স্থান, তল, রেখা ও বিন্দুর ধারণা।

আমাদের চারপাশে বিস্তৃত জগত (Space) সীমাহীন। এর বিভিন্ন অংশ জুড়ে রয়েছে ছোট বড় নানা রকম বস্তু। ছোট বড় বস্তু বলতে বালুকণা, আলপিন, পেন্সিল, কাগজ, বই, চেয়ার, টেবিল, ইট, পাথর, বাড়িঘর, পাহাড়, পৃথিবী, গ্রহ-নক্ষত্র সবই বুঝানো হয়। বিভিন্ন বস্তু স্থানের যে অংশ জুড়ে থাকে সে স্থানটুকুর আকার, আকৃতি, অবস্থান, বৈশিষ্ট্য প্রভৃতি থেকেই জ্যামিতিক ধ্যান-ধারনা তৈরি হয়।

কোনো ঘনবস্তু (Solid) যে স্থান অধিকার করে থাকে, তা তিন দিকে বিস্তৃত। এ তিন দিকের বিস্তারেই বস্তুটির তিনটি মাত্রা (দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা) নির্দেশ করে। সেজন্য প্রত্যেক ঘনবস্তুই ত্রিমাত্রিক (Three dimensional)। যেমন, একটি ইট বা বাক্সের তিনটি মাত্রা (দৈর্ঘ্য , প্রস্থ ও উচ্চতা) আছে। একটি গােলকের তিনটি মাত্রা আছে। এর তিন মাত্রার ভিন্নতা স্পষ্ট বােঝা না গেলেও একে দৈর্ঘ্য-প্রস্থ-উচ্চতা বিশিষ্ট খণ্ডে বিভক্ত করা যায়।

ঘনবস্তুর উপরিভাগ তল (surface) নির্দেশ করে অর্থাৎ, প্রত্যেক ঘনবস্তু এক বা একাধিক তল দ্বারা সীমাবদ্ধ থাকে। যেমন, একটি বাক্সের ছয়টি পৃষ্ঠ ছয়টি সমতলের প্রতিরূপ। গােলকের উপরিভাগও একটি তল। তবে বাক্সের পৃষ্ঠতল ও গােলকের পৃষ্ঠ তল ভিন্ন প্রকারের। প্রথমটি সমতল (Plane), দ্বিতীয়টি বক্রতল (Curved Surface)।

তল: তল দ্বিমাত্রিক (Two-dimensional)। এর শুধু দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ আছে, কোনাে উচ্চতা নাই। একটি বাক্সের দুইটি মাত্রা ঠিক রেখে তৃতীয় মাত্রা ক্রমশ হ্রাস করে শূন্যে পরিণত করলে, বাক্সটির পৃষ্ঠবিশেষ মাত্র অবশিষ্ট থাকে। এভাবে ঘনবস্তু থেকে তলের ধারণায় আসা যায়।

দুইটি তল পরস্পরকে ছেদ করলে একটি রেখা (line) উৎপন্ন হয়। যেমন, বাক্সের দুইটি পৃষ্ঠতল বাক্সের একধারে একটি রেখায় মিলিত হয়। এই রেখা একটি সরলরেখা (straight line)। একটি লেবুকে একটি পাতলা ছুরি দিয়ে কাটলে, ছুরির সমতল যেখানে লেবুর বক্রতলকে ছেদ করে সেখানে একটি বক্ররেখা (curved line) উৎপন্ন হয়।

রেখা: রেখা একমাত্রিক (One-dimensional)। এর শুধু দৈর্ঘ্য আছে, প্রস্থ ও উচ্চতা নাই। বাক্সের একটি পৃষ্ঠতলের প্রস্থ ক্রমশ হ্রাস পেয়ে সম্পূর্ণ শূন্য হলে, ঐ তলের একটি রেখা মাত্র অবশিষ্ট থাকে। এভাবে তলের ধারণা থেকে রেখার ধারণায় আসা যায়।

দুইটি রেখা পরস্পর ছেদ করলে বিন্দুর উৎপত্তি হয়। অর্থাৎ, দুইটি রেখার ছেদস্থান বিন্দু (point) দ্বারা নির্দিষ্ট হয়। বাক্সের দুইটি ধার যেমন, বাক্সের এক কোণায় একটি বিন্দুতে মিলিত হয়।
বিন্দুর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা নাই, শুধু অবস্থান আছে। একটি রেখার দৈর্ঘ্য ক্ৰমশঃ হ্রাস পেলে অবশেষে একটি বিন্দুতে পর্যবসিত হয়। বিন্দুকে শূন্য মাত্রার সত্তা (entity) বলে গণ্য করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *