আর্কিমিডিস (Archimedes in Bangla)
আর্কিমিডিস (Archimedes) খ্রিস্টপূর্ব ২৮৭ অব্দে গ্রীসে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ফিডিয়াস্ একজন জ্যোতির্বিদ ছিলেন। গ্রীসের সিসিলির সাইরাকিউজ-রাজ পরিবারের সঙ্গে আর্কিমিডিস পরিবারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। দীর্ঘ অবরোধের পরে রোমানদের হাতে সাইরাকিউজের পতন ঘটে খ্রিস্টপূর্ব ২১২ অব্দে। এ পতনের পর যে বিশৃঙ্খলা, হত্যাকান্ড ও লুটতরাজের মুখে শহরটি পতিত হয় তাতে আর্কিমিডিস জনৈক রোমান সৈন্যের হাতে নিহত হন।
উদস্থিতিবিদ্যা সংক্রান্ত গবেষণার জন্য, বিশেষ করে ‘আর্কিমিডিসের সূত্র’র জন্য তিনি সাধারণ পাঠকের কাছে পরিচিত। রাজার মুকুটের খাঁটি সোনার পরিমাণ বের করার দায়িত্ব থেকে এ সূত্রের আবিষ্কার, তা আমরা সকলে জানি। এ সূত্র হতেই বস্তুর অপেক্ষিক গুরুত্বের ধারণা আসে। আর্কিমিডিসই সর্বপ্রথম সেই গ্রিক যুগে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক গবেষণার সূত্রপাত ঘটান।
তিনি সে যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ গণিতজ্ঞ, পদার্থবিজ্ঞানী ও পূর্তবিদ্যাবিশারদ ছিলেন। জ্যামিতি গবেষণাতেই তিনি অধিকাংশ সময় অতিবাহিত করেন। তাঁর প্রতিটি জ্যামিতিক গবেষনাই মৌলিক। বৃত্তের ক্ষেত্র, গোলকের উপরিভাগের ক্ষেত্র ও তার আয়তন নির্ণয় করার লক্ষ্যে ‘π’ এর মান এবং ঐসকল ক্ষেত্রের সঙ্গেও ব্যাসার্ধের সম্পর্ক আবিষ্কার করেছিলেন তিনি। ফলিত বলবিদ্যায় তাঁর অসাধারণ উদ্ভাবনী শক্তির পরিচয় পাওয়া যায়। তাঁর উদ্ভাবিত একপ্রকার স্ক্রুর (water screw) সাহায্যে সেচকাজের বিশেষ সুবিধা হয়েছিল। খঁনি হতে পানি নিষ্কাশন অথবা জাহাজের খোল হতে পানি বের করবার ব্যাপারে এ স্ক্রুর এককালে ব্যাপক ব্যবহার ছিল।
নভোমন্ডলে সূর্য, গ্রহ ও চন্দ্রের পরিক্রমণ বুঝাতে তিনি এক বিরাট গোলক বা প্ল্যানিটোরিয়াম তৈরি করিয়েছিলেন। এই প্ল্যানিটোরিয়ামে চন্দ্র, সূর্য ও গ্রহের পরিক্রমণগতি এমন নিখুঁতভাবে অনুকরণ করা হয় যে, সূর্য ও চন্দ্রের গ্রহণ পর্যন্ত স্বাভাবিক গ্রহণের অবিকল একই সঙ্গে সংঘটিত হতে দেখা যেত। সূর্যের আপাত ব্যাস অর্থাৎ সূর্য পর্যবেক্ষকের চোখে যে কোণ তৈরি করে তার মাপ তিনি নির্ণয় করেছিলেন। গণিতের সঙ্গে ব্যবহারিক বিদ্যা ও অভিজ্ঞতার এমন সমন্বয় সামঞ্জস্যসাধন তাঁর পূর্বে আর দেখা যায়নি। বর্তমান বিজ্ঞানাদর্শের বিচারে তিনি ছিলেন প্রকৃত বিজ্ঞানী। তাঁর পর পরীক্ষা নিরীক্ষা ভিত্তিক বিজ্ঞানের পদ্ধতি বহুযুগ ধরে বিলুপ্ত ছিল।