শারীরিক শিক্ষা (What is Physical education in Bengali/Bangla?)
শারীরিক শিক্ষা হলো দেহ ও মনের সার্বিক উন্নতির লক্ষ্যে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সুষম উন্নয়ন, মানসিক বিকাশ সাধন, সামাজিক গুণাবলি অর্জন ও খেলাধুলার মাধ্যমে চিত্তবিনোদন।

শরীর সম্বন্ধীয় শিক্ষা বা শারীরিক কসরতকে শারীরিক শিক্ষা নয় শরীরচর্চা বলে। শারীরিক শিক্ষা শুধু শরীর নিয়েই আলোচনা করে না, এর সাথে মানসিক বিকাশ ও সামাজিক গুণাবলি কীভাবে অর্জিত হয় সে ব্যাপারেও সহায়তা করে।

ডি.কে. ম্যাথিউস বলেন, শারীরিক কার্যকলাপের দ্বারা অর্জিত শিক্ষাই শারীরিক শিক্ষা।
হপ স্মিথ ও ক্লিফটন বলেন, বিজ্ঞানসম্মত ও কৌশলগত অঙ্গ সঞ্চালনের নাম শারীরিক শিক্ষা।

শারীরিক শিক্ষার লক্ষ্য (Aims of physical education)
শারীরিক শিক্ষার প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে ব্যক্তির সর্বাত্মক উন্নতি সাধন করা, সুস্থ দেহে সুন্দর মন গড়া। শারীরিক শিক্ষার প্রধান কাজ হলো শিশুকে আনন্দ ও খেলাধুলার মাধ্যমে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করা ও কর্মক্ষম করে গড়ে তোলা।

এম.জি.ম্যাসন ও এ.জি.এল ভেন্টার শারীরিক শিক্ষার লক্ষ্য সম্পর্কে বলেছেন—

  • শিশুকে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্যে তাকে সুস্থভাবে গড়ে তোলা।
  • শিশুর সৃজনশীল প্রতিভার উন্মেষ ঘটানো।
  • সামাজিক ব্যক্তি হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করা।
  • নৈতিক, আবেগিক, মানসিক ও সাংস্কৃতিক গুণাবলি জাগ্রত করা।
  • খেলাধুলার মাধ্যমে নেতৃত্বদানের গুণাবলি অর্জন করা।

 

শারীরিক শিক্ষার উদ্দেশ্য (Objectives of physical education)
শারীরিক শিক্ষকগণের বিভিন্ন উদ্দেশ্য সম্পর্কে মতামত সার্বিক বিবেচনা করে শারীরিক শিক্ষার উদ্দেশ্যকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা :

১. শারীরিক সুস্থতা অর্জনের উদ্দেশ্য :

  • খেলাধুলার নিয়ম-কানুন মেনে ভালো করে খেলতে পারা।
  • কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য হাসিল করা।
  • স্নায়ু ও মাংসপেশির সমন্বয় সাধনে কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
  • দেহ ও মনের সুষম উন্নতি করা।
  • সুস্বাস্থ্যের মাধ্যমে শারীরিক সক্ষমতা অর্জন করা।
  • সহিষ্ণুতা ও আত্মবিশ্বাস অর্জন করা।

২. মানসিক বিকাশ সাধনের উদ্দেশ্য :

  • উপস্থিত চিন্তাধারার বিকাশ সাধন।
  • নৈতিকতা সম্পর্কে জ্ঞানার্জন।
  • সেবা ও আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ হওয়া।
  • বিভিন্ন দলের মাঝে বন্ধুত্বপূর্ণ ও প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব গড়ে ওঠা।

৩. চারিত্রিক গুণাবলি অর্জনের উদ্দেশ্য :

  • আনুগত্যবোধ ও নৈতিকতা বৃদ্ধি পাওয়া।
  • খেলাধুলার মাধ্যমে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত হওয়া।
  • খেলোয়াড়ি ও বন্ধুত্বসূলভ মনোভাব গড়ে ওঠা।
  • প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মনোভাব গড়ে ওঠা।
  • আত্মসংযমী হওয়া ও আবেগ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করা।

৪. সামাজিক গুণাবলি অর্জনের উদ্দেশ্য :

  • নেতৃত্বদানের সক্ষমতা অর্জন ও সামাজিক গুণাবলি অর্জন করা।
  • বিনোদনের সাথে অবসর সময় কাটানোর উপায় জানা।
  • বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের যোগ্যতা অর্জন করা।
  • সকলের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ ও সেবামূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করা।

শারীরিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা (Importance of physical education)
শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীণ বিকাশের জন্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শারীরিক শিক্ষার প্রয়োজন হয়। মাসলোর মতে শিক্ষার্থীর এ প্রয়োজন তিনটি স্তরে সাজানো। যথা—

১. শারীরিক ও শরীরবৃত্তীয় প্রয়োজন :
শিক্ষার্থীর শারীরিক ও শারীরবৃত্তীয় প্রয়োজন পূরণে শারীরিক শিক্ষা প্রত্যক্ষ কাজ করে। এ ব্যাপারে শারীরিক শিক্ষার ভূমিকা হলো—

ক. শারীরিক শিক্ষা শিক্ষার্থীর গতিশীল কাজের জৈবিক প্রয়োজন পূরণ করে।
খ. শিক্ষার্থীর দৈহিক গঠন সুন্দর ও মজবুত করে।
গ. শিক্ষার্থীর শারীরিক সক্ষমতা ও কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
ঘ. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
ঙ. শিক্ষার্থী খেলাধুলার কৌশল শেখার মাধ্যমে খেলাধুলায় পারদর্শিতা অর্জন করে।
চ. শারীরিক শিক্ষা সুস্থ মনের জন্যে সুস্থ দেহ গড়ে তোলে।

২. মানসিক ও আত্মিক পরিপূর্ণতা প্রয়োজন :
ক. শিশুর মানসিক ও বুদ্ধিমত্তার ভিত গড়ে তোলে।
খ. পড়াশোনার একঘেয়েমি দূর করে।
গ. শিক্ষার্থীর চারিত্রিক গুণাবলির বিকাশ ঘটায়।
ঘ. আত্মসচেতনতা, আত্মনির্ভরতা, আত্মোপলদ্ধি ও আত্মশ্রদ্ধা বাড়িয়ে তোলে।
ঙ. পরিবেশের সাথে মানিয়ে চলতে সাহায্য করে।
চ. শিক্ষার্থীর মনে সৃজনশীলতার অনুভূতি জাগ্রত করে।
ছ. ক্ষতিকর নেশা থেকে দূরে রাখে।
জ. চিত্তবিনোদন ও অবসর সময় কাটানোর উপায় নির্বাচনে সাহায্য করে।

৩. সামাজিক প্রয়োজন :
ক. প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সহযোগিতার মনোভাব গড়ে তোলে।
খ. খেলাধুলায় সামাজিক সম্পর্কের প্রতিফলন ঘটে ও মানবিক গুণ অর্জনে সহায়তা করে।
গ. শারীরিক শিক্ষা নেতৃত্বদানের ক্ষমতার বিকাশ ঘটায়।
ঘ. দেশ ও সমাজের সংস্কৃতির সাথে পরিচয় ঘটায়৷
ঙ. শিক্ষার্থীর উদার মানসিকতা ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ জাগ্রত করে।

শারীরিক শিক্ষার কর্মসূচি
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খেলাধুলা, ব্যায়াম, স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ও বিনোদনমূলক যেসব কার্যকলাপ পরিলক্ষিত হয় তাকে শারীরিক শিক্ষার কর্মসূচি বলে। শারীরিক শিক্ষার কর্মসূচিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়।

বাংলাদেশের শারীরিক শিক্ষা
বাংলাদেশে শারীরিক শিক্ষার অবস্থান ও কার্যক্রম যেভাবে আছে তা তুলে ধরা হলো–

  • বাংলাদেশ সরকার ‘শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য’ বিষয়টিকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বাধ্যতামূলক করেছে।
  • নবম ও দশম শ্রেণিতে ২০১৩ সাল থেকে ‘শারীরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্যবিজ্ঞান ও খেলাধুলা’ বিষয়টি বাধ্যতামূলক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। স্কুলে পরীক্ষা গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতে শারীরিক শিক্ষার গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পাবে।
  • শারীরিক শিক্ষার উন্নয়নের জন্যে যে বিষয়াদির প্রতি বেশি নজর দেওয়া প্রয়োজন তা হচ্ছে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ সাধন এবং তাদের উপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ন করা। এক্ষেত্রে প্রাইমারি স্কুলে শারীরিক শিক্ষাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।

 

শেষ কথা:
আশা করি আপনাদের এই আর্টিকেলটি পছন্দ হয়েছে। আমি সর্বদা চেষ্টা করি যেন আপনারা সঠিক তথ্যটি খুজে পান। যদি আপনাদের এই “শারীরিক শিক্ষা কি?” আর্টিকেল পছন্দ হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই ৫ স্টার রেটিং দিবেন।

4.9/5 - (35 votes)

By Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.