মাদকদ্রব্য ও মাদকাসক্তি কাকে বলে?

মাদকদ্রব্য কাকে বলে?

যেসব দ্রব্য সেবন বা পান করলে তীব্র নেশার সৃষ্টি হয় তাকে মাদকদ্রব্য বলে। যেমন : গাঁজা, হেরোইন ইত্যাদি। যখন কোনো ব্যক্তি এসব দ্রব্য সেবন ছাড়া চলতে পারে না অর্থাৎ এর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে তখন ঐ ব্যক্তিকে আমরা মাদকাসক্ত ব্যক্তি বলে থাকি।

যারা মাদকসেবী তারা বিভিন্ন পদ্ধতি ও মাধ্যমে মাদকদ্রব্য সেবন করে। যেমন : ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করানো, ট্যাবলেট, পাউডার বা সিরাপ হিসেবে খাওয়া, পানীয় হিসেবে পান করা, ধূমপানের মাধ্যমে গ্রহণ করা।

মাদকদ্রব্য কোনগুলো?

আমাদের দেশে সাধারণত গাঁজা, ভাং, চরস, আফিম, মরফিন, হেরোইন, কোকেন, মদ, ইয়াবা ইত্যাদি মাদক দ্রব্য হিসেবে পরিচিত। এছাড়া বিশ্বে কোকেন ও আফিম থেকে তৈরি পেথোড্রিন, থিরাইন, কোডেইন এবং কর্বিচুরেট ও এলএসডি থেকে কৃত্রিম উপায়ে তৈরি মেথাডন, জায়াজেপাম তৈরি করা হচ্ছে। এর সঙ্গে আরও রয়েছে তরল অ্যালকোহল শ্রেণির মদ যেমন রাম, ভদকা, হুইস্কি ইত্যাদি।

তামাক ও মাদকদ্রব্য সেবনের কুফল

  • মাদকদ্রব্য মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে।
  • মাদকসেবী পরিবারের সদস্যদের সাথে উগ্র আচরণ করে, পরিবারের শান্তি বিনষ্ট করে।
  • মাদকদ্রব্য সেবন মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষকে ধ্বংস করে, খাদ্যাভাস নষ্ট করে, চোখের দৃষ্টিশক্তি কমিয়ে দেয়।
  • কিছু কিছু মাদক এইচআইভি ও হেপাটাইটিস বি-এর সংক্রমণের আশংকা বাড়িয়ে দেয়। খাদ্যনালি ও ফুসফুসের ক্যান্সার, কিডনির রোগ, রক্তচাপ প্রভৃতি বহুবিধ রোগের সৃষ্টি করে।
  • নেশার টাকা জোগাতে গিয়ে মাদকসেবীরা সংসারে অভাব ও অশান্তির সৃষ্টি করে।

ঔষধ ও মাদকদ্রব্যের মধ্যে পার্থক্য কি?

ঔষধ ও মাদকদ্রব্যের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপঃ—
১। ঔষধ সেবন করলে রােগমুক্তি ঘটে, মাদক সেবনে শরীরের নানা রােগের সৃষ্টি হয়।
২। ঔষধ গ্রহণের মাত্রা নির্ধারিত থাকে, মাদকের মাত্রা নির্ধারিত থাকে না।
৩। অসুখ সেরে গেলে ঔষধ খাওয়ার প্রয়ােজন হয় না, কিন্তু মাদকে আসক্ত হলে সহজে ছাড়া যায় না।

মাদকাসক্তি কাকে বলে?

মাদকদ্রব্যের (যেমন: মদ, গাঁজা, আফিম, হেরোইন ইত্যাদি) উপর আসক্তিকে মাদকাসক্তি বলে। মাদক দ্রব্যের উপর যখন কারও আসক্তি এমন পর্যায়ে চলে যায় যে সে আর ঐ মাদকদ্রব্য ছাড়া থাকতে পারে না তখন তাকে মাদকাসক্ত হিসেবে গণ্য করা হয়।

মাদকাসক্তির লক্ষণ কী কী?

মাদকাসক্তির লক্ষণগুলো নিচে তুলে ধরা হলো–

১. মাদক গ্রহণকারীর চিন্তা ও আচরণে পরিবর্তন হবে।
২. চিন্তা বিক্ষিপ্ত হবে ও মনোসংযোগ হারিয়ে ফেলবে।
৩. মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাবে।
৪. ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে, ক্ষুধামন্দা দেখা দিবে।
৫. শরীর ভেঙে পড়বে।
৬. হাত-পায়ে কাঁপুনি সৃষ্টি হবে, অসংলগ্ন কথা বলবে।
৭. নিজেকে গুটিয়ে নিবে ইত্যাদি।

মানুষ কেন মাদকের প্রতি আসক্ত হয়?

মানুষ কেন মাদকাসক্ত হয় তার বহুবিধ কারণ আছে। এসব কারণসমূহকে পরিবেশগত, সামাজিক, মানসিক, ঔষুধ সংক্রান্ত ইত্যাদি শ্রেণিতে আওতাভুক্ত করা যায়। মানুষ যেসব সুনির্দিষ্ট কারণে মাদক দ্রব্য অপব্যবহার করে নেশাগ্রস্ত হয় সেগুলো হল :

১. মাদক দ্রব্যের প্রতি কৌতুহল;
২. বন্ধু-বান্ধব ও সঙ্গীদের প্রভাব;
৩. নতুন অভিজ্ঞতা লাভের আশা;
৪. সহজ আনন্দ লাভের বাসনা;
৫. মাদক দ্রব্যের সহজলভ্যতা;
৬. নৈতিক শিক্ষার অভাব;
৭. কৈশোর ও যৌবনে বেপরোয়া মনোভাব;
৮. পরিবারে মাদক দ্রব্যের ব্যবহার;
৯. পারিবারিক কলহ ও অশান্তি;
১০. বেকারত্ব, আর্থিক অনটন ও জীবনের প্রতি হতাশা এবং
১১. মাদক দ্রব্যের কুফল সম্পর্কে অজ্ঞতা।

মাদকাসক্তির পরিণাম

কোনােভাবে একবার কেউ মাদকাসক্ত হলে অচিরেই নেশা তাকে পেয়ে বসে। সে হয়ে পড়ে নেশার কারাগারে বন্দি। মাদকাসক্তির ফলে তার আচার-আচরণে দেখা যায় অস্বাভাবিকতা। তার চেহারার লাবণ্য হারিয়ে যায়। আসক্ত ব্যক্তি ছাত্র হলে তার বইপত্র হারিয়ে ফেলা, পড়াশােনায় মনােযােগ কমে যাওয়া, মাদকের খরচ জোগাতে চুরি করা ইত্যাদি নতুন নতুন উপসর্গ দেখা দেয়। নেশার জন্য প্রয়ােজনীয় ড্রাগ না পেলে মাদকাসক্তরা প্রায়ই ক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে। লােকের সঙ্গে এরা দুর্ব্যবহার করে। মাদকের প্রভাবে রােগীর শারীরিক প্রতিক্রিয়াও হয় নেতিবাচক। তার মননশক্তি দুর্বল হতে থাকে। তার শরীর ভেঙে পড়ে। ক্রমে স্নায়ু শিথিল ও অসাড় হয়ে আসে। এভাবে সে মারাত্মক পরিণতির দিকে এগিয়ে যায়।

মাদকাসক্তি থেকে পরিত্রাণের উপায় কি কি?

মাদকাসক্তি থেকে পরিত্রাণের উপায়গুলো হলো :

  • নৈতিক শিক্ষা কার্যক্রম প্রসার করা;
  • বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা;
  • মাদক দ্রব্যের সহজলভ্যতা রোধ করা;
  • মাদক দ্রব্যের কুফল সবার কাছে তুলে ধরা;
  • অসৎ বন্ধুদের নিকট থেকে দূরে থাকা;
  • মাদক দ্রব্য আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা;
  • সমাজে মাদক দ্রব্যের প্রসার রোধে সামাজিকভাবে কার্যক্রম গ্রহণ করা;
  • কাহিনী, গল্পের আকারে মাদক দ্রব্য সেবনকারীর পরিণতি তুলে ধরা;
  • মাদকাসক্তি থেকে ফিরে আসা ব্যক্তিদের সমাজে প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করা;
  • মাদকদ্রব্য প্রতিরোধ দিবস জাতীয়ভাবে পালন করা।

মাদকাসক্তির কুফল

মাদক দ্রব্য সেবনের ফলে মানুষের যে সকল ক্ষতি হয় তা হলো :
১. মানসিক : উত্তেজনা, চরম অবসাদ, উচ্ছৃঙ্খল আচরণ, অসংলগ্ন ব্যবহার, আত্মহত্যার প্রবণতা ইত্যাদি পরিলক্ষিত হয়।
২. শারীরিক : ক্ষয় রোগ, রক্ত দূষণ, কর্মক্ষমতা হ্রাস, অনিদ্রা, পেট ব্যথা, ক্ষুধামন্দা, স্নায়ুবিক দুর্বলতা ইত্যাদি দেখা যায়।
৩. সামাজিক : জীবনের প্রতি হতাশা, কাজে অনীহা, পারিবারিক অশান্তি, অপরাধ প্রবণতা, সমাজের ঘৃণ্য ব্যক্তি হিসেবে গণ্য হওয়া ইত্যাদি।
৪. আর্থিক : সর্বস্বান্ত পরিবার পরিজনকে অনটনে ফেলা, চুরি, ডাকাতি, রাহাজানির প্রবণতা বৃদ্ধি, বন্ধু-বান্ধবদের কাছে হাত পাতা, শেষ বয়সে অতিকষ্ট ও নিঃসঙ্গ জীবন যাপন ইত্যাদি।

এ সম্পর্কিত বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তরঃ–

১। মাদকাসক্তির ক্ষতিকর দিক কয়টি?
ক) ২ খ) ৩
গ) ৪ ঘ) ৫
সঠিক উত্তর : গ) ৪

২। মাদকাসক্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে মানসিক ক্ষতি কোনটি?
ক) অনিন্দ্রা
খ) উদ্যমের অভাব
গ) কাজ করার আগ্রহ কমে যাওয়া
ঘ) পরিবারকে আর্থিক সংকটে ফেলা
সঠিক উত্তর : খ) উদ্যমের অভাব

৩। মাদকদ্রব্য বাধ্যতামূলকভাবে সেবনের দরকার হলে তাকে কী বলে?
ক) আগ্রহ খ) আসক্তি
গ) আকাঙ্ক্ষা ঘ) অভ্যাস
সঠিক উত্তর : খ) আসক্তি

৪। যেকোনো পরিবেশ বা অবস্থা কয়টি দিক থেকে বিচার করা হয়?
ক) ২ খ) ৩
গ) ৪ ঘ) ৫
সঠিক উত্তর : ক) ২

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *