স্বাস্থ্যকর হাড় এবং দাঁতের জন্য ক্যালসিয়াম অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। দুগ্ধজাত পণ্য যেমন দুধ, পনির এবং দই ক্যালসিয়ামের অন্যতম উৎস। ক্যালসিয়াম দেহের হাড় ও দাঁত গঠনে সহায়তা করে তাদের সুস্থ রাখে। রক্তে ও স্নায়ুকোষেও এর উপস্থিতি রয়েছে। তাই ক্যালসিয়ামের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। প্রতিদিন দেহের জন্য ক্যালসিয়াম প্রয়োজন। এখন প্রশ্ন হতে পারে দৈনিক কতটুকু ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন? চলুন জেনে নেই।
দৈনিক কতটুকু ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন?
একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের দৈনিক ১০০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং ৬০০ ইউনিট ভিটামিন ডি প্রয়োজন। মনোপজের পর মেয়েদের এবং সত্তরোর্ধ্ব পুরুষদের দৈনিক ১২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন হয়। গর্ভবতী এবং যে মায়েরা শিশুদের বুকের দুধ পান করান তাদেরও লাগে একটু বেশি। তাছাড়া ভিটামিন ডি ও খেতে হবে কারণ এটি শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণ করতে সাহায্য করে।
সূর্যের আলো থেকে ভিটামিন ডি পাওয়া যায় আর দুধ জাতীয় খাবার থেকে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। এছাড়া সবুজ শাক-সবজি, বাদাম, কমলা ইত্যাদিতে প্রচুর ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।
ক্যালসিয়ামের প্রয়োজনীয়তা
শরীর গঠনের জন্য ক্যালসিয়ামের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। শরীরের হাড় মজবুত করার জন্য ক্যালসিয়াম অত্যন্ত জরুরী। তাছাড়া শরীরে কোন অংশ কেটে গেলে রক্ত জমাট বাঁধতে সহায়তা করে। এটি শরীরের বিকাশ ও মাংসপেশি গঠনের জন্য প্রয়োজন। দই, বাদাম, সবুজ শাকসবজি,ইত্যাদি ক্যালসিয়ামের প্রধান উৎস।
বিভিন্ন চিকিৎসকদের মতে সুন্দর ত্বক গঠনের জন্য ক্যালসিয়ামের গুরুত্ব অনেক। তাই তারা ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খেতে বলেন। তাই ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হলে নিজের থেকে কোন ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট নিতে নিষেধ করেন। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী পুষ্টিকর খাবারের সাথে ক্যালসিয়াম সাপ্লেমেন্ট নিতে হবে।
তাছাড়া বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পড়ে। কারণ বয়স বৃদ্ধি পেলে হার পাতলা হয়, হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়। এ কারণে ক্যালসিয়াম অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়ে। ক্যালসিয়ামের উৎসজনিত খাবার খেয়ে এর অভাব পূরণ করা যায়।
ক্যালসিয়ামের অভাব হয় কেন?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্ষুধার্থ থাকে ও নানা রকম অপুষ্টিতে ভোগা, হরমোনজনিত সমস্যা, অপ্রাপ্ত বয়সে বাচ্চা প্রসব, ক্যালসিয়াম শোষিত না হওয়া, এছাড়া খাবারে যথাযথ পরিমাণ ভিটামিন ও খনিজ থাকলেও তা শরীরের তুলনায় শোষণ ব্যর্থ হওয়া ইত্যাদি কারণে ক্যালসিয়ামের অভাব হয়।
ক্যালসিয়ামের অভাবজনিত লক্ষণ
শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব হলে তাকে হাইপোক্যালসেমিয়া বলে। আমাদের শরীরে যখন ক্যালসিয়ামের মাত্রা ঠিক থাকেনা তখন এটি হয়। ক্যালসিয়ামের অভাব হলে নানারকম লক্ষণ দেখা যায়। এগুলো হলোঃ
- পেশী সংকোচন
- ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কম হলে হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়।
- নখ নরম, ভঙ্গুর, ধীরতাহীন হয়ে যায়।
- দাঁত ও হাড় ব্যথা হয়।
- পিরিয়ডের সময় তীব্র ব্যথা হয়।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
- নানারকম স্নায়ুবিক সমস্যা ও মাথা ব্যথা হতে পারে।
- হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি পায়।
- পায়ে খিচুনি ধরা।
- দাঁতে গর্ত হয় ইত্যাদি।
ক্যালসিয়াম অভাবজনিত রোগ
- ক্যালসিয়ামের অভাবে রিকেট রোগ হয়।
- হাড় ফ্র্যাকচার হয়।
- বৃদ্ধ বয়সে অস্টিওপরোসিস বা হাড় ক্ষয় হয়।
- হাড়ের গঠন দুর্বল হয়।
- মুখে লাল বা গোলাপি রঙের র্যাশ হয়।
- স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায়।
- ঘুমের অসুবিধা হয় ইত্যাদি।