যে ব্যক্তি ইফরাদ হজ্জ করেছেন; কিন্তু তিনি তাওয়াফে কুদুম (আগমনী তাওয়াফ) করেছেন এবং উমরার নিয়তে সাঈ করেছেন

প্রশ্ন : আমি একদল দ্বীনদার যুবকের সাথে ইফরাদ হজ্জ আদায় করেছি। আমি যখন মক্কায় পৌঁছেছি তাদেরকে বলেছি: আমরা এখন কী করব? তারা বলল: আমরা তাওয়াফ করব ও সাঈ করব। আমি তাদেরকে বললাম: অর্থাৎ উমরা? আমি উমরার নিয়তে তাওয়াফ ও সাঈ করেছি। আমি জানতাম না যে, তাওয়াফ ও সাঈ হজ্জের জন্য এবং আমার উপরে কোন উমরা নাই। এমতাবস্থায় আমার হজ্জ কি সহিহ?

উত্তর : আলহামদু লিল্লাহ।

এক:

ইফরাদ হজ্জকারী হচ্ছেন যিনি কেবল হজ্জের নিয়ত করেন এবং হজ্জের আগে কোন উমরা করেন না। এমন হজ্জকারী যখন মক্কায় পৌঁছবেন তিনি তাওয়াফে কুদুম (আগমনী তাওয়াফ) আদায় করবেন। তার জন্য এটি করা সুন্নত; ওয়াজিব নয়। তিনি চাইলে তাওয়াফের পর সাঈও করতে পারেন। যদি তিনি সাঈ করেন তাহলে এটি হজ্জের সাঈ হিসেবে যথেষ্ট হবে। ফিকাহবিদ অধিকাংশ আলেমের মতানুযায়ী: এরপর তাকে আর সাঈ করতে হবে না।

আল-বুহুতী ‘কাশ্‌শাফুল ক্বিনা’ গ্রন্থে (২/৪১১) বলেন: “ইফরাদ হজ্জের নিয়ম হচ্ছে: হজ্জের ইহরাম বাঁধবে। যখন হজ্জ সম্পাদন শেষ করবে তখন ইসলামের উমরা (ফরয উমরা) পালন করবে; যদি আগে পালন করে না থাকে।”[সমাপ্ত]

‘আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়্যা’ গ্রন্থে (২৯/১২১) রয়েছে: তাওয়াফুল কুদুম (আগমনী তাওয়াফ): এটাকে তাওয়াফুল কাদিম (আগমনকারীর তাওয়াফ), তাওয়াফুল উরুদ (উপস্থিতিমূলক তাওয়াফ), তাওয়াফুল তাহিয়্যা (শুভেচ্ছামূলক তাওয়াফ)ও বলা হয়। যেহেতু এ তাওয়াফ আদায় করার বিধান হচ্ছে মক্কার বাহিরে থেকে আগমনকারী ও অবতরণকারীর জন্য; বাইতুল্লাহ্‌র প্রতি শুভেচ্ছাস্বরূপ। এ তাওয়াফকে তাওয়াফুল লিক্বা (সাক্ষাতমূলক তাওয়াফ) ও তাওয়াফু আওয়ালু আহদিন বিল বাইত (বাইতুল্লাহর প্রথম সাক্ষাতের তাওয়াফ)ও বলা হয়।

হানাফি, শাফেয়ি ও হাম্বলি মাযহাবের মতানুযায়ী মক্কার উদ্দেশ্যে বহিরাগত হাজীদের জন্য তাওয়াফে কুদুম সুন্নত ও প্রাচীন গৃহের প্রতি শুভেচ্ছাজ্ঞাপন। তাই অবিলম্বে এ তাওয়াফ শুরু করা মুস্তাহাব।”[সমাপ্ত]

দুই:

যদি আপনি তাওয়াফ ও সাঈ করে থাকেন এবং হালাল না হয়ে থাকেন তাহলে আপনি ইফরাদ হজ্জের উপরে বলবৎ আছেন। আপনার হজ্জ সহিহ। আপনি যে উমরার নিয়ত করেছেন এতে কোন অসুবিধা হবে না। কেননা উমরাকে হজ্জের মধ্যে প্রবেশ করালে জমহুর ফিকাহবিদদের নিকট এর কোন প্রভাব নাই।

কাশ্‌শাফুল ক্বিনা গ্রন্থে (২/৪১২) বলেন: “যদি কেউ হজ্জের ইহরাম বাঁধে এরপর এর মধ্যে উমরাকে প্রবেশ করায় তাহলে তার উমরার ইহরাম শুদ্ধ হবে না। কেননা এর কোন প্রভাব পড়েনি এবং এর থেকে সে কোন উপকৃত হয়নি; তবে পূর্বোক্ত বিষয় “সে ক্বিরান হজ্জকারী হবে না” এর বিপরীত। কেননা দ্বিতীয় ইহরামের মাধ্যমে তার উপর কোন কিছু আবশ্যক হয় না।”[সমাপ্ত]

আর যদি আপনি হালাল হয়ে যান অর্থাৎ চুল কেটে ফেলেন কিংবা মাথা মুণ্ডন করে ফেলেন, নিজস্ব (সাধারণ) পোশাক পরিধান করে ফেলেন। তাহলে সেটা উমরা। সে ক্ষেত্রেও কোন অসুবিধা নাই। কারণ ইফরাদ হজ্জকারীর জন্য তার হজ্জকে উমরাতে পরিবর্তন করা মুস্তাহাব; যদি সে নিজের সাথে হাদি (কোরবানীর পশু) না আনে। এরপর সে আট তারিখে হজ্জের ইহরাম বাঁধবে।

কাশ্‌শাফুল ক্বিনা গ্রন্থে (২/৪১৫) বলেন: “যে ব্যক্তি ক্বিরান হজ্জকারী কিংবা ইফরাদ হজ্জকারী তাদের জন্য তাদের হজ্জের নিয়তকে বাতিল করে তাদের ইহরামের মাধ্যমে কেবল উমরার নিয়ত করা সুন্নত। যখন তারা উমরা সমাপ্ত করে হালাল হবেন তখন তারা হজ্জের ইহরাম বাঁধবেন যাতে করে তারা তামাত্তু হজ্জকারী হতে পারেন; যদি না তারা হাদী সাথে না আনেন। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাব্যস্ত হয়েছে য, তাঁর সাহাবীবর্গের মধ্যে যারা ইফরাদ হজ্জ ও ক্বিরান হজ্জের ইহরাম বেঁধেছিল তিনি তাদের সকলকে হালাল হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং তাদের আমলকে উমরাতে পরিবর্তন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন; কেবল যিনি সাথে করে হাদী এনেছেন তিনি ছাড়া। মুত্তাফাকুন আলাইহি”[সমাপ্ত]

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন:

“হজ্জকে উমরাতে পরিবর্তন করে তামাত্তু হজ্জকারী হওয়া: সুন্নতে মুয়াক্কাদা; ওয়াজিব হিসেবে কিংবা জোর তাগিদ হিসেবে। তবে সঠিক মতানুযায়ী, হজ্জকে বাতিল করে উমরায় পরিবর্তন করা ওয়াজিব নয়; কিন্তু এটি তাগিদপূর্ণ।”[আশ-শারহুল মুমতি (১০/৩১৫) থেকে সমাপ্ত]

হজ্জকে বাতিল করার দলিল হল:

ইমাম মুসলিম (১২১৭) কর্তৃক সংকলিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হজ্জ করার পদ্ধতি সংক্রান্ত জাবের (রাঃ) এর হাদিস। তাতে তিনি বলেন: “সর্বশেষ তাওয়াফে যখন তিনি মারওয়া পাহাড়ে পৌঁছলেন, তখন (লোকদের সম্বোধন করে) বললেন: যদি আমি আগেই ব্যাপারটি বুঝতে পারতাম, তাহলে আমি সাথে করে কুরবানীর পশু আনতাম না এবং হজ্জের ইহরামকে উমরায় পরিবর্তন করতাম। অতএব তোমাদের মধ্যে যার সাথে কুরবানীর পশু নাই সে যেন হালাল হয়ে যায় এবং একে উমরায় পরিণত করে। এ সময় সুরাকা বিন মালিক বিন জু’শুম (রাঃ) দাঁড়িয়ে বললেন: ইয়া রাসূলুল্লাহ! এই পদ্ধতি কি আমাদের এ বছরের জন্য; না সর্বকালের জন্য? তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাতের আংগুলগুলো পরস্পরের ফাঁকে ঢূকালেন এবং দু’বার বললেন: উমরা হজ্জের মধ্যে প্রবেশ করেছে। আরও বললেন: না; বরং সর্বকালের জন্য, সর্বকালের জন্য।

এর মাধ্যমে প্রতীয়মান হল যে, উভয় অবস্থাতে আপনার হজ্জ সহিহ। তবে, প্রথম অবস্থায় আপনার হজ্জ হবে ইফরাদ। আর দ্বিতীয় অবস্থায় আপনার হজ্জ হবে তামাত্তু; সেক্ষেত্রে আপনার উপর তামাত্তু হজ্জের হাদী (কোরবানী পশু) জবাই করা আবশ্যক হবে।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *