যে কৌশলে জীবনের প্রথম বিসিএসেই ফরেইন ক্যাডারে ১ম শাকিল

admin
4 Min Read

জীবনের প্রথম বিসিএসেই (৩৭ তম) পররাষ্ট্র ক্যাডারে ১ম হয়েছেন রহমত আলী শাকিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অনার্সে ও মাস্টার্সেও ৩.৯৮ ও ৩.৯৬ সিজিপিএ নিয়ে বিভাগেও তিনি প্রথম। পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক ২০১৫ ও ডিনস অ্যাওয়ার্ড। স্কুলজীবন থেকেই আগ্রহ ও বাবার উত্সাহ ছিলো ক্যাডার সার্ভিসের প্রতি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে বিশেষ করে পররাষ্ট্র ক্যাডারের প্রতি আকর্ষণটা বেড়ে যায়। অবশেষে স্বপ্ন আর কিছু কৌশলে তিনি পৌঁছে যান সাফল্যের চূড়ায়। সামনেই ৪০তম বিসিএস। তাই আগামী বিসিএস প্রার্থীদের প্রস্তুতি নিয়ে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

শাকিল জানান “প্রস্তুতিতে আমার বিশেষ কৌশল ছিল। কোন টপিক ধরে ধরে টানা পড়তাম। একটি বিষয়ের ওপর একাধিক সহায়ক ও রেফারেন্স বই অনুসরণ করতাম। প্রথমে পরিকল্পনা করে নিতাম, কতটুকু সময়ে কতটুকু পড়া শেষ করব। তারপর সেই অনুযায়ী পড়তাম।” বিসিএস পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন “কৌশলগুলো একদমই সহজ- সিলেবাস হাতে নিন, বিগত সালে কোন টপিকগুলো থেকে এসেছে সেগুলোতে স্টার দিন, যত বেশি স্টার তত বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এবার দেখুন কোনটা ভাল পারেন, কোনটা চেষ্টা করলে পারবেন, কোনটা একদমই পারবেন না। প্রিলিতে সব উত্তর না করলেও চলে, রিটেনে ফুল আনসার করতে হয়- এটা মাথায় রেখে প্ল্যান রেডি করুন। আর হ্যাঁ, কিছু ট্রাম্প কার্ড হাতে রাখুন- যেগুলোতে আপনি শক্তিশালী এবং ইউনিকভাবে উত্তর করতে পারবেন। মনে রাখা ভাল, ইংরেজি আর গণিতে দুর্বলতা মানেই পিছিয়ে

পড়া। ভাইভা নিয়ে পরে মাথা ঘামান। ব্যাস, এবার টপিক ধরে ধরে পড়া শুরু করুন। বই এখানে গুরুত্বপূর্ণ না, আপনি কি শিখছেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ। রেফারেন্স যেকোন বই পড়ুন আর সমসাময়িক বিষয়ে আপডেটেড থাকুন। লাগলে হেল্প নিন কিংবা আলোচনা করে পড়ুন। সহকর্মীদের বা বন্ধুদের সঙ্গে সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা লিখিত ও ভাইভায় অনেক কাজে দিবে। নিয়মিত পত্রিকা পড়তে হবে। বিশেষ করে অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক আর সম্পাদকীয় পাতা।

একই খবর ইংরেজি পত্রিকা থেকে পড়ে নতুন নতুন ইংরেজি শব্দ রপ্ত করতে পারেন। সমসাময়িক বিষয়গুলোতে সবসময় আপডেট থাকুন। লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির সময় যেসব বিষয় ভালোভাবে লিখলে বেশি নম্বর আসে, সেগুলো আগে রপ্ত করতে হবে। যেসব টপিক পড়ে গেলেও কমন পড়ে না কিংবা ভালো নম্বর পাওয়া যায় না, সেগুলোর পেছনে সময় কম দেয়াই ভালো। আমি বিগত এক বছরের কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সের ফিচার ও উল্লেখযোগ্য সম্পাদকীয়গুলো কেটে একত্র করে নোট করেছিলাম, যা সাধারণ জ্ঞানের ক্ষেত্রে আমার জন্য বেশ সহায়ক হয়েছে। চাপমুক্ত থেকে পরীক্ষা দিতে হবে। সময় নষ্ট না করে পড়াশোনা করুন। আমার ক্ষেত্রে গণিত ও ইংরেজির বেসিক ভালো থাকায় সুবিধা পেয়েছি।

গণিত ও বিজ্ঞান চর্চার মধ্যেই ছিল। আর সাধারণ জ্ঞান, বাংলা, ইংরেজি সাহিত্য শেষ কোরতে লেগেছে ২ মাস। কেউ হতাশাজনক কিছু বললে তাদের কথায় কান দিবেন না। নিজের মতো করে প্রস্তুতি নিন। আমি যখন প্রিলিতে টিকে গেলাম, তখন পুরোদমে লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করলাম। ল্যাবে গবেষণা প্রকল্পের কাজের ফাঁকে ও রাতে বাসায় ফিরে পড়তাম। আর ল্যাব না থাকলে সারাদিনই পড়া। ল্যাবের দুজন পিএইচডি গবেষক ডা. হুজ্জত উল্লাহ ও ডা. মো. আল-আমীন ছিলেন বিসিএস ক্যাডার সার্ভিসের উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা। তাঁদের পরামর্শ ও উত্সাহ আমাকে বেশ সাহস জুগিয়েছে।

এভাবে কেউ আশাব্যঞ্জক কিছু বললে তা থেকে অনুপ্রেরণা নিতে হবে। আমার ক্ষেত্রে এক সিনিয়র ভাই আমাকে বলেছিলেন, যদি বিসিএস দিতে চাও এমনভাবে দাও, যাতে ফার্স্ট হতে পারো। যখন পররাষ্ট্রে প্রথম হই, তখন তিনি আমাকে ফোন করে বলেছিলেন, ‘আমি ভাবিনি, তুমি সত্যি সত্যি প্রথম হবে!’ আমার ভাইভা ভালো হয়েছিল, বোর্ডে আমাকে প্রায় ৩০ মিনিট রাখা হয়েছিল। পরীক্ষা শেষে নিজের ওপর বিশ্বাস ছিল যে ক্যাডার পাব। তবে পররাষ্ট্র ক্যাডারে প্রথম হবো এটা আমি নিজেও ভাবিনি। পরিশেষে বলবো অন্য কারো নোট, রুটিন, বুকলিস্ট নিয়ে না ভেবে নিয়মতান্ত্রিক প্রস্তুতি নিন। মনে রাখবেন, দিনশেষে আপনার প্রস্তুতিই আপনার পাথেয়।”

Share this Article
Leave a comment
x