সাইটোপ্লাজমে অবস্থিত কতকগুলাে ঘনসন্নিবিষ্ট চওড়া সিস্টারনি, থলির মতাে ভ্যাকুওল এবং ক্ষুদ্র ভেসিকল-এর সমন্বয়ে গঠিত জটিল অঙ্গাণুর নাম গলজি বস্তু। ইতালিয় স্নায়ুবিজ্ঞানী ক্যামিলাে গলজি (Camillo Golgi, 1843-1926) ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে পেঁচা ও বিড়ালের মস্তিষ্কের কোষে গলজি বস্তু আবিষ্কার করেন এবং বিশদ বর্ণনা দেন। তাঁর নামানুসারে এটি “গলজি বস্তু” নামকরণ করা হয়। গলজি বস্তু বিভিন্ন নামে পরিচিত, যথা- গলজি কমপ্লেক্স, গলজি অ্যাাপারেটাস, ডিকটিওজোম, ইডিওজোম, লিপােকন্ড্রিয়া ইত্যাদি।

গলজি বস্তুর বিস্তৃতি 
প্রােক্যারিওটিক কোষে এবং কিছু ছত্রাক, ব্রায়ােফাইট ও টেরিডােফাইটের শুক্রাণু, পরিণত সীভনল এবং প্রাণীর লােহিত কণিকায় গলজি বস্তু অনুপস্থিত। উদ্ভিদকোষে সাইটোপ্লাজমে ছড়ানাে থাকে, কিন্তু প্রাণিকোষে এগুলাে সাধারণত নিউক্লিয়াসের কাছাকাছি স্তরীভূত অবস্থায় থাকে বা নিউক্লিয়াসকে ঘিরে রাখে। কখনওবা জালিকার মতাে বিন্যস্ত থাকে।

গলজি বস্তুর গঠন 
কোষের শারীরবৃত্তিক কাজের ভিত্তিতে গলজি বস্তু গঠনে ভিন্নতা দেখা যায়। ডালটন (Dalton), ফেলিক্স (Felix) প্রভৃতি বিজ্ঞানীর বর্ণনা মতে গলজি বস্তুতে ঝিল্লিময় তিনটি উপাদান থাকে, যথা- সিস্টারনি, ভ্যাকুওল ও ভেসিকল।

(i) সিস্টারনি (Cisternae): স্তুপীকৃত, পর্দাবেষ্টিত, অসমান দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট ও সমান্তরালভাবে অবস্থিত লম্বা ও চাপা নালিকাসদৃশ (৩-৭টি) বস্তুগুলাে সিস্টারনি নামে পরিচিত। সম্ভবত মসৃণ এন্ডােপ্লাজমিক জালিকা থেকে সিস্টারনির উৎপত্তি হয়।
(ii) ভ্যাকুওল (Vacuoles): এগুলাে সিস্টারনির কাছে অবস্থিত গােল থলির মতাে অংশ। সিস্টারনির প্রাচীর চওড়া হয়ে ভ্যাকুওলের সৃষ্টি করে।
(iii) ভেসিকল (Vesicles): সিস্টারনির নিচের দিকে অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র থলির মতাে বস্তুগুলােকে ভেসিকল বলা হয়।

রাসায়নিক উপাদানঃ গলজি বস্তুর ঝিল্লি লিপােপ্রােটিন-এ নির্মিত। লিপিডের মধ্যে রয়েছে প্রধানত লেসিথিন ও সেফালিন জাতীয় ফসফোলিপিড। ক্যারােটিনয়েড, ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন-সি প্রভৃতিও রয়েছে। গলজি বস্তু এনজাইমে পরিপূর্ণ। গুরুত্বপূর্ণ এনজাইমগুলাে হচ্ছে- ADPase, Mg2+, ATPase, CTPase, TTPase, সামান্য পরিমাণে গ্লুকোজ-৬-ফসফেট।

গলজি বস্তুর কাজ 

  • কোষপ্রাচীর ও প্লাজমা মেমব্রেন গঠনে সহায়তা করে।
  • লাইসােজোম তৈরি করে এরা হরমােনসহ বিভিন্ন বিপাকীয় দ্রব্য ক্ষরণ ও নিঃসরণ করে।
  • শুক্রাণু গঠনের সময় অ্যাক্রোজোম (acrosome) উৎপাদনে গলজি বস্তু সহায়তা করে।
  • প্রােটিন ও ভিটামিন-সি সঞ্চয় করে।
  • মাইটোকন্ড্রিয়ায় ATP সৃষ্টির জন্য প্রয়ােজনীয় এনজাইম উৎপন্ন করে।
Rate this post

By Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.