প্লাজমিড হচ্ছে একখন্ড বৃত্তাকার DNA যা ব্যাকটেরিয়াল কোষের ক্রোমোজোমের বাইরে থাকে। ক্রোমোসোম বহির্ভূত বৃত্তাকার দ্বিসুত্রক DNA অনুকে প্লাজমিড বলা হয়। প্লাজমিডই জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর আসল যন্ত্র যা দিয়ে নতুন জেনেটিকতত্ত্ব ব্যাকটেরিয়া ও জীবের মধ্যে স্থানান্তরিত করা হয়। ১৯৭০ এর প্রথম দিকে প্লাজমিড আবিষ্কৃত হয়। প্লাজমিড অতিরিক্ত জিন বহন করে। প্লাজমিডের রেপলিকেশন (প্রতিরূপ সৃষ্টি) স্বাধীনভাবে ঘটে এবং ব্যাকটেরিয়াল ক্রোমোজোমের রেপলিকেশনের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। অন্য ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে এসেই রেপলিকেটেড প্লাজমিড সহজেই অন্য ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে সঞ্চারিত হয়।
অধুনা কিছুসংখ্যক Eukaryotic কোষেও প্লাজমিডের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে, যেমন- ঈস্ট (saccharomyces). প্লাজমিডের DNA অনু স্বাধীনভাবে replicate (অনুলিপন) করতে পারে। মুল ক্রোমোসোমের বাইরে একটি অতিরিক্ত ও ক্ষুদ্রাকার DNA হিসেবে প্রায় সমস্ত ব্যাকটেরিয়াতে প্লাজমিড অবস্থিত। প্লাজমিডের সংখ্যা কোষপ্রতি ১-১০০০ পর্যন্ত হতে পারে।
প্লাজমিক DNA দ্বারা গঠিত, মুল ক্রোমোসোম থেকে অনেক ছোট এবং ব্যাকটেরিয়া কোষে স্বতন্ত্রভাবে অবস্থান করে। অধিকাংশক্ষেত্রেই ব্যাকটেরিয়া কোষকে সজীব ও কর্মক্ষম রাখতে প্লাজমিডের কোন প্রয়োজন পড়েনা, তবে বিশেষ পরিবেশে, যেমন- অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতিতে ব্যাকটেরিয়া কোষকে বাঁচিয়ে রাখতে প্লাজমিড সহায়তা করে থাকে।
প্লাজমিড কত প্রকার?
প্লাজমিড প্রধানত তিন প্রকার, যথাঃ
i) F এবং F’ প্লাজমিডঃ এসব প্লাজমিড একটি ব্যাকটেরিয়া থেকে অন্য ব্যাকটেরিয়াতে জেনেটিক ম্যটেরিয়াল স্থানান্তর করার জন্য দায়ী।
ii) R প্লাজমিডঃ এসব প্লাজমিডে অ্যান্টিবায়োটিক ক্ষমতাসম্পন্ন জিন থাকে।।
iii) কোল প্লাজমিডঃ যেসব প্লাজমিডে কোলিসিন উৎপাদনকারী জিন পাওয়া যায়, তাদেরকে কোল প্লাজমিড বলে। কোলিসিন একধরনের প্রোটিন যা সংবেদনশীল E. coli কোষকে ধ্বংস করতে পারে। এখানে উল্লেখ্য যে, প্লাজমিডে অবস্থিত জিনের দ্বারা ভিব্রিওসিন নামে একধরনের প্রোটিন উৎপন্ন হয় যা সংবেদনশীল vibrio cholerae কোষকে নষ্ট করে।
প্লাজমিডের সাধারন বৈশিষ্ট্যঃ
১। প্লাজমিডের চক্রাকার দ্বি-সুত্রক DNA অনুবিশিষ্ট।
২। এর আনবিক ওজন প্রায় 1,000,000-200,000,000 Dalton.
৩। এটি অল্পসংখ্যক জিন ধারন করে।
৪। রেস্ট্রিকশন এনজাইম দ্বারা আদর্শপ্লাজমিডের নির্দিষ্ট স্থানগুলো ভেঙে ফেলা যায়।
৫। কোন কোন প্লাজমিডের জিন বিশেষ ধরনের রাসায়নিক বস্তু সংশ্লেষণ করতে পারে, যেমন- colicin, vibriocin ইত্যাদি।
প্লাজমিডের ব্যবহারঃ
আনবিক বংশগতিবিদ্যার বা molecular genetics এর গবেষনার বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্লাজমিড ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, জিন ক্লোনিং ইত্যাদি কাজে প্লাজমিড অত্যন্ত উপযোগী বাহক (vector) হিসেবে কাজ করে। প্লাজমিড DNA ব্যবহার করে আধুনিক জীব প্রযুক্তির বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য পাওয়া গিয়েছে ; যেমন- মানুষের ইনসুলিন, জিন ক্লোনিং, পোকামাকড় ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন উদ্ভিদ উৎপাদন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
শেষ কথা:
আশা করি আপনাদের এই আর্টিকেলটি পছন্দ হয়েছে। আমি সর্বদা চেষ্টা করি যেন আপনারা সঠিক তথ্যটি খুজে পান। যদি আপনাদের এই “প্লাজমিড কি?” আর্টিকেল পছন্দ হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই ৫ স্টার রেটিং দিবেন।