পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে ক্বিরাত উচ্চস্বরে ও চুপেচুপে পড়ার দলিল-প্রমাণ

প্রশ্নঃ যোহরের নামায ও আসরের নামাযে ক্বিরাত চুপে চুপে পড়া, আর ফজর, মাগরিব ও এশার নামাযে উচ্চস্বরে পড়ার সপক্ষে কুরআন-সুন্নাহর কী দলিল রয়েছে?

উত্তরঃ:] আলহামদু লিল্লাহ।

তোমার এই উচ্চাকাঙ্খার জন্য আমরা তোমাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি এবং এই বয়সে কুরআন-সুন্নাহ্‌র দলিল জানার আগ্রহ দেখে আমরা প্রীত হচ্ছি। আমরা আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া করছি তিনি যেন, তোমাকে কাজে লাগান।

আল্লাহ্‌ তাআলা আমাদেরকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুকরণ ও অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন: “তোমাদের জন্য তথা যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌কে ও আখিরাতকে ভয় করে এবং আল্লাহ্‌কে বেশি বেশি স্মরণ করে তার জন্য রাসূলের মাঝে রয়েছে উত্তম আদর্শ।[সূরা আহযাব, আয়াত: ২১]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তোমরা আমাকে যেভাবে নামায পড়তে দেখ সেভাবে নামায পড়”। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের নামাযে, মাগরিব ও এশার নামাযের প্রথম দুই রাকাতে শব্দ করে তেলাওয়াত করতেন। আর বাকী নামাযে চুপে চুপে তেলাওয়াত করতেন।

উচ্চস্বরে তেলাওয়াত করার দলিলসমূহের মধ্যে রয়েছে:

জুবাইর বিন মুতয়িম (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মাগরিবের নামাযে (সূরা) “তূর” তেলাওয়াত করতে শুনেছি।”[সহিহ বুখারী (৭৩৫) ও সহিহ মুসলিম (৪৬৩)]

আল-বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এশার নামাযে “ওয়াত ত্বীনি ওয়ায যাইতূন” পড়তে শুনেছি। আমি তাঁর চেয়ে সুন্দর কণ্ঠের তেলাওয়াত শুনিনি।”[সহিহ বুখারী (৭৩৩) ও সহিহ মুসলিম (৪৬৪)]

জ্বিনদের উপস্থিত হওয়া ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে কুরআন শুনা প্রসঙ্গে ইবনে আব্বাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদিস। সে হাদিসে রয়েছে: তিনি তাঁর সাহাবীদেরকে নিয়ে ফজরের নামায আদায় করছিলেন। যখন তাদের কানে কুরআন পৌঁছল তখন তারা মনোযোগ দিয়ে কুরআন শুনল।”[সহিহ বুখারী (৭৩৯) ও সহিহ মুসলিম (৪৪৯)]

এ হাদিসগুলো প্রমাণ করে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উচ্চস্বরে তেলাওয়াত করতেন যাতে করে উপস্থিত লোকেরা শুনতে পায়।

আর যোহর ও আসরের নামাযে চুপে চুপে তেলাওয়াত করার সপক্ষে প্রমাণ হচ্ছে:

খাব্বাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক লোক তাকে জিজ্ঞেস করল: রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি যোহর ও আসরের নামাযে ক্বিরাত পড়তেন? তিনি বলেন: হ্যাঁ। আমরা বললাম: আপনারা সেটা কিভাবে জানতেন? তিনি বললেন: তাঁর দাঁড়ির নড়াচড়া দেখে।”[সহিহ বুখারী (৭১৩)]

সুতরাং এর মাধ্যমে পরিস্কার হয়ে গেল যে, উচ্চস্বরে তেলাওয়াত করার নামাযগুলোতে উচ্চস্বরে তেলাওয়াত করা এবং চুপেচুপে তেলাওয়াত করার নামাযগুলোতে চুপেচুপে তেলাওয়াত করা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ্‌ (আদর্শ) এবং গোটা মুসলিম উম্মাহ্‌ এ ব্যাপারে একমত।

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: “তিনি প্রত্যেক নামাযে তেলাওয়াত করতেন। তিনি যে নামাযগুলোতে আমাদেরকে শুনিয়ে তেলাওয়াত করতেন সে সব নামাযে আমরাও তোমাদেরকে শুনিয়ে তেলাওয়াত করি। আর তিনি যে সব নামাযে আমাদেরকে না শুনিয়ে তেলাওয়াত করতেন সে সব নামাযে আমরাও তোমাদেরকে না শুনিয়ে তেলাওয়াত করি।”[সহিহ বুখারী (৭৩৮) ও সহিহ মুসলিম (৩৯৬)]

ইমাম নববী বলেন: “সুন্নাহ্‌ হচ্ছে—ফজর, মাগরিব ও এশার দুই রাকাতে এবং জুমার নামাযে উচ্চস্বরে তেলাওয়াত করা। আর যোহর ও আসরের নামাযে এবং মাগরিবের তৃতীয় রাকাতে এবং এশার তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাতে চুপেচুপে তেলাওয়াত করা। সুস্পষ্ট সহিহ হাদিসের সাথে মুসলিম উম্মাহর ইজমার ভিত্তিতে এসব বিধান সাব্যস্ত।”[আল-মাজমু (৩/৩৮৯) থেকে সমাপ্ত]

ইবনে কুদামা (রহঃ) বলেন:

“যোহর ও আসরের নামাযে চুপেচুপে তেলাওয়াত করবে। মাগরিব ও এশার নামাযের প্রথম দুই রাকাতে এবং ফজরের নামাযের সব রাকাতে উচ্চস্বরে তেলাওয়াত করবে…। এর দলিল হচ্ছে—নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আমল। এটি পূর্ববর্তীদের কাছ থেকে পরবর্তীদের প্রচারের মাধ্যমে সাব্যস্ত হয়েছে। অতএব, কেউ যদি চুপেচুপে পড়ার নামাযে উচ্চস্বরে তেলাওয়াত করে কিংবা উচ্চস্বরে তেলাওয়াত করার নামাযে চুপেচুপে পড়ে তাহলে সে সুন্নাহ্‌র খিলাফ করল। কিন্তু তার নামায শুদ্ধ হবে।”[আল-মুগনি (২/২৭০) থেকে সমাপ্ত]

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *