লবণ শোষণের বিভিন্ন মতবাদগুলোর নিম্নরূপ-
লুনডেগার্ড এর মতবাদঃ বিজ্ঞানী লুনডেগার্ড এর মতবাদ অনুযায়ী সাইটোক্রোম নামে লোহার পরমাণুযুক্ত যৌগিক পদার্থ পরিবাহক হিসেবে কাজ করে। সাইটোক্রোম কোষের সাইটোপ্লাজমে ছড়িয়ে থাকে। জারিত সাইটোক্রোম মূলরোমের কোষের বাইরের তলের নিবিড় সংস্পর্শে থাকে। ধনাত্মক আধানযুক্ত সাইটোক্রোমের অণুগুলো বাইরের মাধ্যম থেকে ঋণাত্মক আধানযুক্ত খনিজ লবণের আয়ন গ্রহণ করতে পারে। আয়নযুক্ত সাইটোক্রোম কোষের সাইটোপ্লাজমে এসে বিজারিত হয়ে বাইরের থেকে বয়ে আনা আয়ন ত্যাগ করে। বিজারিত সাইটোক্রোম অণু প্লাজমামেমব্রেনের বাইরের তলে এসে বায়ুর অক্সিজেনের সাহায্যে পুনরায় জারিত হয়। জারিত সাইটোক্রোম আবার বাইরে থেকে ঋণাত্মক আয়ন গ্রহণ করে কোষের অভ্যন্তরে নিয়ে আসে। এভাবে কোষের মধ্যে ঋণাত্মক আয়নগুলো জমতে থাকে। কোষের প্রোটোপ্লাজম এবং বাইরের মাধ্যমের মধ্যে এর দরুণ বিভব প্রভেদ সৃষ্টি হয়। আধানের সমতা রক্ষার জন্য তখন বাইরের মাধ্যম থেকে ধনাত্মক আধানযুক্ত আয়ন উদ্ভিদ কোষে প্রবেশ করে।
বেনেট ক্লার্ক এর মতবাদঃ বেনেট এবং ক্লার্কের মতে লেসিথিন নামের একটি ফসফোলিপিড ধনাত্মক এবং ঋণাত্মক উভয় প্রকার আয়নের পরিবাহক হিসেবে কাজ করে। লেসিথিনে একটি কলিন এবং একটি ফসফোটাইড যৌগ থাকে। কলিন ঋণাত্মক আয়ন এবং ফসফোটাইড ধনাত্মক আয়ন বহন করে। লেসিথিন পরে কলিন এবং ফসফোটিডিক এসিডে ভেঙ্গে গিয়ে কোষের ভেতরে ধনাত্মক এবং ঋণাত্মক আয়নগুলো ছেড়ে দেয়। কলিন ও ফসফোটিডিক অ্যাসিড রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়ে আবার লেসিথিন গঠন করে। কোষের ভেতরে ধনাত্মক এবং ঋণাত্মক আয়নের এভাবে প্রবেশ লেসিথিনের মাধ্যমে চক্রাকারে চলতে থাকে।
সিমপ্লাস্ট (Symplast) ও অ্যাপোপ্লাস্ট (Apoplast) মতবাদঃ উদ্ভিদ দেহের পাশাপাশি কোষসমূহের প্রোটোপ্লাজম প্লাজমোডেসমাটার মাধ্যমে পরস্পরের সাথে অবিচ্ছিন্নভাবে যুক্ত থাকে। উদ্ভিদ কোষসমূহের এই অবিচ্ছিন্নতা সিমপ্লাস্ট নামে অভিহিত। সিমপ্লাস্ট মতবাদ অনুসারে কোষে শোষিত আয়নসমূহ এক কোষ থেকে অন্য কোষে প্লাজমোডেসমাটার মধ্য দিয়ে স্থানান্তরিত হয়।
পাশাপাশি কোষের কোষপ্রাচীরগুলো পরস্পরের সাথে অবিচ্ছিন্নভাবে যুক্ত থাকে। কোষ প্রাচীরের এই অবিচ্ছিন্নতা অ্যাপোপ্লাস্ট নামে অভিহিত। অ্যাপোপ্লাস্ট মতবাদ অনুসারে আয়নসমূহ কোষপ্রাচীরের মধ্য দিয়ে এক কোষ থেকে অন্য কোষে স্থানান্তরিত হয়।