আপেলের উপকারিতা সমূহ কি কি?
আজ আমরা আপেলের উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করব।
আপেল এমন একটি ফল যার মধ্যে রয়েছে ভরপুর পুষ্টিকর উপাদান যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। কথায় আছে,”প্রতিদিন একটি করে আপেল খেলে সারা জীবনের জন্য ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন পরে না”। আপেলে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট,ভিটামিন, মিনারেল ও ফাইবার রয়েছে। আপেল একটি সহজলভ্য ফল এবং এটা খুব সহজেই বাজারে পাওয়া যায় এবং পুষ্টির তুলনায় এর দাম খুব একটা বেশি নয়।
আপেলের বৈজ্ঞানিক নাম হল ম্যালাস ডোমেস্টিকা এবং এই ফল সারা বছরই পাওয়া যায় কারণ পৃথিবীর সব দেশ গুলোতে সারা বছর ধরে আমদানি রপ্তানি করা হয়। ডাক্তারদের মতে যেসব সবজি বা ফল অবশ্যই প্রতিদিন খাওয়া উচিত তার মধ্যে আপেল অন্যতম।
আপেলের উপকারিতা
১) স্বাস্থ্যের জন্য আপেলের উপকারিতা
২) ত্বকের জন্য আপেলের উপকারিতা
৩) চুলের জন্য আপেলের উপকারিতা
আজকে আমরা আপেলের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানব। প্রথমেই জেনে নেই স্বাস্থ্যের জন্য আপেলের উপকারিতা কতখানি।
স্বাস্থ্যের জন্য আপেলের উপকারিতাঃ
১)ওজন কমানো
আপেলে রয়েছে প্রচুর ফাইবার।এক বাটি খোসাসহ আপেলের টুকরায় ২.৬ গ্রাম ফাইবার রয়েছে। ফাইবার হজম প্রক্রিয়াকে ধীরগতিতে চালনা করে তাই আপেল অনেকক্ষণ পর্যন্ত পেটে থাকে যার ফলে দ্রুত খিদে না পাওয়ায় সহজেই খাওয়ার থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে এবং ওজন কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কাঁচা আপেলে গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স হলো ৩৬ এবং আপেলের জুসে ৪৬ যা রক্তে সুগারের পরিমাণ কম করতে সহায়তা করে, বারবার ক্ষুধা ভাব দূর করে। এছাড়া আপেল ফ্যাট কমাতেও সাহায্য করে।
২) ক্যান্সার রোধ
ক্যান্সারের মত রোগকে প্রায় ৮০% রোধ করা যায় যদি আপনি প্রতিদিন আপেল খান,বিশেষ করে ফুসফুসের ক্যান্সার,পেটের ক্যান্সার।কিছু কিছু পরীক্ষা থেকে জানা যায় ব্রেস্ট ক্যান্সার রোধ করতেও আপেল কার্যকরী।আপেলে উপস্থিত এন্টি অক্সিডেন্টে সেই সব ফ্রী রেডিকেল দূর করে যা কোষগুলোকে নষ্ট করে দেয় এবং নতুন করে ডি এন এ তৈরী করতে সাহায্য করে।এতে টিউমারের সংখ্যা কমাতেও সাহায্য করে।
৩)রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
আপেলে প্রচুর পরিমানে এন্টি এক্সিডেন্ট,ভিটামিন ও মিনারেল রয়েছে যা সহজেই নানা রকমের রোগ হওয়া থেকে শরীরকে রক্ষা করে।বিশেষ করে সর্দি কাশি,পেট খারাপ,হার্টের সমস্যা বা ইত্যাদি রোধ করতে আপেল খুব উপকারী।
৪)দাঁতের রঙ উজ্জ্বল করে
আপেলের রস দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্য দারুণ উপকারী। দাঁত শক্ত হতে,উচ্চ পরিমাণে ফাইবার মুখে এসিডের পরিমাণ কে নিয়ন্ত্রণ করে যার ফলে শুষ্কতার হাত থেকে বাঁচায় এবং মুখে আর্দ্রতা বজায় থাকে। এছাড়া আপেলের রস ক্যাভিটি হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে রোধ করে।
৫)কোলেস্টরল দূর করে
বিভিন্ন বৈজ্ঞনিক পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে যে আপেলে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েড হার্টের বহু রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম। বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে ৩৫% বেশি কার্যকরী।স্ট্রোকের মত সমস্যার ক্ষেত্রে ও আপেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কোলেস্টরল রোধ করতে সাহায্য করে।
মস্তিষ্কের স্নায়ু বিনাশকারীরোগ যেমন আলজাইমার ও পারকিনসন বা যেকোনো বার্ধক্যের ফলে যে রোগ গুলো হয়ে থাকে সেগুলির রোধ করতে আপেলে বিদ্যমান পলিফেনল সক্ষম। এছাড়াও আপেলে রয়েছে ফোলেট যা আরও বেশি করে মস্তিষ্কের স্নায়ু বিনাশ কে রোধ করে।এমলয়েড বিটা প্রোটিন যা মস্তিষ্কে জমার ফলে আলজাইমার বাড়তে শুরু করে তা সহজেই রোধ করে।
৭)পেটের সমস্যা রোধ করে
আপেল বিদ্যমান পলিফেনোল কার্বোহাইড্রেট ফাইবার কলোনির নালী পরিষ্কার করে এবং পাচনতন্ত্র সঠিক করে। যার ফলে শরীরে পানির পরিমাণ ঠিক থাকে এবং পেট পরিষ্কার সঠিকভাবে হয়। আপেলে বিদ্যমান অন্ত্রের মাইক্রোব গুলি সহজেই বেড়ে যেতে পারে।
৮)লিভার পরিষ্কার রাখে
আপেলে বিদ্যমান প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লিভারের বিষক্রিয়া করণ এবং ফ্যাটি লিভার হওয়া খুব সহজেই রোধ করতে পারে।অগ্নাশয় ও লিভারের সমস্যা থেকে নানা রকমের রোগ যেমন জন্ডিস ও গল ব্লাডারে পাথর ইত্যাদি হতে পারে কিন্তু আপেল এর সাহায্যে এগুলো খুব সহজেই এড়িয়ে চলা যায়।
৯)রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়
রক্তসঞ্চালন বাড়াতে আপেল ভূমিকা পালন করে। আপেল রক্তনালী এবং হার্টকে বিভিন্ন রকমের রোগের হাত থেকে সুরক্ষিত রাখে।যার ফলে রক্ত সঞ্চালন সঠিকভাবে হয়ে থাকে। যদিও এই বিষয় নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে।
১০)হাড়ের জন্যে ভাল
আপেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে মিনারেল, বোরন, পটাশিয়াম,ক্যালসিয়াম ও জিংক হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। মহিলাদের রজবন্ধ হওয়ার আগের দিকে ও বয়স্ক লোকদের আর্থ্রাইটিস,অস্টিওপোরেসিস বা এমন হাড়ের রোগ রোধ করা সম্ভব।
১১)রাতের দৃষ্টি শক্তি বাড়ায়
আপেলে বিদ্যমান ভিটামিন এ ও সি চোখ ও চোখের দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখতে সাহায্য করে। বার্ধক্যের ফলে চোখের কোষগুলো নষ্ট হতে শুরু করে কিন্তু আপেলের সাহায্যে অনেকটাই তা রোধ করা সম্ভব।আপেলে উপস্থিত ক্যারোটিনয়েড যেমন জ্যান্থফিল পরিষ্কার রেটিনার রং এর জন্য গুরুত্বপূর্ন।যার ফলে রাতের দৃষ্টিশক্তিও পরিষ্কার হয়।
আপেল ভিটামিন সি এর ভান্ডার। ভিটামিন-সি শরীরের জন্য যে কতটা প্রয়োজন তা হয়ত বলে শেষ করা যাবেনা। হার্ট,লিভার, ফুসফুস,দাঁত,কিডনি বা মহিলাদের যে কোন ধরনের সমস্যার লড়াই করতে সাহায্য করে এই ভিটামিন-সি।এই কারণেই বলা হয় প্রতিদিন একটি করে আপেল খেলে হাজারো রকমের রোগ প্রতিরোধ করা যায়।