গুমের ১৫ বছর পর স্ত্রী-সন্তান নিয়ে হাজির পাবনার মনিরুল

ঈশ্বরদীতে ‘গুম হওয়া’ মনিরুল ১৫ বছর পর স্ত্রী ও ৩ সন্তান নিয়ে বাড়ি ফিরেছে। মামাতো ভাইদের সাথে মনিরুল ইসলাম ঢাকায় রাজমিস্ত্রির কাজে যায়। তখন তার বয়স ছিল ২২ বছর। মামাতো ভাইয়েরা বাড়ি ফিরলেও সে ঢাকাতেই থেকে যায়। হঠাৎ করেই নিরুদ্দেশ হয়ে যায় মনিরুল। বিভিন্ন স্থানে সন্ধান করেও পরিবার তার কোনও সন্ধান পায়নি। দোষ পড়ে পড়ে মামাতো ভাইদের ওপর। গুমের মামলায় জেলও খাটেন মামাতো ভাইয়েরা। সেই গুম হওয়া মনিরুল দীর্ঘ ১৫ বছর পর বাড়ি ফিরে এসেছেন। তাও একা আসেননি, সাথে এসেছে স্ত্রী ও তিন সন্তান। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রবিবার সকালে ঈশ্বরদীর মুলাডুলি ইউনিয়নের বাঘহাছলা গ্রামের বালিয়াডাঙায় মনিরুল স্ত্রী-সন্তান নিয়ে হাজির হলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

মনিরুলের পরিবার, পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বাঘহাছলা গ্রামের আহেদ আলীর ছেলে মনিরুল ২০০৭ সালে মামাতো দুই ভাই আমিরুল বিশ্বাস (৪০) ও আবদুল মতিন বিশ্বাসের (৩৫) সাথে রাজমিস্ত্রির কাজে ঢাকায় যায়। আমিরুল ও মতিন ছয়মাস পর বাড়ি এলেও মনিরুল ঢাকাতেই থেকে যায়। মনিরুল বিয়ে করে ঢাকায় ঘর-সংসার শুরু করে। কাজ না করায় তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন মারধর করে। এ পরিস্থিতিতে মনিরুল কুমিল্লায় আত্মগোপন করে।

সে সময় মনিরুলের পরিবার অনেক খোঁজাখুঁজি করেও সন্ধান না পাওয়ায় মামাতো ভাইদের ওপর দোষ চাপে। মনিরুলের বাবা আহেদ আলী প্রায় ১০ বছর পর ২০১৭ সালে ছেলেকে গুমের অভিযোগ এনে আমিরুল ও মতিনের নামে ঈশ্বরদী থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। পুলিশ ঘটনা তদন্ত করে গুমের ‘মোটিভ’ না পেয়ে মামলা নেওয়া থেকে বিরত থাকে। পরে পাবনা আদালতে মামলা করা হয়। এ মামলায় আমিরুল ও মতিন প্রায় দেড় মাস হাজতবাসের পর জামিনে মুক্তি পান। মামলাটি বর্তমানে সিআইডি তদন্ত করছে।

মতিনের ভাই জসিম উদ্দিন জানান, মনিরুল ঢাকা থেকে কুমিল্লায় আত্মগোপন করে সংসার গড়ে তোলে। তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে সন্তান রয়েছে। তাদের নিয়ে হঠাৎ বাড়ি এসেছে। অথচ তার বাবার মামলায় আমরা দুই ভাই জেল খেটেছি এবং নানা হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। অন্যায় না করেও জেল খাটার জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন তিনি।

মনিরুলের পরিবারের দাবি, গত ১৫ বছর মনিরুল কিছুটা স্মৃতিভ্রষ্ট ছিল। স্মৃতি ফিরে আসায় সে বাড়ি চলে এসেছে। তবে এ বিষয়ে মনিরুলের সঙ্গে চেষ্টা করেও কথা বলা যায়নি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, ‘মনিরুলের নিখোঁজ নিয়ে অনেক কিছু ঘটে গেছে। সে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ফিরে আসায় গ্রামে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।’

ঈশ্বরদী থানার ওসি (তদন্ত) হাদিউল ইসলাম জানান, ঘটনাটি তিনি শুনেছেন। বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন হওয়ায় সেখানেই সমাধান করতে হবে। তবে আদালত কোনও নির্দেশনা দিলে পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে জানান তিনি।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *