হালদা নদী (Halda River in Bangla)

হালদা হচ্ছে বাংলাদেশের একমাত্র দেশি নদী। প্রায় ৯৮ কি.মি. দৈর্ঘ্যের এ নদীর উৎপত্তি খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার রামগড় উপজেলার পাতাছোড়া ইউনিয়নের হালদাছড়া থেকে এবং সমাপ্তি চট্টগ্রামের উপকণ্ঠে কর্ণফুলী নদীতে। এটি শুধু বাংলাদেশের নয়, পৃথিবীরও একমাত্র জোয়ার-ভাটার নদী যা অন্যতম বৃহৎ রুই জাতীয় মাছের (রুই, কাতলা, মৃগেল এবং কালিগনি) প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র এবং দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র যেখান থেকে সরাসরি রুই জাতীয় মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করা হয়। কিছু মা মাছ স্থায়িভাবে হালদায় বাস করে, বাকিগুলো মূলত কর্ণফুলী থেকে হালদায় আসে।

বাংলাদেশের অন্যান্য নদী থেকে হালদা নদীর বিশেষ পার্থক্য প্রধানত পরিবেশগত। বর্ষা মৌসুমে নদীর কিছু পরিবেশগত বৈশিষ্ট্যের জন্য এখানে মাছ ডিম ছাড়তে আসে। এ বৈশিষ্ট্যগুলো ভৌতিক, রাসায়নিক এবং জৈবনিক। অমাবস্যা বা পূর্ণিমায় বজ্রসহ প্রচুর বৃষ্টিপাত, উজানের পাহাড়ী ঢল, তীব্র স্রোত, ফেনিল ঘোলা পানিসহ নদীর ভৌত-রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যগুলোর সমন্বিত ক্রিয়ায় হালদা নদীতে যে পরিবেশ সৃষ্টি হয় তাতে রুই জাতীয় মাছ বর্ষাকালে ডিম ছাড়তে উদ্বুদ্ধ হয়। এ পরিবেশ বাংলাদেশের অন্যান্য নদ-নদী থেকে স্বতন্ত্র। তাই হালদা নদী বাংলাদেশের প্রাকৃতিক মত্স্য প্রজনন ঐতিহ্য। হালদা কেবল প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ঐতিহ্য নয়, এটি ইউনেস্কোর শর্ত অনুযায়ী বিশ্ব প্রাকৃতিক ঐতিহ্যেরও যোগ্যতা রাখে।

হালদার বর্তমান প্রধান সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ

১। লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়া।

২। শিল্পকারখানার বিষাক্ত রাসায়নিক বর্জ্য, ইটভাটার দূষণ, এবং রাসায়নিক সার ও কীটনাশকজনিত দূষণ।

৩। অবাধে মা মাছ শিকার। প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র রক্ষার পূর্ব শর্ত হচ্ছে মা মাছ সংরক্ষণ।

৪। প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংসের আরেকটি কারণ হচ্ছে হালদার ৩৬টি শাখা খাল, নদী ও ছড়াগুলােতে অপরিকল্পিতভাবে সুইস গেট, বাঁধ এবং রাবার ড্যাম নির্মাণের মাধ্যমে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা।

৫। হালদা নদীতে রুইজাতীয় মাছের প্রজননস্থল হচ্ছে নদীর বিশেষ ধরনের বাঁক। এসব বাঁক পানির উলট-পালট, পানির স্রোতের গতিধারা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জৈব রাসায়নিক অনুঘটক উৎপন্ন করে মাছের প্রজননের বিশেষ পরিবেশ সৃষ্টি করে এবং ডিম নিষিক্ত করতে সহায়তা করে। বাঁকগুলোতে পানির ঘূর্ণনের কারণে গভীর স্থানে সৃষ্টি হয়, যা কুম বা কুয়া নামে পরিচিত। জননকালীন সময়ে ডিম ছাড়তে আসা মাছ ডিমছাড়ার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত মা-মাছ এখানে অবস্থান করে। প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট এসব কুম/কুয়া কেটে বাঁক সোজা করে দেওয়ায় হালদায় মা-মাছ অরক্ষিত হয়ে ডিম ছাড়ার উদ্দীপনা হারিয়ে ফেলে।

৬। বৈজ্ঞানিক ভিত্তিহীন এবং হালদার বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এমন পরিকল্পনা গ্রহণ করা।

বাংলাদেশ সরকার ২০১৪ সালের মার্চ মাসে হালদা নদী সংরক্ষণে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করার ঘোষণা দিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *