মেরুদণ্ডী প্রাণী তথা মানুষের প্রধান রেচন অঙ্গ হলো বৃক্ক বা কিডনি। মানবদেহের উদরগহ্বরের পিছনের অংশে, মেরুদণ্ডের দুদিকে বক্ষপিঞ্জরের নিচে পিঠ-সংলগ্ন অবস্থায় দুটি বৃক্ক অবস্থান করে। প্রতিটি বৃক্ক দেখতে শিমবিচির মতাে এবং এর রং লালচে হয়। বৃক্কের বাইরের পার্শ্ব উত্তল এবং ভিতরের পার্শ্ব অবতল হয়। অবতল অংশের ভাঁজকে হাইলাস (Hilus) বা হাইলাম বলে। হাইলামের ভিতর থেকে ইউরেটার এবং রেনাল শিরা বের হয় এবং রেনাল ধমনি বৃক্কে প্রবেশ করে। দুটি বৃক্ক থেকে দুটি ইউরেটর বের হয়ে মূত্রাশয়ে প্রবেশ করে। ইউরেটারের ফানেল আকৃতির প্রশস্ত অংশকে রেনাল পেলভিস বলে।
বৃক্ক সম্পূর্ণরূপে এক ধরনের তন্তুময় আবরণ দিয়ে বেষ্টিত থাকে, একে রেনাল ক্যাপসুল বলে। ক্যাপসুল-সংলগ্ন অংশকে কর্টেক্স এবং ভিতরের অংশকে মেডুলা বলে। উভয় অঞ্চলই যােজক কলা এবং রক্তবাহী নালি দিয়ে গঠিত। মেডুলায় সাধারণত ৪-12টি রেনাল পিরামিড থাকে। এদের অগ্রভাগ প্রসারিত হয়ে রেনাল প্যাপিলা (Papilla) গঠন করে। এসব প্যাপিলা সরাসরি পেলভিসে উন্মুক্ত হয়। প্রতিটি বৃক্কে বিশেষ এক ধরনের নালিকা থাকে, যাকে ইউরিনিফেরাস নালিকা বলে। প্রতিটি ইউরিনিফেরাস নালিকা, নেফ্রন, (Nephron) এবং সংগ্রাহী নালিকা (Collecting tubule) এই দুটি প্রধান অংশে বিভক্ত। নেফ্রন মূত্র তৈরি করে আর সংগ্রাহী নালিকা রেনাল পেলভিসে মূত্র বহন করে।
বৃক্কের কাজ
বৃক্ক যেসব কাজের সাথে জড়িত সেগুলো হচ্ছে–
- বিপাকজাত দূষিত পদার্থগুলোকে মূত্রের মাধ্যমে দেহ থেকে বের করে দেয়া;
- দেহে ও রক্তে পানির ভারসাম্য বজায় রাখা;
- রক্তের উপাদানের পরিমাণ নির্দিষ্ট রাখতে সহায়তা করা;
- ভিটামিন ‘ডি’-কে কার্যকর রূপে পরিণত করা;
- রেনিন তৈরি করা;
- ইরাইথ্রোপয়েটিন তৈরি করা, যা লোহিত রক্ত কণিকা তৈরিতে সহায়তা করে;
- রক্তের বিক্রিয়া বজায় রাখতে সহায়তা করা।