঃ ভালো ভালো পেয়ারা নিয়ে আস।

তীব্রতা বা সঠিকতা বোঝাতেঃ নরম নরম হাত।

সামান্যতা বোঝাতেঃ কালো কালো চেহারা।

সর্বনাম পদের দ্বিরুক্তি

বহুবচন বা আধিক্য বোঝাতেঃ কে কে এলো?

ক্রিয়াপদের বা ক্রিয়াবাচক শব্দের দ্বিরুক্তি

বিশেষণরূপেঃ এদিকে রোগীর তো যায় যায় অবস্থা।

ক্রিয়া বিশেষণঃ দেখে দেখে যেও।

পৌনঃপুনিকতা বোঝাতেঃ ডেকে ডেকে হয়রান হয়েছি।

স্বল্পকাল স্থায়ী বোঝাতেঃ দেখতে দেখতে আকাশ কালো হয়ে গেল।

অব্যয়ের দ্বিরুক্তি

ভাবের গভীরতা বোঝাতেঃ ছি ছি, তুমি কী করেছ?

পৌনঃপুনিকতা বোঝাতেঃ বার বার কামান গর্জে উঠল।

ভাব বোঝাতেঃ ভয়ে গা ছম ছম করছে।

বিশেষণ বোঝাতেঃ পিলসুজে বাতি জ্বলে মিটি মিটি।

ধ্বনিব্যঞ্জনাঃ বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর।

পদাত্মক দ্বিরুক্তি

বিভক্তিযুক্ত পদের দুইবার ব্যবহারকে পদাত্মক দ্বিরুক্তি বলা হয়। এগুলো দুভাবে গঠিত হয়। যেমন –

  • একই পদের অবিকৃত অবস্থায় দুভাবে ব্যবহার। যেমন – ভয়ে ভয়ে এগিয়ে গেলাম।
  • যুগ্মরীতিরে গঠিত দ্বিরুক্ত পদের ব্যবহার। যেমন – হাতে-নাতে, কাপড়-চোপড় ইত্যাদি।

বিশিষ্টার্থক বাগধারায় দ্বিরুক্ত শব্দের প্রয়োগ

মেয়েটিকে চোখে চোখে রেখো। (সতর্কতা)

থেকে থেকে শিশুটি কাঁদছে। (কালের বিস্তার)

লোকটা হাড়ে হাড়ে শয়তান। (আধিক্য)

ধ্বন্যাত্মক দ্বিরুক্তি

কোন কিছুর স্বাভাবিক বা কাল্পনিক অনুকৃতিবিশিষ্ট শব্দের রূপকে ধ্বন্যাত্মক শব্দ বলে। এ জাতীয় ধ্বন্যাত্মক শব্দের দুবার প্রয়োগের নামই ধ্বন্যাত্মক দ্বিরুক্তি। যেমন – ধক ধক, ঝন ঝন, পট পট, গপাগপ, টপাটপ,ধরাধরি, ঝমঝমি, ঘেউ ঘেউ ইত্যাদি।

Rate this post
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

Leave a Comment

x