ছোট বেলায় দাদা-দাদির বা মা-বাবার মুখে আমরা অনেকেই বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কিত খনার বচন কম-বেশি শুনেছি। প্রাচীন যুগের সেই ভবিষ্যতবানী বর্তমানে তেমন মূল্য না থাকলেও সেই সময়ের জন্য এগুলো ছিল এক-একটি অমোঘ বানী। এখনও গ্রামে-গঞ্জে মুরুবিদের মুখে খনার বচন শুনা যায়। আধুনিক যুগে এসে সেই প্রাচীন পর্যবেক্ষণ গুলো তলিয়ে গেলেও বাংলা বর্ষ-পুঞ্জিকায় এর কিছু লিপি প্রতিবছরই দেখা যায়। “খনার বচন” এর লেখক খনাকে নিয়ে রয়েছে বিভিন্ন মতবাদ। কিংবদন্তির সূত্রধরে যতটুকু জানা গেছে, তাতে বলা যায় খনা ছিলেন সিংহল রাজার তনয়া। আনুমানিক ৮০০ থেকে ১২০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে তার আবির্ভাব।

কিংবদন্তি অনুযায়ী তিনি বসবাস করতেন পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগণা জেলার বারাসাত মহকুমার দেউলিয়া গ্রামে। কথিত আছে তাঁর আসল নাম ছিল লীলাবতী। পূর্ণ্যক্ষণে তাঁর জন্ম হয়েছিল বলেই তিনি ‘ক্ষণা’ বা ‘খনা’ নামে পরিচিত ছিলেন। মহারাজ বিক্রমাদিত্যের এক পুত্র হয়। তার নাম রাখা হয় মিহির। মহারাজ বিক্রমাদিত্যের প্রখ্যাত জ্যোতির্বিদ বরাহ পুত্রের জন্মপত্রিকা গণনা করে দেখেন পুত্রের আয়ু মাত্র এক বছর। পুত্রের এই অকাল মৃত্যু যাতে দেখতে না হয় তাই পুত্রকে একটি পাত্রে রেখে জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। পাত্রটি ভাসতে ভাসতে সিংহলে উপনীত হয়। সিংহলরাজ রূপবান ও সুলক্ষণযুক্ত শিশুটিকে নিজের সন্তানের মতো বড় করেন।

এই মিহির ও সিংহলরাজের কন্যা খনা উভয়েই জ্যোতিশাস্ত্রে শাস্ত্রজ্ঞ হন এবং তাঁরা শেষে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। গণনার মাধ্যমের মিহিরের আসল পরিচয় জানতে পেরে মিহির তাঁর স্ত্রী খনাকে নিয়ে জন্মভূমিতে ফিরে আসেন। খনার জ্ঞানের সাথে সেকালের কেউ খুলিয়ে উঠতে পারছিল না। একদিন মহারাজ বিক্রমাদিত্য আকাশে কতগুলো তারা আছে তা জানতে চান। মহারাজ বিক্রমাদিত্যের পুত্র মিহির এই কঠিন প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য একদিন সময় চান। পিতা-পুত্রকে ভাবনা-চিন্তায় মগ্ন দেখে খনা গণনা করে বলে দেন আকাশে তারার সংখ্যা কত। খনার এমন অধীত জ্ঞান দেখে সম্মানহানির আশংকায় পিতা বিক্রমাদিত্যের আদেশে পুত্র মিহির খনার জিব্বা কেঁটে ফলেন, এতে খনার মৃত্যু হয়। এভাবে পরিসমাপ্তি ঘটে এক কিংবদন্তি খনার জীবন। মানব কল্যাণে খনা যেসকল ‘বচন’ উপহার দিয়ে গেছেন এগুলো মানব সমাজের উপকারে কাজে লেগেছে বছরের পর বছর। কৃষিক্ষেত্রের ‘খনার বচন’ গুলো দেখিয়েছে কৃষকদের সাফল্যের মুখ। খনার যেসকল ‘বচন’ লিপিবদ্ধ হয়েছিল তারই কয়েকটি আপনাদের সামনে তুলা ধরা হলোঃ

বিভিন্ন ফল-শস্য চাষ সম্পর্কে খনার বচনঃ

কলা চাষঃ

যদি পোঁত ফাল্গুনে কলা, কলা হবে মাস ফসলা।

অর্থাৎ, ফাল্গুন মাসে কলা গাছ রোপণ করলে প্রতিমাসে কলার ফলন হয়।

ভাদ্র মাসে রুয়ে কলা, সবংশে মলো রাবণ শালা।

ভাদ্র মাসে কলা চাষ করলে ভাল ফলন পাওয়া যায় না।

তুলা চাষঃ

বৈশাখের প্রথম জলে, আশু ধান দ্বিগুণ ফলে।

শুন ভাই খনা বলে, তূলায় তূলা অধিক ফলে।।

বৈশাখ মাসের প্রথম বৃষ্টি হলে আউশ ধান ভাল ফলে। তেমনি তূলায় অর্থাৎ তূলা রাশি যে মাসের সমান, মানে কার্তিক মাসে যদি বৃষ্টি হয়, তাহলে তূলার অধিক ফলন হয়।

তিল চাষঃ

ফাল্গুনের আট চৈত্রের আট।

সেই তিল দায়ে কাট।।

ফাল্গুন মাসের শেষ আট দিন ও চৈত্র মাসের প্রথম আট দিন। এই ষোল দিন তিল বুনার উত্তম সময়।

সরিষা চাষঃ

খনা বলে চাষার পো।

শরতের শেষে সরিষা রো।।

অর্থাৎ শরৎকালের শেষে সরিষা রোপণ করলে প্রচুর ফলন পাওয়া যায়।

ধান ও পান চাষঃ

এক অঘ্রাণে ধান।   তিন শ্রাবণে পান।

ডেকে খনা গান।   রোদে ধান, ছায়ায় পান।

যে জমিতে রোদ আছে, সে জমিতে ধান চাষ করতে হয় আর যে জমিতে রোদ কম থাকে তাতে পান চাষ করতে হয়। এভাবে চাষ করলে অধিক ফলন পাওয়া যায়।

পান পুঁতলে শ্রাবণে খেয়ে না ফুরোয় রাবণে।

শ্রাবণ মাসে প্রচুর পানের ফলন হয়। হরদম খেয়েও শেষ করা যায় না।

পটল চাষঃ

বুনলে পটোল ফাল্গুনে, ফল বাড়ে দ্বিগুণে।

ফাল্গুন মাসে পটল চাষ করলে সেই চাষী প্রচুর ফলন পায়।

ভুটা চাষঃ

থাকে যদি টাকার গোঁ, চৈত্র মাসে ভুটা রো।

টাকা রোজগারের ইচ্ছে থাকলে, চৈত্র মাসে ভুটার চাষ করো। তাহলে প্রচুর লাভ করা যায়।

আম কাঁঠাল চাষঃ

হাত বিশেক করি ফাঁক, আম কাঁঠাল পুঁতে রাখ।

ঘন ঘন বসে না, ফল তাতে হবে না।।

কুড়ি হাত অন্তর অন্তর আম, কাঁঠাল গাছ লাগাতে হয়। ঘন করে গাছ লাগালে ভাল ফলন হবে না।

তাল চাষঃ

এক পুরুষে রোয় তাল, পর পুরুষে করে পাল।

তাল পড়ে যে সে খায়, তিন পুরুষে ফল পায়।

বাবা তাল গাছ লাগালে ছেলের হাতে সেই গাছ বড় হয়। তাতেই তাল ধরে। পরবর্তী কয়েক পুরুষ সেই তাল খেতে পারে। তাছাড়াও লাউ, কলাই, মটর, মুগ, মরিচ, কুমড়া, শশা, ওল, বেগুন, আলু, কচু, হলুদ, তামাক, নারিকেল, শুপারি, বাঁশ, আখ, পাট ইত্যাদি চাষের উপযুক্ত সময় সম্পর্কে রয়েছে খনার বচন।

বিভিন্ন গাছপালা চাষের সময় ও পদ্ধতি সম্পর্কে খনার বচনঃ

খনা বলে হাল নিয়ে মাঠে যবে করিবে গমন।

আগে দেখ চাষীভাই, যেন হয় শুভক্ষণ।।

শুভক্ষণ দেখে সদা করিবে যাত্রা।

পথে যেন না হয় তখন অশুভ বার্তা।।

মাঠে হাল চালাতে যেতে হলে, শুভদিন দেখে মাঠে হাল নিয়ে যেতে হবে৷ রাস্তায় যদি কোন অশুভ লক্ষণ বা সংবাদ শুনতে হয়, তাহলে মাঠে না গিয়ে বাড়িতে ফিরে আসাই উচিত।

বলদ থাকতে করে না চাষ, তার দুঃখ বারোমাস।

ঘরে বলদ থাকতেও যে খাটায় না, ঘরে বসিয়ে রাখে তার সারা বছরই দুঃখ লেগে থাকে। তার জমিতে চাষাবাদ হয় না, ফলে তার অন্ন-বস্ত্রের অভাবে পড়তে হয়।

ষোল চাষে মুলা, তার আধা তুলা।

তার আধা ধান, বিনা চাষে পান।।

অর্থাৎ, মুলা চাষ করার জন্য জমিতে ষোলটি চাষ দিতে হয়, তুলার জন্য দিতে হয় আট চাষ। ধান চাষ করতে চাষের প্রয়োজন হয় চার এবং পান চাষ করতে কোন চাষের দরকার হয় না। এই পদ্ধতিতে চাষ করলেই ভাল ফলন হয়।

আষাঢ়ের পঞ্চদিনে রোপণ যে করে ধান।

বাড়ে তার কৃষিবল, কৃষিকার্যে হয় সফল।।

আষাঢ় মাসের প্রথম পাঁচদিনের মধ্যে যে কৃষক ধান রোপণ করে, সে কৃষিকাজে সফল হয়।

থোড় তিরিশে, ফুলো বিশে।

ঘোড়ামুখে তেরো জেনো, বুঝে সুঝে কাট ধান্য।।

অর্থাৎ থোর জন্মানোর তিরিশ দিন পরে, ফুল বের হবার বিশ দিন পরে, শিষ নত হওয়ার তেরো দিন পরে ধান কাটতে হয়। অন্যথায় ভাল ফল পাওয়া যায় না।

যাত্রাকাল সম্পর্কে খনার বচনঃ

শূন্য কলসী শুকনা না, শুকনা ডালে ডাকে কা।

যদি দেখ মাকুন্দ ধোপা, এক পা যেওনা বাপা।

খনা বলে এও বেলি, যদি সামনে না দেখি তেলি।।

অর্থাৎ, কোথাও যাওয়ার সময় যদি শূন্য কলসি, শুকনো নৌকা দেখ, কাকের ডাক শুনো বা ধোপা দেখ এবং তেলি দর্শন হয় তাহলে অমঙ্গল আছে জানতে হবে।

ভূমিকম্প ও বন্যা বিষয়ক খনার বচনঃ

খনা বলে শুন শুন ওগো পতির পিতা।

ভাদ্র মাসে জলের মধ্যে নড়েন বসুমাতা।।

রাজ্যনাশ, গোনাশ, হয় অগাত বান।

হাতের কাঠা গৃহী ফেরে কিনতে না পায় ধান।।

অর্থাৎ, যে মাসে ভাদ্র মাসে বৃষ্টি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভূমিকম্প হয়, সে বছর খুবই ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে। মহামারি, দুর্ভিক্ষ, গোনাশ এতো বেশি পরিমাণে হয়ে থাকে যে মানুষেরা দ্বারে দ্বারে ঘুরেও এক মুঠো ভিক্ষা পায় না।

প্রাকৃতিক ও অন্যান্য দুর্যোগ সম্পর্কে খনার বানীঃ

3বাদ দিয়ে বর্ষা, খনার বচন ফর্সা।

শনি সাত মঙ্গল তিন, আর সব দিন দিন।

বর্ষার সময় বাদ দিয়ে অন্য সময় বৃষ্টি হলে, যদি শনিবার শুরু হয় তবে সাত দিন হয় এবং মঙ্গলবার শুরু হলে তিন দিন চলে। অন্য কোন দিন বৃষ্টি হলে তা একদিন চলে।

পৌষে গরমী বৈশাখে জাড়া প্রথম আষাঢ়ে ভরবে গাড়া।

যে বছর পৌষ মাসে গরম এবং বৈশাখ মাসে ঠান্ডা পড়ে, সে বছর প্রথম আষাঢ়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় এবং শ্রাবণে অনাবৃষ্টি হয়ে থাকে।

ব্যাঙ ডাকে ঘন ঘন, শীঘ্র বর্ষা হবে জেনো।

ঘন ঘন ব্যাঙ ডাকলে বুঝতে হবে এবার বর্ষা হবে।

আমে ধান, তেতুলে বান।

যে বছর আমের ফলন ভাল হয়, সে বছর ধানের ফলন ভাল হয়। তেতুলের ফলন বেশি হলে বন্যা হয়।

খনা বলে শুনহ বানী, শ্রাবণ ভাদরে নাইক পানি।

দিনে জল রাতে তারা, এই দেখবে দুঃখের ধারা।

শ্রাবণ মাসে যদি বৃষ্টি না হয় এবং দিনে বৃষ্টি ও রাতে আকাশ পরিষ্কার থাকে, তাহলে মানুষের দুঃখের আর শেষ থাকে না।

খনা বলে শোণ চাষা, কার্তিকে পূর্ণিমা কর আশা।

নির্মল মেঘ যদি রাত রবে, রবিশস্য ভার ধরনী না সবে।

কার্তিক মাসে পূর্ণিমার রাতে যদি আকাশ পরিষ্কার থাকে। অর্থাৎ মেঘমুক্ত নির্মল আকাশ হলে, রবিশস্য প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয়৷

কি কর শ্বশুর লেখাজোখা, মেঘেই থাকে জলের রেখা।

কোদালে কুড়ুলে মেঘের গা, মধ্যে মধ্যে দিচ্ছে ঘা।

চাষাকে বলো বাঁধতে আল, আজ না হয় হবে কাল।

খনা তার শ্বশুর বলছে, শ্বশুরমশাই, মিছিমিছি গণনা করার দরকার নাই। মেঘ দেখলেই জলের লক্ষণ বুঝা যায়। যদি মেঘের আকৃতি খানা খানা (কোদাল কুড়ুলে) হয়, তবে বুঝতে হবে তাড়াতাড়ি বৃষ্টি হবে। তবে মাঝে মাঝে হালকা বৃষ্টিও হতে পারে। প্রকৃতির এই লক্ষণ দেখেই কৃষকের উচিত চাষের কাজে হাত দেওয়া, জমিতে আল দেওয়া। আজ যদি বৃষ্টি না হয়, তাহলে কালকেই হবে।

শরীরে তিলের অবস্থান ভেদে বিচারঃ

 

১. কপালের ডান দিকে নাকের ওপর তিল থাকলে দৈবধন ও যশলাভের সম্ভাবনা।

২. কপালের বাঁ দিকের তিল দুঃখী তথা অসৎ চরিত্রের লক্ষণ।

৩. কপালের বাঁ দিকের তিল অপব্যয়, নিন্দা, অখ্যাতির পরিচায়ক।

৪. চোখের নিচে তিল অধ্যাবসায়ীর লক্ষণ।

৫. নাকের ডান দিকের তিল দীর্ঘজীবন, ধনলাভ ও অধ্যাবসায়ের লক্ষণ।

৬. নাকের বা দিকের তিল অপব্যয়, নির্ধন ও মূর্খতার পরিচায়ক।

৭. কানের ভেতরে তিল ভাগ্য ও যশলাভের লক্ষণ।

৮. ঠোঁটের নিচে তিল বিলাসিতা ও প্রেমিক হওয়ার চিহ্ন।

৯. বাঁ দিকের গালের তিল দাম্পত্য প্রেমের সুখের চিহ্ন।

১০. গলায় তিল থাকা ধৈর্যশীলতা, ভক্তি এবং বিশ্বাসের পরিচায়ক।

১১. বুকে তিল সুস্থ দেহ ও ভোগের লক্ষণ।

১২. হৃদয়ের বিপরীত দিকে তিল নৃশংসতার পরিচায়ক।

১৩. পেটে তিল পেটুক তথা স্বার্থপরতা, পরিচ্ছন্ন প্রিয়তার লক্ষণ।

১৪. বুকের মধ্যে লোমযুক্ত তিল বিদ্যা ও কবিত্বশক্তির পরিচায়ক।

১৫. গর্ভস্থলে তিল ধনবান না হওয়ার লক্ষণ।

১৬. ডান হাতের তিল দৃঢ় দেহ, ধৈর্যশীলতার লক্ষণ।

১৭. ডান পায়ের তিল জ্ঞানের পরিচায়ক।

শরীরের বিভিন্ন অংশের স্পন্দনের মাধ্যমে শুভ-অশুভ বিচারঃ

 

১. মাথা কাঁপলে মনের সন্তোষ, বিদ্যা লাভ এবং রাজদ্বারে সম্মান লাভ হয়।

২. চুল কাঁপলে চুল পড়ার সম্ভাবনা থাকে।

৩. কপাল কাঁপলে ঐশ্বর্য লাভের সম্ভাবনা থাকে।

৪. ডান চোখ নাচলে বন্ধুর সাথে দেখা হয়, অর্থ প্রাপ্তি ঘটে।

৫. বাঁ চোখ কাঁপলে অর্থনাশ ও বিরোধ-বিতর্ক ঘটে থাকে।

৬. ডান চোখের ওপরের অংশ নাচলে সুখলাভ হয়।

৭. ডান চোখের নিচের অংশ কাপঁলে কষ্ট ভোগ ঘটে।

৮. ডান কান কাঁপলে স্ত্রীলাভ, বিদ্যালাভ এবং আত্মীয় বৃদ্ধি হয়।

৯. বাম কান নাচলে মাথায় ব্যথা হয়।

১০. দুটি কান একসাথে কাঁপলে অর্থলাভ ও মনে প্রশান্তি আসে। ১১. নাকের ডান দিক কাঁপলে জ্বর হয়।

১১. নাকের বাম দিক কাঁপলে অশুভ সংবাদ আসে।

১২. সম্পূর্ণ নাক কাঁপলে কঠিন রোগ বা মৃত্যু ভয় থাকে।

১৩. ঠোঁট কাঁপলে ভাল আহার সম্ভাবনা থাকে।

১৪. মুখের তালু নাচলে বিবাহ সম্ভাবনা থাকে।

১৫. বাম কাঁধ কাঁপলে অপমানিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

১৬. দুটো কাঁধ একসাথে কাঁপলে মৃত্যু ভয় থাকে।

১৭. বুক কাঁপলে শরীরে ব্যথা হয়।

১৮. ডান হাত কাঁপলে শক্তি বৃদ্ধি হয়।

১৯. বাম হাত কাঁপলে বিরোধ হবার আশঙ্কা থাকে।

২০. ডান পা কাঁপলে দূর দেশে যাওয়া সম্ভাবনা থাকে।

২১. বাম পা কাঁপলে সুখভোগ হয়।

২২. নাভি নাচলে দুঃস্বপ্ন দেখতে হয়।

২৩. কোমর কাঁপলে আমাশয় হবার সম্ভাবনা থাকে।

২৪. পিঠ কাঁপলে শূল রোগ হবার আশঙ্কা থাকে

২৫. উরু কাঁপলে ভয় হয়।

কাকের ডাকের মাধ্যমে শুভ-অশুভ গণনাঃ

 

পাঁচ প্রকারের কাক আছে। কাকেরও প্রকার আছে!! হ্যাঁ, ভবিষ্যত গণনার ক্ষেত্রে কাকের বর্ণ ও আকার অনুযায়ী ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র, অন্ত্যজ এই পাঁচ প্রকারের কাক আছে।

ব্রাহ্মণ কাকঃ আকারে বড়, রং কালো, অত্যন্ত কর্কশ ডাক এবং চোখ দুটি দীর্ঘ।

ক্ষত্রিয় কাকঃ চোখ হরিতাভ পটিল বা নীলাভ বর্ণের এবং তীক্ষ্ম স্বর।

বৈশ্য কাকঃ ফ্যাকাশে কিংবা নীলাভ বর্ণের নিত্য চঞ্চল, কৃশ এবং নীলচে কিংবা সাদা বর্ণের চোখ বিশিষ্ট।

শূদ্র কাকঃ ছাই বর্ণের রোগা ও খসখসে হয়ে থাকে। এরা অনেকবার কা-কা করে।

অন্ত্যজ কাকঃ এদের গলা আর নক চকচকে হয়, গা আর চোখ সূক্ষ্ম এবং অচঞ্চল ও ধীর স্বর বিশিষ্ট।

ব্রাহ্মণ জাতীয় কাক যথার্থ উত্তর দেয় এবং উত্তর সঙ্গে সঙ্গে ফলবর্তী হয়। ক্ষত্রিয় জাতীয় কাক ব্রাহ্মণ জাতীয় কাকের মতো এতো ভাল উত্তর দিতে পারে না। এদের ভবিষ্যতবানী তিন দিনের মধ্যে ফলে। বৈশ্য জাতীয় কাকের ভবিষ্যতবানী ফলতে সাতদিন সময় লাগে। ভবিষ্যতবানী ফলতে সবচেয়ে বেশী সময় লাগে শূদ্র জাতীয় কাকের। এদের ভবিষ্যতবানী ফলতে প্রায় দশ দিনের মতো সময় নেয়। ভবিষ্যতবানী ফলার দিক দিয়ে ব্রাহ্মণ জাতীয় কাকের পরে অবস্থান অন্ত্যজ কাকের। এদের বানী পরেরদিনই ফলে। এবার দেখা যাক কাক কখন কিভাবে ডাকলে ‘খনার বচন’ অনুযায়ী আমাদের কি শুভ-অশুভের বার্তা দেয়।

🔹 সূর্যমুখো হয়ে কর্কশ স্বরে কাক যদি ডাকে তাহলে আপাত কার্যসিদ্ধি হলেও পরিমাণে অমঙ্গলের সূচনা থাকে।

🔹কাক যদি সূযর্মুখো হয়ে স্থির এবং সুস্বরে ডাকে তাহলে কার্যসিদ্ধি সুনিশ্চিত।

🔹ছায়াময় স্থানে বসে সূর্যের দিকে মুখ করে শান্ত স্বরে যদি কাক ডাকে তাহলে অশুভ ভাবে কার্যসিদ্ধি হয়।

🔹প্রথমে সূর্যের দিকে মুখ করে ডেকে পরে যদি ছায়ার দিকে মুখ করে বসে থাকে তাহলে প্রথমে কাজ মঙ্গলদায়ক ভাবে সম্পন্ন হলেও শেষে অমঙ্গলের সম্ভাবনা থাকে।

🔹সূর্যোদয়ের সময় কাক যদি পূর্বদিকে নির্জন কোন স্থানে বসে ডাকে তাহলে মন বাসনা পূর্ণ হয় এবং রমনী লাভ হয়।

🔹 দক্ষিণ-পূর্ব দিকের কোন স্থানে বসে কাক ডাকলে শত্রু দমন যুদ্ধে যেতে হয়।

🔹 কর্কশ স্বরে দক্ষিণ দিকে বসে সকলাবেলা কাক ডাকলে শোক, ব্যাধি হয়ে থাকে। মৃত্যুও হতে পারে। তবে কাক যদি মৃদু স্বরে ডাকে স্ত্রী, অর্থ ও বিদ্যালাভ হয়।

🔹সকালবেলা দক্ষিণ-পশ্চিম কোণ থেকে কাক ডাকলে গর্হিত ব্যাপারে অংশীদার হতে হয়। মোটামুটিভাবে কার্য সম্পাদিত হয়।

🔹সকালবেলা পশ্চিম দিক হতে কাক ডাকলে বর্ষণ হয়। বস্তলাভ হয়, বাড়িতে নারী-পুরুষের আগমন ঘটে এবং দাম্পত্য কলহ সৃষ্টি হয়।

🔹সকালবেলা উত্তর-পশ্চিম কোণ থেকে কাক ডাকলে সেইদিন ভাল খাদ্য জোটেনা, বাড়িতে অতিথির আগমন হয়। বিদেশ যাত্রার সম্ভাবনা থাকে।

🔹সকালবেলা লোকের দিকে চেয়ে উত্তর দিক হতে যদি কাক ডাকে তাহলে শোক, সাপের ভয়, দারিদ্র্য দুঃখ ভোগ করতে হয় তবে হারানো জিনিস খুঁজে পাওয়া যায় এবং মনের বাসনা পূর্ণ হয়।

🔹সকালবেলা উত্তর-পূর্ব কোণ থেকে কাক ডাকলে রোগ নিরাময় হয় এবং বাঞ্চিত দ্রব্য লাভ হয়।

🔹 সকালবেলা মাথার ওপর কাক ডাকলে আকাঙ্ক্ষিত বস্তু লাভ হয়।

তাছাড়াও দিনের প্রথম তিন ঘন্টায়, দ্বিতীয় তিন ঘন্টায়, তৃতীয় তিন ঘন্টায় এবং দিনের শেষ প্রহরে কোথায় কিভাবে কাক ডাকলে কি ফল পাওয়া যায় তা খনার বচন থেকে জানা যায়। যাদের আরো অধিক জানার আগ্রহ আছে, আপনার খনার বচন সম্পর্কিত বই অথবা অনলাইনে এখন পিডিএফ পাওয়া যায়, সেখান থেকে পড়তে পারেন।

Rate this post

By Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.